02-07-2021, 12:18 PM
বারো
দু চারজন যুবক উকিলবাবুকে একটু সকাল সকালই নিতে এসেছিলো। একই গাড়ীতে উকিলবাবু দেবলীনাকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
বিরাট এক উন্মুক্ত মাঠ, তারই মাঝখানে কয়েকখানা চৌকি জুড়ে নীলকাপড় মুড়ে মঞ্চ করা হয়েছে। সামনে ত্রেপল পাতা তাতে ছেলে পিলেরা বসেছে। পিছনের চেয়ারে অতিথিবৃন্দ।
ঠিক সময় মতো মঞ্চের পর্দা উঠে গেলো।
অনেকদিন পর দেবলীনা আবার এ ধরণের অনুষ্ঠানে যোগদান করলো। মনটা তার বেশ খুশীতে ভরে উঠেছিলো।
একজন ভদ্রস্ত একখন্ড কাগজ হাতে করে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে আরম্ভ করলো - আজ আমাদের এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আমাদেরই গ্রামের প্রখ্যাত উকিল মাননীয় শ্রী সঞ্জীব মিত্র। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করবেন মাননীয় অধ্যাপক চন্দ। কিন্তু তিনি এখনও এসে পৌঁছান নি। সংবাদ পাঠিয়েছেন, দুচার মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন।
অধ্যাপক চন্দর নাম শুনে দেবলীনার মনটা যেন কিরকম চঞ্চল হয়ে পড়লো। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো কোন চন্দ? যাঁর নিকট আমি চীন ভাষা শিখেছি ? যিনি আমার বাবার বিশেষ্ট বন্ধু ছিলেন? সে চন্দ এখানে। আমাদেরই এ চন্দন গাঁয়ে !!
একটা ছোট মেয়ে সঞ্জীববাবুর গলায় মালা পরিয়ে দিলো, অমনি মঞ্চের বাইরে, ভেতরে হাততালির শব্দ শোনা যেতে লাগলো।
- এ ছাড়াও আমরা এখন যাদের যাদের মালা দেবো সকলেই জ্ঞানী, গুণী, শিল্পী।
তিনি একে একে নাম ও পরিচয় দিতে লাগলো। ছোট মেয়েটি সকলের গলাতেই মালা পরিয়ে দিতে লাগলো।
হঠাৎ বাইরে কিসের যেন একটা গুঞ্জন শোনা যেতে লাগলো। একজন শ্যামবর্ণ মোটা সোটা প্রৌঢ় ব্যাক্তি উঠে এলেন।
- আমাদের প্রধান অতিথি এসে গেছেন এবার তাঁকে মালা দেওয়া হবে।
দেবলীনা যা আশা করেছিলো ঠিক তাই। এ যে প্রফেসর চন্দ। যার কাছে সে চীনা ভাষা শিখেছিলো এবং যিনি তার বাবার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।
প্রথমেই অধ্যাপক চন্দ বক্তৃতা দিলেন।
বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সকলে হাততালি দিয়ে উঠলো।
দেবলীনা সামনের চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে ঢুকে অধ্যাপক চন্দকে প্রণাম করে বললো - আমায় চিনতে পারছেন স্যার ?
অধ্যাপক চন্দ দেবলীনার বাবার বন্ধু হলেও তাঁকে দেবলীনা শিক্ষকের সন্মানেই সম্বোধন করে।
অধ্যাপক চন্দ প্রথমটা দেবলীনাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে কাঁধে হাত রেখে হেঁসে বললেন - তুমি? তুমি এখানে?
- স্যার, এখানে আমার শ্বশুর বাড়ী।
- তাই নাকি। শুনে খুব খুশী হলাম।
পাশের চেয়ারে সঞ্জীববাবু বসে ছিলেন। দেবলীনা তাঁকে দেখিয়ে বললেন ইনি আমার শ্বশুর শ্রী সঞ্জীব মিত্র।
সঞ্জীববাবু ও অধ্যাপক চন্দ উভয়ে উভয়কে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন।
উভয়ের মধ্যে নতুন প্রীতির সম্বন্ধ গড়ে উঠলো।
সঞ্জীববাবু বললেন - আসুন না আমার বাড়ী। বেশী দূর নয়। সামনেই। গেলে খুব খুশী হবো।
- আজ নয় আর একদিন।
- তা হয় না স্যার, আজই। দেবলীনা বললো।
- কিন্তু কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে যে।
- তবে কথা দিয়ে যান, কবে আসবেন?
অধ্যাপক চন্দ ভাবতে লাগলেন।
দেবলীনা বললো - আমি গাড়ী পাঠিয়ে দেব কিন্তু।
- আমি তোমায় খবর দেব তখন, ভাবতে হবে না কেমন।
- ঠিক আছে, এই কথা রইলো। না আসলে কিন্তু দুঃখ পাবো।
- নিশ্চয়ই যাবো। আচ্ছা তারপর পড়াশুনা করছো তো ?
দেবলীনা ঘাড় নেড়ে জানালো, না।
অধ্যাপক চন্দ বললেন সে কি মা। বিয়ে হয়ে গেছে বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছো। না--না-- এটা তোমার উচিত হয়নি।
দেবলীনা চুপ করে রইলো।
দু চারজন যুবক উকিলবাবুকে একটু সকাল সকালই নিতে এসেছিলো। একই গাড়ীতে উকিলবাবু দেবলীনাকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
বিরাট এক উন্মুক্ত মাঠ, তারই মাঝখানে কয়েকখানা চৌকি জুড়ে নীলকাপড় মুড়ে মঞ্চ করা হয়েছে। সামনে ত্রেপল পাতা তাতে ছেলে পিলেরা বসেছে। পিছনের চেয়ারে অতিথিবৃন্দ।
ঠিক সময় মতো মঞ্চের পর্দা উঠে গেলো।
অনেকদিন পর দেবলীনা আবার এ ধরণের অনুষ্ঠানে যোগদান করলো। মনটা তার বেশ খুশীতে ভরে উঠেছিলো।
একজন ভদ্রস্ত একখন্ড কাগজ হাতে করে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে আরম্ভ করলো - আজ আমাদের এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আমাদেরই গ্রামের প্রখ্যাত উকিল মাননীয় শ্রী সঞ্জীব মিত্র। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করবেন মাননীয় অধ্যাপক চন্দ। কিন্তু তিনি এখনও এসে পৌঁছান নি। সংবাদ পাঠিয়েছেন, দুচার মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন।
অধ্যাপক চন্দর নাম শুনে দেবলীনার মনটা যেন কিরকম চঞ্চল হয়ে পড়লো। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো কোন চন্দ? যাঁর নিকট আমি চীন ভাষা শিখেছি ? যিনি আমার বাবার বিশেষ্ট বন্ধু ছিলেন? সে চন্দ এখানে। আমাদেরই এ চন্দন গাঁয়ে !!
একটা ছোট মেয়ে সঞ্জীববাবুর গলায় মালা পরিয়ে দিলো, অমনি মঞ্চের বাইরে, ভেতরে হাততালির শব্দ শোনা যেতে লাগলো।
- এ ছাড়াও আমরা এখন যাদের যাদের মালা দেবো সকলেই জ্ঞানী, গুণী, শিল্পী।
তিনি একে একে নাম ও পরিচয় দিতে লাগলো। ছোট মেয়েটি সকলের গলাতেই মালা পরিয়ে দিতে লাগলো।
হঠাৎ বাইরে কিসের যেন একটা গুঞ্জন শোনা যেতে লাগলো। একজন শ্যামবর্ণ মোটা সোটা প্রৌঢ় ব্যাক্তি উঠে এলেন।
- আমাদের প্রধান অতিথি এসে গেছেন এবার তাঁকে মালা দেওয়া হবে।
দেবলীনা যা আশা করেছিলো ঠিক তাই। এ যে প্রফেসর চন্দ। যার কাছে সে চীনা ভাষা শিখেছিলো এবং যিনি তার বাবার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।
প্রথমেই অধ্যাপক চন্দ বক্তৃতা দিলেন।
বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সকলে হাততালি দিয়ে উঠলো।
দেবলীনা সামনের চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে ঢুকে অধ্যাপক চন্দকে প্রণাম করে বললো - আমায় চিনতে পারছেন স্যার ?
অধ্যাপক চন্দ দেবলীনার বাবার বন্ধু হলেও তাঁকে দেবলীনা শিক্ষকের সন্মানেই সম্বোধন করে।
অধ্যাপক চন্দ প্রথমটা দেবলীনাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে কাঁধে হাত রেখে হেঁসে বললেন - তুমি? তুমি এখানে?
- স্যার, এখানে আমার শ্বশুর বাড়ী।
- তাই নাকি। শুনে খুব খুশী হলাম।
পাশের চেয়ারে সঞ্জীববাবু বসে ছিলেন। দেবলীনা তাঁকে দেখিয়ে বললেন ইনি আমার শ্বশুর শ্রী সঞ্জীব মিত্র।
সঞ্জীববাবু ও অধ্যাপক চন্দ উভয়ে উভয়কে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন।
উভয়ের মধ্যে নতুন প্রীতির সম্বন্ধ গড়ে উঠলো।
সঞ্জীববাবু বললেন - আসুন না আমার বাড়ী। বেশী দূর নয়। সামনেই। গেলে খুব খুশী হবো।
- আজ নয় আর একদিন।
- তা হয় না স্যার, আজই। দেবলীনা বললো।
- কিন্তু কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে যে।
- তবে কথা দিয়ে যান, কবে আসবেন?
অধ্যাপক চন্দ ভাবতে লাগলেন।
দেবলীনা বললো - আমি গাড়ী পাঠিয়ে দেব কিন্তু।
- আমি তোমায় খবর দেব তখন, ভাবতে হবে না কেমন।
- ঠিক আছে, এই কথা রইলো। না আসলে কিন্তু দুঃখ পাবো।
- নিশ্চয়ই যাবো। আচ্ছা তারপর পড়াশুনা করছো তো ?
দেবলীনা ঘাড় নেড়ে জানালো, না।
অধ্যাপক চন্দ বললেন সে কি মা। বিয়ে হয়ে গেছে বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছো। না--না-- এটা তোমার উচিত হয়নি।
দেবলীনা চুপ করে রইলো।