Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#67
এগারো
 
মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছেকেন জানি না শুক্লার বাড়ী থেকে ফিরে আসার পরই শরীরটা কিরকম খারাপ লাগছিল আমারপেটের কাছটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছিলঠিক যেমন আলসার কোলাইটিসের সময় ব্যাথাটা ওঠে, ঠিক তেমনইভীষন একটা যন্ত্রণা অনুভব করে বারান্দা থেকে আমি ঘরে ফিরে এলামকোমরের কাছটায় হাত দিয়ে একটু কাতরাতে শুরু করেছিযন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলাম,ও মা গোআবার সেই যন্ত্রণা।’
ঘরের মধ্যে জলের বোতলটাও নেইউঠে যে খাওয়ার ঘরে ফিল্টারের কাছে যাব, একটু জল খাবো সে সামর্থও নেইআমার চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে, বুঝতে পারছি এ যন্ত্রণা সারা রাত ভোগাবে আমায়সকাল অবধি আর ঘুম হবে না
কোমরের দুপাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লামটানটান পুরো শরীরটা নিমেষের মধ্যে ব্যাখায় আবার কুঁকড়ে গেলযন্ত্রণাটা তখন ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে উঠছে।  মনে হল, এই সময় কাউকে যদি পাশে পেতাম খুব ভাল হতকেন যে ব্যাথাটা থেকে থেকে এরকম কষ্ট দেয় বুঝি নাএই বেশ আছি, আবার শরীরটা খুব খারাপসুস্থ সবল শরীরটা হঠাৎই বিষন্ন, ভীষন দূঃখীকি জানি মনের সঙ্গে বোধহয় শরীরেরও একটা যোগসাজশ আছে বোধহয় একটা অলৌকিক কোন শক্তি যে শক্তিটাই আমাদের ঠিক থাকতে দেয় না
মা ঘুমোচ্ছে অন্যঘরে এই মূহূর্তে মাকে ডাকাটা ঠিক হবে না মা আমার অনেক কষ্ট করে, সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেমায়ের ঘুমের ব্যাঘাত আমি ঘটাতে চাই নাচোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে তাই যন্ত্রণাটা সহ্য করার চেষ্টা করে যেতে লাগলামমনে হল পেটের ভেতরে কে যেন হাতুড়ী মারছে, এক্ষুনি নাড়িভূড়ি সব বেরিয়ে পড়বেএকটা অসহায় মানুষের মতন সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, ‘হায় ভগবান এতটা কষ্ট দিও না আমায়।’
বিচিত্র মানুষের শরীরহঠাৎ কিছু একটা হয়ে গেল, অমনি শরীরটা বিগড়ে গেল, ব্যস, হয়ে গেল তার দফারফাডাক্তার বলেছিল, খাওয়াদাওয়ার কিছু গড়বড় হলেই কিন্তু এই রোগটা মাঝে মধ্যে আবার দেখা দেবেসুতরাং সাবধানে থাকতে হবে আপনাকেগোলমাল হলেই ব্যাথাটা আবার আপনাকে কষ্ট দেবেআর ব্যাথা যদি না কমে, তাহলেই বুঝবেন, বাথরুমে গিয়ে আবার সেই থোকা থোকা রক্তডাক্তার ডেকে, ওষুধ খেয়ে হয়রানিনার্সিংহোমে ভর্তীএক গাদা শুধু পয়সা নষ্ট
 আমি কি এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি না?
হ্যাঁ পারেনতারজন্য খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করতে হবেআমি জানি, আপনি কাজের মানুষ, কিন্তু বাইরের হাবিজাবি খাওয়া একদম চলবে নাতাহলেই কিন্তু-
‘কিন্তু ডাক্তার আমি তো এই শেষ কয়েকমাসে বাইরে উল্টোপালটা কিছু খাই নিতাহলে কেন এমন হচ্ছে?’
মনে হল আপন মনে আমি কথা বলছি বিড় বিড় করেডাক্তার আমার পাশে নেইঅথচ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন ডাক্তারের সাথেই কথা বলছি
অনেক কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস জল নেবার জন্য ফিল্টারের দিকে এগোতে লাগলামমনে হল গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, সমস্ত শরীরটা জবজব করছে ঘামে, এইবার মনে হয় ধুপ করে আমি মাটিতে পড়েও যাবযেন শরীরে শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট  নেই আমাররোগটা হঠাৎই শরীরে নতুনভাবে দানা বেঁধেছে, আমার সমস্ত শক্তিকে সে কেড়ে নিতে চাইছে
ফিল্টার থেকে আমি গ্লাসে জল গড়াতে লাগলামতলপেটের কাছটা চিনচিন করছেপেটের কাছটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম, ‘বিদিশা, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে না যেতে, তাহলে হয়তো এই কষ্ট কোনদিন আমার হত নাআজ তুমি ফিরে এসেছোতাও পুরোন ব্যাথা সেই আমাকে আবার কষ্ট দিচ্ছে।’
এবার জল গড়াতে গিয়ে দুম করে মাটিতে পড়েও গেলামমাথার কাছটা ভীষন জোরে আঘাত লাগলমনে হল মাটিতে লেগে মাথার পিছনটা যেন নিমেষে ফুলে আলুর মতন ঢোল হয়ে গেলমেঝেতে গ্লাসটা পড়ল, ঝনঝন করে একটা শব্দ বয়ে গেল
বেশ জোরে শব্দটা হয়েছেমা’রও ঘুম ভেঙে গেছে আওয়াজ শুনেমা, ছুটে এসেছেদেখছে, মেঝেতে শুয়ে আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিআমার পেটের কাছটা আর মাথার পিছনে, দুটো জায়গাতেই ভীষন ব্যাথা অনুভব করছিআমি আর পারছি না
মা বেশ ভয় পেয়ে গেলআমাকে বলল, কি হয়েছে তোর?
আমি বললাম, মা, মনে হচ্ছে সেই আলসার কোলাইটিসের ব্যাথাটা আবার চাগাড় দিয়েছেভীষন কষ্ট হচ্ছে
মা বলল, আমাকে ডাকবি তো তুই? দেখেছ কান্ডওঠ, ওঠ, দেখি একটু কষ্ট করে
আমার কাঁধটা ধরে, মা আমাকে ওঠানোর চেষ্টা করতে লাগলনিজেই কেমন শক্তিশূণ্য হয়ে গেছিমাকে বললাম, ‘মা দেখো তো ওষুধের বাক্সেতে কোলাইটিসের ওষুধটা আছে কিনা? ভীষন ব্যাথা করছেমনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।’
- ‘দূর পাগলঅমন কথা মুখে আনতে আছে?’ মা, তাড়াতাড়ি ওষুধের বাক্স থেকে একটা ট্যাবলেট বার করে, আমার মুখে দিলফিল্টার থেকে জল গড়িয়ে আমার মুখে ঢালতে লাগলআমাকে বলল, ‘আসতে আসতে ওঠার এবার চেষ্টা কর, আমি তোকে বিছানায় নিয়ে যেতে সাহায্য করছি কেন ব্যাথাটা কি খুব বেশী হচ্ছে?’
মাকে বললাম, উঠতে পারছি না মা, ভীষন ব্যাথা হচ্ছেআমি আর পারছি না।’
আমার কষ্ট দেখে মা ভীষন নার্ভাস হয়ে পড়েছে, বুঝতে পারছি মা না এবার কাঁদতে শুরু করে দেয়হঠাৎই দেখছি, আমার মাথার কাছে বিদিশাআমাকে বলছে, ‘ওঠো একটু চেষ্টা করেতুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়, তাহলে আমারই বা চলবে কি করে?’
ভীষন কাঁদছে বিদিশাআমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে চেষ্টা করছিকিন্তু আমার হাত বিদিশার চোখের কাছে কিছুতেই পৌঁছোচ্ছে না
 কেন এমন হচ্ছে আমার? ভীষন বাজে একটা অসুখচোখে শুধু ঝাপসা দেখছিমাথাটাও ঘুরছে বনবন করে।  আবঝা আবঝা দেখছি, সারা ঘর জুড়ে শুভেন্দু, রনি, মাধুরী এমনকি শুক্লাও অস্থিরভাবে ঘোরাঘুরি করছেআমার দিকে ওরা ঘনঘন তাকাচ্ছে, আমার দিকে হাত বাড়াতে চাইছে অথচ আমার এই অস্থির অবস্থা দেখেও, ওরা যেন আমার জন্য কিছুই করতে পারছে না
মা চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘ওঠ, খোকাএকটু চেষ্টা করআমি তোকে ধরছিওষুধ তো খেয়েছিসএবারে ব্যাথা কমে যাবেএকটু চেষ্টা করএকটু ধৈর্য ধর।’
কোনরকমে মা’কে ধরে আমি ওঠার চেষ্টা করতে লাগলামশরীরের সমস্ত রয়ে যাওয়া শক্তিগুলো দিয়ে মায়ের হাতটা ধরার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম নাআবার শরীরটা মাটিতে আছড়ে পড়লকে যেন মেঝের সঙ্গে আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চাইছেশরীরটা মেঝের সঙ্গে একেবারে গেঁথে গেছেপৃথিবীর যেন কোন শক্তিই নেই, আমাকে টেনে তোলে
ভগবান আমাকে দয়া করআমি বাঁচতে চাইওহ্ কি কষ্ট, কি যন্ত্রণাকি ভয়ানক ব্যাথাআমার পেট থেকে এখন সারা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে ওই ব্যাথাটামনে হচ্ছে এই বুঝি আমার চোখের পাতা বুজে গেলকাল সকালে চোখ খুলে সূর্যের মুখটা আমি বোধহয় আর দেখতে পারব না
জ্ঞান হারাবার আগে, শেষবার মায়ের মুখ থেকে একটা চীৎকার শুনলামমা চেঁচিয়ে উঠল খোকা বলেতারপর আর আমার কিছু মনে নেই
 
সকালে চোখ খুলে দেখি, বিছানায় শুয়ে আছিকি করে ওই অবস্থায় বিছানায় এলাম তাও জানি না।  আমার মাথার কাছে দেখি মা বসে আছেডাক্তার এসেছেনআমাকে পরীক্ষা করছেন, আমার তলপেট চেপে চেপে দেখছেন, ব্যাথাটা আছে না চলে আছে
ওনার নাম ডাক্তার এস বাসুআমাদের হাউজ ফিজিশিয়ানসব কিছু পরীক্ষা টরীক্ষা করে বললেন, শেষ কবে হয়েছিল, কোলাইটিস?
আমি বললাম, তাও সাত আট বছর আগে
আমাকে বললেন, এখনো মিল্ক প্রোডাক্ট খাও তুমি?
আমি বললাম, না ও তো অনেক দিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি
ডাক্তার বললেন, ‘রোগটা এমনইসামান্য কিছু থেকেই আবার ফর্ম করে নেয়তাও ভয়ের কিছু নেইতোমার কপাল ভাল, অত রাত্রে তোমার বন্ধু চলে এসেছিল গাড়ী নিয়েতোমার মা ভাগ্যিস তাকে ফোন করেছিলেনআমাকেও ফোন করেছিলেনআমি অত রাত্রে এসে দেখি, তোমার বন্ধু তার আগেই তোমাকে ওঘর থেকে তুলে এঘরে নিয়ে এসেছেচোখে মুখে জল দিয়ে তোমার জ্ঞান ফেরানোর অনেক চেষ্টা করছেআমি এসে তোমাকে আবার ওষুধ দিইব্যাথাটা ভাগ্যিস আর বাড়ে নিতাহলে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হতএখন কদিন ভারী খাবার একদম খাবে নাদু তিনদিন হালকা কিছু খাওআর ঠান্ডা খাবার খাবেগরম করা কোন জিনিষই নয়তিন চারদিন বাড়ীতে পুরো রেস্ট নিতে হবেঅফিস, কাজ বন্ধতারপর তুমি আবার পুরোপুরি সুস্থ।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকালাম, মা’কে বললাম, কে এসেছিল মা?
মা বলল, ‘শুভেন্দু।’
তুমি ফোন করেছিলে ওকে? অত রাত্রে?
মা বলল, ‘কি করব বল? আমার টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে তখনতোর যদি কিছু হয়ে যেত?’ বলেই মা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 04-07-2021, 10:01 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)