Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুনিতা মাতা
#6
সখি ভালবাসা কারে কয়...


সকাল ১১টা বাজে। এটা সুনিতার বন্ধুদের মানে লতা আর দিব্যার সাথে ক্যানালের ধারে গল্প করার সময়সুনিতা ওর বন্ধুদের বলছিল আকাশের কথা। ওর কাছে আকাশ তখনও আকাশ হয়নি, ও বন্ধুদের “ওই ছেলেটা” বলেই বলেওরা আলোচনা করছিল সুনিতার মনের চিন্তা নিয়ে।  লতা বলল সুনিতার ওই ছেলেটার সাথে আরও গল্প করা উচিত। ছেলেটা যখন সুনিতাকে সুন্দর বলেছে তার মানে সুযোগ পেলেই ছেলেটা সুনিতাকে চুমু খাবে। সুনিতা লজ্জা পেয়ে বলল ও সেসব চিন্তা করেনি। একটা অচেনা ছেলে অচেনা মেয়েকে চুমু খাবেই বা কেন। দিব্যা পর্যন্ত সেদিন লাফালাফি না করে গভীর ভাবে চিন্তা করছিল। ও বলল কিন্তু ছেলেটা তোর পেট দেখছিল কেন ? লতা বলল যে কেরালার মেয়েরা সবাই পেট খোলা জামা পড়ে তাই ওখানকার ছেলেরা পেটের দিকে তাকায় না।

এখানে আমি লেখক হিসাবে কিছু বলতে চাই। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন পালঘাট এরিয়াতে যত ইয়ং মেয়েদের দেখেছি তারা সবাই পেট খোলা ব্লাউজ আর লং স্কার্ট পড়ত। পেট খোলা রাখা কে সেক্সি হিসাবেই দেখত না। কোন মেয়েকে দোপাট্টা নিয়েও থাকতে দেখিনি। যে মেয়েদের বুক উদ্ধত তারাও বিনা দ্বিধায় ওই ড্রেসে ঘুরে বেরাত। বুকের খাঁজ দেখানও কেউ খারাপ ভাবত না। আমি অনেক বিবাহিতা মহিলাকেও দেখেছি শাড়ি ছাড়া শুধু ব্লাউজ আর স্কার্ট পড়ে পাড়ার দোকানে যেতে। অবশ্য এরা কেউই স্কুলে বা অফিসে এই পোশাকে যেত না। তখন সবাই ১০০% ঢাকা পোশাক পড়ত।

সুনিতারা এইটা জানত না তাই বুঝতে পারছিল না। ওরা অনেকক্ষন ওই নতুন ছেলেটাকে নিয়ে কথা বললওরা ঠিক করল রবিবার নিশ্চয়ই ছেলেটার ছুটি থাকবে আর ওরা সবাই মিলে ওকে দেখতে যাবে। লতা আর দিব্যা বলল সুনিতা যেন এখন একটু ভালো জামা কাপড় পড়ে বাইরে বেরয়। ছেলেটার সামনে যেন কখনো ছেঁড়া জামা কাপড় পড়ে না যায়। লতা বলল যখন ছেলেটা পেট দেখতে ভালোবাসে, সুনিতা যেন সব থেকে ছোটো ব্লাউজ গুলো পড়ে যাতে বেশী পেট দেখা যায়। তারপর ওরা প্রেম নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। লতা বলে ও শুনেছে ছেলেরা ভালো বাসলে কি কি করে। ওরা মেয়েদের চুমু খায় আর জড়িয়ে ধরে। তারপর বুকে হাত দেয়। লতা ওর মাসীর কাছে শুনেছে এইসব। ওরা সিনেমাতে দেখেছে ভালবাসলে হিরো আর হিরোইন এক সাথে গান করে আর নাচে। দিব্যা বলে ও সব সিনেমাতেই হয়। ওদের সবার বাবা আর মা একে অন্যকে ভালোবাসে। দিব্যা আরও লে ওর বাবা ওর মাকে খুব ভালোবাসে। সব সময় খুব আদর করে। ওরা অনেকবার দেখেছে। কিন্তু তাও ওদেরকে কখনো একসাথে পার্কে বা পাহাড়ে নাচতে বা গান করতে দেখেনি। সুনিতা শুধু শুনে যাচ্ছিল। লতা বলে তবে ভালবাসলে দুজনে কি করে? কি করে বোঝায় যে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে ভালোবাসে। আর ভালবাসলে ঠিক কি হয় ? বিয়ে করলেই কি ভালবাসার শেষ না বিয়ে করলে ভালবাসা শুরু ? দিব্যা বলে ভালবাসলে সেক্স করে। সুনিতা চুপ চাপ শুনে যাচ্ছিল। তারপর বলল ও বাড়ি চলে যাবে। ও একটু একা ভাবতে চায়। দিব্যা বলল ও ওর মাকে জিজ্ঞাসা করবে ভালবাসা কি আর লতা বলল ও মাসীকে জিজ্ঞাসা করবে।

ওদিকে আকাশ যতক্ষণ অফিসে ছিল ও মেয়েটার কথা কিছুই চিন্তা করেনিও সাধারনত যখন কাজ করে তখন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করে। ও জানে কাজ ঠিক মত করলেই ও জীবনে কিছু করতে পারবে। আর কিছু করতে পারলেই তবে ও যা চায় সেটা পেতে পারবে। সেই জন্য যতক্ষণ অফিসে ছিল অন্য কিছু চিন্তা করার কোন কারণই ছিল না। ও সেদিন অফিস যাবার সময় বাসে গিয়েছিল। কিন্তু ওর একটা সহকর্মী বলল হেঁটেই যাওয়া যায় আর বলে দিল কোন দিক দিয়ে যাবেঅফিস থেকে ফেরার সময় হাঁটতে লাগলো। একটু খানি বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটার পর সরু রাস্তা অনেক গাছপালার মধ্যে দিয়ে গেছে। একটু পরেই ক্যানালের ধারে পৌঁছে গেল। পরিষ্কার টলটলে জল। ভীষণ ধীরে বয়ে যাচ্ছে। দু এক জন ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে বসে আছে। ওর খারাপ লাগছিল না, বরঞ্চ খুব উপভোগ করছিল। আধ ঘন্টার মধ্যে আকাশ মেসে পৌঁছে গেল। মেসের কাছে পৌঁছেই দেখল সেই সকালের মেয়েটা সে সিঁড়িতে বসে আছে। তখনই ওর সকালের দেখা পেট মনে পড়ল। মেয়েটার মুখের তিল মনে পড়ল। আরও মনে পড়ল ও কতদিন কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি।

আকাশ মেসের কাছে পৌঁছতেই সুনিতার কাছাকাছি পৌঁছে ঘরে ঢোকার আগে একটু দাঁড়িয়ে গেল। সুনিতার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল, সুনিতাও হাসল। তারপর আকাশ কিছু না বলে ঘরে ঢুকে যায়। সুনিতার বেশ ভালই লাগে ওর হাসি দেখে। সারাদিন পর আকাশকে আবার দেখে মনের মধ্যে বেশ একটা চনমনে ভাব আসলো। কিন্তু বুঝতে পারল না কেন ভালো লাগছে। অদ্ভুত ব্যাপার, ভালো লাগছে কিন্তু কেন ভালো লাগছে জানে না। ও দেয়ালে হেলান দিয়ে দু পা সামনে ছড়িয়ে বসে ছিল। বা হাত টা মাথার পেছনে আর ডান হাত পেটের ওপর রাখা। মুখ নির্লিপ্ত, কোন অনুভুতির প্রকাশ নেই। একদৃষ্টে সামনের অন্ধকার হয়ে আশা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু দেখছে না। চোখ খোলা কিন্তু মন বন্ধ। মন শুধু নতুন ছেলেটার কথা ভাবছে। বোঝার চেষ্টা করছে কেন ওর এই ছেলেটাকে ভালো লাগছে।

আকাশ ফ্রেস হয়ে একটা গেঞ্জি আর পায়জামা পড়ে বেরিয়ে আসে। হাতে বই, বাইরের চেয়ারটাতে বসেই সামনে তাকা। দেখে সেই মেয়েটা বসে আছে কিন্তু মনে হচ্ছে মেয়েটা ওকে দেখেনি বা খেয়াল করেনি। আকাশ চুপ করে বসে কিছুক্ষন মেয়েটার পবিত্র সৌন্দর্য দেখতে থাকল। আবার ওর চোখ মেয়েটার পেটের ওপর পড়ল। সমান চকচকে পেট, চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে, কিন্তু ওই পেট একদম নিস্পাপ। কোন সেক্সের প্রলোভন নেই, তাও ভালো লাগছে। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে দেখে বইটা খুলে পড়তে গেল। কিন্তু বইয়ে মন বসল না। আবার তাকাল মেয়েটার দিকে। একই ভাবে বসে আছে। এমন সময় ওর ভাই মীনা বেরিয়ে এসে আকাশ কে দেখে এগিয়ে এলোকিছু মালায়ালম ভাষায় বলেই তারপর ইংরাজিতে জিজ্ঞাসা করল আকাশ কি করছে। ভাইয়ের কথা শুনে সুনিতার ধ্যান ভেঙ্গে গেল। চোখ আর মন দুটোই মেলে দেখল সামনে সে বসে আছে যাকে নিয়ে এতক্ষন ভাবছিল। লজ্জা পেয়ে গেল যেন সবাই বুঝতে পেরে গেছে ও কি ভাবছিল।

মীনা আকাশের হাত ধরে দিদির কাছে নিয়ে আসতেই সুনিতা একটু সংকোচ বোধ করে। একটু গুটিয়ে গিয়ে মুখ তুলে বসে। মীনা এসে আকাশকে বলে, “দেখো এ আমার দিদি। আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমার দিদি সবথেকে সুন্দর দেখতে”।

আকাশ মীনাকে বলল ওর দিদি খুব সুন্দর দেখতে। সুনিতা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। আকাশ সোজা সুনিতাকে বলল, “সুন্দর মেয়েদের, সুন্দর বললে লজ্জা পেতে নেই। আমি তোমাকে সকালেও সুন্দর বলে গেছি। আর আমার নাম আকাশ, মানে sky, কোলকাতা থেকে এসেছি। তোমার নাম কি”?

সুনিতা চুপ করেই থাকল। মীনা বলল ওর দিদির নাম সুনিতা। আকাশ জিজ্ঞাসা করল, “দিদি তুমি কি কথা বলতে ভুলে গেছ? সকালে তো বেশ মায়ের সাথে কথা বলছিলে”।

এবার সুনিতা বলল, “না কথা বলতে ভুলিনি, কিন্তু একটু অন্য কথা ভাবছিলাম তাই চট করে কিছু বলতে পারিনি, দুঃখিত”।
আকাশ বলল দুঃখিত হবার কিছু নেই। এইরকম হয়েই থাকে। তারপর দুজনে কিছু কথা হ। সুনিতা কি করে আর আকাশ কি করে, কেন এসেছে সব বলা হল। তারপর আকাশ গিয়ে বই পড়তে লাগলো। সুনিতা বসে বসে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। ও মনে করতে চেস্টা করল এর আগে রোজ সন্ধ্যেবেলা এই সময়টাতে কি করতো। কিন্তু কিছুই মনে পড়ল না। একটু বসে থেকে উঠে পড়ল। এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো। ওর মন চাইছিল আকাশ ওর সাথে গল্প করুক। কিন্তু সে তো নিজের বইয়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। সুনিতা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না একটা বইয়ের মধ্যে কি থাকতে পারে যে ওর সাথে কথা না বলে ওকে এইভাবে উপেক্ষা করতে হবে। এদিক ওদিক ঘুরে সুনিতা এসে আকাশের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকল। আকাশ পড়া থামিয়ে একটু উঠতে গিয়েই দেখল সামনে সুনিতা। হেঁসে জিজ্ঞাসা করল কি দেখছে। সুনিতা বলতে গেল তোমাকে দেখছি, কিন্তু বলতে পারলনা। জিজ্ঞাসা করল, কি বই পরছ এটা মন দিয়ে”?

আকাশ তখন পড়ছিল এরিখ মারিয়া রেমার্ক –এর লেখা “Three Comrades”  বা “তিন বন্ধু”। ও বইটার নাম বলল সুনিতাকে। আরও বলল, “এই বইটা আমার একটা খুব প্রিয় বই। প্রেমের গল্প – প্রেম আর বন্ধুপ্রীতি নিয়ে এইরকম গল্প আমি আর একটাও পড়িনি”

সুনিতা জিজ্ঞাসা করল, “তোমার কি প্রেমের গল্প পড়তে ভালো লাগে”?

আকাশ বলল, না শুধু প্যানপ্যানানি প্রেমের গল্প পড়তে ওর একটুও ভালো লাগে না। কিন্তু এই বইটাতে যেমন “রবার্ট লকাম্প” আর “প্যাটরিস হোলম্যান” এর ভালবাসা আছে তার সাথে রবার্ট “লেনতাস” আর “ওটো” এর বন্ধুত্ব খুব ভালো ভাবে আছে। ওদের এই বন্ধুত্ব ওকে এই বইটা বার বার পড়তে উতসাহ দেয়। সুনিতা ওকে বলল বইটা ওকে দিতে পড়ার জন্যে। আকাশ বলল, “কিন্তু এই বইটাতো বাংলাতে অনুবাদ করা আর তুমি নিশ্চয়ই বাংলা পড়তে পার না”।

সুনিতা বলল, “না আমি বাংলা পড়তে পারিনা, তবে তুমি পুরো গল্পটা আমাকে পড়ে ইংরাজিতে অনুবাদ করে বলে দাও”।

সুনিতা আরও বেশী কি করে আকাশের কাছে থাকা যায় তার বাহানা খুঁজছিল। আর এইরকম একটা সুযোগ কোন প্লান ছাড়া এসে যাওয়াতে খুব খুশী হ মনে মনে। আকাশ যদিও চাইছিল না এত বিরক্তিকর একটা কাজ করতে, কিন্তু ভাবল খারাপ কি একটা সুন্দর পেটের মেয়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা তো বলা যাবে। তার ওপর প্রেম নিয়ে কথা, খারাপ লাগবে না। কিন্তু সুনিতাকে নিয়ে আকাশের চিন্তা কিছুতেই সুনিতার পেট ছাড়া আর কোথাও যাচ্ছিল না। অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, তাই আর বেশী বাইরে একটা নতুন ছেলের সাথে কথা বললে, মা বকবে, এই ভয়ে সুনিতা ঘরে চলে যাবে বলল। আকাশও বলল, “যাও ঘরে যাও। আর তোমার ঠোঁটের নিচের তিলটা আরেকটু বড় হলে তোমাকে আরও বেশী সুন্দর লাগবে”।

আকাশ সারাসময় ধরে দেখছিল পেট কিন্তু কথা বলল ঠোঁট নিয়ে।

আকাশ ঘরে ঢুকে বাকিদের সাথে কথা বলে আর রুটিন কাজগুলো করে ঘুমিয়ে পড়ল। ও চেস্টা করে রাত ১০টার মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে পরতে। তরে ও সকালে মানে ভরে উঠতে পারে আর সুন্দর সকাল টা দেখতে পারে। ও রোজ সূর্যের রাতের অন্ধকার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা দেখতে খুব ভালো লাগে। আর চায় ওর জীবনে যদি কখনো কোন অন্ধকার রাত্রি আসে তবে ও যেন এই সূর্যের মত সব কিছু ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে।

সুনিতা রাত্রে খেয়ে শুয়ে পড়ে বার বার ভাবছিল আকাশের কথা। ও যে আকাশের কথা ভাববে এটাই তো নিয়ম। ওর সাথে তো আজ পর্যন্ত অনেকের দেখা হয়েছে, ঘনিস্টতাও হয়েছে। কিন্তু সেই সব তো আর এই গল্পে আসছে না। কারণ সেই ঘটনাগুলোর কোন প্রভাব নেই সুনিতার জীবনে। ও যদি আকাশের কথা নাই ভাববে আমরা এই গল্পে আকাশকে আনব কেন! তো সুনিতা আকাশকে নিয়ে ভাবছিল। ভাবছিল কেমন বিনা সংকোচে ওই গল্পটার প্রেমের কথা বলে গেল। সুনিতার প্রেমের কথা ভাবতে লজ্জা লাগে, ওর কাছের বন্ধুরা যখন প্রেমের কথা বলে তখনও ওর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কিন্তু আকাশ কেমন নির্দ্বিধায় ওকে প্রেমের কথা বলে দিল। সুনিতা আরও আশ্চর্য হল যে ও কিভাবে আকাশকে গল্পটা পড়ে শোনাতে বলল। কিন্তু মনে মনে খুব খুশী হল আকাশের সাথে প্রেমের কথা হওয়াতে। আবার ভাবতে লাগলো কেন খুশী হল। ভাবতে ভবাতে এক সময় মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল। ঘুমিয়ে গিয়ে স্বপ্ন দেখছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সেই রাতে ওর স্বপ্নে আকাশ এসেছিল।

সুনিতা সকালে বন্ধুদের সাথে প্রেমিক প্রেমিকারা সিনেমাতে কি করে সেই নিয়ে কথা বলছিল। সুতরাং স্বপ্নে ও দেখল আকাশের সাথে মালামবুলা* ড্যামের ওপরে আর তার সামনের বাগানে নাচছে। ড্যামের জলাধারের ওপরে সূর্য উঠছে আর ওরা একে অন্যের আলিঙ্গনে ধরা পড়ে গেছে। আকাশ গভীর যত্নে ওর গালে চুমু খেল, তারপর ওর ঠোঁটের ওপর একটা আঙ্গুল রেখে খেলা করতে লাগলো। ওর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেতে লাগলো। কিন্তু ঠোঁটে চুমু খেতে কেমন লাগলো সেটা বুঝতে পারল না। তারপর আকাশের হাত ওর বুকের ওপর পরতেই চমকে উঠল। চোখ খুলে দেখে ও মাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে আর মায়ের হাত এসে ওর গায়ে পড়েছে। সুনিতার ভীষণ মন খারপ হয়ে গেল।

 *আসলে ড্যাম তার নাম Malampuzha, মালয়ালম ভাষায় ওর উচ্চারন একটু অন্য রকম। এই zha বাংলাতে লেখাও যায়না আর আমরা উচ্চারণও করতে পারিনা। তাই মালামবুলা লেখা।

খুব সকালে উঠে ও বাইরে বেরিয়ে পূর্ব দিকে মুখ করে বসে থাকল। ওদের ঘরের সামনে বেশ কিছুটা খালি জায়গা আছে, সবুজ ঘাসে ভরা। সেখানে শুধু একটা মেহগনি গাছ। ও সেই গাছে হেলান, দু পা সামনে ছড়িয়ে দিয়ে ঘাসের ওপর বসে। বাঁ হাত মাথার পেছনে আর ডান হাত পেটের ওপর। ওর এইভাবে বসাই অভ্যেস আর সবসময় এই ভাবে বসেই থাকে। কিন্তু ও জানত না ওকে এইভাবে দেখলে যেকোনো ছেলে পাগল হয়ে যেতে পারে। আমাদের আকাশও সকালে উঠে বাইরে এসে দেখে সুনিতা সামনে বসে আছে। ও কাছে যেতেই ওইভাবে বসে থাকতে দেখে স্বাভাবিক ভাবে পাগল হয়ে গেল। মানে আক্ষরিক অরথে পাগল হল না কিন্তু মনে একটু রঙের ছোঁয়া লাগলো। ও কিছু না বলে সুনিতার পাশে গিয়ে বসল আর বলল, “আশা করি তোমার সকাল ভালো আছে”।

সুনিতা চমকে উঠে, কেন যে ছাই আকাশের কথা সুনলেই বা দেখলেই চমকে ওঠে কে জানে, বলল ভালই আছে আর ও কেমন আছে। তারপর খেয়াল করল আকাশ কত কাছে এসে বসেছে। ওর রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ল। এখানে ওরা দুজন একসাথে আছে, সূর্য আছে, শুধু ড্যামের জল নেই। ওর মনটা রোমান্টিক হয়ে গেল। কিছু না বলে দুজনেই সূর্যোদয় দেখতে লাগলো। সুনিতা যে কখন আকাশের গায়ে নিজেকে একটু এলিয়ে দিয়েছে বুঝতে পারেনি। ও সূর্যোদয়ের সাথে রাত্রের স্বপ্ন মিসিয়ে ফেলেছিল। সুনিতার শরীর নিজের ওপর আসাতে আকাশ একটু বিস্মিত হয়ে গেলেও পরিবেশ ভালো লাগছিল তাই কিছু না বলে সুনিতার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বসে প্রাকিতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষন পড়ে মীনার ডাকে দুজনেরই ঘোর কেটে গেল। সুনিতা অপ্রস্তুত হয়ে আকাশের হাত ছাড়িয়ে উঠে গিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। হটাত শরীরের সব রক্ত ওর মুখে এসে পড়ল। মীনা কি করছিল জিজ্ঞেস করাতে ও বলল যে সূর্যোদয় দেখছিল। মীনা বলল, “রোজই তো দেখিস কিন্তু কোনদিন তো সূর্যের লাল রঙ তোর গালে আসে না”!

সুনিতা ঘরে চলে গেল কোন উত্তর না দিয়ে। আকাশ আরও একটু বসে থেকে ঘরে গিয়ে অফিস যাবার জন্য তৈরি হতে লাগলো। পরে অফিস যাবার জন্য বেরিয়ে দেখে সুনিতা বসে আছে। ওকে দেখে সুনিতা কাছে এসে সকালের জন্য দুঃখিত বলল। আকাশ বলল, “দুঃখিত কেন হবে, আমার তো সূর্যোদয় দেখতে ভালই লাগে আর আজকের সূর্যোদয় ওর সাথে আরও বেশী উপভোগ করেছে”।
তারপর আকাশ আবার আকাশের দিকে হেঁটে চলে গেল।

সকাল ১১টা বাজতেই সুনিতা চলে গেল ক্যানালের ধারে। বন্ধুদের সব কিছু বলে আবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ও বলল সকালে যখন আকাশ ওর হাত ধরেছিল, প্রথমে তো ও নিজের স্বপ্নের মধ্যে ছিল, ও বুঝতেই পারেনি আকাশ ওর হাত ধরেছে। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারল তখন ওর মনে হচ্ছিল ও আকাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, আবার মনে হচ্ছিল ও নেই – স্বর্গে পৌঁছে গেছে, আবার কি যে ভালো লাগছিল কিছু বোঝাতে পারবে না। লতা জিজ্ঞাসা করল আকাশ ওকে চুমু খেয়েছে কিনা। সুনিতা আবার লাল হয়ে বলল, “যাঃ, না না, আমাদের শুধু কাঁধে কাঁধ থেকেছিল আর ও কখন যেন আমার হাত ধরে নিয়েছিল। আরেকটা জিনিস দ্যাখ স্কুলে বা পাড়ায় ছেলেরা তো কতই আমাদের হাত ধরে বা গায়ে হাত দেয়, তাতে কিন্তু কোনদিন আমার এইরকম মনে হয় নি”।

লতা বলল, “দ্যাখ অনেক ছেলেই আমার পাছা তে বা দুদুতে হাত দিয়েছে, কিন্তু সব সময় আমার খুব মজা লেগেছে। তোর এইরকম শুধু কাঁধে কাঁধ ছুঁয়ে যাওয়াতেই যা হচ্ছে, সেইরকম কিছুই মনে হয়নি”

দিব্যা বলল যে লতাকে কেউ যখন ছুয়েছে তখন সেটা শুধু শারীরিক ছিল তাই মনে কোন ছাপ ফেলেনি। কিন্তু সুনিতার মন তো আগে থেকেই ছুঁয়ে গেছে, তাই একটু আকাশের ছোঁয়া ওর মনে দাগ কেটেছে, সেই জন্যেই সুনিতার এই অবস্থা। তিনটে মেয়েই এই আবিস্কারে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকল দুজনেই। সুনিতা তখন লতা আর দিব্যাকে জিজ্ঞ্যাসা করল ওদের মা আর মাসী ভালবাসা নিয়ে কি বলল। লতার মা একজন বয়স্কা সাধারণ গৃহবধূ। লতা ভালবাসা কারে কয় জিজ্ঞাসা করতেই মা ওকে একটু বকা দিল যে এসব আবার কি প্রশ্ন। আরও বলল যে উনি লতাকে ভালোবাসে সেটাই ভালবাসা। লতা বুঝল না কারণ উনি বোঝার মত কিছুই বলেননি। লতা জিজ্ঞ্যাসা করল যে মা ওর বাবাকে কিভাবে ভালোবাসে। সেই ভালবাসা নিশ্চয়ই ছেলে বা মেয়েকে ভালবাসার থেকে আলাদা। ওর মা গভীর চিন্তায় পরে গেছিলেন। অনেক পরে বললেন যে ওর বাবা মকে ভালবেসেছে বলেই লতার জন্ম হয়েছে। আর সেটা ছাড়া ওর মা জানে বাবা কি খেতে, পড়তে, কোথায় যেতে পছন্দও করে আর উনি সবসময় চেষ্টা করে যা যা ওর বাবার ভাললাগে সেটাই করতে। ওর বাবাও ওর মায়ের পছন্দও বা অপছন্দ খেয়াল রাখে। লতা জিজ্ঞ্যাসা করল ওরা যা যা করে সেটা কর্তব্য হিসাবে না মনের আবেগে। কিন্তু ওর মা বুঝতেই পারলেন না কর্তব্য আর আবেগের মধ্যে পার্থক্য কোথায়। উনি বিয়ের পর ওনার মা যা যা করতে বলেছিলেন উনি সেই ভাবেই করে এসেছেন। কিন্তু উনি কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না যে উনিও যেটা কর্তব্য হিসাবে শুরু করেছিলেন সেটাই কিছুদিন পরে ওনার আবেগ হয়ে গেছে।

দিব্যার মাসী অনেক কম বয়সের। ভালবেসে বিয়ে করেছে। উনি বলেছেন যে কয়েকজন বিশেষ ছেলেকে দেখলে ওনার মনের মধ্যে গান বেজে উঠত। ওই বিশেষ কিছু ছেলেকে ওনার বেশী করে দেখতে ইচ্ছা করতো আর ওদেরকে বার বার দেখতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু ওই ছেলেদের উনি বেশ কিছুদিন ধরে চিনতেন আর ওদের সাথে মেশার পরে ওনার সেইসব মনে হয়েছে। তারপর উনি দেখেছেন যে ছেলেটা ওর সবথেকে বেশী খেয়াল রাখত আর সব সময় সাহায্য করতো তাকেই মনের সাথী হিসাবে বেছে নিয়েছে।

লতা বলল ও এক দিদির কাছে শুনেছে ছেলেরা চুমু খায় ঠোঁটে। একমাত্র স্বামী বা যে ভালোবাসে সেই ঠোঁটে চুমু খায়একজন স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে কোন কিছু ঢাকা থাকে না। স্বামী ইচ্ছা হলে স্ত্রীর সব জায়গায় হাত দিয়ে আদর করতে পারে আর স্ত্রীও স্বামীকে আদর করতে পারে। তবে এখন অনেকেই বিয়ের আগেই বা স্বামী-স্ত্রী হওয়ার আগেই এইসব করে। এতক্ষনে সুনিতা বলে উঠল তাহলে ছেলেটা আমার বুকে হাত দেবে ? লতা বলল, দেবেই তো আর শুধু হাত দেবে না খুলেও দেখতে চাইবে। সুনিতা বলে উঠল, না বাবা না, সেইসব করলে ও লজ্জায় মরেই যাবে। লতা বলল এতেই লজ্জা পেয়ে গেলি, তোর নীচে প্যান্টের মধ্যে হাত দিয়ে যখন আদর করবে তখন কি করবি। সুনিতা বলল, ছিঃ আমি কারো সামনে প্যান্টই খুলবই না। দিব্যা জিজ্ঞ্যাসা করল প্যান্ট খুলবি না তো সঙ্গম কি করে করবি। সুনিতা বলল অন্ধকারে করবে। লতা ওর ওই দিদির কাছে শুনে এসে বাকি দুই বন্ধুকে সেক্স সম্মন্ধে কিছু জ্ঞ্যান বিতরন করেছিল প্রায় এক বছর আগে।

সুনিতা বলল ও আর এইসব শুনতে পারছে না। ও আবার কাল শুনবেএখন বাড়ি যাবে। ওদের আড্ডা ভেঙ্গে গেল। লতা মনে করিয়ে দিল সেদিন শুক্রবার। রবিবারের মাত্র একদিন বাকি।

শনিবার সকালেও সুনিতা আর আকাশ একসাথে সূর্য ওঠা দেখল। কিন্তু সেদিন সুনিতা একটু দূরে বসেছিল। যাবার সময় আকাশ বলে গেল সেদিন কার সূর্যোদয় ওর অতো ভালো লাগলো নাসুনিতা জিজ্ঞ্যাসা করল আকাশ কবে থেকে গল্পটা পড়ে শোনাবে। আকাশ বলল পরদিন রবিবার সকালে ওকে অনেকটা পড়ে শোনাবে। কিন্তু সুনিতার মা ওকে বকবে না তো। সুনিতারও সেই চিন্তা হচ্ছিল, কি ভাবে মাকে বোঝাবে। ওদের আরেকটা অসুবিধা হচ্ছিল, সেটা হল দুজনের কেউই ভালো ইংরাজি বলতে পারে না। অনেক ভেবে চিন্তে বলতে হয়। আকাশ একটু বাইরে থাকার জন্য টাও কিছু ইংরাজি জানে। কিন্তু সুনিতা কোনদিন কেরালা ছেড়ে বাইরে যায়নি। সুতরাং ওর পক্ষে সবকিছু ইংরাজিতে বোঝা বা বোঝানো দুটোই কঠিন। তাও এই দুদিনের সাধারণ কথা ম্যানেজ করেছে। আকাশের চিন্তা ও কি করে “তিন বন্ধু” ইংরাজিতে বোঝাবে।    

     
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply


Messages In This Thread
সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 28-06-2021, 12:11 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 28-06-2021, 12:29 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 01:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by TumiJeAmar - 29-06-2021, 02:10 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 29-06-2021, 02:30 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 29-06-2021, 05:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 01-07-2021, 01:35 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 02-07-2021, 05:55 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 05-07-2021, 10:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 07-07-2021, 04:03 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Kallol - 07-07-2021, 07:13 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:14 AM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:53 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 03:54 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:44 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:45 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:47 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:48 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:49 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 05:51 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 06-01-2022, 10:09 PM
RE: সুনিতা মাতা - by Siraz - 06-01-2022, 10:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 30-03-2022, 01:15 PM
RE: সুনিতা মাতা - by ddey333 - 09-01-2023, 07:05 AM
RE: সুনিতা মাতা - by S_Mistri - 09-01-2023, 10:10 AM
RE: সুনিতা মাতা - by kourav - 12-01-2023, 07:38 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)