Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#29
সাত
 
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাওয়াটা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার, জানিস তো দেবএকে তো আমার ফোন নম্বর বিদিশার কাছে নেইকলকাতায় এতদিন বাদে ও ফিরে এসেছে, পুরোনো এক কলেজ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎই গড়িয়াহাট মোড়ে তার দেখা হয়ে যাবে, না বিদিশা ভেবেছিলো, না আমি ভেবেছিলাম
আমি শুভেন্দুকে বললাম, বিদিশা, তোকে দেখতে পেয়েছিল? না তুই বিদিশাকে?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশা যখন তোর সাথে প্রেম করতো, তখনো আমি তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলামআর এখনো তোর সাথে আমার সেই সম্পর্কটাই রয়েছে।। আমাকে বিদিশা দেখে স্বভাবতই খুব খুশিজানে শুভেন্দুর সাথে দেখা হওয়া মানে দেবের খবর শুভেন্দুই তাকে দিতে পারবে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আমি তখন কিছু জিনিষ কিনছি, হঠাৎই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, গলাটা খুব চেনা চেনা মনে হল এ ডাক বিদিশার না হয়ে অন্যকারুর হতেই পারে না।’
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম শুভেন্দুর কথা ওকে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘তারপর আর কি? শুরুটা করলো এইভাবে প্রথমেই আমাকে বললো, ‘কতদিন বাদে তোকে দেখলাম রে শুভেন্দুআমাকে দেখে চিন্তে পারছিস?
 
‘আমি তো ওকে দেখে একেবারেই অবাকভাবতেই পারিনি বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখবোআমার কাছে এগিয়ে এলো বিদিশাআমাকে বললো, এই ‘দেব’ কেমন আছে জানিস? আগে যে বাড়ীটায় ওরা থাকতো, দেব কি ওখানেই এখন থাকে? না অন্য কোথাও?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার মুখে তোর নামটা শুনে আমি কেমন প্রফুল্ল মতন হয়ে গেলামআহা, সেই যে কত মিষ্টি মিষ্টি করে কলেজে তোকে নাম ধরে ডাকতো, একেবারে সেইরকম
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশাকে দেখে আমি সত্যি অবাকএতবছর পরে ওর সঙ্গে দেখা, কিন্তু এখনও ওর সৌন্দর্যে একটুকুও ভাটা পড়েনি, বিদিশার যে রূপ, সেই রূপ তার অক্ষতকি সুন্দর লাগছিল ওকে দেখতেআমি তো কোন ছার, যে কেউ প্রেমে পড়বে ওর ওই মিষ্টি হাসিটা দেখলেমনে হল, আমি কি ঠিক শুনছি? এতদিন বাদে ও তোর কথা জিজ্ঞাসা করছে, তোর খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিদিশার কি লাভ এসব জেনে? তারপরেই মনে হল, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যাকে ভুলেও কেউ ভুলতে পারবে না সহজেবিদিশা প্রথমেই আমাকে বলো, এই দেবের ফোন নম্বরটা আমাকে দিবি? ভীষন দরকার।’
শুভেন্দু বললো, ‘আমি তো আরোই অবাক ও তোর ফোন নম্বর চাইছে দেখেবিদিশাকে বললাম, কি হবে তোর দেবের ফোন নম্বর নিয়ে? তুই তো কবেই ওকে ছেড়ে চলে গেছিসব্যাচারাকে ফোন করবি, আর ও আবার তোর কথা ভেবে পাগল হবে।’
 
মনে হল, শুভেন্দুকে বলি, ‘চাইলো যখন, তুই বিদিশাকে আমার ফোন নম্বরটা দিতে পারতিসবিরহের জ্বালায় এতদিন মরছিলামফোনটা পেলে মনে একটা শান্তি আসতো।’
 শুভেন্দু নিজে থেকেই বললো, আমি জানি, বিদিশাকে তোর ফোন নম্বর না দিলে তুই আবার আমার ওপরে রেগে হম্বিতম্বি করবিএতদিন ধরে তোকে দেখে আসছি, তোর দূঃখ কষ্টটা বোঝার মতন ক্ষমতা তো আমার হয়েছে, আমি এই ভুলটা কিছুতেই করবো নাওকে তোর ফোন নম্বরটা দিলামআশ্চর্য, বিদিশা তখুনি তোকে ফোন করতে চাইছিল
 
আমি শুভেন্দুকে বললাম, তাই? কই এই কথাটাতো তো তুই আমাকে আগে বলিসনিতাহলে তো আমি আগে থেকেই সব জেনে যেতে পারতাম
 
শুভেন্দু বললো, ‘এটার জন্য অবশ্য তুই আমাকে গালাগাল দিতেই পারিসকারণ আমিই বিদিশাকে তখন বারণ করেছিলাম।’
 
মনে হল, শুভেন্দুকে কাঁচা গিলে খাই, ওকে বললাম, কেন? তুই ওকে বারণ করলি কেন?
 
শুভেন্দু বললো, ‘সব কথা বিদিশার মুখ থেকে শোনার পর, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, তোর জন্য এটা তাহলে একটা সারপ্রাইজ থাকবিদিশা তোর কাছে আসবে, কিন্তু একটা চমক হয়ে আসবে।  তুই যেন আগে থেকে কিছু জানিস নাআমি ওকে সেইভাবেই রাজী করালাম
বিদিশাকে বললাম, ‘তোর কথা দেবকে আমি আগে থেকে কিছু জানাবো না তুইও এখন ফোন করিস নাতুই যে ফিরে এসেছিস, এটা দেব তোকে নিজের চোখেই দেখুক।’
আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভেন্দু বললো, আচ্ছা দেব, বিদিশা যদি তোর বাড়ী নিজে থেকে চলে যেতো, তোর কেমন লাগতো? হঠাৎই কলিংবেলের শব্দ শুনে তুই ই দরজাটা খুললিদেখলি বিদিশা দাঁড়িয়ে আছে তোর সামনেসেই হারিয়ে যাওয়া মুখ, মনকাড়া চাউনি, সেই আকূলতাদেবকে পাওয়ার জন্য যার এত ছটফটানিএতদিন বাদে একেবারে তোর বাড়ীর দোরগোড়ায়তোর মনে হত না এ আমি কি দেখছি সামনে?
 
শুভেন্দু এমন ভাবে কথাটা বললো, আমার মনে হল বিদিশা যেন সত্যি আসতে চেয়েছিল আমার বাড়ীতেশুভেন্দুকে বললাম, তুই ওকে না করলি কেন?
শুভেন্দু বললো, ‘আমি না করিনিনা করবোই বা কেন? যে মেয়েটার মধ্যে একটা অনুশোচনা রয়েছেএকদিন তোকে ভুল বুঝে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আবার সে ফিরে এসেছে তোর সাথে দেখা করতে চাইছেমনের মধ্যে একটু লজ্জ্বাও রয়েছেকিন্তু তবু যেন তোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে তারমনে কোনো দ্বিধাবোধ নেই।  এতবছর পরে বিদিশার মধ্যে যেন সেই কলেজে পড়ুয়া বিদিশাকেই আমি খুঁজে পাচ্ছিলামআমাকে নির্দ্ধিদায় ও বললো, আমি দেবের বাড়ীতে যেতে চাই, শুভেন্দুওর সাথে দেখা করতে চাইতুই কি আমার মনে একটু সাহস জোগাবি শুভেন্দু? দেব আমাকে দেখলে রেগে যাবে না?’
শুভেন্দু বললো, আমি বিদিশাকে বললাম, এক কাজ কর, তুই বরং আমার বাড়ীতেই চলে আয়আমি ওখানেই দেবকে ডেকে নিচ্ছিএকসাথে সবাই মিলে আড্ডা দেবোআবার মজা হবে, সেই কলেজের মতনরনি আর মাধুরীকেও আসতে বলছি
 আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলামমাধুরী একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকেআমাকে বললো, সত্যি দেবদাএখনো তুমি বিদিশাকে কত ভালোবাসোতোমার মত কজনে হয়?

রনি বললো, দেব হচ্ছে, সত্যিকারের প্রেমিকও ব্যর্থ প্রেমিক নয়বিদিশার কপাল ভালো, দেব ব্যাচারা বিয়ে করেনিনইলে-

শুভেন্দু বললো, দেব হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যতক্ষণ নিজে থেকে কেউ ভুলটা না বুঝতে পারছে, ও জোর করে কারুর ভুল ধরাতে যাবে নাএই বিদিশাকেই দেখ, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে

আমি বললাম, ছাড় ছাড়আমার সন্মন্ধে আর অত ভালো কথা বলতে হবে নাবিদিশা কখন আসছে, তাই বল

শুভেন্দু হেসে বললো, ‘দেখেছিস তো, বিদিশার কথা শুনে এবার তোর কেমন ছটফটানিটা শুরু হয়ে গেছেআসছে আসছে অত ব্যাকূল হোস নাএকটু পরেই এসে পড়বেবিদিশাকে আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে, ও  ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে হয়তো এসে পড়বে আর দশ মিনিটের মধ্যেই।’

মাধুরী বললো, ‘এক কাজ করলে হয় না? বিদিশা আসার আগে, আমরা বরং দেবদাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখিও এসে দেবদাকে খুঁজে পাবে না আর দেবদার মত বিদিশাও একটু ছটফট করবেমজা হবে একটু।’

শুভেন্দু বললো, ‘আইডিয়াটা মন্দ নয়তবে দেব কি তাতে রাজী হবে? দেখ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখএখনই কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেলব্যাচারা বিদিশাকে না দেখতে পেলে, নিজেই যে কষ্ট পাবে।’

ওরা সবাই হাসতে লাগল।  শুভেন্দুকে রনি বললো, ‘আজ হচ্ছে ঐতিহাসিক দিনদুটি প্রেমিক প্রেমিকা এতদিন পরে আবার কাছাকাছি হচ্ছে দুজনেএই ঐতিহাসিক দিনে আমরাও আজ উপস্থিতদেব আর বিদিশার পুনর্মিলন কি জয় হোক।’

মাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ দেবদাএবারে কিন্তু বড়সড় একটা পার্টী দিতে হবে তোমাকেপার্কস্ট্রীট বা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে দেওয়া চাইঅনেক নোট খসবে তোমার তৈরী থেকো

মনে হল, দম নিঃশ্বেস হওয়া ঘড়িকে যেমন দম দিয়ে আবার শক্তির যোগান দেওয়া হয়।  ঠিক তেমনি বিদিশার আগমনের খবরটাও আমার ভেতরের শক্তিটাকে যেন অনেক বর্দ্ধিত করে দিয়েছেঠিক যেন জীবনের মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতনসেই উদ্দামতা, সেই আবেগ আবার ফিরে পাচ্ছি বিদিশা এখনো এসে পৌঁছোয়নি, কিন্তু ওর উপস্থিতি, ওর আবির্ভাব, শরীরে শরীরের স্পর্ষ আমি যেন আগে থেকেই টের পাচ্ছিমনে হচ্ছে, বিদিশা যেন আমার ঠিক পাশেই বসে রয়েছে, আর আমাকে বলছে, ‘কি গো তাকাবে না আমার দিকে? রাগ করেছো বুঝিদেখো আমি তো তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’

জীবন খাতার প্রতি পাতায় বিদিশার নামটা লিখে রাখবো বলে আমি ঠিক করে রেখেছিলাম আমার জীবন থেকে বিদিশা কোথায় হারিয়ে গেলপাতাগুলোও সব শূন্য থেকে গেলআজ আবার বিদিশাকে আমি ফিরে পেলামমনে হল শূন্য পাতাগুলোকে ভরাট করার জন্য আমি যেন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠলাম
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 02-07-2021, 12:37 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)