02-07-2021, 12:05 AM
মাধুরী বললো, ‘ছোড়দা যদি তোমাকে আধঘন্টা বলে থাকে, তাহলে ধরে নাও ওটা একঘন্টা। ওর সব কিছুতেই লেট। আজও অবধি কোনদিন টাইম মত কিছু করেনি। তারপর হেসে বললো, দেখছো না বিয়েটাও করছে না এখনো। এখনো নাকি ওর বিয়ে করার টাইম হয় নি।’
আমি বললাম, শুভেন্দু তো বলেছে, ‘বিয়ে আর করবে না এ জীবনে।’
মাধুরী হেসে বললো, ‘ওর মত তুমিও সেই ভুলটা আর কোরো না।। বিয়ে যদি না করো। সারাজীবনের মত পস্তাতে হবে, এই আমি বলে দিচ্ছি।’
বলেই ও ভেতরে চলে গেল। আমি বসার ঘরটায় বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম। মনে হল, সকালে ডায়েরীতে শুভেন্দুর ব্যাপারে অনেক কথাই লিখেছি, কিন্তু এই কথাটা একবারও লেখা হয় নি। শুভেন্দুর সব কিছুতেই লেট।’
বিদিশা কদিন ধরেই আমাকে বলছে, ‘জানো তো দারুন একটা ছবি রিলিজ করছে আগামী শুক্রবার। ছবির নাম ‘তেজাব।’ ওতে অনিল কাপুর আর মাধুরী দিক্ষিত আছে।’
আমি বললাম, তো?
বিদিশা বললো, তো মানে? দেখতে যাবো না? ওদিন পুরো একটা গ্রুপ যাবে।
আমি বললাম, কে কে?
বিদিশা বললো, তুমি আর আমি। সাথে শুক্লা আর সৌগত। আর রনি আর মাধুরীও থাকবে আমাদের সঙ্গে।
আমি বললাম, আর শুভেন্দু? ও তো না গেলে খেয়ে ফেলবে আমাদের।
বিদিশা বললো, ‘শুভেন্দুই তো দায়িত্ব নিয়েছে সবার টিকিট কাটার। লাইন দিয়ে ও আগে টিকিটটা কাটবে। ও থাকবে না মানে? ও তো থাকছেই।’
বিদিশার কথা শুনে আমিও খুশি হলাম। বললাম, ‘তাহলে ঠিক আছে। সবাই মিলে যাবো। বেশ আনন্দ হবে।’
শুভেন্দু লাইন দিয়ে আমাদের জন্য আগে থেকে টিকিট কাটলো কষ্ট করে। কলেজে এসে বললো, ‘উফ কি মারপিট হচ্ছে রে লাইনে। বই একেবারে সুপারহিট।’
মোট সাতখানা টিকিট যথারীতি ওর কাছেই রেখে দিল। যেদিন আমরা সিনেমাটা দেখতে যাব। শুভেন্দুর আর পাত্তা নেই। এদিকে মাধুরীও চলে এসেছে বাড়ী থেকে। রনি এসে বললো, ও আমাকে বললো, তোরা হলের কাছে গিয়ে দাঁড়া। আমি দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছোচ্ছি। আমরা ছজনে ধর্মতলায় প্যারাডাইস সিনেমা হলে পৌঁছে গেলাম । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই ঘড়ি দেখছি। এদিকে শুভেন্দুর আর পাত্তা নেই। তিনটের ম্যাটিনির শো চালু হয়ে গেল। সৌগত, রনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কামড়াচ্ছে। আমিও তাই। বাবু এলেন ঠিক তার আধঘন্টা পরে। তখন বইটার অনেকগুলো সীন হয়ে গেছে। সৌগত শুভেন্দুকে বললো, হ্যাঁ রে তুই কি? এতো দেরী করে এলি? এই তোর দশ মিনিট?
শুভেন্দু হেসে বললো, ‘আমি টাইমলিই আসছিলাম। বাড়ী থেকে কিছুটা রাস্তা চলে আসার পর দেখি। টিকিটগুলোই সব ঘরের ড্রয়ারে ফেলে রেখে চলে এসেছি। আবার বাড়ী যেতে হলো। তাই দেরী হয়ে গেল।’ বলেই দাঁত বার করে আবার কেলাতে লাগলো। হি হি।
মাধুরী চা নিয়ে এসে ঢুকেছে ঘরে, ঠিক তখুনি রনিও এসে হাজির। দেখলাম, ওর দুহাতে দুদুটো প্যাকেট। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এসে গেছিস বস? বোস তাহলে, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।’রনি মাধুরীকে সামনে পেয়ে কি মনে করে মাধুরীর হাতেই প্যাকেট দুটো দিয়ে দিলো। বললো, ‘তুমি এই প্যাকেট দুটো ভেতরে রেখে আসো তো। আমি আর যাবো না ভেতরে।’
মাধুরী বললো, কি এগুলো?
রনি বললো, ‘আছে কিছু। তবে এটা আমাকে নয়। তোমার ছোড়দাকে জিজ্ঞেস কোরো।’
মাধুরী একটু মুখ ভেংচি কাটলো। রনিকে বললো, ‘আহা। আমার কর্তাটিও যেন কম যান না। খালি ছোড়দাকে দোষ দিলে হবে? কমপিটিশন করতে আপনিও তো মাষ্টার।’
মাধুরী ভেতরে চলে গেল। রনি আমার সামনের সোফাটায় বসলো। আমাকে হেসে বললো, ‘বউটা আমার খুব ভালো। জানিস তো দেব। নইলে আমার মত ছাগলটাকে ভালোবেসে ফেললো। মাধুরীর অনেক গুন আছে। ঠিক কিনা বল?’
আমি রনিকে বললাম, তুই এখনো মাল খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিস?
রনি বললো, ‘শোন, তোর কথা ভেবে আমি একটা শায়েরী লিখেছি। বলেই শায়েরীটা শোনাতে লাগলো,
পি হ্যায় শরাব, হর গলি কি দুকান সে,
দোস্তি সি হো গয়ী হর শরাব কে জাম সে।
গুজরে হ্যায় হাম কুছ অ্যায়সী মুকাম সে,
কি আঁখে ভর আতী হ্যায় মহব্বত কে নাম সে।
রনির চোখের দিকে তাকালাম, হেসে বললাম, ‘তোর কি শালা আমার মত এত দূঃখ নাকি। যে দূঃখে তুই মদ খাবি।?’
রনি বললো, আমি তো দূঃখে মদ খাই না। আনন্দ করেই খাই। তবে তোর জন্য কি আমাদের দূঃখ হয় না। এই তো শুভেন্দু। তোকে এত জ্ঞান মারে, উপদেশ দেয়, শালা তোর দূঃখে একদিন কেঁদেই ফেললো।
আমি বললাম, সেকীরে তাই নাকি?
রনি বললো, হ্যাঁ সেকী কান্না। তুই যদি একবার দেখতিস।
আমি বললাম, তাহলে মনে হয় একটু বেশী নেশা হয়ে গেছিলো।
রনি বললো, ‘তা ঠিক। তবে ও তোকে খুব ভালোবাসে, জানিস তো দেব? এখনো বলে, বন্ধুদের মধ্যে তোর পরে দেবই আমার খুব কাছের ছিলো। সেই যে কলেজের পর ঘটনা ঘটে গেল। তারপর ও নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিল। শালা হারামী মিনু। শয়তান, মাগীর বাচ্চা। ঢ্যামনা মাগী। বিদিশাকে পুরো চটিয়ে দিলো।’
রনি এমন গালাগাল দিতে শুরু করেছে। মাধুরী ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে বললো, কি হচ্ছেটা কি? কাকে গালাগাল দিচ্ছো এভাবে?
রনি বললো, ‘জানো না? ওই শয়তান মিনু ঢেমনিটাকে। ওই তো দেব আর বিদিশার প্রেমটাকে বরবাদ করে ছাড়লো। ইস কি সুন্দর ছিলো সেই সময়টা। আমরা সবাই মিলে ঘুরতাম, ফিরতাম। তা না আপদটা এসে জুটে বসলো। আর দেবের জীবনটাকে নষ্ট করে দিলো।’মাধুরী সবই জানে। বললো, ‘ছাড়ো না ওসব পুরোনো কথা। এখন দেবদার কি করা যায় সেটা আগে বলো। আমি কি মেয়ে দেখবো নাকি একটা দেবদার জন্য?’
রনি জোর করে পাশে বসালো মাধুরীকে। ওর গাল টিপে দিয়ে বললো, ‘তাই? তুমিও দেখবে? কিন্তু আজ যে আসছে, তাকে দেখলে, দেবের তো কাউকে আর পছন্দ হবে না।’
মাধুরী কিছুই জানে না। রনি কে বললো, ‘কে আসছে গো?’
রনি বললো, ‘ওটা এখন বলা যাবে না। ক্রমশ প্রকাশ্য।’
মাধুরী বললো, ঢং রাখো দেখি। কি হবে বললে?
রনি বললো, ‘শুভেন্দু আমাকে মানা করেছে। বললে আস্তো রাখবে না। দেবকে তো বলা যাবে না। তোমাকেও নয়।’
মাধুরী বললো, ‘আহা ন্যাকা। কি হবে বললে? আমার ছোড়দাটাও যেমন, আর তুমিও তেমন।’
কানটা রনির মুখের দিকে বাড়িয়ে মাধুরী বললো, ঠিক আছে আমার কানে কানে বলো। দেবদা শুনতে পাবে না।
রনি বললো, ‘না তোমার পেট খুব পাতলা। তুমি ঠিক বলে দেবে দেব কে । আর সব মাটি হয়ে যাবে আজকে।’
মাধুরী রেগে মেগে বললো, ‘ঠিক আছে যাও। বলতে হবে না। কে না কে খেদী পেঁচী আসবে। তারজন্য সব নখরা হচ্ছে।’
আমি ওদের দুজনের রকমটা দেখছিলাম। রনিকে বললাম, আমি সব জানি। কে আসবে তাও জানি। শুধু মজাটা দেখছি। শেষ পর্যন্ত কি হয়।
বলতে বলতে শুভেন্দুও ঠিক তখন এসে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে বললো, ‘দেখলি তো। ঠিক টাইম মত এসেছি। আজ আর দেরী করিনি।’
মাধুরীকে বললো, ‘এই ছুড়ী, এই প্যাকেটটা ভেতরে রেখে দিয়ে আয়।’
দেখলাম শুভেন্দুর হাতেও একটা প্যাকেট। রনির মত ও কিছু কিনে নিয়ে এসেছে। মাধুরী বললো, ‘এটা কি আছে রে ছোড়দা?’
শুভেন্দু বললো, ‘ওর মধ্যে একটা গিফ্ট আছে। একজনকে দেবো। সে আসছে।’
মাধুরী অবাক হয়ে তাকালো শুভেন্দুর দিকে। ওকে বললো, ‘কে আসছে? কাকে গিফ্ট দিবি?’
শুভেন্দু বললো, ‘আমাদের সবার তরফ থেকে এই গিফ্ট। আর কে আসছে? এখুনি তাকে দেখতে পাবি। একটু অপেক্ষা কর।’
মাধুরী যথারীতি ওই প্যাকেটটা নিয়েও ভেতরে চলে গেল। আমি বুঝলাম, বিদিশার জন্য আজ অনেক কিছু অপেক্ষা করছে এখানে। কলেজে দিনগুলো তো আর ভোলার নয়। আমার বন্ধুরা সব, আমার মতন। বিদিশাকে কেউ ওরা ভোলেনি। সামান্য একটা ভুলের খেসারতে বিদিশা সেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। বিদিশার সেদিনের সেই আচরণে সবাই একটু দূঃখ পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আজ এতদিন পরে সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসেছে। বিদিশা, আসবে বলে শুভেন্দু আর রনি বেশ এক্সসাইটেড হয়ে গেছে । ঠিক যেনো আমারই মতন।