02-07-2021, 12:48 PM
কি জ্বালা! পরের বাড়ী আর নিজের বাড়ীর এই হোল তফাৎ। এতদিন বাদে যাও বা চুমুর সুযোগটা এলো। তাও সেটাকে গ্রহন করতে পারবো না? আমি একেবারেই আপসেট। মুখটা ঘুরিয়ে চলে গেলাম ছাদের একপাশটায়। চুমু খাওয়ার সুযোগ যখন হয় নি অগত্যা আকাশের চাঁদ আর তারা দেখতে লাগলাম। সামনে একটা বড় নারকেল গাছ হাওয়াতে দুলছে। মনে হল আমার শরীরেও কেমন একটা দুলুনি লাগছে, কারণ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বিদিশা। পেছন থেকে আমার কোমরটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরেছে। আর আমার পিঠে একটার পর একটা চুমু খেয়ে যাচ্ছে।
রনি চোঁ চোঁ করে কিছুটা পেগ মেরে নিয়ে বললো, ‘এই শুক্লাটা বরাবরই অদ্ভূত। কলেজে পড়তে পড়তে সৌগতর সাথে প্রেম করলো, বিনা কারনে সৌগতকে বাতিলও করে দিলো, তারপরে যাকে বিয়ে করে বসলো তার সাথেও ঘর করতে পারলো না। এতদিন বাদে দেবের প্রতি তার প্রেম জেগেছে, বিদিশাকে ছেড়ে দিয়ে দেবও তার সাথে প্রেম শুরু করবে, এও কি সম্ভব নাকি? দরদ যেন উতলে পড়ছে। কেন রে? বিদিশা ফিরে এসেছে বলে? ভালোবাসার কথা এতদিন তাহলে বলিস নি কেন?’
আমি বিদিশার দিকে মুখ ঘোরালাম। বিদিশা এবার একটা চুমু খেলো আমার গালে। তারপর আলতো করে চুম্বনের স্পর্ষ দিলো ঠোঁটে। শিশুরা যখন চুম্বন করে তখন তাদের নিঃশ্বাস আলতো ভাবে গায়ে এসে লাগে। তেমনি ভাবে বিদিশার নিঃশ্বাসটাও আমার গায়ে এসে লাগছিলো। ঠোঁটটা বাড়িয়ে ওর ঠোঁটটাকে এবার আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করলাম। নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে এবার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বিদিশা।
চুমুর পর চুমু দিয়ে বিদিশাকে আমি চুম্বনস্নাত করে দিচ্ছি। হঠাৎই আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিদিশা বললো, ‘ওই মাধুরী এসেছে আবার।’
আমি পেছন ঘুরে তাকালাম, বিদিশাকে বললাম, কোথায় মাধুরী? কই কেউ নেই তো।
দেখি বিদিশা হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। আমাকে বললো, ‘খেলে তো চুমু। চলো এবার নিচে যাই।’
বিদিশা আর আমি নিচে যাবার পর শুভেন্দু বললো, ‘এই তোরা দুজনে এতক্ষণ ধরে কি করছিলিস রে? সেই যে উপরে উঠেছিস নিচে আসার নামই নেই।
দেখি মাধুরী সামনে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে। শুভেন্দু ওর হাসিটা দেখামাত্রই বুঝে গেলো। বললো, ‘ও বুঝেছি বুঝেছি। তোরা তোদের কাজটা করে এসেছিস। আমারই ভুলটা হয়ে গেল। কেন যে চুপি চুপি ছাদে গিয়ে একবার দেখে এলাম না।’
মাধুরী হাসছিল। শুভেন্দুকে বললো, ছোড়দা, তুই না সত্যি, এতো ফাজলামী মারিস না।
শুভেন্দুও তখন হাসছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক হ্যায় তো বস। তাহলে আমাকেও একটা থ্যাঙ্কু দাও। দেখো, এইজন্যই তোমাকে বলেছিলাম আসতে। সারপ্রাইজ মানে বিদিশার সারপ্রাইজ। তোমার জীবনে বিদিশার থেকে বড় সারপ্রাইজ কি আর কিছু আছে? আই অ্যাম অলওয়েজ উইথ ইউ মাই ফ্রেন্ড। তোমার সুখে দূঃখে সবসময়ই তোমার পাশে ছিলাম। আর ভবিষ্যতেও থাকবো, এটা জেনে রেখো।’
মাধুরী বিদিশাকে নিয়ে একটু অন্যঘরে চলে গেলো। শুভেন্দু বললো, ‘আমার দাদার বৌদের সাথে বিদিশার আলাপ করাবে। মোটামুটি পনেরা কুড়ি মিনিট ধরে নে। বৌদিরা এমনিতেই খুব কথা বলে। তিন তিনটে বউ, সময় তো একটু লাগবে। ও আসার আগে চট করে দুপেগ মেরে নে। সিগনেচার হূইস্কি এনেছে রনি। গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে তারপরে গান শুরু হবে।’
আমি বললাম, করেছিস কি? গানও গাইবো, আবার মদও খাবো?
শুভেন্দু বললো, ‘দূর ব্যাটা আজকেই তো খাবি। আজকে তোর জীবনের স্পেশাল দিন না? বছরে কদিন মাল খাস? হাতে গুনে বলে দিতে পারবো, তুই কদিন খাস। আজ একটু সেলিব্রেট করো বৎস। বুঝতে পারছো না? তোমার জন্য আমাদেরও আজ কত আনন্দের দিন।’
রনি আমার দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে বললো, নে চুমুক দে। কাম অন, চীয়ার্স।আমি ঢোঁক ঢোঁক করে গ্লাসের অর্ধেক জল মেশানো হূইস্কিটা খেয়ে নিলাম। গলায় একটা আলতো ঝাঁঝ লাগলো। মুখ দিয়ে আওয়াজ করলাম আ-
সঙ্গে সঙ্গে রনি আর শুভেন্দুও গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুখ দিয়ে একসাথে আওয়াজ করলো আ- দুজনেই বললো, কি শান্তি আজকে। তাই না? শান্তি শান্তি। আজ যেন অনেক শান্তি।
আমিও বললাম, হ্যা, ভীষন শান্তি।
রনি বললো, ‘দেব’ বাড়ীতে মাসীমাকে একটা ফোন করে বলে দে, তোর কিন্তু ফিরতে ফিরতে আজ দেরী হবে।’
শুভেন্দুও সায় দিলো, আমাকে বললো, ‘হ্যাঁ, শুধু শুধু মাসীমার চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই। একেবারে রাতের ডিনার সেরেই এখান থেকে বেরোবি। তোর আর বিদিশার জন্য মাধুরী অনেক পদ রান্না করেছে। তোদেরকে ও না খাইয়ে ছাড়বে না আজকে।’
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এখন বাজে আটটা। তারমানে গান বাজনা, গল্পগুজব আর খাওয়া দাওয়া সেরে এখান থেকে বেরোতে বেরোতে মোটামুটি রাত এগারোটা হবে। বিদিশাকে যদি ট্যাক্সী করে ওকে ওর বাড়ীতে ড্রপ করে দিই, তাহলে বাড়ী পৌঁছোতে পৌঁছোতে রাত বারোটাতো হবেই। মাকে একটা ফোন করা অবশ্যই দরকার। নইলে মা আবার চিন্তা করবে আমাকে নিয়ে।
ফোনটা করা মাত্রই মা বললো, শুভেন্দুদের বাড়ীতে কি অনুষ্ঠান আছে আজকে? এত দেরী করে ফিরবি, কাল না আবার অফিস আছে তোর?
বিদিশার কথাটা মাকে বলতেই যাচ্ছিলাম, শুভেন্দু ইশারা করলো, বললো, ‘থাক থাক, এখন মাসীমাকে কিছু বলিস না। ওটা পরে হবে। বিদিশাই নিজে থেকেই তোর বাড়ীতে যাবে।’
‘বিদিশা’ নামটা মুখ থেকে বেরোতে গিয়েও শুভেন্দুর জন্য আটকে গেলো শেষ পর্যন্ত। ফোনটা ছেড়ে দিয়ে ওকে বললাম, ‘মা কিন্তু বিদিশার ব্যাপারটা জানে। সকালে শুক্লা যখন এসেছিল, বিদিশার কথা বলছিলো, মা আড়াল থেকে সবই শুনেছে। তবে এখানে যে বিদিশা আসছে, সেটা মা জানে না।’
রনি, শুভেন্দুকে বললো, ‘শুক্লার ব্যাপারটা কি বলতো শুভেন্দু? হঠাৎ এতদিন বাদে ও দেবের বাড়ীতে? ওর যাবার কারণটাই বা কী? আর তোকে যে একটু আগে ফোনে এতোকথা বললো, তাতে তো মনে হচ্ছে কিছু একটা গোলমেলে ব্যাপার আছে নিশ্চই। বিদিশার প্রতি শুক্লার এত বিদ্বেশ, এর কারণটা কি?
শুভেন্দু খুব চালাক। রনিকে বললো, ‘শোন, সবকথা তো আর মেয়েরা কখনো খুলে বলে না। ওটা বুঝে নিতে হয়, আমি বিদিশার সামনে এসব কথা আলোচনা করতে চাই না। তবে বিদিশার প্রতি শুক্লার বিদ্বেশটা শুনে মনে হলো, কিছুটা একটা ব্যাপার কাজ করছে শুক্লার মনেক ভেতরে ভেতরে। হয় দেবের প্রতি ওর কোনো দূর্বলতা তৈরী হয়েছে এতদিন পরে, নয়তো দেবকে ও বিশেষ কোনো কাজে লাগাতে চাইছে, যেটা শুক্লা খুলে বলছে না।’
আমি শুনে বললাম, ‘দরদ? দরদ মানে কিসের দরদ? শুক্লা আমার প্রতি দরদ দেখাবেই বা কেন?’
শুভেন্দু বললো, ‘কি জানি? ফোনে তো আমাকে বললো, ‘শোন, তোরা অত বিদিশা বিদিশা করে লাফাস না। বিদিশার দোষগুলো তো দেবতো কোনোদিন দেখবে না। তাই ওকে সেভাবে বলতেও পারি না। তবে তোকে আমি বলছি, এতদিন বাদে বিদিশা যে আবার ফিরে এলো, কি ভালোবাসার মর্যাদা দিয়েছে ও দেবের জন্য?’ একবারও দেবকে ফোন করেছে ও? ছেলেটাকে ছেড়ে যখন বিদিশা চলে গেলো, তখন তো ভালোবাসার কথা একবারও মনে পড়েনি তার। আজ যখন নিজের স্বামীর সাথে বিদিশার আবার বিচ্ছেদ। ঠিক তখনই সুর সুর করে ফিরে এসেছে আবার ওই ভালোমানুষটাকে পাবে বলে। ‘
শুভেন্দু দেখলাম শুক্লার ওপর খুব চটে। একটু বিরক্ত হয়েই আমাকে বললো, তুই বল দেব, এসব কথার কি কোনো মানে হয়? বিয়ে তো তুইও করেছিলি। তোর বরের সাথে, তুই অ্যাডযাস্ট করতে পারিস নি। তাহলে বিদিশাকেই বা শুধু শুধু দোষ দিচ্ছিস কেন? তোর যেমন হয়েছে বিদিশারও তেমনই হয়েছে। এই অবস্থায় দেবের কাছে ফিরে না এসে বিদিশা তাহলে কার কাছে যেতো? ও তো ভালোই করেছে।
রনি বললো, ঠিক ঠিক, এই হল, একদম পারফেক্ট কথা। শুভেন্দু যা বলেছে, এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। আমাকে রনি বললো, শোন দেব, শুক্লাকে অত পাত্তা দেবার দরকার নেই। ও যদি ফোন করে তোকে, বলবি কোনো কথা নেই তোর সাথে। বিদিশার ব্যাপারে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।’
ঢক ঢক করে একটা সীপ মেরে নিয়ে বললো, আহা রে, কচি খুকী যেনো, এতদিন বাদে দেবের জন্য ভীমরতি জেগেছে।
আমি চুপ করে ওদের কথা শুনিছিলাম। শুভেন্দু রনিকে বললো, এই চুপ চুপ, বিদিশা এসে গেলে সব শুনতে পারবে।
রনি চুপ করে গেলো। শুভেন্দু বললো, তোরা ভাবিস, আমি তো জীবনে কোনোদিন প্রেম করিনি। একবার আমিও একজনের প্রেমে পড়তে যাচ্ছিলাম।
শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই? প্রেম? যা বাজে বকিস না।
শুভেন্দু বললো, হ্যাঁ রে আমি সত্যি বলছি। সেকী দৃষ্টি, সেকী চাউনি। নারীর দৃষ্টি মানে মোহিনী শক্তি। পুরুষমানুষের মনের শান্তিকে কিভাবে না ওরা নষ্ট করে দেয়। মনে হয়, তা যেন কত গভীর, কত আস্বাদে ভরা। কি অসীম তার আহ্বান। কেউ কেউ বলে এভাবে তাকিয়ে থেকে নাকি প্রেমিক যুগল পরষ্পরের হৃদয় পড়ে নেয়। এটা অবশ্য আত্মম্ভরিতার কথা। মানুষ যদি সত্যিই অপরের মনের কথা পড়তে পারতো, তাহলে সে কী প্রচন্ড জ্ঞানীই না হত। চোখ দেখেই বুঝে যেতো তার মধ্যে প্রেম আছে না নেই।
আমি বললাম, এটা তো সত্যি কথাই। তুই মেয়েটার দিকে তাকালেই তো বুঝতে পারতিস, ওর মধ্যে প্রেম আছে না নেই।
শুভেন্দু বললো, তাকিয়েছিলাম তো। রোজই আমি ওর দিকে তাকাতাম। ও যেমন তাকিয়ে থাকতো, আমিও তেমন তাকিয়ে থাকতাম।
আমি বললাম, তারপর?