Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#18
শুভেন্দুদের বাড়ীর সামনের রাস্তাটা বেশ সরুওখানে ট্যাক্সি ঢোকে নাএর আগে যেকবারই ট্যাক্সি চড়ে আমি এসেছি, গলির মুখটায়  ট্যাক্সিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হতকিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলে তারপরেই শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ীপিকনিক গার্ডেনে শুভেন্দুরা খুব বড়লোকনতুন লোক এলে বাড়ী খুঁজে নিতে তার অসুবিধে হবে নাশুভেন্দুদের নাম বললেই সবাই ওই বাড়ী দেখিয়ে দেবে
 
দুর থেকে ওদের বাড়ীর একতলার বারান্দাটা দেখা যায়বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে দূর থেকেই সেটা চোখে পড়েরাস্তাটায় ঢুকেই আমার মনে হল, শুভেন্দুর বোন মাধুরী দাঁড়িয়ে আছে ওখানেদূর থেকে ও আমাকে দেখছে
 
মাধুরীর স্বভাবটা খুব মিষ্টিএকে তো বড়লোকের একমাত্র মেয়েশুভেন্দুরা চারভাইআর ওদের এই একটিই মাত্র আদরের বোন মাধুরীখুব প্রানখোলা স্বভাবের মেয়ে মাধুরীর সাথে আমারও গল্প করতে খুব ভালো লাগতোকলেজে পড়ার সময় শুভেন্দুদের বাড়ীতে যতবারই এসেছি, মাধুরীর সঙ্গেও একটা দাদা বোনের মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলমাধুরী, রনির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেম করতো, কিন্তু শুভেন্দুর সাথে যেহেতু আমার একটা আলাদা খাতির ছিল, আমি এলে মাধুরী জমিয়ে আড্ডা দিত আমার সঙ্গেওর ডাক নাম ছিল ছুড়ীওকেও আমি ছুড়ী বলে ডাকতাম
বয়সে শুভেন্দুর থেকে দু’বছরের ছোটো মাধুরী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেনিরনির সঙ্গে কয়েকবছর পরেই ওর বিয়ে হয়ে গেলমাধুরী আর রনির সুন্দর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছেনাম রেখেছে ‘দেবমাল্য’
 
ওর বাচ্চা হবার পর শুভেন্দু আমাকে বললো, এই ‘দেব’ নামটা আমার খুব পছন্দ।  তোকেও যার জন্য আমার খুব পছন্দ।  মাধুরীর যেহেতু তোকে খুব ভালো লাগে, আমাকে বললো, ‘ছোড়দা, আমার ছেলের নাম, আমি দেব দিয়ে রাখবো।  দেবদার মতনপরে রনিও রাজী হয়ে গেলতাই ওর নাম রাখা হলো, ‘দেবমাল্য।’
 
দূর থেকে মাধুরী আমাকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই যে দেবদা, ছোট্টবোনটাকে ভুলে গেছো বুঝি? ওফ কতদিন তোমায় দেখি নাসেই দুবছর আগে একবার তুমি এসেছিলেআবার এতদিন পর।’
 
শুভেন্দুর বাড়ীর গেটের সামনে যেতেই মাধুরী হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলোওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘ও আমার ছুড়ী রেদাদাটার কথা বুঝি এতদিন বাদে মনে পড়লো?’
 
মাধুরী বললো, ‘তুমি না কেমন জানি হয়ে গেছো দেবদাআগে কত আসতে আমাদের বাড়ীতেএখানে আড্ডা হতোগান বাজনা হতোমজা হতোতা না, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে, তোমরা সব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে।  আর আমাকেও তুমি ভুলে গেলে
 মাধুরীকে বললাম, ‘তোকে আমি ভুলিনিরে ছুড়ীশুভেন্দু যতবারই ফোন করেছে, তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছিরনিকে জিজ্ঞাসা করে দেখিস, ওকেও জিজ্ঞাসা করেছি তোর কথাতোদের যখন ছেলে হল, শুভেন্দু আমাকে বললো, মাধুরী ওর ছেলের নাম রেখেছে দেবমাল্যদেব নামটা ওর খুব পছন্দতোকে তো আমাদের বাড়ীর সবাই খুব পছন্দ করতো, তাই না? মাধুরীও বললো, আমি দেব নামটাই রাখবোরনিও রাজী হয়ে গেলতাই-
মাধুরী বললো, তুমি খুশি হয়েছো, ‘আমার ছেলের নাম দেবমাল্য রেখেছি বলে?’
আমি বললাম, বারে? খুশি হবো না? আমি তো তখনই খুশি হয়েছিখুব খুশি হয়েছি
মাধুরী বললো, ‘তোমার প্রতি আমার কিন্তু একটা ক্ষোভ আছে দেবদাআমি খুব রেগে আছি তোমার ওপরে।’
ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘কেন রে ছুড়ী? রাগ কেন?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি তখন আমার ছেলেকে দেখতে আসো নি কেন? জানো তোমায় কত এসপেক্ট করেছিলামতুমি এলে নাআর আমিও ছোড়দাকে বললাম, কি রে ছোড়দা? দেবদা তো এলো না? তুই কি কিছু জানাসনি নাকি দেবদাকে? ছোড়দা বললো, সব বলেছিদেব এখন কাজবাজ নিয়ে ব্যস্তওর এখন তোর ছেলেকে দেখতে আসার টাইম নেই।’
মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু এই কথা বলেছে তোকে? দাঁড়া ওকে আসতে দেতারপর ওর মজা দেখাচ্ছিমিথ্যে কথা বলা বের করছি
মাধুরী মুখটা একটু করুন মত করে, ছেলেমানুষির মত করছিলবার বার ঘাড় নেড়ে বলতে লাগল, ‘না, না, বলো, তুমি আসোনি কেন?’
মাধুরীকে বললাম, ‘দূর বোকা আমি তখন ছিলাম না কি কলকাতায়? কোম্পানীর কাজে আমি তখন হায়দ্রাবাদে একমাস মত ওখানে ছিলামকলকাতায় ফিরেই চলে গেলাম, সিঙ্গাপুরেকোম্পানীর তরফ থেকে ট্রিপফিরে এসেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লামএকমাস মত বিছানায় শয্যাশায়ীকাজকর্ম সব ডকেএমন একটা রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছি, ডাক্তার বললো, সাবধানে থাকুনবাইরের খাবার একদম খাবেন নাআর মিষ্টি খাওয়া তো একদম বন্ধ
মাধুরী বললো, ‘কি যেন রোগটা হয়েছিল তোমার?’
আমি বললাম, ‘আলসার কোলাইটিস।’
মাধুরী শুনে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছিও তো খুব কঠিন রোগভীষন কষ্ট দেয়পেটে ব্যাথা করেরক্ত পড়েআমাশার মতন।’
মাধুরীকে বললাম, ‘হ্যাঁ, তারপর থেকেই মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধমিল্ক প্রোডাক্ট থেকেই না কি রোগটা হয়।’
মাধুরী বললো,তুমি তো আগে খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসতে দেবদাসব বন্ধ হয়ে গেলতাই না?
আমি বললাম, হ্যাঁ
মাধুরী বললো, ‘এ তোমার ভারী অন্যায় দেবদামাসীমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছোবিয়ে থা তো এবার করোআর কতদিন একা একা  থাকবে? তোমাকে দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার?
তরপর নিজেই বললো, অবশ্য এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্করমেয়েরা এখন স্বামীদের কেউ দেখে না
ওকে বললাম, ‘কেন? তুই মেয়ে দেখেছিস আমার জন্য?’
মাধুরী হেসে ফেললো, আমাকে বললো, ‘আমি যদি মেয়ে দেখিসে মেয়ে তোমার পছন্দ হবে? সবাই তো আর বিদিশার মত সুন্দরী নয়।’
 এই বিদিশা নামটা আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িতশুধু আমি কেন? অনেকেই ওকে ভুলতে পারেনি মাধুরীর মুখ দিয়ে বিদিশা নামটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছটফটানি শুরু হয়ে গেলওকে বললাম, ‘হ্যাঁ রে ছুড়ী, তুই কি কিছু জানিস? আমাকে সত্যি করে বলতো?
মাধুরী বললো, ‘কি জানবো? কি বলবো?
ওকে বললাম, ‘আজ এখানে নাকি কারুর আসার কথা আছেকোনো একটা মেয়েশুভেন্দু আর রনি তো সেই কথাটাই বলেছে আমাকে।’
মাধুরী শুনে এমন ভাব করলো, যেন ও কিছুই জানে নাআমাকে বললো, ‘কই সেরকম তো আমি কিছু শুনিনি।’
আমি অবাক হলাম মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি শুভেন্দু আর রনি, মাধুরীকেও ব্যাপারটা বলেনি? না ও সব জানে, রনি আর শুভেন্দুর মত মাধুরীও আমাকে গোপণ করছে
মাধুরীকে বললাম, ‘কই তোর কত্তা কোথায়? ওকে ডাক দেখি একবারদেখি জিজ্ঞাসা করে।’
মাধুরী বললো, ‘সে তো একটু আগেই বেরুলো তোমার জন্য।’
রনি আমার জন্য কোথায় গেছে? একটু অবাকই হলাম, ওকে বললাম, ‘কেন রে? আমার জন্য তোর কত্তা বেরিয়েছে? কোথায় গেছে?’
মাধুরী বললো, ‘গেছে হয়তো কিছু কিনতে টিনতেদুপুর বেলা তো এক পেট ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিলতুমি ফোনটা করলেঅমনি বাবু তড়াক করে জেগে উঠলেনআমাকে বললো, তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘দেব’ আসছেআমি ততক্ষণ দোকানটা থেকে চট করে ঘুরে আসছি
বুঝে নিলাম, রনি কোথায় গেছেমাল খাওয়ার নেশাটা রনির প্রচুরতারপরেই আবার ভাবলাম, বিদিশা যদি সত্যি আসে, ওর সামনে এসব খাওয়াটা কি ঠিক হবে?
মাধুরী ভেতরে গিয়ে ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এলোআমার সামনে আসতেই খেয়াল হলইস তাড়াহুড়োতে ওর জন্য কিছু কিনে আনা হয় নিপকেট থেকে টাকা বার করতে যাচ্ছিলামমাধুরী বললো, ‘তুমি ওর মাথায় হাতটা রেখে আশীর্ব্বাদ করোতোতাহলেই হবেটাকা হাতে পেলে এক্ষুনি ওটাকে ছিঁড়ে দেবেযা দুষ্টু।’
বাচ্চাটাকে দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছিলামও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে দেখছিল, কিন্তু কিছুতেই আসছিল নামাধুরী ওকে বললো, ‘এটা কে বলোতো? এটা হলো তোমার কাকু।’ যাও কাকু ডাকছে যাও।’
আমি দুহাত বাড়িয়ে মাধুরীকে বললাম, ‘কাকু কি রে? বল, আমি ওর মামা হই।  মাধুরী বললো, হ্যাঁ এটা হলো তোমার দেব মামাযাও মামার কাছে যাও।’
বাচ্চাটা এবার আমার কাছে চলে এলোমাধুরী ওকে বললো, ‘মামা কিন্তু খুব ভালো গান জানেতুমি মামার কাছে গান শিখবে?
বাচ্চাটা ঘাড় নাড়লোদাঁত বার করে হেসে বললো, হাঁ
মাধুরী বললো, দেবদা, তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছিততক্ষনে রনিও এসে পড়বে
আমি মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু কখন আসবে? আমাকে তো বললো, আধ ঘন্টার মধ্যে ঢুকছে
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 02-07-2021, 12:03 AM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)