Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#32
শুভেন্দুদের বাড়ীতে আবার হারমোনিয়াম, তবলা কিছুই নেইমাধুরী ছোটবেলায় গীটার শিখতোআমি গীটারটাও বাজাতে পারতাম বলে, মাঝে মাঝে ওর গীটারের সাথে সুর ভাজতামমাধুরী বিয়ে করে এ বাড়ী ছেড়ে চলে গেলো, সেই সাথে গীটারও ওর সাথে চলে গেলআমি অবাক হলাম, যখন দেখলাম, পাশের ঘর থেকে রনি একটা স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়াম নিয়ে এলো।  আমাকে বললো, ‘সব ব্যবস্থা করেছি আজকেতোর কোনো চিন্তা নেই।’
 
পাশের কোনো বাড়ী থেকে হয়তো হারমোনিয়ামটাকে নিয়ে এসেছেমাধুরী বললো, ‘এ কি এ কি দাঁড়াওএতদিন পরে বিদিশা এলো, দেবদার সাথে একটু কথা বলে নিকতারপরে তো গান বাজনা সব হবে।’
 
শুভেন্দুদের চারতলা বাড়ীর ছাদটা খুব সুন্দরচারিদিকে টব দিয়ে ঘেরামাঝখানে একটা দোলনা দুলছেশুভেন্দুর বাকী দাদারা সব বিবাহিতসবাই বউ নিয়ে এসে সন্ধেবেলা থেকে একঘন্টা করে ওখানে দোল খেয়ে যায়আমাকে শুভেন্দু বললো, ‘শোন ছাদটা, তোর আর বিদিশার জন্য আজ আধঘন্টা রিসার্ভওখানে কেউ যাবে নাএই আমরা তিনজনও নয়।  কিন্তু আধঘন্টার বেশী দেরী করবি নাতাহলে কিন্তু বামাল করবো গিয়েতোর গান শোনবার পর্বটা তারপরে হবেআমরা ততক্ষণ আমাদের লিকারের ব্যবস্থাটাও সেরে ফেলছি। ‘
চা খাবার পর, মাধুরী আমাকে আর বিদিশাকে ছাদে নিয়ে গেলোআমাদের দুজনকে বললো, ‘নাও আধঘন্টার জন্য তোমাদেরকে আমি এখানে ছেড়ে গেলামঠিক আধঘন্টা পরেই আমি আসছিএর মধ্যে দুজনের যা কথা বলবার, সেরে নাও।’
আমার থেকে চার পাঁচ হাত দূরে দাঁড়িয়ে তখন বিদিশামনে হচ্ছিলো, ও হয়তা চাইছে, আমি ওকে কাছে ডাকি, নয়তা ওর কাছেই এগিয়ে যাইবিদিশাকে বললাম, ‘দূরে কেন দাঁড়িয়ে রয়েছো? কাছে এসো।’
বিদিশা একটু এগিয়ে এলোমনে হল, দূরত্বটা কিছুটা হলেও কমলোকিন্তু এখন যেন অল্প একটু ফাঁক থেকে গেলো
দূরের আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে, একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছেবিদিশা বললো, বেশীক্ষণ কিন্তু ছাদে দাঁড়ানো যাবে নাতাহলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।’
বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি গরম কিছু পড়ে আসোনি? নইলে ফেরার সময় তো ঠান্ডা লেগে যাবে।’
বিদিশা বললো, ‘তুমিও তো কিছু পরে আসোনিএকটা হাফহাতা শোয়েটার অন্তত পড়ে আসতে পারতেতারপরেই বললো, মাধুরীকে বলবো, যাবার সময় একটা শাল জাতীয় কিছু দিয়ে দিতেকাল বা পরশু ওকে ফেরত দিয়ে দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, তোমার বাবা মা এখন কেমন আছেন?
বিদিশা বললো, ‘ভালোতবে বাবার ব্যবসা করে অনেক লোকসান হয়ে গেছেআগের মতন বড়লোকীয়ানা ব্যাপারটা নেইআমাদের আর্থিক অবস্থা সেই আগের মতন নয়।’
শুনে একটু খারাপ লাগলোতবু বললাম, ‘তোমার বাবা মা লোক হিসেবেও খুব ভালো ছিলেনএকেবারে মাটীর মানুষআমি একবারই গিয়েছিলাম, আর ওনাদের দেখে এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।’
 বিদিশা বললো, মাসীমা কেমন আছেন? আমার কথা কখনো জিঞ্জেস করেন?
 
বললাম, ‘হ্যাঁমা ভালো আছেমাঝে মাঝে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করে তো আমাকে।’
 
মনে হল, এই আলোচনার বাইরে বিদিশা যেন আরো একটু সপ্রতিভ হতে পারছে না আমার সাথেওকে সহজ করে দেবার জন্য বললাম, আমার সাথে তুমি দেখা করতে চেয়েছিলে, আমার বাড়ীতে তুমি আসতেও চেয়েছিলেশুভেন্দুর মুখে আমি সবই শুনলামতবুও আগের মতন পুরো হাসিটা কিন্তু এখনো আমি বিদিশার মুখে দেখতে পাচ্ছি নাতোমার মনে কি কোনো লজ্জ্বা বা দ্বিধা আছে এখনও? সেরকম কিছু থাকলে মন থেকে সেটা দূরে সরিয়ে দাওপুরোনো কথা আমিও কিছু মনে রাখি নাআর আশা করি তুমিও-
বিদিশা বললো, তুমি বিয়ে করো নি কেন?
 
মনে হল, মান্না দের গানটা গেয়ে ওকে উত্তরটা দিই আর ওকে বলি, হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য, জানি তুমি অনন্য আশার হাত বাড়াই যদি কখনো এ প্রান্তে, চেয়েছি তোমায় জানতে, শুরু থেকে শেষ প্রান্তে শুধু ছুটে গেছি তাই আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত, যদি বা ঘটে অনর্থ, তবু তোমাকে চাই আমি যে দুরন্ত, দু’চোখে অনন্ত, ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই, স্বপ্ন চড়াই তুমি তো বলনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ, রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব, সব ছেড়ে চল যাই
বিদিশা চেয়ে আছে আমার মুখের দিকেযেন অনেক না বলা কথা আমাকে সে বলতে চায়নিষ্পাপ সরলা যুবতীর মতই সে দেবকে নতুন করে ভালোবাসতে চায়জীবনের প্রথম প্রেম, প্রেমের সুখানুভূতিতে একসময় শরীরে যেমন শিহরণ জাগতোঅসংখ্য স্বপ্ন আর আনন্দে জেগে উঠতো মনটাবিদিশা সেইভাবেই হারিয়ে যাওয়া প্রেমটা সমর্পন করে দিতে চাইছে আমার কাছে
আমার এবারে খুব কাছে এসে বিদিশা বললো, ‘আমাকে তুমি বিয়ে করবে দেব? আমি কিন্তু সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’ বিদিশার দিকে আমি দু’হাত বাড়ালামও আমার দুহাতের আলিঙ্গনে শরীরের সাথে আবিষ্ট হয়ে গেলবিদিশার ঠোঁটদুটো আমার খুব কাছে, ইচ্ছে হচ্ছিলো একটা চুমু খাই
মনে পড়ছিলো, ছোটোবেলার কথাএকটা হলদে প্রজাপতি ঘাসের ওপর দিয়ে নেচে নেচে উড়ে বেড়াচ্ছেআমি প্রজাপতিটাকে ধরার অনেক চেষ্টা করছি, কিছুতেই ধরতে পারছি নাপ্রজাপতিটা সেদিন উড়ে চলে গেলো বলে খুব মন খারাপ হয়েছিল, মা পরে বলেছিলো, ‘প্রজাপতি যেদিন নিজে থেকে তোর গায়ে এসে বসবে, বুঝবি তোর এবার বিয়ে হতে চলেছে।’ শুভেন্দুদের বাড়ীর ছাদে একটা নরম প্রজাপতি অনেকদিন পর আমাকে আবার জড়িয়ে ধরেছেআমার বুকে মুখ ঘসছে, গলায় মুখ রাখার চেষ্টা করছে, আমিও তাকে আদর করার চেষ্টা করছিমনে হচ্ছে, এই শীতকালের সন্ধে রাত্রে এ হল সেই উষ্ণতার পরশযেটা পেলে শরীর এমনি গরম হয়ে যায়, শোয়েটার বা শালহয়তো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না
হঠাৎই ছাদের দরজাটা সেইসময় খুলে গেলোদেখি মাধুরী ওখানে দাঁড়িয়েআমাদের দুজনকে বললো, ‘এই যে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক, প্রেমিকাটাইম হয়ে গেছেছোড়দা তোমাদের দুজনকে ডাকছেএবারে নিচে যেতে হবে।’
 আচমকা মাধুরীকে আবার ছাদে আসতে দেখে বিদিশা কিছুটা লজ্জ্বায় পড়ে গেছেআমার বুক থেকে মুখটা তুলে ও তখন নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, মাধুরী অন্ধকারে অত ভালো করে ঠাওর করতে পারে নি আমাদেরতারপরে যখন বুঝলো, বিদিশা আর আমি পরষ্পর দুজনকে জড়িয়ে ছাদের ওপরে দাঁড়িয়ে, ও খিল খিল করে হেসে উঠলোআমাদেরকে বললো, ধরা পড়ে গেছো তো? ভয় নেই ভয় নেই, আমি নিচে গিয়ে কাউকে কিছু বলছি নানাও আরো কিছুক্ষণ সময় এখানে থাকো, তারপরে নিচে চলে এসো
বিদিশা আমাকে বললো, ‘ধ্যাত, তুমি আমাকে বলবে তো? মাধুরী চলে এসেছে, আমি খেয়াল করিনি
আমি হেসে বললাম, ‘তো কি হল? শুভেন্দু এলে না হয় একটা কথা ছিলমাধুরী নিচে গিয়ে কিছু বলবে নাআমার ওর ওপরে ভরসা আছে।’
বিদিশা বললো, ‘চলো, চলো, নিচে যাইনইলে ওরা আবার-’
‘এই তো এতদিন বাদে তোমাকে এত কাছে পেলাম, এখনি চলে যাবো? দাঁড়াও না একটু।’
বিদিশার হাত ধরে টানতে লাগলাম, ওকে আবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলামবিদিশা বললো, ‘এবারে কিন্তু শুভেন্দু ওপরে উঠে আসবেতোমার আর আমার দফা রফা করবে এসে।’
বিদিশাকে বললাম, ‘কিছু করবে নাতাহলে প্যাঁদানি খাবে আমার কাছেতুমি শান্ত হও তো।’
আবার কয়েক মূহূর্তের জন্য প্রজাপতিটা কাছে পেয়েছিবিদিশা বললো, ‘তুমি এরকম ভালোবাসা আগে কখনো বাসো নিবেসেছো কি?’
বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘না বাসিনি তোসত্যি কথাই বলছিআসলে তখন আমার বয়সটা কম ছিলো।’
বিদিশা বললো, ‘বয়স কম থাকলে বুঝি ভালোবাসতে নেই?’
বিদিশাকে বললাম, ‘এই বয়সেই তো মানুষ মরীয়া হয়ে কাউকে ভালোবাসতে পারেদেখছো না কেমন মরীয়া হয়ে উঠেছি এখন তোমার জন্য।’
বিদিশার ঠোঁটে একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলামঠোঁটের ওপরে হাত রেখে মুখ চাপা দিয়ে বললো, এই কেউ দেখে ফেলবে
-কে দেখবে এখন? মাধুরী তো চলে গেছে
-না, তাও পরের বাড়ীতে লজ্জ্বা করে না বুঝি?
বিদিশাকে বললাম, ‘তোমাকে আর আমাকে নিরিবিলিতে ছাদে কেন শুভেন্দু পাঠিয়েছে, জানো না? যাতে চুমুটা ভালো করে খেতে পারিপরের বাড়ীতে যখন এ সুযোগ কেউ করে দেয়ে, তখন তাকে সদব্যবহার করে নিতে হয়।’
বিদিশা বুঝতেই পারছিল, আমি এবার সজোরে ওকে চুমুটা খাবোআমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় লাগালো, ছাদের অন্যদিকেআমিও ওর পেছন পেছন দৌড়োতে লাগলামবেশ লম্বা বড় ছাদকিছুটা দৌড়োনোর পর, বিদিশা হাঁপিয়ে গেলএকটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছেআমি সামনে যেতেই বললো, এই আমাকে কিন্ত জোর করে চুমু খেলে, আমি নিচে ছুট্টে চলে যাবোশুভেন্দু আর রনি এখন নিচে রয়েছে, ওরা তখন দুজনে মিলে জব্দ করবে তোমাকে।’ বলেই হাসতে লাগলো
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 02-07-2021, 12:44 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)