Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.07 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller রক্তমুখী নীলা (সমাপ্ত)
#68
আমি কি স্বপ্ন দেখছি? যা কিছু ঘটছে তা কি সবই সত্যি? কয়েকদিন আগেও যে কথা আমার ভাবনাতেই আসেনি তাই আজ আমার চোখের সামনে কঠোর বাস্তব রুপে এসে দাঁড়িয়েছে। বাবা মা আমি, এই সম্পর্ক জেনেই আমি এত বড় হয়েছি। কিন্তু মাত্র এই কয়েকদিনের মধ্যে যে সম্পর্কের ঝড় আমার জীবনে উঠেছে তা যেন আমার পুরো জীবনটাকেই তছনছ করে দেবে। স্বপ্ন দেখার মত যেমন কোন ঘটনার দৃশ্যপটের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। আমার জীবনটাও ঠিক তেমনটাই হচ্ছে।

গাড়ি ছুটে চলেছে, সাথে মনের মধ্যে আমার প্রশ্নগুলিও ঘোড়দৌড় লাগিয়েছে। উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত যেন এ থামার নয়। ম্যাডামকে আমি হারিয়েছি তবে কি মাকেও, মিত্রাকেও। ওরা যে আমার নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাস। ওদের ছারা যে আমার কোন মূল্যই এই জগতে থাকবেনা। ওদের ফিরতেই হবে আমার জীবনে যে কোন মূল্যে।

দূর্গাপুরে পৌছে বিশেষ কিছুই জানার ছিলোনা আমার। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন আর কিছুই করার থাকেনা। যাদের ওপর ভরসা করে মোক্তার আমাদের বাঁচাতে চেয়েছিলো তাদের মধ্যেই যদি কেউ শত্রুতা করে তাহলে কারই বা কি করার থাকতে পারে। 
মুক্তকে অজ্ঞান অবস্থায় যখন জঙ্গল থেকে উদ্ধার করি তখন ভোর হয়ে গেছে। সবটা শোনার পর এটুকু বুঝি নিলাটা পাওয়ার জন্য কতটা নীচে নামতে পারে ওই জানোয়ার মানুষটা। আসলে পুরোটাই একটা ফাঁকি। ম্যাডামকে তুলে নিয়ে আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া কিন্তু কেন? নিলার জন্য। সারা ঘরবাড়ি তছনছ করে গেছে ওরা, কিন্তু নিলা........
আর একটা কারণও হতে পারে। আমায় কোনপ্রকারে জালে ফাঁসানো। কিন্তু প্রশ্ন একটাই আমি ত নিলার খোঁজ জানিনা তবে আমি কেন?

ফোনের শব্দে চমকে উঠলাম আমি। বাবার ফোন বেজে উঠেছে। পকেট থেকে বার করে কানে লাগালো। সঙ্গে সঙ্গে মুখের অভিব্যাক্তি বদলে গেলো। কাঁপা হাতে ফোন নামিয়ে আনলো। আমার দিকে চেয়ে বললো -- চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নিলা না দিতে পারলে......
যে রহস্য এতদিন সবার কাছে লুকানো ছিলো আজ তা জানার সময় হয়েছে। ওই নিলা কোথায়? মোক্তার দাদুকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
-- বাপজান কি বলছো তুমি? তুমি যা বলছো তার গুরত্ব যে কতখানি বুঝতে পারছো কি? কত মানুষের সর্বনাশ ঘটবে এর ফলে সেটা বুঝতে পারছো না তুমি। ও যে ভীষন শক্তিশালি। শুধু তুমি ছাড়া আর কারোর ক্ষমতা নেই ওকে বশ করার। 
-- বুঝেছি দাদু, সবটাই বুঝতে পারছি। কিন্তু এখন আমার কাছে আমার মায়ের গুরত্বটা সব থেকে বেশি। ওদের বিনিময়ে যে কোন মূল্য দিতেই আমি প্রস্তুত। 
-- বাপজান আরো একবার ভেবে নিলে.......
হাত তুলে থামতে বললাম। -- দাদু কোথায় ওটা?
মোক্তারের মুখে হতাশার ভাব ফুটে উঠলো।
বাপজান তোমার দাদুর আদেশ ছিলো একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও ওই ঠিকানার হদিশ না পায়। আমায় ওনার আদেশ পালন করতে দাও। শুধু তুমি আর আমি সেই যায়গায় যাবো।
-- ঠিক আছে তাই হবে।


বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোক্তার আর আমি হেঁটে অনেক দূর চলে এসেছি। জঙ্গলের এই যায়গাটা যেন বেশি ঘন। এত ঝোপঝাড় যে পথ চলতে কষ্ট হয়। গাছরা নিজেদের মধ্যে বড় হবার রেস করতে করতে এমন উচ্চতায় গেছে আর সেখানে পাতা দিয়ে এমন চাদর বিছিয়েছে যে দিনের বেলাতেও এখানে বেশ অন্ধকার আবছায়া ভাব। পথ চলতে চলতে এটুকু বুঝতে পারলাম। এখানকার মাটি অত্যন্ত শক্ত। হঠাৎ সামনে বিরাট বড় মূর্তি দেখে চমকে উঠলাম। লতা পাতায় ঢেকে গেছে তবু পাথরের ভাঙা মূর্তিটা এখনো দৃশ্যমান। -- দাদু এই মূর্তিটা.....
-- বাপজান অনেককাল আগে এখানে একটা নগর ছিলো। সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা শহর। সে যুগে এই শহরটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী বলে যানা যেতো। কিন্তু রাজা ছিলো অত্যন্ত আমুদে সারাদিন নাচ গানেই মেতে থাকতেন। শহরের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে রাজার উদাসীনতায় একদিন বাইরের শত্রু এসে এই নগর ধ্বংস করে দেয়। সমস্ত ধন সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। রাজা সেই সময় নিজের স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে মাটির নীচে একটি গোপন কক্ষে গিয়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে কিন্তু পারেন নি। শত্রুদের হাতে না পড়লেও ক্ষিদে তৃষ্ণায় রাজা মারা যান সেই কক্ষেই। আসলে গোপন কক্ষের দুটো রাস্তাই বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেছিলো। আমি ঠাকুরের জীবনে আসার আগেই উনি এই কক্ষটি আবিষ্কার করেন। তখন এই জায়গায় ঠাকুরের রাজ চলতো।
কথা বলতে বলতে আমরা এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর খেয়াল করলাম আমরা যে যায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি এখানে ঝোপ জঙ্গলের পরিমান অপেক্ষাকৃত কম। 
-- বাপজান আমরা এসে গিয়েছি। 

কোন কালে বোধহয় এখানে একটা মন্দির ছিলো এখন শুধু দেওয়ালের কিছুটা অংশ পড়ে রয়েছে। পাশেই বিশাল কুঁয়া। তার তল দেখা যায়না। লতা ঝোপে জায়গাটা আবৃত। মোক্তার মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলো। -- বাপজান এই তীরশূলটাই কক্ষের চাবি। এর দ্বারাই কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করার রাস্তা মিলবে। 
প্রথমটা অবাক হয়ে গেছিলাম। তীরশূল? তারপর লক্ষ করলাম ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে প্রায় দেখা যায়না একটা শিবলিঙ্গ পাশেই একটু দূরে তীরশূল দাঁড় করানো।
মোক্তার এগিয়ে গিয়ে তীরশূলটা একটু চাগিয়ে তুললো সাথে সাথে খট করে একটা শব্দ এলো কোথা থেকে। -- বাপজান এসো এবার তোমার সাহায্য লাগবে। 
এগিয়ে গেলাম কাছে।
-- এই শিবলিঙ্গকে ধরো আমি এই তীরশূলটা ধরছি। সামনের দিকে ঠেলো জোরসে। 
একটু ঠেলা মারতেই ঘর ঘর শব্দে তীরশূল ও শিবলিঙ্গ একসাথে ঘুরতে লাগলো। তীরশূল ও শিবলিঙ্গ একটি বেদীর ওপরেই গড়া দুটোকে ঠেলার ফলে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলো পুরো বেদীটাই। একবার পুরো ঘুরে আগের অবস্থায় ফিরে যেতেই সেই খট শব্দটা শুনতে পেলাম।
-- বাপজান এবার পিছনের দিকে ঠেলো।
এভাবে একবার সামনে একবার পিছনে আবার একবার সামনে করার সাথে সাথেই কুঁয়োর ভিতর থেকে ঘর ঘর শব্দে চমকে উঠলাম। ছুটে গেলাম কুঁয়োর কাছে অবাক হয়ে দেখলাম দেওয়াল থেকে পাথরের ধাপ বেরিয়ে এসেছে। পুরো কুঁয়োর বের কে ধরে ক্রমশ ঘুরে ঘুরে নীচের দিকে নেমে গেছে। 
-- বাপজান এটাই সিঁড়ি। এই সিঁড়ি দিয়েই নীচে নামতে হবে। 

আশ্চর্য হয়ে গেলাম, তখনকার মানুষদের মাথা বলিহারী। এমন কলাকুশলী এখনকার মানুষরা ভাবতেও পারবে না। এই বেদী হলো লিভার। লিভার ঠিকঠাক ঘোরাতে পারলেই কুঁয়োর দেওয়াল থেকে পাথরের খাঁজ বেরিয়ে এসে নীচে যাওয়ার রাস্তা করে দেবে। এমনি ক্ষেত্রে এ কুঁয়োকে দেখলে বোঝাই যাবেনা এই কুঁয়োর গভীর রহস্য কোথায়। 

মন্দিরের পিছনে ঝোপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দুটো মশাল বের করে আনলো মোক্তার। মশাল জ্বালিয়ে সিঁড়ি ধরে নীচে নামতে লাগলাম আমরা। 
-- জানো বাপজান ঠাকুরের মুখে শুনেছি এ কুঁয়ো অত্যন্ত আশ্চর্যকর। আগে এই কুঁয়ো থেকে জল তোলা হত। ঠাকুরের বেদী ঘোরানোর সাথে সাথে অদৃশ্য উপায়ে সে জল নেমে গিয়ে সিঁড়ি বেরিয়ে আসতো। তারপর সময়ের সাথে সাথে এ কুঁয়ো শুকিয়ে যায়। 
একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বললাম -- আচ্ছা এই সিঁড়ি কি একদম নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। এই কুঁয়ো ত বেশ গভীর বলে মনে হচ্ছে।
-- হ্যাঁ বাপজান ঠাকুরের মুখে শুনেছি এ কুঁয়ো প্রায় দুশো আড়াইশো ফুট গভীর। তবে এ সিঁড়ি অতদূর যাইনি।

বেশ কিছুটা নামলাম আমরা ওপরের দিকে তাকিয়ে কুঁয়োর মুখটা দেখলাম বেশ ছোট। যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি সেটা বেশ বড়ো আর চওড়া একটা পাথর। সামনে আর কৌন সিঁড়ি নেই। যাওয়ার আর কোন রাস্তাই চোখে পড়লোনা। মাথায় ঢুকলোনা কিছু, এবার কোথায় যাবো।
-- বাপজান এবার কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। এদিকে আসো। এই যে পাথরের সিঁড়ির শেষ দেখছো এর নীচ থেকে দশটা পাথর গুনে ওপরের দিকে আসো।
গুনলাম। দশনম্বরে এসে খেয়াল করলাম পাথরের ওপর আবছায়াভাবে একটা মূর্তি খোদাই করা আছে। উত্তেজিত হয়ে ওঠলাম। -- পেয়েছি এই পাথরটায় একটা মূর্তি খোদাই রয়েছে।
-- হ্যাঁ বাপজান ওটাই। ওইটা চাপ দাও।
দিলাম চাপ। কিছুই হলোনা। 
-- আরো জোরে চাপো।
গায়ের জোরে দিলাম এক মোক্ষম চাপ। অবাক হয়ে দেখলাম ঘর ঘর শব্দ তুলে পাথরটা ভিতরে ঢুকে গেলো আর সঙ্গে সঙ্গে পাশের পাথর গুলো সরে গিয়ে একজন মানুষ গলবার মত জায়গা হয়ে গেলো।
[+] 6 users Like HASIR RAJA 19's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রক্তমুখী নীলা - by HASIR RAJA 19 - 03-07-2021, 10:45 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)