Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুনিতা মাতা
#39
তারপর সকালে মুখ হাত ধুয়ে সেই দাদা বৌদির হোটেলে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে। আকাশ অনেকদিন পরে রুটি তরকারি খেতে পায় আর বেশ আনন্দ করে আটটা রুটি খায়। সুনিতা জিজ্ঞাসা করে এতো রুটি কেন খাচ্ছে। পেছন থেকে বেশ মজা করে ইংরাজিতেই বলে সকাল বেলা অতটা এনার্জি খরচ করলে খিদেতো পাবেই। আকাশ সুনিতা দুজনেই মুখ ঘুড়িয়ে দেখে ওদের পাস্রে রুমের সেই ছেলেটা আর মেয়ে দুটোও খাচ্ছে। সুনিতা লজ্জায়মুখ নামিয়ে নেয়। আকাশ আবার দুঃখিত বলে। ছেলেটা উঠে এসে ওদের কাছে ক্ষমা চায় ওই ভাবে বলার জন্যে। বলে ও কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বলেনি। সত্যি ওদের সকালে একটুও অশালীন লাগেনি বরং খুব ভালো লেগেছে। ওর বৌ আর শালি সাথে ছিল। ওদেরও কিচ্ছু খারাপ লাগেনি। আকাশ বলে ওরা হানিমুনে গিয়েছে। তারপর কিছু কথা বলে যে যার মত ফিরে যায়।


তারপর আকাশ আর সুনিতা বিবেকানান্দ রকে যায়। মেইন ল্যান্ড থেকে বেশ অনেকটা দুরে। স্টিমারে করে যেতে হয়। ওরা দুজনে স্টিমারে ওঠে। বেশ ভালই ভিড় ছিল। উত্তাল সমুদ্রে সে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। মাত্র পনের মিনিট সময় লাগে কিন্তু তার মধ্যেই স্টিমার একবার বাঁদিকে আর একবার ডান দিকে হেলে যেতে থাকে। যারা সিটে বসে ছিল সব হুমড়ি খেয়ে পরে উলটো দিকে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবার সবাই উলটো দিকে পরে যায়। কেউ আর বসে থাকে না। সবাই দাঁড়িয়ে পরে। সুনিতা আকাশের বুকের মধ্যে শক্ত হয়ে ধরে দাঁড়ায়। আকাশ মুখে বলে ও সাথে আছে কোন ভয় নেই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আকাশের জিব শুকিয়ে যায়। কিন্তু বেশ মজাও লাগে। তারপর রকে পৌঁছে আকাশের মন উদাস হয়ে যায়। ও ভাবে বিবেকানন্দ কিসের টানে এই এতোটা সমুদ্র সাঁতার কেটে পাড় হয়ে এসেছিলেন। ও সুনিতার হাত ধরে এক দিকে অনেকক্ষণ বসে থাকে। তারপর চারদিক দেখে। সুন্দর পরিষ্কার স্মৃতি সৌধ। খুব ভালো ভাবে গুছিয়ে রাখা। বিবেকানন্দের জীবনের অনেক না জানা কথা আর ছবি রাখা আছে। আকাশ ভাবে এতদিনেও ওই একজন মহাপুরুষের জীবন আমরা ঠিক মত বুঝতেও পারিনি মেনেও চলিনা। এক দিকে একটা বেশ বড়ো ফলকের ওপর কাদের দানে ওই সৌধ বানানো হয়েছে সেটা লেখা। অনেক ছোটো বড় কোম্পানির নামের সাথে আকাশ অবাক হয়ে দেখে “গণেশ বিড়ি” পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছে।   
ওখান থেকে ফিরে হোটেলে দুজনে চান করতে যায়। সুনিতা বলে ওকে আদর করতে। আকাশ বুঝতে পারে সুনিতা কি চায়। ও সুনিতার সামনে বসে আবার ওর নাভিতে হাত দেয়। সুনিতা যা চাইছিল তাই হয় – ও আকাশের গায়ে হিসু করে দেয়। দুজনেই জলের মধ্যে ভালবাসাবাসি করে। তারপর কন্যাকুমারি মন্দির দেখতে যায়। সেখানেও ঢুকতে গেলে ছেলেদের ধুতি পড়তে হবে। আকাশ বাইরেই থাকে, সুনিতা ভেতরে গিয়ে দেখে আসে। সমুদ্রের ধারে একটু ঘোড়া ফেরা করে। ওখানে সমুদ্র বিশাল, বেশ বোঝা যায় তিন দিকেই জল মাঝখানে একটু খানি জমিতে ওরা দাঁড়িয়ে। কিন্তু ভীষণ অশান্ত সমুদ্র। এতো উত্তাল হাওয়া যে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। এত ঢেউ যে কেউ সমুদ্রে চান করার কথা চিন্তাই করে না।

ওরা বাসে করে ত্রিবান্দ্রম ফিরে যায়। তখন দুপুর তিনটে বাজে। ওখান থেকে পালঘাটে ফেরার বাস সন্ধ্যে সাতটায়। আকাশ খোঁজ নিয়ে জানে পাশে একটা বেশ বড়ো মন্দির আছে। পদ্মনাভন স্বামী মন্দির। ওরা দুজনে মন্দিরে যায়। বেশ পয়সাওয়ালা মন্দির। চারিদিকে প্রাচুর্যে ভর্তি। আকাশের খুব একটা ভালো লাগে না মন্দিরে এতো ঐশ্বর্য দেখতে। মন্দিরের বাইরে দেখে কলার চিপস (কাঁচাকলা পাতলা পাতলা করে কেটে নারকেল তেলে ভাজা) গরম ভেজে বিক্রি হচ্ছে। সুনিতা বলে ও কিনবে। আকাশ গরম কলার চিপস কিনে দেয়। বেশ ভালো খেতে। তারপরেও বাসের অনেক দেরি। গিয়ে বাসের টিকিট কেটে নেয়। একটা দোকান থেকে আকাশ মীনার জন্যে বই আর খেলনা কেনে। পাশে একটা বেশ বড়ো পার্ক আছে, সেখানে গিয়ে দুজনে বসে থাকে আর ভালবাসার কথা বলে।

আকাশ সুনিতাকে পালঘাটে পৌঁছে দিয়ে কোলকাতা ফিরে যাবে। সুনিতা বলে এই কয়দিন বেশ ভালো ভাবে কাটল। ওর সত্যি মনে হচ্ছে হানিমুন আরও কিছুদিন বেশী হলে ভালো হত। কিন্তু এর পরে ও আকাশকে ছাড়া কি ভাবে থাকবে। আকাশও বলে ও ও থাকতে পারবে না সুনিতাকে ছেড়ে। তাই কিছু একটা করে ওকে সুনিতার কাছে ফিরে যেতেই হবে। এইভাবে এক সময় সময় শেষ হয়। ওরা বাসে গিয়ে বসে। দুজনেই ক্লান্ত আর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে পালঘাট পৌঁছায়। বাড়ীতে গিয়ে সুনিতা মাকে জড়িয়ে ধরে। সারাদিন সুনিতার মাকে আর বন্ধুদের হানিমুনের গল্প করতেই কেটে যায়। ওর দুই বন্ধুও এসেছিল। লতা সুনিতাকে বলে আকাশের সাথে থাকতে। আকাশ প্রদিন সকালে চলে যাবে। তারপরে ওরা এসে সব গল্প শুনবে। আকাশও একবার ওর অফিসে যায় এক ঘণ্টার জন্যে। সবার সাথে দেখা করেই ফিরে আসে। বাকি সময় সুনিতার সাথেই কাটায়।

রাত্রি বেলা আকাশের খেয়াল হয় ওর সাথে কনডম নেই আর এর আগের দুদিন যতবার সুনিতার সাথে মিলিত হয়েছে কনডম ছাড়াই হয়েছে। ওর একটু ভয় ভয় লাগে। তারপর ভাবে ঠিক আছে কোন অন্যায় তো করেনি। কিছু হলে ওদেরই হবে, ভালই হবে। রাত্রে দুজনে নিবিড় ভাবে মিলিত হয়। দুজনের ভালবাসার ইচ্ছা ছিল কিন্তু উচ্ছাস ছিল। এর আগের কিছুদিন কন্যাকুমারির সমুদ্রের মত ভালো বেসেছে। কিন্তু সেই রাতে কোভালামের সমুদ্রের মতো শান্ত ধীর স্থির। আকাশের ময়ুর মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সুনিতার ক্যানালও জলে ভরে ছিল। কিন্তু ময়ূরপঙ্খী ভাসানর শক্তি ছিল না। আকাশ তাও এক সময় ভাসিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে জল কেটে এগিয়ে চলে ওর নৌকা। এক সময় লক্ষে পৌঁছেও যায়। তারপর দুজনে একে অন্যের বুকে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে দুজনে ওদের পুরানো জায়গায় সূর্যোদয় দেখতে যায়। দুজনে নীরবে বসে থাকে। দুজনেরই চোখ নিঃসীম শুন্যের দিকে তাকিয়েএকটু পড়ে সূর্য উঠে এলে সুনিতা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। আকাশের বুকের মধ্যে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আকাশের চোখ দিয়েও ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তে থাকে। আকাশ একটু পড়ে সুনিতার মাথায় হাত রেখে বলে, “দেখো সূর্যের রশ্মি কত উজ্জ্বল, সূর্য দেব আমাদের বলছেন আমাদের দুঃখের দিন বিরহের রাত বেশী সময়ের জন্য নয়। খুব তাড়াতাড়িই আমরা আবার একসাথে থাকব। আবার এইভাবেই দুজনে দুজনকে ভালবাসব। তুমি কেঁদো না সোনা, কেঁদো না। দেখো আমি কি কাঁদছি”।

এই বলেই আকাশও কেঁদে ফেলে। রাজন আর সুনিতার মা বেড়িয়ে আসে। দুজনকে ধরে ঘরে নিয়ে যায়। তারপর আকাশ তৈরি হয়ে নেয়। সুনিতার বাবা ওকে সাবধানে থাকতে বলেন। আকাশ বলে ও কোলকাতা অফিস থেকে ওনাকে ফোন করবেন। সবাইকে বিদাই জানিয়ে আকাশ চলে যায়। রাজন গিয়ে ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসে।

সুনিতার কথা আমি লিখতে পারবো না। সবার কাছ থেকে ক্ষমা চাইছি যে ওর মনের অবস্থা বোঝানর মত লেখার শক্তি আমার নেই। সুনিতা কাঁদেওনি একটুও। ওর সব চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ও জোর করে দুদিন আগের কথা মনে করতে চাইছিল। কিন্তু তখন ওর মনের ভেতর টা আরও হু হু করে কেঁদে ওঠে। ও ঘরের কোনায় চুপ করে দুই হাঁটুর মাঝে মুখ রেখে বসে থাকে।
সখি ভালবাসা এমনই যাতনা ময় !        

দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত।
[+] 3 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply


Messages In This Thread
সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 28-06-2021, 12:11 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 28-06-2021, 12:29 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 01:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 02:30 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 29-06-2021, 05:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 01-07-2021, 01:35 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 02-07-2021, 05:55 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 05-07-2021, 10:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 05-07-2021, 11:11 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 07-07-2021, 04:03 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 07-07-2021, 07:13 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:14 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:54 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:44 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:45 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:47 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:48 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:49 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:51 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Siraz - 06-01-2022, 10:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 30-03-2022, 01:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 09-01-2023, 07:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by S_Mistri - 09-01-2023, 10:10 AM
RE: সুনিতা মাতা - by kourav - 12-01-2023, 07:38 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)