01-07-2021, 11:47 PM
আমার দিকে তাকিয়ে অল্প একটু হাসলো শুক্লা। বললো, ‘দেব তুই এখনো কত সরল। সেই আগের মতই রয়ে গেছিস। তোকে দেখে ভাবি, ইস প্রেমটা যদি তখন আমি তোর সাথেই করতাম।’
বলতে বলতেই হেসে ফেললো শুক্লা। ‘আমাকে বললো, ভয় পেলি?’
আমি বললাম, ‘ভয় পাবো কেন? তোর প্রতি আমার সহানুভূতিটা সবসময়ই ছিল। আমি জানতাম শুক্লার মত মেয়ে হয় না। তাও মনটা একটু খচখচ করেছিল সেদিন। বিদিশা তারপরপরেই আমাকে যখন ছেড়ে গেল, তুই আমার প্রতি অনেক সহানুভূতি দেখিয়েছিলিস। অথচ আমি সেটা তোকে দেখাতে পারলাম না। অবাক হলাম, যখন দেখলাম সৌগতও মানিয়ে নিয়েছে ব্যাপারটা। তোদের দুজনের মধ্যে আবার দেখা হল। কিন্তু সেই দূঃখের অনুভূতিটা যেন নেই। কোথায় হারিয়ে গেছে।’
শুক্লা বললো, ‘ওর সাথে আমার পরেও একবার দেখা হয়েছিল। কার যেন বিয়েতে আবার দেখা হল। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। রনির বিয়েতে। সৌগত এসেছিল। সাথে ওর সুন্দর বউটা। আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছিল। বললো, ভালো আছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। ওকে বললাম, তুমি? সৌগত বললো, আমি খুব ভালো আছি।
শুক্লার কথা শুনে আমারো পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। ওকে বললাম, ‘মাঝে মাঝে আমিও ভাবি শুক্লা, এই ভালোবাসাই যদি পরষ্পরকে কাছে আনার জন্য সৃষ্টি হয়, তাহলে এভাবে বিচ্ছেদ কেন শুরুতেই? পুরোনো ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনকে তো প্রভাবিত করবেই। তুই হয়তো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবি। কিন্তু সত্যিই কি সব ভুলে থাকতে পারবি?’
শুক্লা হঠাৎই আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সৌগত তখন একটা অবাঙ্গালী মেয়েকে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতো, সেটা কি জানতিস?’
আমি অবাক হলাম। বললাম, ‘না, আমি জানতাম না, শুক্লা ছাড়াও সৌগতর অন্য কোনো প্রেমিকা আছে।’
শুক্লা বললো, আমিও জানতাম না। ‘সৌগতকে, বেহালায় যেদিন আমাদের বাড়ীতে নিয়ে গেলাম। বাবা মায়ের সাথে ওর আলাপ করালাম। বাবা বললো, তোমরা সব এক একটা ব্রিলিয়ান্ট বয়। আমি শুক্লার মুখে তোমার কথাও শুনেছি। দেব ছেলেটাও ভালো। আর তুমি তো ভালো অবশ্যই।’
শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই আমার কথা এখনো বলেন? সেই একবারই তোর বেহালার বাড়ীতে গেছিলাম। উনি অনেক্ষণ ধরে আমার সাথে গল্প করেছিলেন।’
শুক্লা বললো, ‘বাবা তোকে খুব পছন্দ করতো। শুধু বলতো, দেবের মত ছেলে হয় না। কিন্তু সৌগতটা যে কি করলো।’
আমি বললাম, ‘তোর বাবা মা কি এটা জানতে পেরেছিলেন? কি করে জানলো? তুই বলেছিলিস?’
শুক্লা মাথাটা একটু নিচু করলো। আমাকে বললো, ‘হ্যাঁ আমিই বলেছি। আমি সৌগতকে একবার নয়, বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখেছি ওই মেয়েটাকে নিয়ে। মনের মধ্যে কষ্টটাকে চেপে রেখেছিলাম। জানিস তো দেব, আমার আবার বিশ্বাস ভাঙতে একটু সময় লাগে। মনে প্রানে যাকে বিশ্বাস করি, চটকরে তার প্রতি বিশ্বাস ভেঙে যায় না। সৌগতকে আমি নিজেই অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছি। ও বলতো, দূর তুমি পাগল নাকি? ও তো আমার শুধু বন্ধু।’
আমি অবাক হয়ে শুনছি শুক্লার কথা। শুক্লা বললো, ‘আমি ভুল করেছি আমি মানি। প্রথম প্রথম আমি সহ্যও করতাম। সৌগত বলতো, ও আমার বন্ধু। এর বেশী কিছু নয়। কিন্তু সৌগতর হাবভাব দেখে মনে হত, এর মধ্যে নিশ্চই কিছু একটা ব্যাপার আছে। আচ্ছা ‘দেব’, মানুষ কাউকে ভালোবাসলে কি আনসোশাল হয়ে যায়? পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস আর সন্মান অক্ষুন্ন রেখে যদি প্রেম করা যায়, তাতে তো হানিকর কিছু ঘটে না। ভালোবাসার মূলমন্ত্র যদি আন্ডার স্ট্যান্ডিং হয়। তাহলে যেকোনো ব্যাপারই মানিয়ে নেওয়া চলে। আমি প্রথমে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল সৌগত যে মেয়েটার সাথে ঘুরছে, এটাকি আমাকে অসন্মান করা নয়? আমার কেন জানি না বিশ্বাসটাই চলে গেল সৌগতর প্রতি। মনে হল ও মিথ্যে কথা বলছে আমাকে। তারপরে যখন ওই আবার অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করলো। বুঝলাম সেদিন সত্যি কথাটাই বলেছিল সৌগত। আমারই ওর কথাটা মেনে নেওয়া উচিত ছিল।’শুক্লার কথা শুনে মনে হল, এখনো চরম একটা আফশোস রয়েছে সৌগতর জন্য। সবাই যেন ভুলের খেসারত দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর এটাই দিয়ে যেতে হবে আজীবন ধরে।
শুক্লা বললো,ছাড়াছাড়ি মানে তো কয়েকটা সম্পর্কের কাটান ছাড়ান। এই যেমন তোর জীবনটাকে নিয়েও কাটাছেড়া করল মিনু আর বিদিশা। আমারো তাই। ওই অবাঙ্গালী মেয়েটাই আমার বিশ্বাসটাকে সেদিন ভেঙে দিলো।
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই এখনো দূঃখ পাস?’
শুক্লা বললো, ‘দূঃখ তো আমারই পাবার কথা। ভুলতো আমিই করেছি। সৌগত নয়। যে ভুল করে তারই তো দূঃখ পাওয়া উচিত। অথচ ভগবান বোধহয় তোর বেলায় উল্টোটাই করেছে।’
হেসে বললাম, ‘কেন? একথা বলছিস কেন?’
শুক্লা বললো, ‘ভুল করলো বিদিশা, আর তুই যেমন ওর জন্য শুধু শুধু দূঃখ করে মরলি। কার ভুল কে করলো? আর এখন দেখ, ও কেমন আফসোস করছে তোর প্রতি। এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?
পৃথিবীতে বিদিশাই একমাত্র মেয়ে। যাকে কোনোদিন আমি ক্ষমা করতে পারবো না। এ কখনো হয় না। বিদিশার মনটা ফুলের মত নরম। যে ফুল অল্প আঘাতও সহ্য করতে পারে না। সেদিন হয়তো, অল্প আঘাতেই ওর মনটা ভেঙে গিয়েছিল। বিদিশা আমাকে ভুল বুঝেছিল, তাই বলে কি ওকে আমি ক্ষমা করতে পারি না? নিশ্চই পারি।
শুক্লা হঠাৎই আমার হাতের ওপর হাতটা রেখে বললো, ‘আচ্ছা ‘দেব’, আমি যদি তোকে বলি, তোকে আমি ভালোবাসি। তুই কি প্রমান চাস?
আমি বললাম, ‘আমি যদি কোনো অন্যায় কাজ করি আর এসে তোকে বলি ক্ষমা করে দে। তুই করবি।’
শুক্লা বললো, ‘আমি সেটাকে অন্যায় বলেই ভাববোই না। কারণ তোর প্রতি আমার সেরকমই বিশ্বাস আছে। বিদিশা তাহলে কেন এটা করলো না?’
শুক্লার কথাগুলো আমার কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না, ও কেন চাইছে না। কেন বলছে, বিদিশার সাথে আমার দেখা না করাই ভালো।
কিছু একটা বলতে গিয়েও শুক্লা আবার থেমে গেল। আমাকে বললো, ছাড় এসব পুরোনো কথা। তুই আসবি কিনা বল?
নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ও বাবা। কটা বাজে খেয়াল করেছিস? আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে, তোর এখানে এমনিতেই আমি লেট। এরপরে আরো বসলে আরো লেট হবে। এবার আমি উঠবো। বল না যাবি কিনা?
শুক্লাকে বললাম, তোর অফিস মানে তো ব্যাঙ্ক। কোন ব্যাঙ্কে আছিস যেন?
শুক্লা বললো, ‘পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কে আছি। ওই চাকরিটাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখান থেকে সোজা বালীগঞ্জ যাবো। ব্যাঙ্কে সারাদিন ডিউটি দেবো। তারপর খাটাখাটনি করে বাড়ীতে একটু বিশ্রাম।’
শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই, মাসীমা কেমন আছেন? মানে তোর বাবা মা?’
শুক্লা বললো, ‘বাবা তো মারা গেছেই সেই কয়েক বছর আগে। মা হালে মারা গেলেন। ক্যানসার হয়েছিল।’
অবাক হয়ে শুক্লাকে বললাম, তুই তাহলে একা?
শুক্লা বললো হ্যাঁ একা। বড় নিসঙ্গ আমি।
শুক্লা এরপরে উঠি উঠি করছে। মা ঘরে এলো। শুক্লাকে বললো, চলে যাচ্ছো?
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ মাসিমা। পরে একদিন আসবো। এই আপনার ছেলেকে বলে গেলাম, আমার ফ্ল্যাটে যেতে। বাবু এখন যাবে কিনা আমাকে কথা দিতে পারছেন না। ‘
মা বললো, ‘তা যাবে খন। অসুবিধের কি আছে?’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। শুভেন্দুর কথাটা একটু আগে মাকে বলেছি। মা বোধহয় ভুলেই গেছে। শুক্লা আমাকে বললো, ‘এই বদমাইশটা। তোর ফোন নম্বরটা আমাকে দে তো। কথা বলতে বলতে আসল কাজটাই ভুলে গেছি।’
আমি শুক্লাকে আমার সেলফোন নম্বরটা দিলাম। শুক্লা সেভ করলো। আমাকে বললো, ‘তুই তাহলে আমাকে কনফার্ম করিস। এখন তো কিছু আমাকে বললি না।’
শুক্লাকে বললাম, ‘দেখছি, আমি শুভেন্দুকে ফোন করে। তোকে বিকেলে আমি ফোন করবো। বলেছিস যখন নিশ্চই যাবো। শুধু আমাকে শুভেন্দুর সাথে একটু কথা বলতে দে।’
আমাকে শুক্লা বললো, ‘তোকে নিচে যেতে হবে না কষ্ট করে। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’
বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ওর দিকে হাত নাড়লাম। শুক্লাও হাত নাড়লো। তারপর ওর শরীরটা আসতে আসতে গলির মুখটা থেকে মিলিয়ে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমাকে শুক্লা বিদিশার কাছে যেতে মানা করলো। আবার ওর ফ্ল্যাটেও যেতে বলে গেল। কিন্তু কেন বলে গেল? মনে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে গেল।
শুক্লাকে বললাম, তোর অফিস মানে তো ব্যাঙ্ক। কোন ব্যাঙ্কে আছিস যেন?
শুক্লা বললো, ‘পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কে আছি। ওই চাকরিটাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখান থেকে সোজা বালীগঞ্জ যাবো। ব্যাঙ্কে সারাদিন ডিউটি দেবো। তারপর খাটাখাটনি করে বাড়ীতে একটু বিশ্রাম।’
শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই, মাসীমা কেমন আছেন? মানে তোর বাবা মা?’
শুক্লা বললো, ‘বাবা তো মারা গেছেই সেই কয়েক বছর আগে। মা হালে মারা গেলেন। ক্যানসার হয়েছিল।’
অবাক হয়ে শুক্লাকে বললাম, তুই তাহলে একা?
শুক্লা বললো হ্যাঁ একা। বড় নিসঙ্গ আমি।
শুক্লা এরপরে উঠি উঠি করছে। মা ঘরে এলো। শুক্লাকে বললো, চলে যাচ্ছো?
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ মাসিমা। পরে একদিন আসবো। এই আপনার ছেলেকে বলে গেলাম, আমার ফ্ল্যাটে যেতে। বাবু এখন যাবে কিনা আমাকে কথা দিতে পারছেন না। ‘
মা বললো, ‘তা যাবে খন। অসুবিধের কি আছে?’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। শুভেন্দুর কথাটা একটু আগে মাকে বলেছি। মা বোধহয় ভুলেই গেছে। শুক্লা আমাকে বললো, ‘এই বদমাইশটা। তোর ফোন নম্বরটা আমাকে দে তো। কথা বলতে বলতে আসল কাজটাই ভুলে গেছি।’
আমি শুক্লাকে আমার সেলফোন নম্বরটা দিলাম। শুক্লা সেভ করলো। আমাকে বললো, ‘তুই তাহলে আমাকে কনফার্ম করিস। এখন তো কিছু আমাকে বললি না।’
শুক্লাকে বললাম, ‘দেখছি, আমি শুভেন্দুকে ফোন করে। তোকে বিকেলে আমি ফোন করবো। বলেছিস যখন নিশ্চই যাবো। শুধু আমাকে শুভেন্দুর সাথে একটু কথা বলতে দে।’
আমাকে শুক্লা বললো, ‘তোকে নিচে যেতে হবে না কষ্ট করে। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’
বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ওর দিকে হাত নাড়লাম। শুক্লাও হাত নাড়লো। তারপর ওর শরীরটা আসতে আসতে গলির মুখটা থেকে মিলিয়ে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমাকে শুক্লা বিদিশার কাছে যেতে মানা করলো। আবার ওর ফ্ল্যাটেও যেতে বলে গেল। কিন্তু কেন বলে গেল? মনে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে গেল।