Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#46
মনে মনে বললাম, কিন্তু তুই তো আমার বাড়ীতে কাল অন্যকথাই-
শুক্লা বলল, ‘বিদিশা ভীষন ভালো মেয়েহয়তো পরিস্থিতির চাপেই ওকে বিয়েটা তখন মেনে নিতে হয়েছিলআমাকে ও সবই বলেছেতোর ভালবাসার দামও সেভাবে ও দিতে পারেনি।  কিন্তু সবাই তো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়এতদিন বাদে যখন তোর কাছেই আবার ফিরে এসেছেসেই সুযোগ কি তুই ওকে দিবি না, বল?’
মনে মনে বললাম, সুযোগ তো আমি দিতে চাইকিন্তু বিদিশা নিজেই তো-
কালকের বিদিশার শেষ কথাটা শুক্লাকে বলতে গিয়েও আমি বলতে পারলাম না শুক্লা বলল, ‘আমি জানি দেব, তোর মনের ভেতরে এখন যে ঝড়টা বইছেবিদিশার সাথে যতক্ষণ না তোর দেখা হবে এই ঝড় থামবে নাতুই বিদিশাকে একটা ফোন করওকে তোর বাড়ীতে ডেকে নেনয় তুই ওর কাছে চলে যা।’
মুখটা নিচু করে ঘাড় নেড়ে আমাকে আস্বস্ত করল শুক্লাবলল, আমি বলছি, সব ঠিক হয়ে যাবেবিদিশা তোর কাছেই আবার ফিরে আসবেআমার মন তাই বলছে।’
মনে মনে বললাম, তাই যেন সত্যি হয়শুক্লার কথাটাই মিলে যাকভগবান যেন পুরোপুরি বিদিশাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন
আরও আধঘন্টা শুক্লার সাথে নানা গল্প করে যখন ওর বাড়ী থেকে বেরুলাম, মনে হল, এতদিন ধরে যাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছি, সেই শুক্লা আমার কাছে নিজের স্বার্থ ভুলে গিয়ে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবেই নিজেকে আবার প্রমান করলঠিক এই মূহূর্তে যে নিজের ভালটা না ভেবে আমার ভাল ছাড়া জীবনে আর কিছু চায় না
 
বাড়ীতে ফিরছি, ট্যাক্সি চড়েআবার সেই চিন্তাটা আমার মনকে ভীষন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলএবার মনে হল, না, শুক্লা যতই বন্ধুত্বের কথা বলুকও যেন ইচ্ছে করেই আমার প্রতি ওর দূর্বলতা আর ভালবাসাটাকে আত্মগোপণ করে নিলপ্রেমের উদ্ভব ঘটাতে গিয়েও ঘটাতে পারল না।  এর জন্য দায়ী শুধু আমিইকারণ আমার মন তো সবসময়ই আচ্ছন্ন হয়ে আছে সেই একই বিদিশার চিন্তায়জানি না বিদিশার জন্য আমাকে আরো কতদিন প্রতীক্ষা করতে হবেআমি বোধহয় সেই পুরুষ, যাকে কোন নারী ইচ্ছে করলেও ভালবাসতে পারবে নাযেখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এক নারীসে শুধু বিদিশাই আর বিদিশাইসে আর কেউ নয়
 
ঠিক তখন বাজে রাত্রি দশটাভাবছি, শুভেন্দুকে একটা ফোন করিকি হালচাল একটু জিজ্ঞাসা করিআজকে যে শুক্লার বাড়ীতে গিয়েছিলাম, সেটাও ওকে বলি শুক্লা আমাকে কি বলেছে, কি কথা হয়েছে, সেটাও ওকে খোলসা করি তারপরেই ভাবলাম, শুক্লাকে ছোট করে আর কি লাভ? ব্যাচারা যদি কোনদিন জানতে পারে কষ্ট পাবেশুভেন্দুর মুখ পাতলাশুক্লাকে বলেও দিতে পারে কথাটাবিদিশার জন্য যদি স্যাকরিফাইশ করেও থাকে শুক্লাসেটার আর কোন দাম থাকবে না কারুর কাছে
তবুও শুভেন্দুকে ফোনটা করলামইচ্ছে হল বিদিশার কথা তুলেই শুভেন্দুর সাথে একটু গল্প করিকাল মাধুরী আর রনি এসেছিলওরা এখনো আছে না চলে গেছে, সেটাও শুভেন্দুর কাছ থেকে জানিফোন করলেই শুভেন্দু প্রথমেই আমাকে বিদিশার কথা জিজ্ঞাসা করবে, আজ সারাদিনে বিদিশার কোন খবর এসেছে কিনা সেটাও আমার কাছ থেকে জানতে চাইবেবিদিশার জন্য আমি যাতে বেশী চিন্তিত হয়ে না পড়ি, সেটাও আমাকে বোঝাতে চাইবেআমার মনকে শক্ত করতে বলবে শুভেন্দুহাল যাতে না ছাড়ি, সে আশ্বাসও দেবে হয়তো আমাকে
 ওর মোবাইলের নম্বরটা এনগেজ হচ্ছিলআমি জানি শুভেন্দুর কাছে দুটো মোবাইলএকটা নম্বরে না পেয়ে যথারীতি আর একটা নম্বরে ওকে ঠিক পেয়ে গেলামঅন্য নম্বরটায় ঠিক দুটো রিং হবার পরই ফোনটা ধরল শুভেন্দুআমাকে বলল, দেব, ‘তোকে আমি কল ব্যাক করছিযাস্ট পাঁচ মিনিট।’
মনে হল, ও বোধহয় কারুর সাথে ফোনেই কথা বলছে এতক্ষণ ধরেঅন্য ফোনটা এনগেজ পাচ্ছিলাম, এই কারনেই।  ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও আমি কাটতে পারলাম নাপরিষ্কার শুনতে পেলাম, শুভেন্দু কাকে যেন বলছে, তুই কি সত্যি কথাটা বলতে ভয় পাস? এরকম কেন করছিস তুই? দেব কি তোর অসুবিধার কথাটা বুঝবে না? ওকে সব খুলে বলওই তো সিদ্ধান্ত নেবে এখানেদেবের উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে।’
আমি দেখলাম শুভেন্দুও ভুলে লাইনটা কাটেনিআর আমার ব্যাপারেই কারুর সাথে কথা বলছেযা বলছে আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি
শুভেন্দু বলল, ‘কি হল, চুপ করে গেলি কেন তুই? কিছু তো বল? নাকি আমি তোর হয়ে বলব দেবের কাছেতোর বলতে কেন অসুবিধা হচ্ছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
কার সাথে কথা বলছে শুভেন্দু? কি বলবে? কার হয়ে বলবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
কান পেতে শুনতে লাগলাম, অন্য ফোনে শুভেন্দুর কথাকিন্তু যার সাথে কথা বলছে, তার কথা আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি নাশুধু শুভেন্দুর কথাটা ভেসে আসছে আর ও যেন ভীষন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে কাউকে
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শুভেন্দু বলল, ‘দেখ দেবকে আমি সত্যি কথাটা বলতে পারতামকিন্তু বলিনি, তার কারণ আমি জানি, এই সমস্যাটা হয়তো কিছু দিনের, কিছু মাসের জন্যচিরকালের জন্য তো তুই এই সমস্যা বয়ে বেড়াবি না? তাহলে অযথা কেন ভয় পাচ্ছিস? ডিভোর্স যখন হয় নিতখন একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবেদেবও আশাকরি বুঝতে পারবে।’
আমি যেন চমকে উঠলামকার ডিভোর্সের কথা বলছে শুভেন্দু? কার সাথে কথা বলছে ও? তাহলে কি বিদিশা?
ঠিক সেই মূহূর্তে শুভেন্দু অন্য ফোনে বলে উঠলমাস কোনো সময়ই নয় বিদিশাযে ছেলেটা তোর জন্য এতবছর অপেক্ষা করেছিল, মাত্র ছমাস সে ওয়েট করতে পারবে নাতুই কি ভাবিস? দেবের মনটা অত পাথর নয়তুই কিচ্ছু তাকে ঠকাচ্ছিস নাতোর অসুবিধার কথাটাই তাকে বলছিস।’
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বুকের কাছে ধরে আমার একটা চাপা অস্বস্তি হতে লাগলভাবলাম, ভগবান এ আবার কি পরীক্ষায় ফেলল আমাকে? তবে কি বিদিশার এখনো ডিভোর্সটা হয় নি? কাল শুভেন্দু ইয়ার্কী নয়, সত্যি কথাটাই বলতে চেয়েছিল আমাকেশেষেমেষে ওর ইয়ার্কীটাই এবার সত্যি হয়ে গেল আমার কাছেও সব জানতোতাও গোপন করেছে আমাকেকিছুই বুঝতে দেয়নি শুভেন্দুকার কথা ভেবে শুভেন্দু সত্যিটা গোপন করলবিদিশার কথা ভেবে? না এই দেবের কথা ভেবেঠিক বুঝতে পারছি না
 ফোনটা তখনও আমি ছাড়িনিশুভেন্দু বিদিশাকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেওদিক দিয়ে বিদিশাও যেন খুব অসহায়শুভেন্দু মাঝে মাঝে ওকে বলছে, ‘চিন্তা করিস না বিদিশাদেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এক মূহূর্ত স্তব্ধের মতন হয়ে ফোনটা এবারে আমি ছেড়ে দিলামবিদিশার জন্য কষ্টও হলমনে হল, আমার কাছে ফিরে আসার জন্য ও এতটাই ব্যাকুলঅথচ শেকলটা পায়ে এখনও বাঁধা রয়েছেকিছুতেই ওটা ছিঁড়ে ও বেরিয়ে আসতে পারছে নাবিদিশা কাঁদছে, চোখের জল ফেলছেহয়তো আফশোসও করছেপ্রেমের সাথে জড়িয়ে থাকা, স্বপ্ন, আশা আর আকাঙ্খাগুলো এবার ধূলিসাত হতে চলেছে

শুভেন্দু এবার আমাকে ঘুরিয়ে ফোন করল ওকে বললাম, ‘কার সাথে তুই কথা বলছিলিস?’

শুভেন্দু বলল, ‘এই আমার এক ক্লায়েন্টের সাথেব্যাটা রাত দুপুরে আমাকে ফোন করেছেবোঝাতে বোঝাতে আমার অবস্থা খারাপতাই তোকে বললাম, আমি পরে ফোন করছি।’

ওকে বললাম, ‘শুভেন্দু, বিদিশার জন্য আমার ভীষন চিন্তা হচ্ছে।’

শুভেন্দু বলল, ‘কিসের চিন্তা?’

-এই আমার কাছে কি যেন একটা লুকোলো বিদিশাহয়তো কোন সমস্যায় আছেকিন্তু আমার কাছে সত্যিটা বলতেও ওর কি অসুবিধা আছে? বিদিশাতো আমার কাছে বলতেই পারে অসুবিধাটাআমি তো-

শুভেন্দু বলল, ‘কিসের জোরে সে তোকে বলবে? তোর জন্য সে কি করেছে?’

আমি বেশ অবাক হলামবললাম, ‘তুই একথা বলছিস? তুই না কালকে আমাকে-

শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ বলেছিলামতোকে আমি সত্যি কথাটাই বলেছিলামকিন্তু কালকের সান্ধ্য আসরটা তাহলে মাটী হয়ে যেতবিদিশার ফিরে আসার আনন্দটা তোর কাছে ম্লান হয়ে যেতসত্যিটা মেনে নিয়েও, তুই নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করতিসএই সমস্যা থেকে বিদিশা আদৌ বেরুবে কিনা, তোর মনে অনেক প্রশ্ন থেকে যেতোআমি তোর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম দেবতোকে এত চিন্তায় ফেলতে আমিও চাইনি।’

আমি অবাক হলাম, বললাম, ‘তুই বিদিশার এই সমস্যাটার কথাটা জানতিসজেনেও আমাকে কিছু বলিসনি?’

শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ জানতামবিদিশাই আমাকে সব বলেছেআমিই ওকে মানা করেছিলামবলেছিলাম, দেবকে এখনই কিছু জানাবার দরকার নেইতাহলে ওর মনটা ভেঙে যেতে পারেবিদিশা আমাকে কথা দিয়েছিল, তাও সব শেষে নিজের মনকে ও ঠিক রাখতে পারল নাতোর কাছে ও ভেঙে পড়ল।’

আমি বললাম, ‘আর কি কেউ জানে এই ব্যাপারটা?’

শুভেন্দু বলল, ‘শুক্লা জানে কিনা জানি নাতবে রনি, মাধুরী এই ব্যাপারটা জানে নাআমি ওদেরকে বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলিনি।’

শুভেন্দুকে বললাম, ‘বিদিশা তার মানে এক প্রকার ওর স্বামীকে ছেড়েই এখানে চলে এসেছেডিভোর্সটা এখনও হয় নি।’
 
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 03-07-2021, 01:50 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)