Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#35
শুভেন্দু বললো, তারপর আর কি? একদিন আমাকে ও বলে বসলো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি
আমি বললাম, তুই কি বললি তার জবাবে?
শুভেন্দু বললো, আমি বললাম, আমি তো বাসি না
রনি তাকিয়ে আছে শুভেন্দুর মুখের দিকেআমিও তাকিয়ে আছিশুভেন্দুকে বললাম, সেকীরে? তুই এইকথা বললি শেষপর্যন্ত? ওর দিকে এতো তাকিয়েও তোর ওর প্রতি প্রেম জাগলো না? তাহলে আর কি প্রেম ভালোবাসা হলো?
শুভেন্দু বললো, শোন, মুখে ভালোবাসি, এই কথাটা বলতেই যার সাতদিন লেগে যায়, সে আবার কি ভালোবাসবে আমাকে? সাতদিন ধরে তাকিয়েই তাকিয়েই শুধু সময় নষ্টও আবার কি ভালোবাসবে আমাকে?
আমার শুভেন্দুর কথা শুনে হাসতে হাসতে প্রায় পেট ফেটে যাবার মত অবস্থাওকে বললাম, কে মেয়েটা? আগে তো এ গল্পটা কোনদিন শুনিনি
রনি বললো, তুই ওর কথা বিশ্বাস করছিস? বানানো গল্প বলতে শুভেন্দু খুব ভালো পারেএকটার পর একটা বলে যাবে, সত্যি না মিথ্যে তুই ধরতেই পারবি না
আমি বললাম অনেক ক্ষেত্রে পরষ্পরকে বুঝে নিতে একটু সময় লেগে যায়, মেয়েটা তোকে হয়তো একটু পরখ করে দেখে নিচ্ছিলোওই জন্যই হয়তো সময়টা নিয়েছে
শুভেন্দু বললো, ঠিক বলেছিস, আসলে ও দেখে নিচ্ছিলো আমার মালকড়ি সেরকম আছে কিনা? মেয়েরা যদি দেখে পকেট ভারী, তাহলেই তোকে বলবে আমি তোমার ভালোবাসার নারীনইলে যাও আড়িশালা অমন ভালোবাসার পেছন মারী
আমি বললাম, এই যাঃ কি হচ্ছে টা কি? ব্যাচারা রনিও তো প্রেম ভালোবাসা করেছে মাধুরীর সঙ্গেমাধুরী কি তাহলে রনিদের টাকা দেখে ওকে বিয়ে করেছে? সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না
শুভেন্দু হেসে বললো, রনি আর মাধুরীর ভালোবাসার একটা কাহিনী শুনবি? তাহলে তোর আরো পেট ফাটবে হাসতে হাসতে
রনি দেখি, চুপ করে রয়েছে, আর মুচকী মুচকী হাসছেবুঝতে পারছে শুভেন্দু এবার কি বোমা ফাটাবে
শুভেন্দু বললো, আমাদের বাড়ীর পেছনটায় কিছুটা এগিয়ে গেলে তুই একটা বাগান দেখতে পাবিবাগানটা এখন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছেআগে ওটা খোলা বাগান ছিলোরনি যখন প্রথম প্রথম আমাদের বাড়ী আসা শুরু করলো, তখন ও ছুঁড়ি কে নিয়ে ওই বাগানটায় ঘুরতে যেতোচারিদিকে সুন্দর সুন্দর নারকেল গাছ আর সুপারি গাছে ভর্তিপ্রেমিক প্রেমিকারা যেমন গাছের তলায় ছায়াতে বসে সুন্দর সুন্দর প্রেমের কথা আর মনের কথা বলে, ও আর ছুঁড়ি দুজনে মিলে বসে সেই কথাগুলোই বলতো
আমি বললাম তো? ভালোই তোবাড়ীর কাছেই বাগান, আর সেই বাগানে প্রেম মন্দ কি?
শুভেন্দু বললো, আরে বাবা সে তো বুঝলামকিন্তু আসল কথাটা তো তুই শুনলি না
আমি বললাম, কি আসল কথা?
শুভেন্দু বললো, দুজনে কথা বলবে কি? প্রেমের কথা শুরু করতেই তো একহপ্তা পারযে জায়গাটা ওরা বসতো, দুজনে শুধু গোল গোল করে ঘাস ছিঁড়ে যেতোএক হপ্তা পেরিয়ে গেলোবেশ খানিকটা ঘাস ছিঁড়ে, জায়গাটা ন্যাড়া মতন হয়ে গেলোএদের প্রেমের কথা আর বলা হল না
রনি গ্লাসে চুমুক দিয়েছে সবেএমন ভাবে শুভেন্দু কথাটা বলেছে, হাসিতে ভীষম খেয়ে রনির তখন যাচ্ছেতাই অবস্থা
হাসি আমিও চেপে রাখতে পারছিলাম নাশুভেন্দু বললো, এটা কিন্তু গুল নয়একেবারে সত্যি কথা
 বলতে বলতেই মাধুরী ঘরে এসে ঢুকলো বিদিশাকে সঙ্গে নিয়েরনির দিকে তাকিয়ে মাধুরী বললো, ও শুরু করে দিয়েছো বুঝি? সত্যি তোমাকে আর ছোড়দাকে কোথায় বাঁধিয়ে রাখবো বলো তো দেখি?
শুভেন্দু বললো, এই ছুঁড়ী, তুই আমাদের গার্জেন না কি রে? আজ শুধু আনন্দ আর ফুর্তী করবো, তবেই না জমবেদেবকে আমরা কতদিন বাদে পেলাম বল তো?
বিদিশা ঘরে ঢুকে আমার সামনেই বসলোমাধুরী আমার দিকে তাকিয়ে, চেঁচিয়ে বললো, ও তুমিও শুরু করে দিয়েছো? খাচ্ছো বসে এদের সঙ্গে?
আমি না বলার মত ঘাড় নাড়ছিলামমাধুরী বললো, ওই তো খালি গেলাস টাতোমার পাশেই দেখলামবিদিশা তোমার কাছে যাওয়া মাত্রই তুমি ওটাকে সোফার তলায় ঢুকিয়ে দিলেবিদিশার সামনে বুঝি মদ খাবে না?
বিদিশা তখন তখন সামনে বসে আমাদের তিনজনকেই দেখছেশুভেন্দু বললো, ব্যাটাছেলেরা চা খাবে না, সিগারেট খাবে না, মদ খাবে নাতো কি খাবে বল দেখিআমাদের বুঝি সখ আহ্লাদ কিছু নেই?
রনি মাধুরীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, এই যে সহধর্মিনী আমারতুমি এখন চুপ করোদেব এখন গান শুরু করবে
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে বললো, এই দাঁড়া দাঁড়া।  দেবের কিন্তু একটা স্বভাব আছে, সবাই জানিস তো?
রনি সঙ্গে সঙ্গে বললো কি?
শুভেন্দু বললো, ওকে কলেজে তো আমি দেখেছি, শেষের দিকে বিদিশার যে গানগুলো পছন্দ, সেইগুলোই বেশী বেশী করে গাইতোব্যাটা এমন ঢ্যামনাআজ কিন্তু ওসব চলবে নাআমাদের পছন্দের গান তোকে গাইতে হবে
আমি বললাম, কি গাইবো বল?
শুভেন্দু বললো, তুই ওটা দিয়ে শুরু কর। ‘এ রাতে এ মৌসম, নদীকা কিনারা এ চঞ্চল হাওয়া।’
আমি বললাম, এই গানটা কিন্তু বিদিশারও খুব পছন্দ
সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দু বললো, না, না, তাহলে বরঞ্চ তুই ওটা গা, এ মেরী জোহরা জেবীন, তুছে মালুম নেহী, তু অভীতক হ্যায় হাসীন, অউর ম্যায় জওয়ান, তুঝপে কুরবান মেরী জান মেরী জান
মাধুরী বললো, ছোড়দা তুই না? কবেকার সেই সেকেলে মার্কা গান, ভালো ভালো কত গান আছে তা না
রনি মাধুরীকে বললো, তুমি জানো না ডারলিং, দেবের কাছে যা স্টক আছে, গুনে গুনে শেষ করতে পারবে নানতুন পুরোনো, ক্ল্যাসিকাল, লাভ সঙ সব ও গলায় নিয়ে বসে আছেখালি একবার করে বিদিশার দিকে তাকাবে, আর মেহেফিল ভরিয়ে দেবে
বিদিশা চুপ করে বসেছিলো, আমি বললাম, আমি আজ কারুর পছন্দের গান গাইবো নাযে কটা গান গাইবো, তোদের সবারই ভালো লাগবে
শুভেন্দু বললো, সেই ভালো সেই ভালোতুই গা
মাধুরীকে রনি বললো, তুমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও বসো
 
 বিদিশা যেখানটা বসেছিল, মাধুরী ঠিক তার পাশে গিয়েই বসলোআমি স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়ামটা হাতে নিয়ে আঙুলে সুর বেঁধে কিছুক্ষণ হূ হূ করলাম।  তারপর গাইতে শুরু করলাম, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই নিখিলেশ প্যারিসে, মঈদুল ঢাকাতে, নেই তারা আজ কোন খবরে গ্র্যাণ্ডের গীটারিস্ট গোয়ানীস ডিসুজা, ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে কাকে যেন ভালোবেসে আঘাত পেয়ে যে শেষে, পাগলা গারদে আছে রমা রায়, অমলটা ধুঁকছে দুরন্ত ক্যানসারে জীবন করে নি তাকে ক্ষমা হায়……………………. কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
গান গাইতে গাইতে আমি সবার দিকেই তাকাচ্ছিলাম একবার করেদেখলাম ওরা সব আমার গান শুনছে, আর সেই পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছেমনে পড়ছে কলেজ, কফিহাউস, সেই সোনালী দিনগুলো, যেগুলো কবেই আমরা সবাই হারিয়ে এসেছি
রনি বললো, তুই তো আজ কাঁদিয়ে ছাড়বি রে
আমি দ্বিতীয় গানটা ধরলাম, এতো রাগ নয়, এ যে অভিমান, এ শুধু তোমায় চাওয়ার, আরো বেশী কাছে পাওয়ার, ছল ভরা গান, এ যে অভিমান
দেখলাম বিদিশার চোখটা এবার ছল ছল করছেহঠাৎ রুমাল দিয়ে চোখটা বারে বারে মুছতে লাগলোশুভেন্দু বললো, এই বিদিশা তুই কাঁদছিস নাকি?
আমি তৃতীয় গানটা শুরু করলাম, জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নইপাছে ভালোবেসে ফেলো তাইদূরে দূরে রই
বিদিশা গানটা দু লাইন গাওয়া মাত্রই উঠে ছুট্টে দূরে কয়েক হাত চলে গেলদেওয়ালের দিকে মুখ ফিরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলোআমি গান থামিয়ে দিয়েছি, শুভেন্দু আর রনি দুজনেই অবাকমাধুরী কাছে গিয়ে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরলো, কি হয়েছে বিদিশা তুমি কাঁদছো কেন?
কোনোরকমে রুমালটা দিয়ে চোখ মুছে বিদিশা বললো, খুব ভুল হয়ে গেছেদেবের মত নিষ্পাপ ভালো ছেলেকে আমি এভাবে ঠকাতে পারবো নাআমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে
আমি গান থামিয়ে হতবাক হয়ে চেয়ে আছি বিদিশার দিকেমনে একটা প্রশ্নহঠাৎ বিদিশা একথা বললো কেন?
দেখলাম, তখনো বিদিশার ছলছলে দুটি চোখ, গালের ওপর দিয়ে জলের ধারাগুলো নামছে কোনোদিন বিদিশাকে এভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনিগলায় দম আটকে যাওয়ার মতো একটা শব্দ বের হয়ে বিদিশার সমস্ত মুখটাই কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠলোচোখের জলের ধারা স্তব্ধ করে দিলো আমাদের সবাইকে
একী বিদিশা, তুমি কাঁদছো কেন? মাধুরী বলে উঠলো, সেই সাথে আমরা সবাই
হারমোনিয়াম ছেড়ে উঠে গিয়ে আমি বিদিশার কাছে গেলামওর কাঁধের ওপর দু’হাত রাখলাম, বিদিশাকে বললাম, ‘কাঁদছো কেন বিদিশা? কি হয়েছে তোমার? কোনো অসুবিধে? বলবে আমায়?’
আমি জানি আমার জীবনের কাহিনীটা এতই করুনতর, এর থেকে প্রেরণা নেওয়ার মত কিছুই নেইতবু তো মানুষ একটা আশার আলো খোঁজেএকটা দিশাকে ধরে সে বাঁচতে চায়দিশা যদি আমার সেই বিদিশা হয়, তাহলে একটু আগে ও যা বললো, সেটা ও ফিরিয়ে নিক।  আমি জানিনা ঠিক কি হয়েছে, তবুও বিদিশা যে আমাকে কখনো ঠকাতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 02-07-2021, 12:51 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)