Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুনিতা মাতা
#41
[Image: din-kate-na.jpg]

সুনিতার দিনও কাটে না রাত কাটে না। সব সময় মনের মাঝে শুধু আকাশ আর আকাশ। আকাশ কি ভাবে ভালো বেসে ছিল মনে করে কাঁদে। আবার কি ভাবে ওর হাত ধরে সমুদ্রের ধারে জলের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল মনে করে হেঁসে ওঠে। হাঁসার পরেই খেয়াল করে ও একা বসে হাঁসছে আর ওর পাশে আকাশ নেই, আবার কেঁদে ফেলে। গত সাতদিন ওরা দুজনে যা যা করেছিল কিছুতেই ভুলতে পারে না। তার আগের কোথাও ভুলতে পারে না। কি ভাবে মীনা আকাশকে দেখিয়ে বলেছিল যে কি সুন্দর দেখতে ছেলেটা। সুনিতা সেই প্রথম দিনে ভাবতেও পারেনি তার সাথে এই ভাবে জড়িয়ে যাবে। 


সেই তিনবন্ধু পড়ার সময় থেকে ও আকাশের চোখে যে ভালবাসা দেখেছিল, আকাশের চোখে যে আলো দেখেছিল সুনিতার মন সেই আলো খুঁজতে থাকে। যখন ও চোখ বন্ধ করে থাকে তখন মনের আকাশে সেই আলো দেখতে পায় কিন্তু যেই চোখ খোলে সামনে কিছুই নেই। আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। ও ভাবতে থাকে কিছুদিন আগেও ও আকাশকে জানত না, তখন ওর জীবন খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু এখন ও ভালবাসা পাওয়ার পর তাকে বার বার খুঁজে বেড়ায়। রোজ সকালে সেই মেহগনি গাছের নীচে গিয়ে দেখে আকাশ এসে দাঁড়িয়ে আছে কিনা। এর আগের বার হটাত করে ওই গাছের নীচেই আকাশকে ফিরে পেয়েছিল, তাই রোজ দশ বার করে ওই গাছতলায় যায় আকাশ দাঁড়িয়ে আছে কিনা দেখতে। কিন্তু হায়, গাছতলা সবসময়ই খালি। গাছ আছে, প্রকৃতি আছে, সূর্য আছে, সব আছে শুধু ওর আকাশ নেই। তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। কবে যে আকাশ আবার সুনিতার সামনে এসে দাঁড়াবে। সুনিতা রোজ প্রার্থনা করে, “হে সূর্যদেব, আমার আকাশকে আমার কাছে এনে দাও, আমার মনকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে পারছিনা। দয়া করো আমাকে, আমার আকাশ এনে দাও”।

আকাশ যাবার পাঁচদিন পড়ে সুনিতার বাবা অফিস থেকে ফিরে বলে যে আকাশ ফোন করে ছিল। ও ঠিক মত বাড়ি পৌঁছে গেছে আর ওখানে সব ঠিক আছে। সুনিতা কিছুক্ষন খুব ভালো থাকে। শান্তিতেই ঘুমায় রাত্রে। পরদিন সকালে মেহগনি তলায় গিয়ে আবার মন খারাপ হয়ে যায়। ওর মা কত বোঝায় যে মন খারাপ করে কিছু হবে না। কিন্তু এ মন যে মানে না মানা তুমি যতই করো। ওকে যে যাই বলুক না কেন ওর মন মানে না।

আরও কিছুদিন চুপ চাপ থেকে সুনিতা আবার কলেজে যাওয়া শুরু করে। কলেজে যেতেই ওর ক্লাসের সব বন্ধুরা চেপে ধরে ওর বিয়ের কথা সোনার জন্য। সুনিতা কোন ভাবে একটু কিছু বলে কাটিয়ে যায়। ও সবাইকে খুব বেশী কিছু বলতে চায় না।  ধীরে ধীরে ও কলেজের পড়াশুনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কলেজ চলার সময় মাঝে মাঝেই লতা হারিয়ে যায়। রোজ বিকালে কলেজ থেকে ফেরার সময় দিব্যা আর লতার সাথে অনেক গল্প হয়। দিব্যাদের কাছে ও সব কিছুই বলে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত প্রত্যেকটা খেলা সব বলে। এক এক দিন এক এক দিনের ঘটনা বলে। আর আকাশের কথা বলার সময় ওর চোখের উজ্জলতা ওর আবেগ অতুলনীয়। ওর মনে হয় ও আকাশের সাথে আছে।

ওপরের যে গান টা দিয়েছি সেই গান টা নিশ্চয়ই এই সুনিতার মত কোন মেয়েকে নিয়েই লেখা হয়েছিল। গানের প্রতিটি লাইন সুনিতার দিন আর রাতের সাথে মিলে যায়। তবুও গানের মধ্যে দিন বা রাত কিছুই না কাটতে চাইলেও বাস্তব জীবনে দিন আর রাত দুটোই নিজের মত কেটে যায়। সময়মত রোজ সূর্য ওঠে, সুনিতা কলেজে যায় আবার ফিরে আসে, সূর্য অস্ত যায়। সুনিতার জীবন যান্ত্রিক ভাবে কেটে যেতে থাকে।

আমরা এবার আকাশকে দেখি ও কি করছে –
আকাশ বাড়ি ফিরে এসে বাবা, মা আর বোন কে সব কিছু বলে। এখানে ওনাদের পরিচয় দিয়ে দেই। আকাশের বাবা শ্রী সুভাস কুমার সেন একজন সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের এমপ্লয়ী, বয়েস প্রায় ৫৫, নির্বিবাদী শান্ত মেজাজের মানুষ। আকাশের মা স্রীমতি স্মৃতিকনা দেবী সম্পূর্ণ গৃহবধূ, হাঁসি খুশী কিন্তু একটু কঠিন মেজাজের মহিলা। ওনার বয়েস বলতে নেই। আকাশের বোন চন্দ্রিকা, ক্লাস ইলেভেনে পড়ে চপলা চঞ্চলা মেয়ে। ওর বাড়ীতে সবাই মোটামুটি সবই জানতো আকাশের লেখা চিঠির গুলোর জন্যে। আকাশ সব কিছু বলার পড়ে ওর স্মৃতি দেবীর মুখ গম্ভীর, সুভাস বাবুর মুখ চিন্তিত আর চন্দ্রিকার মুখ ঔৎসুক্যে ভরপুর। স্মৃতি দেবীর প্রথম প্রতিক্রিয়া, “আমি তোমাদের এই সব ছেলেমানুসি মেনে নেব না। তুমি যদি ভেবে থাকো যে একটা কি না কি চাকরি পেয়ে গেছ বলে এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে তোমার বিয়ের মত জিনিসের ডিসিশন তুমি একাই নিয়ে নিলে। আর শুধু ডিসিশন নেওয়া নয় বিয়েটা পর্যন্ত করে এসেছ। সব যখন করেই ফেলেছ তখন আবার আমাদের বলার কি দরকার। নিজে নিজের মত থাকো। যা ইচ্ছা করো। আমাকে কিছু বল না”।

আকাশের মন এমনিতেই খারাপ ওর সুনিতাকে ছেড়ে, তার ওপর মায়ের এইরকম প্রতিক্রিয়া। আকাশ পুরো নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায়। চুপ চাপ উঠে চলে যায়।   
সুভাস বাবু কিছু বলতে যান কিন্তু আকাশ শোনে না, নিজের ঘরে চলে যায়। চন্দ্রিকা ওর মাকে বলে, “তুমি সব কিছুতেই এই ভাবে শুরু করো। আমি জানি শেষ পর্যন্ত সব মেনে নেবে তুমি কিন্তু একটু হই চই না করলে তোমার শান্তি হয়না”।

ও উঠে যায় দাদার কাছে যাবার জন্য। সুভাস বাবু বলেন, “দেখো স্মৃতি আকাশ যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। আমরা ওকে নিজের মত করে বাঁচতে শিখিয়েছি। আমি সব সময় ওকে বলেছি নিজের জীবনের যা কিছু ও নিজে ঠিক করবে। আমি চাই না আমার ছেলে আমার ওপর নির্ভর করে জীবন কাটাবে। আর সেই ভাবেই ওকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ওর পড়াশুনো নিয়ে কি পড়বে ও নিজে ঠিক করেছে। এমনকি ওর এই চাকরির ব্যাপারেও কিছু বলিনি। ও এতো দূর এসেছে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় নিজের মত করে এসেছে। তাই বিয়ের কথাও নিজে ঠিক করেছে। তো কি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। ওর জীবন ওকেই বুঝে নিতে দাও”।

স্মৃতি দেবী বলেন, “নিজে নিজে ঠিক করবে বলে একদম বিয়ে পর্যন্ত! কিরকম সমাজ, কি রকম বংশ কিছুই দেখা নেই, হুট করে বিয়ে করে ফেললেই হল! আবদার অফ মামার বাড়ি। আমি এই বিয়ে মানছি না মানব না”।

সুভাস বাবু – মেনো না, কার কি এসে যায়। আকাশ সুনিতাকে নিয়ে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে তোমার সেটা ভালো লাগবে?

স্মৃতি দেবী – ইঃ চলে গেলেই হল। দশ মাস পেটে ধরে এতো কষ্ট করে মানুষ করলাম আর এখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!

সুভাস বাবু – তবে ছেলের ইচ্ছা মেনে নাও। আর তুমি তো আগে আকাশকে বলেছিলে ও নিজের বৌ নিজে ঠিক করতে পারে।

স্মৃতি দেবী – হ্যাঁ বলেছিলাম, তাই বলে এইরকম বিদেশী মেয়ে। একটা মাদ্রাজি পেত্নীকে বিয়ে করল। সবসময় অ্যান্ড্রা প্যান্ড্রা করে কথা বলবে। ম্যাগোঃ, আমি সবসময় ওইরকম কালো পেত্নীকে ঘরে দেখতে পারবো না।

সুভাস বাবু – দেখো সব আগে থেকে ভেবে নিও না। সব সময় যা ভাবো তা হয়না। বরঞ্চ তুমি যা যা ভাব তার কিছুই হয় না। তো চিন্তা করো না। তোমার আকাশের ওপর ভরসা রাখ। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্মৃতি দেবী – জানিনা যাও, পড়ে দেখা যাবে। এখন রাত হয়ে গেছে সবাই খেতে চল।

ওদিকে আকাশের ঘরে চন্দ্রিকা যায়। আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে। চন্দ্রিকা গিয়ে দাদার গলা জড়িয়ে ধরে। দুজনেই চুপ চাপ বসে থাকে। অনেক পড়ে আকাশ জিজ্ঞাসা করে, “সোনা বোন ভালো আছিস ? কতদিন দেখিনি তোকে, তোর সাথে কত কথা বলার আছে, এতদিন বাড়ীর সবাইকে ছেড়ে কোন দিন থাকিনি”।

চন্দ্রিকা – আমি ভালো আছি। আমার পড়াশুনো ভালো হচ্ছে, বাড়ীতেও সব ঠিক আছেতুই কেমন আছিস আর তোর সুনিতা কেমন আছে ?

আকাশ সুনিতার নাম শুনেই চুপ করে যায়। বলে, “ওর কথা ছেড়ে দে, অন্য কথা বল”।

চন্দ্রিকা – তুই আমাকেও কি মায়ের মত ভাবছিস। আমি জানি তুই বিয়ে করেছিস মানে খুব ভালো মেয়ে আর কোন কারনে তুই ওকে খুব ভালো বেসে ফেলেছিস। আমি খুব খুশী কিন্তু আমার বৌদিকে আমার কাছে কবে নিয়ে আসবি সেইটা বল

আকাশ – আমি আর সুনিতা শারীরিক ভাবে ভালো আছি। মানসিক ভাবে আমি একদমই ভালো নেই আর মনে হয় আমার সুনিতা সারাদিন শুধু কেঁদেই চলেছে। কাল অফিসে গিয়ে ফোনে ওর বাবার সাথে কথা বলবো তখন জানতে পারবো।

চন্দ্রিকা – তুই কি দেখলি সুনিতা মানে বৌদির মধ্যে যে এতো ভালবেসে ফেললি?

আকাশ – আমি শুধু ওর চোখ দেখেছি। আমি এতো নিস্পাপ মেয়ে কোনদিন দেখিনি। ও আমাকে শুধু ভালোবাসে না ও আমাকে মন প্রান দিয়ে পুজা করে। ওর সাথে যে কটা রাত কাটিয়েছি, ও আগে আমার সামনে বসে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করে আমারে কাছে এসেছে। আমাকে যে এই ভাবে ভালবাসতে পারে তাকে আমি কি করে ছেড়ে আসব বল?

চন্দ্রিকা – তুই সত্যি বলছিস যে বৌদি আগে তোর পুজা করে ? আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা আজকাল কার দিনে একটা মেয়ে এইরকম হতে পারে।

আকাশ – আমি প্রথম দিনেই ওর চোখ দেখে আটকে গিয়েছি। আর যেদিন ওর মন দেখেছি সেদিন থেকে ওকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি।

চন্দ্রিকা – আচ্ছা দাদা তুই কি বৌদির সাথে সত্যিকারের ফুলসজ্জা আর হানিমুন করেছিস।

আকাশ – হ্যাঁ বোন আমার, তুই আমার আদরের বোন, তোর কাছে মিথ্যাও বলবো না আর লুকাবও না। একটা ছেলে আর মেয়ে বিয়ের পরে যা যা করে আমরা তার সব কিছুই করেছি। পরে তোকে আমাদের হানিমুনে বেড়ানর সব কথা বলবো।

চন্দ্রিকা আকাশের গলা জড়িয়ে বলে – আমার দাদা পুরো পুরি অ্যাডাল্ট হয়ে গেছে। আমি খুব খুশী আর সুখী তোদের জন্য। চিন্তা করিস না মা সব মেনে নেবে আর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাত্রে খাবার সময় কেউ কোন কথা বলে না। স্মৃতি দেবী মুখ গম্ভীর করেই বসে থাকেন। চন্দ্রিকা একবার বলে যে দাদা কতদিন পরে সাথে বসে খাচ্ছে, একটু ভালোবেসে খেতে দিতে কিন্তু ওনার কোন বদল হয়না। সুভাস বাবু আকাশের মাথায় হাত রেখে ইশারাতে শান্ত থাকতে বলেন। বেশী কোন কথা ছাড়াই ওদের খাওয়া শেষ হয়। খাবার পরে সুভাস বাবু আকাশের সাথে ওর ঘরে আসেন। আকাশ বাবাকে জিজ্ঞাসা করে ও কি খুব বেশী কিছু অন্যায় করেছে একটা নিস্পাপ মেয়েকে ভালবেসে।

সুভাস বাবু বলেন, “দেখো একটু শান্ত ভাবে শোন। আমি কখনই বলিনি তুমি অন্যায় করেছ। আমরা কেউ দেখিনি মেয়ে টাকে। তাই আমার পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয় তুমি ঠিক করেছ না ভুল করেছ। তবু তোমার ওপর আমার একটা বিশ্বাস আছে যে তুমি জ্ঞানত কোন ভুল কাজ করবে না। তাই আমার বিশ্বাস যে তুমি নিশ্চয়ই ঠিক করেছ। এবার তোমার কি হয়েছিল আর কোন পরিস্থিতে তুমি বিবাহ করতে বাধ্য হয়েছ সেইটা আমাকে বল”।

আকাশ সুনিতার সাথে কি ভাবে দেখা হয়, কি ভাবে ওরা কাছা কাছি আসে সেই সব বিশদ বলে। তিনবন্ধু গল্পের বইটা আকাশ সুভাস বাবুর কাছ থেকেই পেয়েছিল। ওই বইটা সুভাস বাবুরও খুব প্রিয় বই ছিল। তাই উনি অনেকটাই বুঝতে পারলেন। তারপর আকাশ বলে, “বাবা আমাকে কোন পরিস্তিতিই বিবাহ করতে বাধ্য করেনি। তুমি নিশ্চিত থাকতে পার আমি সেইরকম কোন অনৈতিক কাজ কখনই করবো না। তবে আরেকটা জিনিস আমি তোমার কাছে স্বীকার করবো যে আমার সাথে সুনিতার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু সেটা বিবাহের পরে”।

এই জায়গাটাতে আকাশ সত্যি কথা বলার সাহস পায়নি। আর ওর পক্ষে সত্যি কথাটা বলে বোঝানও হয়ত সম্ভব হত না। তারপর আকাশ বলে সুনিতা কিভাবে ওর পুজা করে। সেই কথা শুনে সুভাস বাবু কিছুই বলতে পারেন না। উনিও কখনও ভাবতে পারেননি যে এইরকম মেয়ে হতে পারে। উনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে যে তুমি একদম সঠিক মেয়েই ঠিক করেছ তোমার জীবন সাথী হিসাবে। আমরা যে কেউ এই রকম মেয়ে স্ত্রী হিসাবে পেলে ভগবানের কাছে আর কিছু চাইব না। তবে বিবাহ কেন করলে এতো তাড়াতাড়ি”?

আকাশ বলে, “বাবা, তুমি সুনিতার বাবার দিক থেকে চিন্তা করো। ওর বাবা মায়ের কাছেও আমি একটা অজানা ছেলে, বাড়ি থেকে দু হাজার কিলোমিটার দূর থেকে গিয়েছি। ওনাদের আমি তোমার সম্বন্ধে আর আমাদের পরিবার সম্বন্ধে সব কিছুই বলেছি। সব জানা সত্বেও ওনারা আমার ওপর কি ভাবে ভরসা করবেন। রেজিস্ট্রি বিবাহ করাতে ওনাদের কাছে একটা তো আইনানুগ প্রমান আছে। সুনিতার বাবা মাকে ভরসা দেবার জন্য আমি বিবাহ করেছি”।

সুভাস বাবু – ঠিক আছে আমি সব বুঝলাম। আর এও বললাম তুমি যা করেছ ঠিক করেছ। কিন্তু আমাকে যেন তোমার নামে কোন খারাপ কিছু শুনতে না হয়। আমি তোমার মাকে সব বুঝিয়ে দেব।   
 
পরদিন আকাশ অফিসে গিয়ে সবার সাথে কথা বার্তা বলে। শুরুর দিকের কাজ গুলো শেষ করে পালঘাটে সুনিতার বাবার সাথে কথা বলে। সব খবর দেওয়া নেওয়া হলে জিজ্ঞাসা করে সুনিতার মনের অবস্থা কেমন। সুনিতার বাবা যা জানতেন সব বললেন। সুনিতা যে কলেজে যাওয়া শুরু করেছে সে খবরও দেন। আকাশ বলে ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব ব্যবস্থা করে জানাবে।

আকাশের বন্ধুরাও কিছু খবর শুনেছিল। আকাশ সংক্ষেপে সবাইকে বলে ওর প্রেম আর বিয়ের কথা। আকাশের সব বন্ধুরাই বলে একটা করে ‘তিনবন্ধু’ বই কিনবে ওদের মনের ভালবাসার মেয়েকে পড়ানর জন্য। আকাশ বলে শুধু পড়তে দিলেই হবে না। আগে নিজে পড়তে হবে আর তারপর প্রেমিকাকে পরে শোনাতে হবে। আকাশের বন্ধুরা ওকে কোলকাতার ‘ত্রিস্তান’ নাম দেয়।

আকাশ বাড়ি ফিরে বাবা মায়ের সাথে সেরকম কোন কথা বলে না। চুপ চাপ নিজের ঘরে চলে যায়। রবিবার ছুটির দিনেও বাড়ীর বাইরে যায় না। প্রায় এক অসামাজিক মানুষ হয়ে থাকেরবিবার দুপুরে খাওয়ার পরে চন্দ্রিকা দাদার সাথে কথা বলতে যায়। আগের দিনগুলোতে ও কলেজ আর কোচিং ক্লাস করে দাদার সাথে কথা বলার একদম সময় পায়নি। চন্দ্রিকা দাদার কাছে গিয়ে সেই চিরন্তন প্রশ্নটাই করে, “দাদা ভালবাসা আসলে কি”?

আকাশ বলে, “তোকে কে কে ভালোবাসে”?

চন্দ্রিকা – তুই ভালবাসিস, বাবা ভালোবাসে, মা ভালোবাসে।

আকাশ – আমরা ছাড়া আর কে কে ভালোবাসে তোকে ?

চন্দ্রিকা – কিছু বন্ধু ভালোবাসে। আর মামা, কাকা এইসব কিছু আত্মীয় স্বজন ভালোবাসে।

আকাশ – সবাই কি তোকে সমান ভাবে ভালোবাসে ? আর যারা যারা তোকে ভালোবাসে সবাই কে কি তুই মনে প্রানে একশ শতাংশ ভালবাসিস ?

চন্দ্রিকা – সবাই সমান ভালোবাসে না। কিছু বন্ধু আমার বেশী প্রিয়, কোন বন্ধু কম। কাকা বেশী ভালোবাসে না কিন্তু মামা খুব ভালোবাসে আমাকে। আর পুরোপুরি বিশ্বাস আমি কাউকেই করি না।

আকাশ – ভালবাসা কোথায় দেখতে পাস ?

চন্দ্রিকা – মুখে, ব্যবহারে আবার কোথায়।

আকাশ – দ্যাখ বোন আমরা ভালবাসা, বিশ্বাস, ভরসা সব কিছুই অন্য জনের চোখে দেখতে পাই। কে কতটা ভালোবাসে সেটা আমরা চোখের মধ্যে দেখতে পাই। আমাকে সেই ভালবাসার দৃষ্টি ব্যাখা করতে বললে আমি বলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের সবার ব্রেনে আর অবচেতন মনে সেই ভালবাসার দৃষ্টি এঁকে রাখা আছে। আমাদের অবচেতন মন ঠিক বুঝে নেয় কে কতটা ভালোবাসে।

চন্দ্রিকা – আর বিশ্বাস বা ভরসা ?

আকাশ – আমি যদি তোকে এক গ্লাস গরম জল এনে তোর গায়ে ঢেলে দিতে যাই তুই কি করবি ?

চন্দ্রিকা – সরে যাব। তোকে জল ঢালতেই দেব না।

আকাশ – আমি যদি এক গ্লাস গরম জল নিয়ে সুনিতার গায়ে ঢেলে দিতে যাই, সুনিতা একটুও নড়বে না বা ভয়ও পাবে না কারণ ওর একশ শতাংশ বিশ্বাস আছে আমার ওপরে যে আমি ওর কোন ক্ষতি করতেই পারি না। এটাই ভালবাসা।

তারপর আকাশ আরও অনেক কিছু বলে বোন কে। ওদের ভালবাসা কিভাবে শুরু হল। কিভাবে দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতে শুরু করল সব বলে বোন কে। রোজ সকালের সূর্যোদয় দেখা থেকে, মালম্বুলাহ ড্যাম ঘুরতে যাওয়ার কথা, ক্যানালের ধারে ঘুরতে যাওয়ার কথা, সেই সবও বলে। চন্দ্রিকা ওদের হানিমুনের কথা জিজ্ঞাসা করলে আকাশ যতটা বোনকে বলা সম্ভব তাই বলে। তবে কন্যাকুমারিতে খোলা বারান্দায় বসে আরও অনেক লোকের চোখের সামনে সঙ্গমের কথাও বলে।

চন্দ্রিকা – দাদা তুই তো একেবারে কামাল করে দিয়েছিস। আমি ভাবতেই পারছি না আমার দাদা এতো বড়ো হয়ে যাবে। ইস যদি আমারও তোর মত একটা বয় ফ্রেন্ড থাকতো কি ভালো হত। কোন ছেলে যদি আমাকে এইভাবে ভালোবাসে ও গরম জল কেন গরম তেল, লোহার ডান্ডা যাই নিয়ে আসুক না কেন আমি ভয় পাবো না।

আকাশ – কোন ছেলে তোকে ওইরকম ভালবাসার আগেই তোকে ওইরকম ভালবাসতে হবে। ভালবাসা দিলেই তুই ভালবাসা আশা করতে পারিস। পৃথিবীতে মায়ের ভালবাসা ছাড়া আর কারো ভালবাসা এক তরফা সম্ভব হয় না। দুজনেই যখন দুজনের চোখে ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখতে পায় তখনই সার্থক ভালবাসা হয়। আমি আর সুনিতা দেখিয়ে দিতে চাই যে আজকের দিনেও এই ভাবে ভালবাসা সম্ভব।

চন্দ্রিকা – দাদাভাই তুই ভাবিস না আমি আর বাবা ঠিক তোর এই ভালবাসা মাকে বুঝিয়ে দেব। খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।
[+] 4 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 28-06-2021, 12:11 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 28-06-2021, 12:29 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 01:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 02:30 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 29-06-2021, 05:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 01-07-2021, 01:35 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 02-07-2021, 05:55 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 05-07-2021, 10:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 06-07-2021, 01:26 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 07-07-2021, 04:03 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 07-07-2021, 07:13 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:14 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:54 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:44 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:45 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:47 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:48 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:49 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:51 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Siraz - 06-01-2022, 10:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 30-03-2022, 01:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 09-01-2023, 07:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by S_Mistri - 09-01-2023, 10:10 AM
RE: সুনিতা মাতা - by kourav - 12-01-2023, 07:38 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)