Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#53
আমি বললাম, ‘মা তো ঘরে নেইতাহলে বস, আমি চা করে নিয়ে আসছি।’
কি বলতে কি বলে বসলাম, মিনুর দেখলাম, মুখটা বেশ খুশী খুশী হয়ে উঠলমা’র ঘরে না থাকাটা ওর কাছে যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতনউঠে আমারই পেছন পেছন চলে এল মিনুআমাকে বলল, ‘তুই একা কেন চা করবি? চল আমিও তোকে সাহায্য করছি।’
আমার রান্নাঘরে যেখানে স্টোভটা রাখা রয়েছে, মিনু আমার পিছন পিছন ঠিক ওখানটাই এসে দাঁড়ালোঅস্বস্তি হচ্ছে আমারএকে মা ঘরে নেইমিনু জ্ঞানহারা হয়ে হঠাৎ যদি কিছু করে বসে আমার আফশোসের শেষ থাকবে না বেয়ারাপনা শুরু করলে আর একে কেলেঙ্কারী সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে মিনুর কোন জুড়ি নেই
হঠাৎই পেছনে দাঁড়িয়ে মিনু বলল, ‘রীনার খুব মন খারাপতুই ওকে হ্যাঁ বলে আসিস নিও আর গান গাইবে না বলছেরেওয়াজও বন্ধ করে দিয়েছেবলছে, দেবদা যতক্ষণ না আমাকে আবার গান শেখাতে না আসছে, আমি আর হারমোনিয়াম ধরব নাএবার থেকে গান গাওয়া আমি ছেড়ে দিলাম।’
আমি বললাম, ‘দেখ, গান তো সেভাবে আমি কাউকেই শেখাই নাতুই জোর করেছিলিস, তাই রীনাকে গান শেখাতে আমি রাজী হয়েছিলামওকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করমাষ্টারের কি অভাব আছে? বেস টা তো ভালভাবে তৈরী হয়ে গেছেতাছাড়া রীনার গলায় সুর আছেগলাও মিষ্টিআর আমি তো একজনের কাছে ওকে পাঠিয়েছিলামসেখানে যাওয়াই বা বন্ধ করে দিল কেন? থাকলে এতদিনে তো ভাল তৈরী হয়ে যেত।’
মিনু বলল, ‘আমি অনেক বুঝিয়েছিকিছুতেই আমার কথা শুনছে নাতাই তো তোর কাছে ছুটে এলাম।’
মিনুকে এবার মুখের ওপর না ই বলে দিতে হল আমাকেওকে বললাম, আমাকে মাফ কর মিনুআমার পক্ষে আর সম্ভব নয়আমার মাথার উপরে এখন অনেক দায়িত্বতাছাড়া সময়েরও খুব অভাবকথা দিয়েও যখন কথা রাখতে পারব নাতখন শুধু শুধু আস্বাস দিয়ে কোন লাভ নেইআমি পারব নাকিছুতেই পারব না।’
হঠাৎই মিনু আমার হাতটা ধরলওর এই হাত ধরার মানেটা আমার কাছে পরিষ্কার হল তখনই, যখন মিনু বলল, তোকে একবার রিকোয়েস্ট করবতুই একবার অন্তত আমার বাড়ী আয়রীনাকে তুই ই বোঝাআমার দ্বারা ওটা সম্ভব নয়।’
আমি মিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছিকিন্তু বরাতে যে আমার দূঃখ আছেতখনো জানতাম নাকথায় বলে পৃথিবীর সব থেকে সুখী লোকও যেকোন মূহূর্তে দূঃখী বনে যেতে পারেহঠাৎই বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়ে যাবার মতন মিনুকে বলে বসলাম, ‘কবে যেতে হবে বল? আমি গিয়ে বোঝাবো রীনাকেআশাকরি ও নিশ্চই আমার কথা ফেলবে না।’
মিনুর সঙ্গে আমার ব্যবধানটা যতটাই বেড়েছিল, ঠিক ততটাই আবার কমে গেল সেই মূহূর্তেওর ওই আমন্ত্রণের মধ্যে যে একটা রহস্য আছে, তখনো আমি নিশ্চিত নইধরেই নিলাম মিনু সত্যি কথাটা বলছেঅন্তত রীনার কথা ভেবে মিনুর বাড়ীতে আমার যাওয়া দরকার
মিনুকে চা করে খাওয়ালামএকগাল হেসে মিনু বলল, ‘তোর ভারী ভয় শুধু আমাকে নিয়ে।  এতই তুই বিদিশাকে ভালবাসিস, অন্যকোন মেয়েছেলের সংস্পর্ষেও আসতে চাস নাআরে আমরা তো ভাল বন্ধু হতে পারি না কি? মিনু নয় তোর ভালবাসার পাত্রী হতে পারল নাকিন্তু বন্ধু হতে চাইলেও তুই কি না করবি আমাকে? কেন বিদিশার কি ছেলেবন্ধু একেবারেই নেই?’
 মিনুকে বললাম, ‘আগে হয়তো ছিলকিন্ত আমার সঙ্গে প্রেম শুরু করার পর থেকে, যতদূর জানি, বিদিশার কোন ছেলেবন্ধু নেই।’
হো হো করে হেসে উঠল মিনুআমাকে বলল, তোর সাথে শুক্লারও তো খুব ভাল দোস্তী ছিলতা বিদিশা সেখানে কোন আপত্তি করেনি?
আমি বললাম, ‘শুক্লা নিজেই তো পরে সৌগতর সাথে প্রেম করেছেআপত্তি থাকবে কেন? তাছাড়া শুক্লার সঙ্গে সেভাবে তো আমি কোনদিন মিশিনিবিদিশা প্রথম প্রথম সেটা দেখে একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও, পরে খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছেতাছাড়া শুক্লা, বিদিশা দুজনেই ওরা খুব ভাল বন্ধুখামোকা বিদিশা রাগ করতে যাবে কেন?
মিনু বলল, ‘এই আমিই কারুর ভাল বন্ধু হতে পারলাম নাতাই না? সবার দুচোখের বিষ হয়ে গেছিআমার যেন কারুর কাছে মুখ দেখানোর আর জো নেই।’
মিনুকে বললাম, ‘এসব মন খারাপের কথা ছাড়এবার তুই বল, তুই নিজে বিয়েটা কবে করছিস?’
একটা হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে মিনু যেন আমার মুখের দিকে তাকালোআমাকে বলল, ‘আমি ভাবছি, এ জীবনে বিয়ে থা আর করব না
আমি বললাম, কেন রে?
মিনু বলল, ‘আমার তো অনেক বদনাম আছেবিয়ে করলেই কি বদনাম সব ধুয়ে যাবে? ওসব বিয়ে ফিয়েতে আমার বিশ্বাস নেইফটর ফটর করে কটা অজানা সংস্কৃত মন্ত্র পড়লেই কি সব হয়ে যায় নাকি? দাউ দাউ আগুনে হাত রাখলেই কী আর সতী হওয়া যায়? আমাদের এই মেয়েদের শরীরটাকে নিয়ে সব থেকে বড় জ্বালা, মনের অরণ্যে সবসময় জ্বলছে দাউ দাউ আগুনতোরা যতই বলিস না কেন, মেয়েরা লজ্জ্বাবতী লতাআমি তো বিশ্বাস করি নাবিধাতা আমাদের ওভাবেই তৈরী করেছেবিশ্বে এমন কোন পুরুষ আছে কি যে আমাকে সেন্ট পার্সেন্ট খুশি করতে পারবে? আমার মনে হয়, কেউ বোধহয় এমনটা সুখী হয় নাসুখী সুখী মুখ করে বসে থাকে সবএসব দের ন্যাকামি আমি পছন্দ করি না।’
ভাবছিলাম, আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে ওকে হয়তো বলে বসত, জিও বেটি হাজার সালতোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুকতুই শালি ঠিক কথা জেনেছিস তোসত্যি এই পৃথিবীতে এমন কোনো আখাম্বা দন্ড নেই যা মেয়েদের একশো ভাগ সুখি করতে পারেতবুও তো তার মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে হয়এক দন্ড থেকে আর এক দন্ডে নিরন্তর পরিভ্রমণ করতে হয়দেখতে হয় কে সব থেকে বেশি আনন্দ দিতে পারে
মিনুকে দেখে আমার ওই মূহূর্তে তাই মনে হলএ মেয়ে বিয়ে থা সত্যি আর করবে নাশুধু শুধু ঘনঘন বয় ফ্রেন্ড চেঞ্জ করবে
ভাগ্যিস আমার কপালটা এরকম নয়আমাকে নিয়ে বিদিশা ছেনাল খেলা খেলবে না কোনদিনকিছুদিন খেলাটা চলল, তারপর এঁটো পাতার মতো তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল ডাস্ট বিনেপরে দেখছি, কুকুরের কাড়াকাড়ি
জীবন নাটকের পরবর্তী অধ্যায় যে শুরু হচ্ছে তার একটু পরেই, তখনো জানি নামিনু একেবারে হাত পা ছড়িয়ে আমার সাথে বসার ঘরে সোফায় বসে কথা বলছেঠিক তখুনি শুনলাম, দরজায় কলিংবেলের শব্দচমকে উঠলামএই সময় কে এল?
দরজা খুললাম, দেখি বিদিশা দাঁড়িয়ে
আমার হাট বিটটা একটু বেড়ে গেলওর মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলামহঠাৎ যেন ভূত দেখার মতন দেখছিবিদিশাকে বললাম, ‘তুমি যে বললে বড় আসবে না? হঠাৎই চলে এলে? আমাকে তো জানালে না?’
 চিরকালের যারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়, জন্মজন্মান্তরেও যারা পরষ্পরকে ভালবাসেভগবান কখনো কখনো তাদের মধ্যে বাধার প্রাচীর তৈরী করে দেনসেই মূহূর্তে বাঁধার প্রাচীরটি কে? সেটা অবশ্য বুঝতে অসুবিধে নেই।  কিন্তু আমি চাইলেও, বিদিশা যেন সেটা মন থেকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারল নাঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, ‘মিনু এসেছে, তোমার কাছে, এটাতো তুমি আমাকে আগে বলো নি।’
মিনু ততক্ষনে বিদিশাকে দেখে ফেলেছেওকে বলল, ‘এই তো বিদিশাএতক্ষণ তোমার কথাই হচ্ছিলঅনেক দিন বাঁচবে তুমিএসো এসো ভেতরে এসোকতদিন তোমায় দেখি না।’
বিদিশার প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছেমুখ তুলতে পারছে নাআমি ব্যাপারটা সহজ করে দেবার জন্য বললাম, ‘আসলে মিনু, রীনার জন্যই আমার কাছে এসেছেরীনা খুব ঝেমেলা পাকাচ্ছে বাড়ীতেগানটান সব বন্ধ করে দিয়েছেওকে আমি যতক্ষণ না বোঝাচ্ছি, মিনু বলছে কোন কাজ হবে নারীনাকে বোঝানোর জন্য আমাকে একবার অন্তত যেতেই হবে।’
বিদিশা মুখ তুলে একবার মুখের দিকে তাকালো বুঝতেই পারলাম, কথাটা মনে ধরে নি ওর যেন মিনুকে আমার ফ্ল্যাটে দেখে হঠাৎই ছন্দোপতন ঘটে গেছেমনের মধ্যে জমে উঠছে অনিশ্চয়তার ইঞ্চি ইঞ্চি ধুলোঅথচ ওকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।  মিনু আর কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেনিএসেছে শুধু রীনার জন্যইবিদিশা হয়তো যেটা ভাবছে, সেটা ভুল
ঠিক সেই মূহূর্তে মিনু হয়ে গেল বিদিশার কাছে বিভীষিকার মতনহঠাৎ আমাকে বলে বসল, আমি তাহলে যাই? তুমি মিনুর সঙ্গে গল্প করছ, জানলে আসতাম না।’
মিনু খুব চালাকসঙ্গে সঙ্গে ও উঠে পড়লবিদিশাকে বলল, ‘না, না, একি? তুমি যাবে কেন? এই তো এবার আমিই যাবটাইম হয়ে গেছেদেব তাহলে আমি আসিটা টা বাইতুই কিন্তু রীনার কথাটা মনে রাখিসভুলে যাস না।’
মিনুকে বিদায় দিয়ে আমি এবার বিদিশাকে নিয়ে পড়ে গেলামওকে বললাম, ‘কি হয়েছে? মিনুকে দেখে খারাপ ভাবছ? আরে বাবা, আমি তো ওকে ডাকিনিও নিজেই এসেছেহঠাৎ করে দরজা খুলে দেখি মিনু দাঁড়িয়েকি করব বল? ঘরে এসে বলল, রীনার জন্য আমাকে একবার নাকি যেতে হবে।’
বিদিশা বলল, এখন কি মনে হচ্ছে জানো? এই পৃথিবীতে আমি বুঝি আর সুখী নই
আমি বললাম, ‘কেন এ কথা বলছ বিদিশা?
বিদিশা বলল, ‘সুখ নামের একটা সুখপাখীকে হৃদপিন্ডের মধ্য বন্দী করতে চাইছিলামসেই পাখিনী ভীষন চালাকহঠাৎই খাঁচা খুলে ফুড়ুত করে উড়ে যেতে চাইছে নীল আকাশে।’
ভীষন খারাপ লাগল ওর কথা শুনেবললাম, ‘কেন আমাকে অবিশ্বাস করছ বিদিশা? আমি তো সত্যি কথাই বলছি।’
বিদিশা বলল, ‘তোমাকে বলেছিলাম নাওকে বেশী প্রশ্রয় দিও নাসাতঘাটে জল খাওয়া একটা মেয়েওকে তুমি বিশ্বাস করো?’
আমি বললাম, ‘আমিও করি না বিশ্বাসবলছি তোও নিজে থেকেই আমার কাছে এসেছে।’
বিদিশা বলল, ‘তাহলে কথা দাও, ওর বাড়ীতে কোনদিন যাবে নাও ডাকলেও যাবে না।’
বিদিশাকে বললাম, কথা দিলাম
বিদিশা বলল, ‘আমার মাথায় হাত রেখে বলো, সত্যি।’
আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, সত্যি, সত্যি, সত্যিএই তিন সত্যি করলাম তোমার কাছে।’
 
 হঠাৎ পুরোনো কথা চিন্তা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছেঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দাটায় এলামজানি মা ঘুমিয়ে পড়েছেখাবারটা টেবিলে রাখা রয়েছেআমাকে খেয়ে নিতে হবে।  আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা সরে গেছেকোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছে।  অসময়ের কুচকুচে কালো মেঘএ মেঘকে যে আমি এসময় দেখবো আশাই করিনিবেচারী চাঁদ হবো হবো সন্ধে থেকেই দুহাতে দু মুঠো জোৎস্না ছড়িয়ে ছিল চারপাশেচাঁদ বোধহয় অকালেই ঝরে পড়লমাঝরাতেই ঢলে পড়েছে চাঁদতাহলে কি আমার জীবনটাও তাই?-
মনে পড়ছিল, বিদিশাকে একদিন অনেক রাত অবধি একা পেয়ে একটা গান গেয়েছিলাম, ‘এখনি বিদায়, বোলো নাএখনো আকাশে চাঁদ জেগে আছেকোন কথা তো এখনো হল নাএখনি বিদায় বোলো না।’
বিদিশা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলআর যখন ফিরেই এলসেই চাঁদটাকে কিন্তু আমি আর দেখতে পাচ্ছি না
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 03-07-2021, 11:10 PM



Users browsing this thread: 24 Guest(s)