Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#13
শুক্লাকে বললাম, হ্যাঁতুই ফোন করে আমাকে পরে বলেছিলিসবিদিশা তোর কাছে পরে দূঃখ করেছেও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।  কিন্তু তখন বিদিশারও আর করার কিছুই নেইওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছেবিদিশা বিয়ে করে মুম্বাই চলে যাচ্ছে
শুক্লা অবাক করে আমাকে বললো, বিদিশা, তোকে যদি এতদিন পরে তোকে আবার দেখতে চায়, যাবি না ওর কাছে?
আমি শুক্লার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিকি বলছে ও কিছুই বুঝতে পারছি না
 
শুক্লা বললো, বিদিশা এখন কলকাতায়ও তোর সাথে একবার দেখা করতে চায়আমাকে অনেক করে বলেছে
আমি বললাম, বিদিশা কলকাতায় কেন? ও কি এখন এখানেই রয়েছে?
শুক্লা বললো, এখানেই থাকবে ওআর ফিরে যাবে না, মুম্বাইতেবিদিশার স্বামীর সাথে বিদিশার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছেতাই ও-
 
কথাটা তখনো শেষ করেনি শুক্লা।  আমি যেন কেমন ভাবুক মত হয়ে গেছিআপন মনে কি যেন ভাবছি।  আর মনে হচ্ছে, পুরোনো দূঃখের স্মৃতিতে দগ্ধ মনটায় হঠাৎই এ যেন এক খুশীর খবরমরে যাওয়া ভালোবাসাতে নতুন করে আবার প্রাণের স্পন্দনশুনেছি, হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নাকি কখনো সখনো ঘুরে ফিরে আসেএটা কি তাহলে তাই? ভগবান কি এইভাবেই প্রেমিক প্রেমিকার পরীক্ষা নেয়? যে দূঃখ দেয়, ভগবান নাকি তাকে কখনো সুখী করেনাআর যে দূঃখ পায় ভগবান শুধু তার ধৈর্য্যেরই পরীক্ষা নেয় যেমনটি আমার নিয়েছে ভগবান এই কটা দিন। 
 
এর থেকেও বড় সারপ্রাইজটা আমার জন্য বোধহয় অপেক্ষা করছিলশুক্লা যেখানটায় বসে ছিল, ওখান থেকে উঠে এসে আমার পাশে হঠাৎ বসলোআমার হাত দুটো ধরে বললো, ‘দেব’ তুই কি বিদিশার কাছে আবার ফিরে যাবি?
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিছু তো ভাবিনি এখনোতুই বল-
শুক্লা বললো, ‘যাস না দেব, যাস নাআমি বলছি, বিদিশার কাছে তোর ফিরে না যাওয়াটাই আর ভালোআমি তোকে-
 
বিদিশার চিন্তাতে আমি কেমন মশগুল হয়ে গিয়েছিলাম কি একটা বলতে গিয়ে শুক্লাও হঠাৎই থেমে গেছে দেখলাম মা, চা নিয়ে ঢুকেছে ঘরেশুক্লা মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে মা’কে ঢুপ করে একটা প্রনাম করে বসলোমা, শুক্লার মাথায় দুহাত রেখে বললো, ‘থাক থাক মা, আমাকে আর প্রনাম করতে হবে নাআমি এমনি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করছি।’
চায়ের সাথে চানাচুর আর মিষ্টিশুক্লা বললো, এ কি মাসিমা? দেবকে দিলেন নাশুধুই আমাকে?
মা বললো, ‘ও তো খেয়েছে এই সবেতুমি খাওদেব সকালে একবারই চা খায়, তারপরে আর খায় না।’
শুক্লা আমাকে বললো, ‘কলেজে তো খুব চা খেতিসঘন্টায় ঘন্টায়এখন সব কমে গেছে বুঝি?
 এক সময়ে চায়ের একটা নেশা ছিলচায়ের সাথে বিস্কুট আর সিগারেটবিদিশা বলতো, ‘তোমার এই চায়ের নেশাটা খুব বাজেআর এত ঘনঘন সিগারেট খাও কেন তুমি? জানো বেশী সিগারেট খেলে ক্যানসার হয়গলা খারাপ হয়ে যায়তোমাকে গলাটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে কিনা?’
আমি বিদিশার জন্য চায়ের নেশা কমিয়ে দিলামসিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলামকিন্তু বড়ই অদ্ভূতবিদিশাই তারপরে আমাকে ছেড়ে চলে গেল
শুক্লাকে দেখলাম, চা খাচ্ছে, আর বারে বারেই আমার দিকে তাকাচ্ছেকি যেন বলতে গিয়ে একটু আগে থেমে গিয়েছিল ওশুক্লার এমন দৃষ্টি, কলেজে যখন পড়তাম, আগে কখনো দেখিনিআমার পাশেই বসে রয়েছে ওঅথচ কলেজে যখন পাশে বসতো, কোনদিন এভাবে কখনো তাকাতো না আমার দিকে
-’কিছু বলবি শুক্লা? কি যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলি তুই?’
শুক্লা বললো, ‘তোকে যদি কিছু বলি, তাহলে তোর মান হবেঅভিমান হবে আমার ওপররাগ করবি না বল?’
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই তো আমার ক্ষতি কোনোদিন চাস নিরাগ করবো কেন? কি বলছিলিস বল?’
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সব বলবো তোকে, যদি পারিস, আজ সন্ধেবেলা আসবি একবার আমার ফ্ল্যাটে?’
আমি বললাম, ‘সন্ধেবেলা? আমাকে তো শুভেন্দুও আবার ডেকেছে ওর বাড়ীতেকি করে যাবো?’
শুক্লা বললো, ‘ওকে বারণ করে দেবল, শুক্লাও আমাকে ডেকেছেআমি শুক্লার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।’
শুভেন্দুকে আজ অবধি কোনদিন না করিনিশুক্লার কথায় না বলবো, মনটা কেমন খচখচ করতে লাগলোবিদিশার চিন্তাটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছেশুভেন্দু আমাকে সারপ্রাইজের কথা বলেছে, সেটাও আমাকে জানতে হবেওকে যদি না বলে দিই।, শুভেন্দু অসন্তুষ্ট হবে, সারপ্রাইজটাও আমার জানা হবে না
-’কি হল? কিছু বলছিস না যে? বল আজ আসবি কিনা? আমি তো এখন অফিসে যাবোওখান থেকে ফিরে সন্ধেবেলা ফ্ল্যাটেই থাকবোতোর জন্য অপেক্ষা করবোআসবি তো?’
সল্টলেকের কোয়ালিটি বাস স্টপেজের কাছে শুক্লারা ফ্ল্যাট কিনেছিল আমি জানিএই শুভেন্দুই আমাকে বলেছিল, ‘জানিসতো দেব, শুক্লারা এখন সল্টলেকে থাকেআগে থাকতো বেহালায়এখন ওখানেই রয়েছে মা বাবাকে নিয়ে।’
শুভেন্দু পুরোনো বন্ধু বান্ধবদের সব খবর গুলো কেমন পেয়ে যায়, অথচ আমি পাই নানিজেকে বেশ কিছুদিন গুটিয়ে রেখেছিলাম, হয়তো সেইজন্য
শুক্লা বললো, ‘আমার ফ্ল্যাটটাতেও তো তুই কোনদিন আসিস নিতা একবার এসে দেখে যাসবাই তো এসেছেশুধু তুই বাকী।’
আমি বললাম, ‘সবাই বলতে কে কে?’
শুক্লা বললো, ‘কেন শুভেন্দু, রনিওরা দুজনেই তো এসেছে।’
-’আর সৌগত?’
নামটা শুনে মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল শুক্লারআমাকে বললো, ‘কষ্ট দিচ্ছিস?’
 ভাবিনি ওর মুখটা এমন করুন হয়ে উঠবেশুক্লাকে আমি কোনদিন কাঁদতে দেখিনিচোখের কোনে জলটা চিকচিক করছিলরুমাল দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে নিয়ে বললো, ‘না তোকে এমনি বললাম, আমি জানি তুই কোনদিন কাউকে কষ্ট দিতে শিখিস নি।’ সৌগত কি করে আসবে? ও তো বিয়ে করে কবেই চলে গেছে আমাদের থেকে অনেক দূরেমনে নেই? ওর বিয়েতে তো আমিও তো গিয়েছিলাম।’
বললাম, জানিস সৌগত এখন কোথায়?
শুক্লা বললো, ‘শুনেছিলাম তো অ্যামেরিকায়নিউ জার্সি তে রয়েছেযে মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল, কি সুন্দর দেখতে মেয়েটাকেবিয়ে করার একবছর পরেই অ্যামেরিকাতে চলে গেলআমাকে একটা বিয়ের কার্ড পাঠিয়েছিল সৌগততখন আমি বেহালাতেই রয়েছিকার্ডটা পেয়ে যাবো কিনা ভাবছিতারপরই সৌগত আমাকে ফোন করলোবললো, কি গো আসবে না? নাকি রাগ এখনো রয়েছে আমার প্রতি? আমি কিন্তু সব কিছু ভুলেই ওর বিয়েতে গিয়েছিলাম।’
শুক্লাকে বললাম, ‘তোকে কিন্তু সেদিন দেখে আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম শুক্লাপরে ভেবেছিলাম, শুক্লার মনটাও কি তাহলে বিদিশার মত বিষিয়ে গেলএত সুন্দর গড়ে উঠেছিল তোদের প্রেমটাঅথচ হঠাৎই কোথাথেকে কি যেন হয়ে গেলতুই আবার সৌগতর বিয়েতেও এসেছিলিস, আমার খুব অবাক লেগেছিল।’
শুক্লা বললো, ‘অবাক তো লাগবেই তুই যে আমার কথা ভাববি, আমি খুব ভালো করেই জানতামএই সৌগতই না কতদিন তোর পেছনে পড়েছিল, আমাকে রাজী করানোর জন্য।’
আমি হেসে বললাম, হ্যাঁমনে পড়ে সেসব কথাতারপরেই ওকে বললাম, ‘সৌগতর জন্য তোর কোনদিন আফশোস হয় না শুক্লা? দুজনে পৃথিবীর এখন দুই মেরুতেকখনো মনে হয় না, এই জীবনটা আমরা হয়তো চেষ্টা করলে একসাথেই কাটাতে পারতাম।’
শুক্লা বললো, ‘আফশোস তো হয়এই যেমন তোরও হয় বিদিশার জন্যকিন্তু কথায় বলে, আফসোস করে নাকি কিছু হয় নাপৃথিবীতে আমরা কি কেউ পেছনের দিকে তাকিয়ে চলি? বল? সবাই চায়, সামনের দিকে তাকাতেআমিও তাই-
 
মনে হল শুক্লা যেন দূঃখ কষ্টটাকে চেপে রেখেছে, আমারই মতন।  ভালোবাসা ওরও টেকেনিপৃথিবীতে আমরা দুজন যেন একই পথের যাত্রী
শুক্লাকে বললাম, ‘তাহলেও আমার আর তোর ব্যাপারটা তো আলাদাসৌগতর সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে নাকি তোর বাবা মা আপত্তি করেছিলসৌগতও জেদের বশে বিয়ে করে ফেললো ওই মেয়েটাকেএটা কি সত্যি?’
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ বাবা মা আপত্তি করেছিলপ্রথমে মনে হয়েছিল ঠিকই তো করেছেএটা তো সত্যিআমিই বা জোর করবো কেন?’
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই তো সৌগতকে ভালোবাসতিসজোর করলি না কেন?’
শুক্লা বললো, ‘আমার ভালোবাসাটা আসলে ঠুনকো ছিলসেটাই বলতে চাইছিস তো? আমি তো বিদিশার মত অত ওকে ভালোবাসতাম নাযতটা বিদিশা তোকে ভালোবাসতো।’
শুক্লাকে বললাম, ‘আমি বিশ্বাসই করবো না সেকথাশুধু এটুকু জানতাম, বিদিশা আমাকে যতটা ভালোবাসে, শুক্লা ঠিক ততটাই ভালোবাসে সৌগতকেবিদিশা আমাকে ছেড়ে গেলেও শুক্লা কিছুতেই ছাড়তে পারে না সৌগতকে।’
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:45 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)