03-07-2021, 01:51 PM
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুভেন্দু বলল, ‘তুই ফোনে সব শুনেছিস না দেব? আমি বিদিশার সাথে কথা বলছিলাম।
ওকে বললাম, ‘বিদিশা তো আমার কাছে আসল সত্যিটা কালকেই বলতে পারত? আমি ট্যাক্সিতে আসতে আসতেও ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলল, দুদিন আমাকে অন্তত সময় দাও। আমি তোমাকে ভেবে বলব।’
শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা তোর কাছে এখন অপরাধী। ও নিজে তাই মনে করে। আর কারুর কথা বলতে পারছি না। কিন্তু বিদিশা বলেই নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে পারছে না। তাছাড়া এ সমস্যা থেকে বেরুবার জন্য তোর তো কিছু করার নেই। ডিভোর্স যতদিন না হচ্ছে, তুই ওকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবি না। ইন্ডিয়ান ম্যারেজ অ্যাক্টতো তাই বলে। অপরের বিবাহিত স্ত্রীকে কাছে রাখাটাও অবৈধ পর্যায়ে পড়ে। তুই ওর সাথে লিভ টুগেদার হয়তো করতে পারবি। কিন্তু সেটা কি তোর মা মেনে নেবে? বিদিশার মনের মধ্যে এখন সেই চিন্তাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। ও শুধু মনে জোর পাচ্ছে না তা নয়। এক প্রকার ভেঙেই পড়েছে বলা যায়। কাল থেকে ওর অবস্থা আরো খারাপ। কাল যদিও সব ভুলে টুলে তোর মুখটা দেখার জন্য ও এখানে এসেছিল। কিন্তু আজ ওর সাথে কথা বলে মনে হল, এই কষ্টভোগের পালা শুরু যখন হয়, তখন সেটাকে সহ্য করা খুব কষ্টকর। একেবারে বিধ্বস্তের মতন হতাশা গ্রস্থ হয়ে আমাকে কথাগুলো বলছিল। বলল, আমার আপেক্ষের আর শেষ নেই শুভেন্দু। তখন যে কেন দেবের কাছে আমি ফিরে গেলাম না। জীবনে এই পরিনামটাই বোধহয় আমার কপালে লেখা ছিল। আমার মনে হচ্ছে, সবকিছু এখন শেষ হয়ে গেছে। সামান্যটুকু সম্ভাবনাটাও এখন আমি দেখছি না। কেননা আমার স্বামী আমাকে বলেছে-
আমি কৌতূহল হয়ে শুভেন্দুকে বললাম, কি বলেছে বিদিশার স্বামী?
শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশার স্বামী বলেছে, কিছুতেই ডিভোর্সটা নাকি বিদিশাকে সে আর দেবে না। সারাজীবন এভাবেই স্বামী ছাড়া শুধু কাটাতে হবে বিদিশাকে। কোর্ট কাছারীতে আমরক্ত বেরিয়ে যাবে বিদিশার। উকিলের পেছনে টাকা খরচাটাই শুধু সার। এ জীবনে বিদিশারর দ্বিতীয় বিবাহ আর কোনদিন হবে না।’
ফোনটা ছাড়ার আগে শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি বিদিশার সাথে একবার কথা বলতে চাই। ওর সাথে দেখা করতে চাই।’
শুভেন্দু বলল, আমি তো বিদিশাকে বলেছি। দেখ ও হয়তো ফোন করবে। কিংবা দেখাও হয়তো করবে।’
শেষকালে ফোনটা রাখার আগে শুভেন্দু শুধু বলল, ‘আমারও আফশোসের আর শেষ নেই রে দেব। মাঝে মধ্যে আমিও ভাবছি, তোর আর বিদিশার জীবনটা কি এভাবেই শুধু কেটে যাবে? জীবনে তোরা আর বিয়ে থা কোনদিন করতে পারবি না? এ কী জীবনের মানে? অদ্ভূত এই জীবন। আমি তো কোন তালগোল খুঁজেই কিছু পাচ্ছি না।’
শেষে ও নিজেই বলল, ‘তোকে অবশ্য হাল ছেড়ে দিতে আমি বলছি না। দেখ নিশ্চই কিছু তো রাস্তা বেরোবেই। ভগবান মুখ তুলে চাইবেন। এতটা নিষ্ঠুর কখনো হবেন না।’