Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#9
পাঁচ
 
‘তোর মনে হচ্ছে আজ অফিস যাবার কোনো ইচ্ছে নেই সকালে উঠেই ডায়েরী খুলে বসে গেছিস লিখতেঘড়িতে কটা বেজেছে, খেয়াল করেছিস?’
মাকে দেখলাম আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেআমার পিঠে হাত দিয়ে দেখছে, আমি আপন মনে কিসব লিখে যাচ্ছিমা বললো, ‘কি লিখছিস? গল্পো?’ হেসে বললাম হ্যাঁ মা গল্পোতবে জীবনের কিছু পুরোনো কথাও এর মধ্যে আছেওগুলো সব মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই একটার পর একটা লিখে যাচ্ছি
অফিসে যাবি না?’
‘হ্যাঁ যাবো তোএই আর একটা পাতা লিখে নিই।’
মা জানে লেখার নেশাটা আমার অনেকদিনেরসেই ছোটবেলা থেকে লিখে আসছিকত কিছু লিখলামবিদিশাকেও আমার কতগুলো লেখা পড়িয়েছিলামআমার গল্প আর কবিতা গুলো পড়ে বিদিশা বলেছিল, ‘তুমি এত ভালো গান গাও, আবার এত ভালো লেখো,  এতসব পারো কি করে? কি প্রতিভা তোমার
আমি বলেছিলাম, ‘দূরএরজন্য আবার প্রতিভার দরকার হয় নাকি? লিখতে লিখতে ওটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়আর গানটা গাইতে গেলে সাধনা করতে হয়সবই রেওয়াজের ওপরপ্র্যাকটিস না করলে কোনকিছুতেই দক্ষ হওয়া যায় না
বিদিশা জানতো না ওকে দেওয়া আমার চিঠিটা শুভেন্দু লিখে দিয়েছিলআমাকে বললো, ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একটা সুন্দর প্রেমপত্র লিখবেশব্দের মালা বসিয়ে যেমনটা তুমি লেখোচিঠিটা পড়ে আমিও আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবোআমার ভেতরের অনুভূতিটা চিনচিন করে উঠবে তা নাকি একটা লিখলেওটা কি প্রেমপত্র হল?’
হেসে বলেছিলাম, ওটা তো আমি লিখিনিওটা শুভেন্দু আমার হয়ে লিখে দিয়েছিল
বিদিশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল, কেন? শুভেন্দু লিখবে কেন? তোমার ঠিঠি ও লিখবে কেন?
এই রে বোকার মতন সত্যি কথাটা বলে এখন বিপদে পড়ে গেছিযাতে ওর রাগ না হয়, বিদিশার গালে হাত রেখে বলেছিলাম, শুভেন্দু তাড়াহূড়ো করে না লিখলে, সেদিন তুমি কি ক্যাফেটরিয়াতে আসতে? না আমরা একে অপরকে ভালবাসতে পারতাম? মিছিমিছি ওর ওপর রাগ করছ ও তো আমাকে জানিয়েই চিঠি লিখেছে তোমাকে
একটু যেন মন খারাপ করে ফেলেছিল বিদিশাভুলটা আমারই জন্যরাগ ভাঙাতে আমি কত কিছু করলামওর জন্য মান্না দের গানটা গাইলাম, ‘সুন্দরী গো দোহাই তোমার মান কোরো নাআজ নিশীথে, কাছেই থেকোনা বোলো নাসুন্দরী গো।’
কলেজে গিয়ে বিদিশার ক্লাসে ঢুকে গেলাম সোজাদেখলাম বিদিশা চুপ করে বসে আছে সিটেমুখটা ভারভারউস্কো খুস্কোওর পাশে গিয়ে বসে পড়লামবিদিশা লজ্জা পেয়ে গেলোওর ক্লাসের ছেলেমেয়েগুলো আমাকে দেখে বলতে লাগল, ‘আরে গায়ক মশাই যেতা হঠাৎ আমাদের ক্লাসে পদার্পনকি মনে করে?’
আমি বিদিশার হাত ধরে টানছি। ‘এই চলো না চলো না।’ ও লজ্জা পেয়ে বললো, ‘ধ্যাতকি হচ্ছেটা কি? সবাই দেখছেছাড়ো বলছি।’
 আমিও অগত্যা চুপ করে বসে রইলামএকটু পরে প্রফেশর এলেনআমাকে দেখে ভিমরী খেলেনবললেন, ‘দেব’ তুমি এখানে? কি ব্যাপার? নিজের ক্লাসে না গিয়ে এখানে বসে কি করছ?
আমি নাছোড়বান্দা প্রেমিকের মত জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে আছিবিদিশা ওই দেখে মুখ টিপে ফিক ফিক করে হাসতে লাগলোক্লাসের বাকীরাও সবাই হাসতে লাগলবুঝলাম জোর ফাঁসা ফেসেছি আজকেএকেবারে বেইজ্জ্বত হয়ে গেছিআজ আমার রেহাই নেইসেদিন কলেজে ঢ্যাড়া পিটে গেল, সবাই জেনে গেল, তারমানে আমি বিদিশার সাথে প্রেম করি
বিদিশা খুব লজ্জ্বা পেয়েছিল সেদিনওর রাগ ভাঙাতে আমি যে এতটা করতে পারি, ওর ধারনা ছিল নাবিদিশা কখনও আমাকে ভুল না বোঝে, আমাকে খারাপ না ভাবে আমি সবসময়ই চেষ্টা করতামওর জন্য আমি একটা গান লিখতে চেয়েছিলাম, সেটা লেখা হয় নিকিন্তু বিদিশা আমাকে বলেছিল, তুমি যেদিন আমাকে নিয়ে কিছু লিখবে, সেদিন বুঝবো, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসোকোন গল্প কাহিনী, কবিতা, উপন্যাসপারবে আমাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে লিখতে?
বিদিশাকে বলেছিলাম, কেন পারবো না? ও তো আমার কাছে জলভাত 
‘তাহলে লিখে দেখাও।’
কলম নিয়ে সেদিন আর কিছু লেখা হয় নিকিন্তু আজ লিখছি। ‘বিদিশা তুমি জানো না, আমার জীবন কাহিনীর কতটা অধ্যায় জুড়ে তুমি বসে আছোসব কথা আজ লিখতে চাই, তোমার আর আমার প্রেমকাহিনী নিয়ে সবাইকে সব কথা বলতে চাইকিন্তু তুমি তো এখন অনেক দূরেএ লেখা কি শেষ পর্যন্ত তোমাকে পড়াতে পারবো বিদিশা? তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছোআর তো ফিরে আসবে না কোনোদিনতাহলে?
একটু হেসে মা পেছন থেকে বললো, কার কথা লিখছিস?
মাকে কি আর বলতে পারি, বিদিশার কথাবললাম,ঐ কলেজের সব ঘটনাগুলো লিখছিযেগুলো যেগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে, সেগুলো
 
মা আমার কথাটা শুনে কেমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলোবললো, ‘কেন লিখছিস ওসব পুরোনো কথা? কে মনে রাখে? নিজেকে শুধু শুধু কষ্ট দিসএখনো ভুলতে পারিস নি তুই বিদিশার কথাতাই না?
‘তুমি কি করে জানলে আমি বিদিশার কথা লিখছি? আমি তো-’
মা বললো, আমার চোখকে তুই ফাঁকি দিতে পারবি? যে মেয়েটা তোকে ছেড়ে চলে গেলোএকবার ফিরেও তাকালো নাঘর করলো না, তার কথা তোর এখনো মনে পড়ে? কি পেয়েছিস তুই বিদিশার কাছ থেকে? সত্যিকারের ভালবাসা? ও যদি তোকে সত্যি ভালোবাসতো, তাহলে কি এভাবে ছেড়ে যেত?
আমাকে বলে নিজেই একটু বিষন্ন হয়ে পড়লো মাসেদিন মায়ের চোখে আমিও জল দেখেছিলাম, আজ আবারো দেখলামডায়েরীর পাতাটা বন্ধ করে মাকে বললাম, এই দেখো, তুমি আবার মন খারাপ করছোতাহলে লেখাটা বন্ধ করে দিইমা আমার মাথায় হাতটা রাখলোবললো, না রে বাবা, তুই লেখআমি তো এমনি বলছিলাম
 মাকে বললাম, এই দেখো না শুভেন্দু এতদিন বাদে ফোন করলো, আমাকে ওর বাড়ী যেতে বললো, আর আমারো পুরোনো কথা সব মনে পড়ে গেলতাই ভাবি একটু লিখিতুমি যখন বলছো, তাহলে লিখবো না
মা আবারো আস্বস্ত করলো আমাকেবললো, ‘না তুই লেখআমি তোকে বাঁধা দেবো নাআজ অবধি তোর কোনো কাজে বাঁধা দিয়েছি কি? তবে তুই যদি এখন না বেরোস, তাহলে আমাকে বলে দেআমি একটু স্নানটা সেরে আসিএসে তাহলে তোর খাবারটা বেড়ে দেবোখনে
মাকে বললাম, ঠিক আছে তুমি যাওআমি একটু পরেই লেখালেখি শেষ করছি
যাবার আগে মা বললো, বিদিশারা এখন কোথায় থাকে রে? বিয়ের পরে তো মুম্বাই চলে গিয়েছিল শুনেছিলামএখন কি ওখানেই?
মাকে বললাম, তোমার এখনো মনে আছে তাহলেমা বললো, কেন তুই তো আমাকে বলেছিলিসওর মুম্বাইতে বিয়ে হয়েছেপয়সাওয়ালা শশুড় বাড়ী পেয়েছেসুখে ঘর করছেআর হবে নাই বা কেন? ওরা নিজেরাও তো খুব বড়লোক ছিলো
মাকে বললাম, এখন আর বিদিশার খবর জানি না মাআর জানবোই বা কি করে? ও তো পরে আর যোগাযোগ করেনি আমার সঙ্গেচলে যাবার পরে কোনো ফোনও করেনি আমাকে
যাবার আগে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মা বললো, ‘ছেলে আমার বিদিশা বিদিশা করেই গেলো এবার একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কর তাহলে আমিও একটু হাল্কা হই।’
মা চলে গেলআমি আবার ডায়েরীটা খুলে ভাবছি কি লিখবোকলেজের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আরো লিখতে ইচ্ছে করছেবিদিশার সাথে আমার প্রেমনেতাজী ইন্ডোরে অনেক রাত অবধি জলসা দেখতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল সেদিনবিদিশা বাড়ীতে বলে আসেনিআর প্রোগ্রাম শেষ হবার পর ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর সময়ই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতুমুল বৃষ্টিতে কেউ বেরোতে পারছে না অডিটোরিয়াম থেকেবিদিশা আমার হাতটা ধরে বললো, কি হবে বলোতো? বাড়ীতে বলে আসিনিএখন বৃষ্টিমা আমাকে পুরো খেয়ে ফেলবেকিছু একটা ব্যবস্থা করোএকটা ট্যাক্সিযেমন করে পারো
বিদিশা যাতে সময় মত বাড়ী পৌঁছোতে পারে বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে ভিজে চপচপে হয়ে ওর জন্য ছুটে গিয়ে ট্যাক্সি ধরেছিলামবাড়ীতে ওকে ড্রপ করে দিয়ে যখন নিজের বাড়ী ফিরছি, তখন বাজে রাত্রি একটামা বসে আছে ঘরেআমার জন্য প্রবল চিন্তা করছেআমি ঘরে ঢুকতেই মা বললো, তুই বিদিশা ছাড়া আর কটা মেয়ের সাথে ভাব পাতিয়েছিস?
আমি অবাকমাকে বললাম, কেন? একথা বলছো কেন?
মা বললো, মিনু বলে একটা মেয়ে এসেছিল সন্ধেবেলাতোর খোঁজ করছিলবললো, মাসীমা দেব কোথায় গেছে বলতে পারবেন? আজ তো কলেজে দেখলাম না ওকে
চমকে উঠেছিলাম আমিমিনু? কেন? ও কেন আমার বাড়ীতে আসবে? আর ওকে বাড়ীর ঠিকানাই বা কে বললো, তাহলে কি সৌগত?
মা বললো, ‘মেয়েটা একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছিলআমাকে বললো, আমি দেবের বন্ধুআর এ হলো সৌগতআমরা দুজনেই দেবের বন্ধুদেবকে খুব দরকারবলুন না ও কোথায় গেছে?
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)