Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#15
ছয়
 
কথায় বলে প্রেম ভালোবাসা থেকে নাকি একধরণের শক্তির জন্ম নেয়জীবনের বাঁচার রসদ খুঁজে পাওয়া যায়অদ্ভূত এক হতাশায় জীবনটা কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা বছরভাবলাম, বিদিশার ফিরে আসাটা কি কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে? আমি যেন একটা অবলম্বনের পথ খোঁজারই চেষ্টা করছিলামঅথচ শুক্লাই এসে আমাকে কেমন দ্বিধায় ফেলে দিলমন থেকে শুক্লার না চাওয়াটা একটু অবাকই করলো আমাকেএতদিন পরে চিঠিটাও খুঁজে খুঁজে ঠিক নিয়ে এসেছে আমার কাছেও কি বলতে চাইলো ঠিক স্পষ্ট হল না
মনে পড়ছিল, কলেজে যেকটা দিন আমাদের কেটেছে, শুক্লাকে কোনদিন বিদিশার প্রতি এত বিদ্বেশ করতে দেখিনিও কোনদিন বিদিশাকে দেখে হিংসেও করতো নাআমি বিদিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিশুক্লাকে কোনদিন অখুশি হতে দেখিনি।  যখন প্রেমটা আমাদের ক্রমেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখনো শুক্লা স্বাভাবিককোনদিন প্রেম ভালোবাসার কথা ও আমাকে বলেনিআর শুক্লাকেও সে চোখে আমি কোনদিন দেখিনি
শুক্লা বলতো, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যার সাথে যে মেয়ে প্রেম করবে, সেই ধন্য হয়ে যাবেআমি করিনি তো কি আছেদেব আমার খুব ভালো বন্ধুকিন্তু বিদিশা করেছেসেই দিক দিয়ে বিদিশাকে আমি খুব লাকি বলেই মনে করবোসুন্দরী হলেই শুধু হয় না।  ভালো ছেলেদের মন পাওয়ার জন্যও মেয়েদের অনেক তপস্যা করতে হয়বিদিশা করেছে, তাই ও দেবকে পেয়েছেআমি চাই দেব আর বিদিশা জীবনে আরো সুখী হোকপ্রেম ভালোবাসা দিয়ে ওরা একে অপরকে পাওয়ার আনন্দটা আরো উপভোগ করুক
নিজেও যখন সৌগতর সঙ্গে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আমাকে বললো, ‘তুই ই আমাকে পথ দেখালি দেবতোকে দেখেই শিখলাম পৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দরমধুর প্রেমের সত্যিই কোনো বিকল্প হয় না।’
সৌগত আর শুক্লা আমাকে আর বিদিশাকে খুব নকল করতোবিদিশা আমাকে ভ্যালেনটাইন্স ডে তে কার্ড দিচ্ছে, সাথে ডায়েরী আর পেনআর সুন্দর কারুকার্য করা একটা রুমালশুক্লা তাই দেখে বললো, ‘আমিও সৌগতকে তাহলে এগুলো দিই? শুধু কার্ড কেন দেবো? সাথে ডায়েরী, পেন আর রুমালটাও তো দেওয়া দরকার।’
কলেজস্ট্রীটে গিয়ে সব কিনে নিয়ে এসেছেআমাকে এনে দেখাচ্ছে, আর বলছে, ‘দেখ, বিদিশার মত কিনেছি সবভালো হয়েছে?’
প্রথম প্রথম আমি আর বিদিশা মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতামবেশ কয়েকটা নতুন সিনেমাও দেখে ফেলেছি দুজনেশুক্লা আবদার করে বসলো, ‘এবার থেকে তোরা একা যাবি নাগেলে আমরা চারজনে মিলে যাবো।’
মাঝে মাঝে শুভেন্দুও এসে জুড়ে বসতো আমাদের সাথেআমাকে আর শুক্লাকে বলতো, ‘এই শোন, তোদের দুজনের এই যে প্রেমটা হচ্ছে নাএসবই আমার বদলৌতেসেদিন যদি বিদিশাকে আমি চিঠিটা না দিতাম না, তাহলে দেব কোথায় আর বিদিশা কোথায়? আর শোনো, পারুল রানী, তুমি তোমার প্রেমিকের যা অবস্থা করেছিলে, দেবদাস হতে হতে বেঁচে গেছে ব্যাচারা সৌগতভাগ্যিস তোর মনটা ঘোরাতে পেরেছিলাম সেদিননইলে?
 শুভেন্দুর আমাদের সাথে ভিক্টোরিয়াতে গিয়ে যে কি অবস্থা হয়েছিল, সেকথা তো আগেই বলেছিও কখনো বোর ফিল করত নাআমরা চারজনে আপন মনে যখন নিজেদের মধ্যে ভাব, ভালোবাসার কথা বলছি, শুভেন্দু তখন আপনমনে বাদাম চিবোতোআর মুখে বলতো, ‘তোরা প্রেম করআমার ভাই বাদামই ঠিক আছে।’
 
শুক্লা চলে যাবার পরে শুভেন্দুর সেই বিদিশাকে দেওয়া চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে দেখছিলাম, আর পুরোনো কথাগুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল
মা, ঘরে ঢুকে বললো, ‘তোর মনে হচ্ছে কাজে বেরোনোর আজ বারোটা বেজে গেলকোনো তাড়া নেই, সেই সকাল থেকে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লিতারপরে এখন আবার বসে বসে কি ভাবতে শুরু করেছিস?’
আমি বিদিশার কথাই ভাবছিলাম, মাকে সেভাবে বলতে পারলাম নাশুধু বললাম, ‘মা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে খুব দোটনায় থাকতে হচ্ছেভাবছি, কি সিদ্ধান্ত নেবো?’
মা বললো, ‘কি সিদ্ধান্ত?’
- ‘সেটা তোমাকে এখনি বলা যাবে নাআমি পরে বলবো।’
মা বললো, ‘তুই তো সব কথা আমাকে সেভাবে বলিস নানিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখিসযদি মনে করিস বলবি নাতাহলে বলিস নাআমি আর কি বলবো?’
মাকে বললাম, ‘তোমাকে আজ অবধি কোনোকিছু কি আমি লুকিয়েছি? তুমি তো সবই আমার পুরোনো কথাগুলো জানোআমার অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, সেগুলোই মাঝে মাঝে বসে আমি ভাবিকলেজের দিনগুলোর কথা এতদিন বাদে মনে পড়ে যাচ্ছিলতাই সকালে লিখছিলামতারপরে শুক্লাও এলোএতদিন বাদে আমার বাড়ীতে প্রথম এসেছে, ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগলপুরোনো স্মৃতিগুলো মনকে নাড়া দিচ্ছে এই আর কি
মা বললো, ‘শুক্লা তোকে কিছু বলেছে?’
অবাক হলামবললাম, ‘না কই কিছু বলেনি তোকি বলবে?’
মা বললো, ‘আমি শুনেছি আড়াল থেকেও বিদিশার কথা বলছিলবিদিশা নাকি ফিরে এসেছে কলকাতায়ওর স্বামীকে ছেড়ে।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, মাও তাকিয়ে আছে আমার দিকেদেখছে জবাবে আমি কি বলি?
মাকে বললাম, ‘কেন তুমি শুনে খুশি হও নি? বিদিশা ফিরে এসেছে।’
একটা চাপা দূঃখ ঠিক আমারই মতন মাকে বরাবরই দেখে এসেছি, আমার জন্য আফশোস করতে মা আমার এমনই যখন আমি দূখী তো মা দূখী আবার আমি সুখি তো মাও সুখী যেভাবে ছেলের মুখে হাসি ফুটলে মায়েরও মুখে হাসি ফোটে, ঠিক সেভাবেই মা, আমাকে বললো, আমি তোর মুখে হাসিটা দেখে ফেলেছিএতদিন বাদে তুই খুশী হয়েছিসআমি কি খুশী না হয়ে থাকতে পারি?
আমি মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলামবললাম, ‘খুশি হয়েছি মা, খুব খুশি হয়েছিবিদিশা ফিরে এসেছে, আমার থেকে বড় খুশী বোধহয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই
 শুক্লার কথাটা মন থেকে মুছে ফেললামমনে মনে বললাম, যে মেয়েটিকে আমি এত ভালোবাসতাম, যার কথা আমি সবসময় ধ্যান করতাম, তাকে যদি এতদিন বাদে আবার দেখতে পাই, চোখ তো ফেরাতে পারবো নাবিদিশা যদি আমার খোঁজ করে, আমি নিশ্চই ওর কাছে যাবো
মনে মনে বললাম, ভাগ্যিস, এই গল্পটার নাম, একটি ভালোবাসার মৃত্যু দিইনিতাহলে বিদিশার ফিরে আসাটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়তো
 
বিকেল হতেই শুভেন্দুর বাড়ী যাব বলে তৈরী হয়ে নিলাম অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি, ‘আজ আর অফিসে যাচ্ছি না কিছু কাজ পড়ে গেছে সুতরাং কালকে আবার আসছি যথারীতি
শুভেন্দু বলেছে, সাতটার মধ্যে ওর ওখানে যেতেআমি যখন বাড়ী থেকে বেরোলাম, তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট।  বাড়ী থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মোড় অবধি গেলামমনে হল, এই যাঃ কিছু একটা আমি ফেলে এসেছিখেয়াল হল, বিদিশাকে দেওয়া শুভেন্দুর ওই চিঠিটা বাড়ীতে ফেলে এসেছিশুক্লা যেটা বাড়ী বয়ে এসে আমাকে দিয়ে গেলশুভেন্দুকে দেখালে বেশ ভালো হতবিদিশার কথা আমিও শুভেন্দুকে আগে থেকে বলতে পারতাম
চিঠিটা তাড়াহূড়োতে আর পকেটে ঢোকানো হয় নিখেয়াল হলো বসার ঘরের টেবিলের ওপরেই রেখে এসেছিমা’র চোখে পড়লেও পড়তে পারেকিন্তু ঐ চিরকূট দেখে মা আর কিছুই বুঝবে নাওতে হিজিবিজি ছাড়া আর কিছু নেই
 
কাঁকুড়গাছি মোড় থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, পিকনিক গার্ডেন যাবো ট্যাক্সিওয়ালা বললো, বাইপাস ধরবো? আমি বললাম, যেদিক দিয়ে খুশি চলুন আমার পিকনিক গার্ডেন পৌঁছোলেই হল
ট্যাক্সিওয়ালা ফুলবাগান পেরিয়ে বাইপাশই ধরলো বুঝলাম রুবী হসপিটাল থেকে তারমানে ডানদিকে টার্ণ নিতে হবে আমি তাহলে ঠিক ছটার আগেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে পৌঁছে যাবো
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে ভাবছি, শুভেন্দুতো বলেছে সারপ্রাইজের কথারনিও ওখানে থাকবেতারমানে রনিও ব্যাপারটা জানেঅথচ শুক্লা বললো, শুভেন্দুর সাথে এ ব্যাপারে নাকি কোনো কথা হয় নিবিদিশাকে শুক্লাই দেখেছে, কাল গড়িয়াহাটের মোড়েশুভেন্দু যে সারপ্রাইজের কথা বলছে, এটা তাহলে কোন সারপ্রাইজ?
কিছুতেই মাথায় কিছু এলো নাকত চিন্তা করলামভাবলাম, বিদিশাকে কি তাহলে শুভেন্দুও দেখেছে শুক্লার মত? কিন্তু আমাকে ও বললো না কেন? অন্তত বিদিশার ব্যাপার হলে শুভেন্দু আমাকে লুকোবে না।  এই ক বছরে অনেক যন্ত্রণায় মরেছিঅনেক কষ্ট পেয়েছি শুভেন্দু প্রথম প্রথম সান্তনা দিয়েছে আমাকে পরে বলেছে, ছেড়ে দে বিদিশাকে মনে কর, বিদিশা বলে তোর জীবনে কেউ কোনদিন ছিল না আবার নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর সেই বিদিশাই যখন ফিরে এলো শুভেন্দুর তো বলা উচিৎ ছিল
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলাম এক চান্সেই ওকে পেয়ে গেলাম শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি কিন্তু তোর ওখানে যাবো বলে রওনা দিয়ে দিয়েছি সাতটার আগেই মনে হচ্ছে পৌঁছে যাবোএই ধরেনে ছটা সোয়া ছটা
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:51 PM



Users browsing this thread: 26 Guest(s)