02-07-2021, 11:45 PM
আট
বাড়ীতে ফিরলাম, মা’কে বিদিশার কথা সেভাবে আর কিছু বলা হল না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমটা আসছে না। সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো আমার মনকে এখনও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ছিল, বিদিশার সাথে আমার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কথা। একদিন-
সেদিন তখন ঠিক সন্ধ্যে হবো হবো করছে। জায়গাটা কলকাতার ডালহৌসীপাড়ায় কার্জন পার্ক। বিদিশার কোলে মাখা রেখে আমি শুয়ে আছি। বিদিশা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো। আমি ভাবছি, চুমু পাবার আর চুমু খাবার এত সুন্দর জায়গা, তাও বিদিশা ইতস্তত করছে। কেন? আমি যেন বিদিশার কাছ থেকে চুমু পাওয়ারই প্রতীক্ষায়।
বিদিশা বললো,-‘এই তুমি কি করছো বলোতো? তথন থেকে এসে অবধি মুখে কোনো কথা নেই, খালি আমার হাতের আদর খেয়ে যাচ্ছো?’
বিদিশাকে বললাম-‘না, না, এখন কি কথা বলার সময় নাকি? দেখছো না কেমন আরাম বোধ করছি। তুমি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো, আঙুল চালিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছো, আমার তো মনে হচ্ছে, এইভাবেই যেনো তোমার কোলে আমি শুয়ে থাকি।’
-‘বাঃ বাঃ, শুয়ে খালি আদরই খেয়ে যাবেন উনি ? কটা বাজে খেয়াল আছে তোমার? দেখো ঘড়ি দেখো, বাড়ী যেতে হবে না বুঝি?
- ‘আচ্ছা বিদিশা, কদিন ধরেই দেখছি, তুমি সেভাবে আমাকে চুমুটুমু খাচ্ছো না। ব্যাপারটা কি বলোতো?’
- ‘এই তুমি কিন্তু এখন আর চুমু খেতে বলবে না আমাকে। এই জায়গাটা সেরকম ভালো নয়। দূরে বসা ঐ লোকগুলোকে দেখছো? কেমন ঘুরঘুর করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। যেনো মেয়েছেলে কোনোদিন দেখেনি এভাবে।’
- ‘আরে দূর, এটা হলো কার্জন পার্ক। এখানে সবাই প্রেম করতে আসে। প্রেমিক প্রেমিকার গালে চুমু খায়, ঠোঁটে চুমু খায়। প্রেমিকাও প্রতিদান দেয়। আসলে তোমাকে দেখতে একটু বেশী সুন্দর কিনা? তাই ওরা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’
-’তুমি বাড়ী যাবে না দেব?’
- ‘যেতে তো ইচ্ছে করছে না বিদিশা, মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারারাত শুধু ঘুরি। এখান থেকে তোমাকে নিয়ে চলে যাই ইডেন গার্ডেন্স, তারপরে ময়দান। এইভাবে আদর খেতে খেতে যদি সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, তারপরে ভোর বেলা, তুমি আর আমি বাড়ী ফিরলাম, কেমন হবে?’
- ‘খুব ভালো হবে। কাল থেকে কলেজে বাবা আমার আসা বন্ধ করে দেবে। তুমি তো তাই ই চাইছো, তাই না?’
- ‘আমি চাইছি এখন একটা দমদার কিস। কিন্তু তুমি তো রাজী হোচ্ছো না।’
-’কিভাবে চুমু খেতে হয় ওটা আমি জানি না তো, ওগুলো তো তুমি পারো। ‘
-’তাই বুঝি? তাহলে মাথাটা নিচু করো, আমি একটা চুমু খেয়ে দেখাই তোমাকে। এমন চুমু খাবো, তোমার দেহ ভেদ করে একেবারে শিরার ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করবে। এমনকি তোমার অস্থিমজ্জায় গিয়ে সেটা নাড়া দেবে।’
-‘এই না। এখানে নয়। কেউ দেখে ফেলবে না? কি অসভ্য তুমি।’-’যা বাব্বা চুমু খেতে চাইলেই কেউ অসভ্য হয়ে যায় নাকি? ওটা তো প্রেমিক প্রেমিকার সহজাত প্রবৃত্তি। ভালোবাসা যদি প্রগাঢ হয়, তখনই তো চুমু। তুমি আমাকে চুমু খাবে, আমি তোমাকে চুমু খাবো। তখনই তো ভালোবাসা আরো নিবিড় হবে।’
বিদিশা হঠাই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিলো, আমাকে বললো-’এই জানো সৌগতটা কি অসভ্য। শুক্লাকে কি বলেছে-’
- ‘কি বলেছে সৌগত?’
- ‘শুক্লা কালকে আমাকে বললো, ওকে নিয়ে নাকি দুদিন আগে বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গিয়েছিল সৌগত। গাছতলায় শুক্লাকে পেয়ে ওর সারা শরীরটায় চুমু খেয়েছে।’
- ‘ভালোই তো করেছে। আমি হলেও তাই করতাম। সৌগত ঠিক কাজ করেছে।’
- ‘আর ও যে নামকরণ গুলো দিয়েছে, তুমি হলে কি দিতে?’
আমি একটু অবাক হলাম, বিদিশাকে বললাম- ‘নামকরণ? কিসের নামকরণ?’
বিদিশা বললো, ‘শুক্লা ওকে নাকি বলেছে বোটানিকাল গার্ডেন্সে গিয়ে ওকে জড়িয়ে সৌগত নাকি এমন চুমু খাওয়া শুরু করেছিল, শুক্লার খুব সেক্স উঠে যায়, আমাকে বললো, জানিস বিদিশা, সৌগত এমনভাবে আমার বুকে চুমু খেতে শুরু করেছে, দেখি আমার জামার বোতামও খুলে ফেলেছে বেশ কয়েকটা। চুমু খেতে খেতে আমাকে বললো, শুক্লা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তাই তোমার শিহরণ জাগানো এই শরীরটায় প্রতিটায় জায়গায় আমি একটা করে চুমুর স্পর্ষ দেবো, আর সেই সাথে আমার মত করে আমি এই এই জায়গাগুলোর একটা একটা করে নামকরণ দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, সৌগত নামকরণ করবে- ‘তাই? ব্যাপারটা কিরকম?’
বিদিশার কোল থেকে মাথা তুলে আমি তখন উঠে বসেছি, সৌগতর দেওয়া ওই নামগুলো শোনার জন্য উসখুস করছি।
বিদিশা বললো, ‘কি অসভ্য। শুক্লার বুক কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিলো বলে ওখানে চুমু খেয়ে বলেছে, ওকে বলেছে, এটা হলো, উঁকি-মারা-মহাশয়, স্তনদুটোর মাঝখানে মুখ গুঁজে বলেছে, এটা হলো আমার বেড়াবার জায়গা। আর চুমু খেয়ে শুক্লাকে প্রায় পাগল করে সবশেষে ওকে বলেছে, যেদিন তুমি আমাকে যাবার পথটা (যোনী) দেখিয়ে দেবে, সেদিন তোমাকে আমি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেবো।
বিদিশার মুখ থেকে, শুক্লাকে দেওয়া সৌগতর ওই নামকরণ গুলো শুনে আমি হাসতে লাগলাম। বিদিশা বললো-তুমি হাসছো?
- ‘হ্যাঁ, আমিও ভাবছি, ওরকম কিছু নামকরণ দেওয়া যায় নাকি?’
- ‘আর নামকরণ করতে হবে না মহাশয়। চলো এবার বাড়ী চলো।’
- ‘আচ্ছা বিদিশা তুমি কি এমন একটা চুমু আমাকে খেতে পারো না? যেটা এখনো অবধি কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে খায় নি। চুমুর মধ্যে বেশ উৎকৃ্ষ্টতা মেশানো থাকবে, অনেকক্ষণ ধরে সেই চুমুর রেশ থাকবে, মিষ্টতা থাকবে, সোহাগ থাকবে, আর আমি যতক্ষণ না তোমাকে না করছি, তুমি চুমু খেতেই থাকবে।’
- ‘বুঝেছি, বুঝেছি, এবার তোমাকে আমায় ফেলেই এখান থেকে চলে যেতে হবে। ঠিক আছে তুমি এখন ঘাসের ওপর শুয়ে থাকো। আমি যাচ্ছি।’
- ‘এই বিদিশা, যেও না দাঁড়াও। আমি আসছি।’
আরেকটা দিনের ঘটনাও মনে পড়ছিলো। বিদিশার সাথে আমার প্রেম শুরু হওয়ার পরপরই একদিন কলেজের ক্যান্টিনে শুক্লা আর আমি পাশাপাশি বসে। সেদিন বিদিশা কলেজে আসেনি। শুনেছি, শরীরটা নাকি কাল থেকে ওর খুব খারাপ হয়েছে। সকালে ফোন করে আমাকে বলেছে, আমি যেতে পারছি না আজকে। তুমি মন খারাপ কোরো না।শুক্লা চা খাচ্ছিলো, আর বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। ওর চোখে মুখে একটা কৌতূহল। অনেক্ষণ বাদে, আমার মনের ভাবটাকে বোঝবার জন্য একটা প্রশ্ন করে বসলো।-
- ‘দেব একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, মনে কিছু করবি না বল?’
- ‘কি কথা বল? মনে কেন করবো?’
- ‘না, আগে তুই আমাকে কথা দে, মনে কিছু করবি না, তাহলেই বলবো।’
মনে হল, শুক্লার মনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যেন একটা চিন্তা রয়েছে, হঠাৎই কোনো প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে ওর মনে। প্রশ্নটা যে বিদিশাকে নিয়ে সেটা জানতে পারলাম, ও বলার পর।
- ‘দেব, তুই বিদিশা ছাড়া, আগে কখনো কারুর সাথে প্রেম করেছিস? এই কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে, আর কোনো মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা হয় নি তোর?’
- ‘না রে শুক্লা। সেভাবে দেখতে গেলে, বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম প্রেম। এর আগে সেরকম কোনো সুযোগই হয় নি বলতে পারিস।’
- ‘তুই তো বিদিশাকে খুব ভালোবাসিস, জানি বিদিশাও তোকে খুব ভালোবাসে। যদি তোদের এই ভালোবাসার তারটা কোনোদিন ছিঁড়ে যায়, কষ্ট পাবি না?’
- ‘আমি এসব কথা চিন্তাই করতে পারি না শুক্লা, এসব কখনও হবে না।’
- ‘না ধর, এমনও তো হতে পারে, বিদিশার বাড়ী থেকে ওর বাবা মা দুজনেই বেঁকে বসলো। তোকে তারা জামাই হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হল না। তখন?’
- ‘জানি না, সেটা কোনোদিন হবে কি না। তবে ওর বাড়ী থেকে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না আমার। আর বিদিশাও ওর বাবা মার কথা শুনবে না। ও কথা দিয়েছে আমাকে। বিদিশাকে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।’
- ‘দেব, তুই না বড্ড সরল, তুই একটু বেশী রোমান্টিক। আমার তো মনে হয়, বিদিশা যতটা না তোকে ভালোবাসে, তুই তার থেকেও বেশী ওকে ভালোবাসিস।’
- ‘হতে পারে, আমি তো কোনদিন, ভালোবাসাটাকে খেলনা বলে ভাবিনি। আমার কাছে ভালোবাসা ঠুনকো নয়। ভালোবাসা কখনও অভিনয় দিয়ে হয় না।’
- ‘জানিস আমার এক পিসতুতো দিদি আছে, রাঙাদি বলে। আমাকে বলতো, জীবনে প্রথম ভালোবাসা নাকি বড়ই মধুর। কাঁঠালের আঠার মত। লাগলে পড়ে ছাড়তেই চায় না। কিন্তু আসতে আসতে ভালোবাসাটা যথন ফিকে হয়ে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়, তখন সেভাবে কাউকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না। মানুষের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই, প্রথম ভালোবাসার মধ্যে যে গভীরতা আর আবেগ থাকে, দ্বিতীয় প্রেমে সেই আবেগটাই নাকি আসে না। যদি বিদিশা আর তোর প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকে, নতুন করে তুই কাউকে ভালোবাসতে পারবি? সেই আবেগের টান, ব্যাকুলতা তুই দেখাতে পারবি?’
শুক্লাকে বললাম- ‘কেন? একথা বলছিস কেন? আমাকে নিয়ে তোর বুঝি কোনো চিন্তা হয়?’
- ‘তোকে নিয়ে আমার বড় ভয় হয় দেব। তোর মধ্যে এতো গুন আছে, এতো কোয়ালিটি আছে, অথচ মনে হয় কোনোদিন যদি আঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর এই গুনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন তুই কি করবি? কাউকে ভালোবেসে তো আর জীবনকে নষ্ট করে দেওয়া যায় না।’