01-07-2021, 10:50 PM
শুক্লা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। ক্লাসে ও আর আমি পাশাপাশি বসতাম। শুক্লা আমার কাছ থেকে ফিজিক্স এর নোট নিত। আমার ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখত। ভালো কিছু চোখে পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে টুকে রাখতো। এদিকে সৌগত বেশ কিছুদিন ধরেই শুক্লার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে। শুক্লা কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না। একদিন কলেজে এসে শরীরটা আমার ভীষন খারাপ হল। গরমে প্রচন্ড বমি হচ্ছে। চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় অজ্ঞান হবার মত অবস্থা হল। সবাই চোখে মুখে জল দিয়ে আমাকে ক্যান্টিনে একটু ছায়ার মধ্যে নিয়ে গেল। শুক্লার কোলে মাথা রেখে তখন শুয়ে আছি। শুক্লা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাই দেখে বিদিশাও বুঝে গেল, আমি বোধহয় শুক্লার সাথে নিশ্চই প্রেম করি। ওর আমার প্রতি জেদটা আরো বেড়ে গেল।
আমি বিদিশাকে সাতদিন, আমার কাছে ভীড়তে দিইনি। তারপরই এল সেইদিনটা। সেদিন ছিল কলেজে সরস্বতী পূজোর দিন। বিদিশাকে দেখলাম, ঠিক আমার পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ঘি রঙের লাল পেড়ে শাড়ী পড়েছে। কপালে লাল টিপ। সরস্বতী পূজোয় মেয়েরা যেমন সাজে, তার থেকেও সুন্দর লাগছে ওকে। আমাকে বলল, ‘‘তুমি খুব ভালো গাও। তোমার গান শুনেছি, আমি মুগ্ধ। আজকে তো সরস্বতী পুজো। আমাদের গান শোনাবে না?’’
আমি ভাল করে একবার তাকালাম বিদিশার দিকে। ওকে কয়েক পলক দেখলাম। বিদিশার ঠোঁটের কোনে হঠাৎই এক চিলতে হাসি দেখলাম। মনে হল, মেয়েটা যেন কিছু আশা করে রয়েছে আমার কাছ থেকে পাবে বলে। গান শোনাব না ওর আমাকে ভাললাগাটাকে মেনে নেবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার হাতে হঠাৎই একটা চিরকূট গুঁজে দিয়ে বিদিশা বলল, ‘আমি এখানে কিছু লিখে রেখেছি। তোমাকে দেবার জন্য। পড়ে দেখো।’ বলেই এক নিমেষে ছুটে পালিয়ে গেল ওখান থেকে।
আমি ওর গুঁজে দেওয়া কাগজটা হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পরে শুভেন্দু এল ওখানে। আমাকে বলল, কিরে? কি বলছিল বিদিশা? তোকে কিছু বলল?
আমি বললাম, না সেরকম কিছু না। একটা কাগজ শুধু গুঁজে দিয়ে গেল হাতে। বলল, তোমার জন্য লিখেছি, এটা পড়ে দেখো।
শুভেন্দু বলল, খুলে দেখ। আমার মনে হচ্ছে নিশ্চই এটা প্রেমপত্র। বিদিশা তোকে মনে হয় প্রেম নিবেদন করেছে। জিও বেটা, আজ থেকে তোমার নাম প্রেম কুমার।