Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#43
নয়
 
অফিস থেকে বেরিয়ে শুক্লার বাড়ীর দিকে যখন আসছিলামট্যাক্সিতে এফ এম এ খুব সুন্দর একটা কিশোর কুমারের গান হচ্ছিলগানটা আমারও খুব ফেভারিট
হে প্রিয়তমা, আমি তো তোমায়, বিদায় কখনো দেবো না
শুনে মনে হল, সত্যি তাইবিদিশাকে আমি নিজে থেকে কখনও বিদায় দিতে পারি না, এক সে যদি নিজে থেকে না চায়আমার মনের মধ্যে আশাটা কিছুটা হলেও এখনো যেন বেঁচে আছেবিদিশাকে আমি চাইশেষ পর্যন্ত যে করেই হোক বিদিশাকে আমি ফিরে পেতে চাই
ঠিক তার পরে পরেই কিশোর কুমারের আর একটা গান শুরু হল, গানটা হল, ‘আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবো না আমি যারে দিয়েছিলাম, যা কিছু তা আমার চেয়েও দামী নাম নেবো না আমি।’
এবার আমার মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেলট্যাক্সিওয়ালা বলল, ‘দাদা এই যে লোকটার গান শুনছেন না? ইনি তো অমর শিল্পী কিশোর কুমারকিন্তু লোকে বলে ইনি নাকি মরে যাবার আগের দিন পর্যন্ত প্রেমিক ছিলেন চার চারটে বিয়ে করেছেন, ভালোবাসা ওনার কাছে অফুরন্ত ছিল
আমি বললাম, কিশোর কুমার সন্মন্ধে আমি যা জানি, তা আর কেউ জানে নাএকসময় কিশোরের গান গেয়েও অনেকের প্রশংসা কুড়িযেছিলোকটার জীবনে প্রেম অনেক ছিল তাও জানিকিন্তু লোকটার জীবনে একটা ব্যাথাও ছিলসেটা বাইরে থেকে ওর পাগলামী দেখে কেউ বুঝতে পারত না।  কিশোর কুমার নিজেও এমন ছিলেন, কাউকে বুঝতে দিতেন না
ঠিক সন্ধে সোয়া সাতটা নাগাদ ট্যাক্সিটা শুক্লার ফ্ল্যাটের নীচে গিয়ে দাঁড়ালোগাড়ীতে আসতে আসতে এরমধ্যেই শুক্লার ২বার ফোন এসে গেছে আমার মোবাইলে।  আমি যে সত্যি আসছি কিনা সেটা ও ফোন করে নিশ্চিত হতে চেয়েছেযাচাই করে দেখে নিতে চেয়েছে আমি অফিস থেকে বেরিয়েছি কিনা? আমার কাছ থেকে কনফারমেশন পেয়ে খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছে শুক্লাএতটা আনন্দ পেতে আমি বিদিশাকেও কোনদিন দেখিনি
আমি ট্যাক্সি থেকে নামলামভাড়া মিটিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলামএসেছি তো ঠিক জায়গায়কিন্তু বাড়ীর নম্বরটা খুঁজে পাচ্ছি নাসল্টলেকে এই এক অসুবিধেপ্রথমবার এলে বাড়ী খুঁজে নিতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়অ্যাডড্রেশ জানার জন্য এলাকার কোনো লোক পেয়েগেলে সুবিধেনচেৎ একবার এমাথা থেকে ওমাথা, নয়তো এ গলি ও গলি ঘোরাটাই শুধু সার
শুক্লা বলেছে, সাদা রংয়ের চারতলা বাড়ীপ্রতিটা ফ্লোরে দুটো করে ফ্ল্যাটদ্বোতলায় উঠে পেছন দিকের ফ্ল্যাটটাই শুক্লাদের অর্থাৎ শুক্লারআমার অসুবিধে হয় বাড়ী খুঁজতে তাহলে ওকে মোবাইলে ফোন করতে
কপাল ভালো দুটো বাড়ী পরেই ওই চারতলা সাদা বাড়ীটা দেখতে পেয়ে গেলামশুক্লাকেও আর ফোন করতে হল নাযখন ওর ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে লাগলাম, মনের ভেতরে শুক্লাকে নিয়ে জমে থাকা সন্দেহগুলো আসতে আসতে দূর হতে লাগলমনে হল, শুক্লা আমাকে কিছুই সেরকম বলেনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে হঠাৎই প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের সূচনা শুক্লা সেরকম তো কিছুই আভাস দেয় নি অথচ শুভেন্দু আর রনি ওকে সন্দেহ করছে, আসলে বিদিশার প্রতি শুক্লার এই বিদ্বেশ মনোভাব, শুভেন্দু আর রনিকে তাই এতটা চটিয়ে দিয়েছে
 সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেলামদু তিন ঘন্টা শুক্লার সাথে জমিয়ে গল্প করব, এই উদ্দেশ্য নিয়েই ওর ফ্ল্যাটের কলিংবেল টিপছিমনে হল, কে যেন আমার কানে কানে বলে দিল, ‘আবার তুমি ভুল করতে চলেছ দেবসবাইকে এত অন্ধবিশ্বাস করো তুমি? ওকি তোমায় এমনি এমনি ডেকেছে এখানে? নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য আছেমিনুকে বিশ্বাস করে তুমি যে ভুলটা করেছ, আবার শুক্লাকেও বিশ্বাস করে দ্বিতীয়বার ওই ভুলটা কোরো নাদেব তুমি ভীষন সরলএই সরলতার জন্যই আজ জীবনে এত খেসারত দিচ্ছ বারবারএকই ভুল তুমি কোরো না।’

আমার মুখটা কেমন গম্ভীর মতন হয়ে গেলযেন একটা ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে আমি শুক্লার বাড়ীতে এসেছিশুক্লা দরজা খুলে আমার ঐ ফ্যাকাসে মুখটাই দেখলআমাকে বলল, ‘এ কি রে? কি হয়েছে তোর? এত মুখ ভার কেন তোর? আয় আয় ভেতরে আয়শুক্লাকে তো পাত্তাই দিচ্ছিলি না তুইদেখ, আমিই তোকে এখানে আসতে বাধ্য করালাম।’

ফ্ল্যাটে ঢুকেই শুক্লা আমাকে ওর ড্রয়িং রুমটায় বসতে বললবেশ সুন্দর সাজিয়েছে ফ্ল্যাটটাদেওয়াল জুড়ে শুধু কাঁচের আলমাড়ীথাক থাক করে সাজানো গল্পের বইশুক্লা গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসতো আমি জানতামআমাকে বলল, ‘এগুলো সব আমার কালেকশনগতবারে বইমেলা থেকেও অনেক বই কিনেছি আমিএকা একা থাকিগল্পের বই পড়ে সময় কেটে যায়কিছু তো করতে হবেপুরোনো সেই সখটা আমার এখনো রয়ে গেছে বলতে পারিস।’

আমি জানি শুক্লা খুব ভালো ছবি আঁকতেও পারেদেওয়ালে খুব বড় একটা আঁকা ছবি দেখলাম।  ছবিটা খুব সুন্দর করে বাঁধানোশুক্লাকে বললাম, ‘এটা নিশ্চই তোর আঁকা? বাঃ সুন্দর হয়েছে ছবিটা।’

এক যুবক স্বপ্নাতুর চোখে নীল আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে, আকাশের নীলিমার মাঝে একটা নারীমুখ ভেসে উঠেছেযেন সুন্দরী ওই নারী যুবকের কোনো স্বপ্নের নারীযুবক তাকেই চিন্তা করছেআর সমস্ত পৃথিবীটা যেন রোদে স্নান করছেরঙটাই আসতে আসতে পাল্টে যাচ্ছে

কি করেছিস রে? এ তো অনন্য কীর্তিশিল্পের ছোঁয়াএমন ছবি তো দেখাই যায় না।’

শুক্লা বলল, ‘এ ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা তো আমি তোর কাছ থেকেই পেয়েছিতুই জানিস না?’

আমি অবাক হলাম, শুক্লা বলল, ছবিটা আঁকতে শুরু করার সময়, আমি একটা সূত্র থুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলামভাবছিলাম, ঐ যুবকটা যদি দেব হয়, তাহলে ওর স্বপ্নের নারীটা কে? যাকে চিন্তা করে করেই দেব এতটা লাইফ কাটিয়ে দিলবিদিশা ছাড়া নিশ্চই আর কেউ নয়।’

মনে হল, এই রে আবার বিদিশাকে নিয়ে শুরু করল শুক্লাএবারে দেখছি আমাকে পালাতে হবে এখান থেকেওকে বললাম, ‘তুই কিন্তু আমাকে সকালে যা বলেছিলিস, তার একবর্ণও মিলছে না এখনকেন বিদিশার কথা তুলছিস? থাক না ওই প্রসঙ্গতুই অন্য কথা বল।’

শুক্লা বলল, ‘ভয় হয়তুই যদি আবার রাগ করে উঠিস।  ছবিটার কথা উঠলো বলে তাই তোকে বললামতা চা খাবি তো? নাকি ওটার কথাও বলতে পারবো না তোকে?’

হেসে বললাম, ‘নিশ্চই খাবোতবে শুধু চাচায়ের সাথে অন্য কিছু নয়।’

শুক্লা বলল, ‘অফিস থেকে ফিরলিশুধু চা কেন? আমি সিঙ্গারা, নিমকি এসব আনিয়েছিএক্ষুনি তোকে দিচ্ছি।’

এতবড় ফ্ল্যাটটায় শুক্লা এখন একা থাকেওকে বললাম, ‘তোর আত্মীয়সজন, রিলেটিভ, বন্ধু বান্ধবরা কেউ আসে না? একা একা থাকিস, বই পড়ে আর ছবি এঁকেই কি সময় কেটে যায়?’
 শুক্লা বলল, ‘আমার মাসীরা আসে মাঝে মাঝে দুই মাসী আছে আমারদুজনেই মায়ের থেকে কয়েকবছরের ছোটবিয়ের সময় এক মাসী সন্মন্ধটা করে বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিল আমার।  ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর, মাসীর মনে একটা আফসোসটা থেকে গেছে মাঝে মাঝে আমাকে সান্তনা দিতে আসেমা, বাবা কেউ তো এখন বেঁচে নেইতাদের অভাবটা আমি অনুভব করিকেউ এলে ভালোই লাগেমাঝে মধ্যে আমার জ্যাঠাও আসেবেহালায় যেখানে আমরা থাকতাম, ওখান থেকে কিছুটা দূরেই জ্যাঠাদের বাড়ীআমার খবর নিতে মাঝে মাঝে জ্যাঠা এখানে আসেআর আসে চুমকী বলে একটা মেয়েও বিবাহিতাআমার অফিসে চাকরী করে আমার কলিগমাঝে মধ্যে আড্ডা দিতে আমার এখানে চলে আসে।’

‘বাড়ীতে কাজের লোক?’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁঅমলা বলে একটা কাজের বউ আছেদুবেলা কাজ করে চলে যায়ওর সাথে কথা বলেও আমার সময়টা কেটে যায়।’

জীবনটা বড়ই কঠিন দেবআমরা যতটা সহজ মনে করিজীবন ততটা সহজ নয়অনেক ঝড় ঝাপাটা আছে, অনেক বাঁধা আছেআমাদের সবাইকেই সেগুলো অতিক্রম করতে হয়কেউ পারে, কেউ পারে নাআমি নতুন ভাবেই জীবনটাকে আবার সাজানোর চেষ্টা করছিজানি সুখ ফিরিয়ে দেবার মতন, সেরকম আমার জীবনে কেউ নেইতবুও একটা চেষ্টাএকটা আশাযদি কিছু-

আমি বললাম, ‘তুই তো আবার একটা বিয়ে করতে পারিসভালো চাকরি করিসতোর তো পাত্রের অভাব হবে নাতাছাড়া ডিভোর্স হয়ে গেলেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় তা তো নয়ভগবান তোর জন্য হয়তো কোনো অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে।’

শুক্লা হেসে বলল, ‘পরিকল্পনা? ভালোই বলেছিসহ্যাঁসেরকমই তো কিছু মনে হচ্ছেতবে কি জানিস তো? মনের মিল হওয়াটা আজকালকার দিনে বড়ই কঠিন ব্যাপারস্বামীরা স্ত্রীকে প্রাধান্য দিতে দিতে শেষকালে এতটাই প্রাধান্য দিয়ে বসে তখন শুরু হয় মতের অমিলইগো ক্ল্যাশতাসের ঘরের মত হূড়মূড় করে বিয়েটা তথন ভেঙে পড়েআগুন সাক্ষী রেখে বিয়ে, কিছুই তখন তার দাম থাকে না।’

আমি বললাম, আর স্বামীদের ক্ষেত্রে?

শুক্লা বলল, ‘স্বামীরা যদি বউকে একেবারেই সময় না দেয়, তখন এই সমস্যাটা হয়বিয়ে করা বউ মানেই তো সে আমার দাসী নয়তারও সখ আহ্লাদ আছেমনের ইচ্ছা পূরণ করার তাগিদ আছেকিন্তু সেরকম স্বামী না জুটলে সে বউয়ের কষ্ট বোঝে নাতখন সংসারটা ছাড়খাড় হয়ে ভেঙে যায়সাত পাকে বাঁধার কোনো দাম থাকে না।’

আমি ওকে প্রশ্ন করলাম, ‘হঠাৎ তোর লাইফে কেন এমন ঘটল, কারণটা আমাকে বলতে পারবি?’

শুক্লা হেসে বলল, ‘কেন বললে, তুই আমাকে বিয়ে করবি?’

আমি বললাম, ‘তোর তো ইয়ার্কী মারাটা স্বভাবভাবিস, দেব কে একটু টেনশনে ফেলে দিই আর কি? আমি ওতে অত ঘাবড়াচ্ছি নাযাকে এতদিন ধরে দেখে আসছি, আমার থেকে ভাল কেউ তোকে চেনে না।’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁএটা তুই ঠিক বলেছিস, আমি অন্যের চোখে খারাপ হলেও, তোর চোখে কোনদিন খারাপ হবো নাতবে জানি না কেন তুই আমার উপরে চটে গেলি? কাল অতবার তোকে ফোন করলাম, সকালেও ফোন করলামঅথচ ফোন ধরছিস নাআমি ভাবছি, তুই আমার ওপরে রেগে আছিস বোধহয়।’
 
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 03-07-2021, 01:46 PM



Users browsing this thread: 23 Guest(s)