Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
#42
[Image: eec5e1ccad0ad56cea2c35e829d9e154.jpg]
upload

Update 2

তখন সবে জওহরলাল নেহেরু মারা গেছেন । সেই সময়েই  কলকাতার ভিতরে এই সোসাইটি বানানো হয়। মোট পাঁচটা বিল্ডিং। প্রত্যেকটির নাম পঞ্চ পান্ডবদের নামে রাখা হয়। এই কংক্রিটের প্রাণহীন মহানগরীতে তখনও কিছু প্রাণ অবশিষ্ট ছিল। এদিক ওদিকে বেশ কিছু গাছ , পাখির দেখা পাওয়া যেত।

দেবাশীষ বাবুর বয়স সাতাশ কি আঠাশ হবে । তিনি সরকারি চাকরি পাওয়ার পর গ্রামের ঘর বাড়ি ছেড়ে এই মহানগরী তে চলে আসেন। শোনা যায় তার আপনজন তেমন কেউ ছিল না। আর এদিকে জ্ঞাতি গোষ্ঠির কলহের জন্য এদিক ওদিক থেকে টাকা জোগাড় করে গ্রামের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বত্রিশ বছরের  বিশ্বজিৎ বাবু  এই কলকাতা মহানগরী তে চলে আসেন। দেবাশীষ বাবু আর বিশ্বজিৎ বাবু দুজনেই এই সোসাইটির অর্জুন ভবনের উপরের তলায় দুটো ফ্ল্যাট কেনেন। পাশাপাশি থাকার সুবাদে তখন থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব। দেবাশীষ বাবু সরকারি কাজে মোটা বেতন পেতেন। আর বিশ্বজিৎ বাবু সামান্য একটা খবরের কাগজের প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করতেন । নাম বিশ্বজিৎ হলেও বিশ্ব জয় করার কোন আকাঙ্খাই তিনি পোষণ করতেন না।

বিশ্বজিৎ বাবু  গ্রাম থেকেই বিয়ে করে কলকাতায় এসে উঠেছিলেন । বিশ্বজিৎ বাবুর সহধর্মিণীর নাম ছিল রাধারানী দেবী। রাধারানী দেবীর শরীর খুবই দুর্বল প্রকৃতির ছিল । মাসের তিন সপ্তাহেই কোন না কোন ব্যাধিতে ভুগতেন। এখানে আসার দু বছরের মধ্যেই তার প্রথম ও একমাত্র সন্তান হয়। তার নাম সমরেশ তালুকদার। সমরেশ পড়াশোনায় ভালো , সৎ , মাঝারি উচ্চতার, হাল্কা শ্যাম বর্ণের একজন দায়িত্ববান ছেলে।

বিশ্বজিৎ বাবু দেবাশীষ বাবুর থেকে বছর পাঁচেক বড়ো ছিলেন। দেবাশীষ বাবু খুবই বিচক্ষন , পরিশ্রমী ও কর্মঠ ছিলেন। যতদিন দেবাশীষ বাবু অবিবাহিত ছিলেন ততদিন তিনি বিশ্বজিৎ বাবুর সংসারেই খাওয়া দাওয়া করতেন। বিশ্বজিৎ বাবুর স্ত্রী রাধারানী দেবী দেবাশীষ বাবুকে ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন। সরকারি চাকরি করে তিনি বেশ ভালো টাকা জমিয়ে বিয়ে করলেন। দেবাশীষ বাবুর স্ত্রী সুনীতা দেবী কলকাতার মেয়ে। দেখতে সুন্দরী , ফর্সা , একটু লম্বা ছিলেন। দেবাশীষ বাবুর সাথে মানানসই উচ্চতার। তিনি পড়াশোনা ভালো করে করলেও অনেকটা প্রাচীন পন্থি ছিলেন। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তান জন্মায়। নাম শুভাশীষ মিত্র। শুভাশীষ লম্বা চওড়া গৌড় বর্ণের সৌম্যকান্তি ছেলে। পড়াশোনায় সমরেশ বাবুর মতো ভালো ছিলেন না। কিন্তু খুব বিচক্ষণ , বুদ্ধিমান ব্যাক্তি।

দেবাশীষ বাবুর বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী সুনীতা দেবী আর বিশ্বজিৎ বাবুর স্ত্রী রাধারানী দেবীর মধ্যে দিদি বোনের সম্পর্ক ছিল। ছেলেকে জন্ম দেওয়ার পাঁচ ছয় বছরের মধ্যেই রাধারানী দেবী কোন এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে দেহ রেখে ছিলেন। দেহ রাখার আগে সুনীতা দেবী কে বলে গেছিলেন সমরেশ কে দেখতে। সুনীতা দেবী দেখেছিলেন। তখন থেকেই সমরেশ বাবু সুনীতা দেবীর কাছে মানুষ। দুইজনের সংসারে খরচা কম। তাই বিশ্বজিৎ বাবু তাঁর ছেলেকে বেশ ভালো কলেজ কলেজে পড়াতে পেরেছিলেন।


সুনীতা দেবী এবং দেবাশীষ বাবু বিশ্বজিৎ বাবু কে অনেক বুঝিয়েছিলেন আর একটা বিয়ে করার জন্য। কিন্তু তিনি আর বিয়ে করেন নি ।

এদিকে সমরেশ বাবু সুনীতা দেবীর কাছেই মানুষ হলেন । সমরেশ বাবু সুনীতা দেবী কে “ ছোটমা „ বলে ডাকতেন। তাঁর আর  শুভাশীষ বাবুর বয়সের পার্থক্য তিন চার বছর। একসাথেই বড়ো হয়েছিলেন এবং একই কলেজে পড়ার  জন্য এরা ছোটবেলা থেকেই বন্ধু।

হাতে বেশ কিছু টাকা জমে যাওয়ার পর দেবাশীষ বাবু সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যাবসা শুরু করেন। Import & Export এর। দেবাশীষ বাবু ছিলেন খুবই বিচক্ষন , পরিশ্রমী ও কর্মঠ । তাই তাঁর ব্যাবসা ফুলে ফেঁপে উঠতে বেশি সময় লাগে নি। ব্যাবসা ফুলে ফেঁপে ওঠার পর দেবাশীষ বাবু পেয়েছিলেন অঢেল টাকা প্রতিপত্তি আর সাথে বেশ কিছুটা অহংকার। তাই তিনি এই ছোট তিনটে ঘরের ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্য জায়গায় নিজের বাড়ি কিনে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুনীতা দেবী সমরেশ বাবুর মুখ চেয়ে এই বাড়ি ছেরে যেতে  রাজি হননি।

সমরেশ বাবুর যখন পঁচিশ বছর বয়স তখন প্রিন্টিং প্রেসে একটা দুর্ঘটনায় বিশ্বজিৎ বাবু বিছানা নিলেন । একমাত্র ইনকাম সোর্স বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমরেশ বাবু কে একটা পনের হাজারের সরকারি পিওন এর চাকরি করতে হয় । একরকম বাধ্য হয়েই সমরেশ বাবুকে বিয়ে করতে হতো। তা তিনি করেছিলেনও । নাম সুচেতা দেবী। স্বামীর থেকে এক বছরের ছোট সুচেতা দেবী একটু মোটা ও শ্যাম বর্ণ , পরের সেবায় নিয়োজিত একজন মহিলা। শশুর যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি তাকে নিজের বাবার মতোই সেবা করেছিলেন। তারপর তাদের প্রথম কন্যা সন্তান জন্মায়। নাম সুমি ওরফে সুমিত্রা তালুকদার। সুমির স্বভাব পুরো ওর বাবার মতো। পড়াশোনায় ভালো, শান্ত , চুপচাপ , ভদ্র, স্বল্পভাষী মেয়ে। দাদু তাঁর নাতনি কে খুব ভালোবাসতেন। সুমিত্রার জন্মের চার পাঁচ বছরের মধ্যেই বাষট্টি বছর বয়সে বিশ্বজিৎ বাবু দেহ রাখলেন। ঠিক তখনই সুচেতা দেবী আর এক কন্যা সন্তানকে জন্ম দিলেন।  তার নাম সুচি ওরফে সুচিত্রা। সুচিত্রার স্বভাব নাকি পুরো মায়ের মতো। তার মা সুচেতা দেবী নাকি ছোটবেলায় খুবই দুরন্ত , ডানপিটে , রাগী , একরোখা মেয়ে ছিলেন। সেই স্বভাব তাঁর ছোট মেয়ে পেয়েছে। দাদু তাঁর ছোট নাতনির মুখ দেখে যেতে পারেন নি।

এদিকে দেবাশীষ বাবু তার ছেলের বয়স আঠাশ কি উনত্রিশ হতেই স্নেহা দেবীর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন । স্নেহা দেবী আধুনিক সুন্দরী রমনী। ইনিও শাশুড়ির মতোই প্রাচীন পন্থি । শোনা যায় শেষ জীবনে দেবাশীষ বাবু একটু বেশিই অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন। সুনীতা দেবী এটা সহ্য না করলেও স্বামীকেই ভগবান ভেবে কখনো কিছু বলেন নি।  স্নেহা দেবী যখন তিন চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা তখন এক রোড একসিডেন্টে দেবাশীষ বাবু আর সুনীতা দেবী মারা গেলেন। একমাত্র নাতির মুখ দেবাশীষ বাবু আর সুনীতা দেবী কেউই দেখে যেতে পারেন নি। এই জন্য স্নেহা দেবী খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন।

শশুড় শাশুড়ির হঠাৎ মৃত্যু তে খুব ভেঙে পড়েছিলেন স্নেহা দেবী। সুচেতা দেবী তখন থেকেই অন্তঃসত্ত্বা স্নেহা দেবীর যত্ন নিতেন যতদিন না ডেলিভারির তারিখ আসে। তারপর এই গত কাল সকালে স্নেহা দেবী আকাশ কে জন্ম দিলেন। দুবারই মেয়ে সন্তান হওয়ায় কিছুটা হলেও দুঃখ পেয়েছিলেন সমরেশ বাবু। তাই বন্ধু শুভাশীষ বাবুর ছেলে হওয়ার খবর শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আর সেই খুশিতেই তাঁরা সপরিবারে গতকাল ছোট্ট আকাশ কে দেখতে গেছিলেন।

এখন সমরেশ বাবুর বয়স তেত্রিশ কি চৌত্রিশ আর শুভাশীষ বাবুর বয়স ত্রিশ। দুজনেই ঠিক ত্রিশ বছর বয়সেই নিজের বাবাকে হারিয়েছেন।

আজ সকাল দশটা পনেরোর দিকে হর্ন বাজতেই রহমত চাচা সোসাইটির বড়ো লোহার গেট টা খুলে দিলেন। আর তার সাথে সাথেই ঢুকলো আকাশদের  নিল রঙের Rover Group এর Austin Maestro  । পাথর বিছানো রাস্তা ধরে অর্জুন ভবনের সামনে এসে শুভাশীষ বাবু গাড়ি থামালেন। তারপর নেমে পাশে বসে থাকা স্নেহা দেবীকে ধরে বাইরে আনলেন। এবং খুব যত্ন করে আস্তে আস্তে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠে এলেন। সুচেতা দেবী ততক্ষণে বড়ো মেয়েকে কলেজ থেকে নিয়ে চলে এসছেন।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 8 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 01-07-2021, 07:10 AM



Users browsing this thread: 57 Guest(s)