Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.07 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller রক্তমুখী নীলা (সমাপ্ত)
#56
অনন্ত জলরাশির ওপর দিয়ে আমরা তীর বেগে এগিয়ে চলেছি। জাহাজের একদম সামনে রেলিঙের ওপর দাঁড়িয়ে মিত্রা ও আমি দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে দিয়েছি। যেন ডানা মেলে উড়ে চলেছি আমরা। তীব্র বেগে বাতাস এসে আমাদের শরীরের ওপর আছড়ে পরছে । মিত্রা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতের আঙুলের ওপর আমার আঙুল নিয়ে মুঠো করে নিয়েছি। দুজনের ঠোঁট এগিয়ে এসে ভালোবাসার চুম্বনে আবদ্ধ হয়েছে। সময় যেন থেমে গেছে আমাদের চারপাশে। বুকের ভিতর ধুকপুকানি ছাড়া কোন শব্দই কানে যাচ্ছেনা।
হঠাৎ পিঠের কাছ থেকে একটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করলাম। যন্ত্রনাটা পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে নাভির কাছ থেকে যন্ত্রনাটা বেরিয়ে একটা আঃ চিতকারের সাথে সাথে মিত্রার শরীরে প্রবেশ করলো। সেই সঙ্গে তীব্র বেগে যন্ত্রনাটা তীব্র বেগে যে পথে এসেছিলো সেইপথে বেরিয়ে গেলো। মিত্রার জলভরাচোখ লাল হয়ে গেছে। একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে একটা হেঁচকা টানে মিত্রার থেকে আলাদা হয়ে গেলাম আমি। পরে গেলাম নীচে। কেউ বোধহয় আমার পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মিত্রাও পরে গেছে, ওর পেটের কাছটা তাজা লাল রক্তে রাঙা হয়ে আছে। ওকে কেউ নিয়ে আসছেনা, ওকে যেন আমার থেকে দূরে করে দিচ্ছে কেউ। হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। মিত্রাও হাতটা বাড়িয়ে দিলো। দুজনের আঙুলের ডগা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলো। তীব্র চিৎকার আমার গলা থেকে বেরিয়ে এলো। মিত্রাআআআআআআআআআ......


এই, এই কি হয়েছে তোমার এই সোনা ওঠো রাজ প্লিস ওঠো। কি হয়েছে তোমার। 
ধড়পড় করে উঠে বসলাম। সামনে মিত্রা দাঁড়িয়ে, বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। আঃ শান্তি, বুকের ধুকপুকানি অনেকটা কমলো।
-- কি হয়েছে তোমার, আমার নাম করে চেঁচাছিলে কেন।
কিছুই বললাম না নীরবে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলাম। মিত্রার শরীরের ওমে নিজেকে চাঙ্গা করে নিলাম। 
-- এই, এবার ছারো কেউ এসে পরবে, তুমি ওঠো অনেক বেলা হলো।
মিত্রার কপালে একটা চুমু খেয়ে ওকে ছেড়ে দিলাম। লাফাতে লাফাতে চলে গেলো ও। উঠে পড়লাম, উফঃ কি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন।

গামছাটা কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বেরুতে যাবো মা হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এলো। 
-- বাবু সর্বনাশ হয়ে গেছে, গার্গীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ওর মা তোর বাবাকে ফোন করলো এইমাত্র। এ নিশ্চয়ই ওই লোকটার কাজ। একটু কি শান্তিতে থাকতেও দেবেনা। কি লাভ ওদের এই নোংরা খেলা খেলে।

মাথাটা ঘুরে গেলো। ম্যাডামকে তুলে নিয়েছে? আমারই দোষ এখানে আসার পর একবারো খোঁজ নিইনি ওনাদের। না, এই ভুলের মাশুল আমাকেই শোধ করতে হবে। আমি যাবো যেখানেই থাকুক ওনাকে নিয়ে আসবো। গামছাটা রেখে প্যান্ট জামাটা নিয়ে পড়ে ফেললাম। 
-- তুই কোথায় যাচ্ছিস? 
-- আমায় একটু যেতে হবে মা। আমার জন্যই আজ ম্যাডামের এই দুর্ভোগ।
-- না এ হতেই পারেনা তুই কি পাগল হয়েছিস আমি তোকে কিছুতেই যেতে দেবোনা।
-- না মা আজ বাধা দিও না। আজ আমায় যেতেই হবে।
-- না না আমি কোন কথাই শুনবোনা একবার তোকে হারিয়ে ফিরে পেয়েছি। আর হারাতে চাইনা। 
মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু আমি নিরুপায়। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে। বাইরে এসে দাঁড়াতেই মিত্রা এগিয়ে এলো। কিছু হয়তো বলতে চাইলো, পারলোনা। কাছে এসে আমার বুকে হাত দিয়ে বললো কথা দাও তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে।
-- কথা দিলাম। কেউ আমাকে তোমার কাছে আসতে রুখতে পারবে না।

একে একে সবাই বারণ করলো আমি কারোর কথাই শুনলাম না। হয়তো জীবনের চরম ভুলটা করতে চলেছি। কিন্তু এটা যে আমায় করতেই হবে।

ছুটে চলেছি দূর্গাপুর হাইওয়ে ধরে কোলকাতার দিকে সোজা বিরায় যাবো প্রথমে। ম্যাডামকে আমায় খুঁজে বার করতেই হবে। মোক্তারদাদু, বাবা দুজনে আমার কোন কথাই শোনেন নি। আমায় একা কিছুতেই আসতে দেবেনা। বাড়ীর দায়িত্ব তাই মুক্তর ওপর দিয়ে ওরা দুজনে আমার সাথেই চলেছে। সাথে কিছু লোকজনকেও নিয়েছে।
পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাড়ীতে ঢুকে খেয়াল করলাম পুরো বাড়ি অন্ধকার। দিদা দিদা বলে দুবার ডাকলাম। পাশের ঘর থেকে একটা গোঙানি কানে এলো। ছুটে পাশের ঘরে গেলাম। দিদা মেঝেতে অর্ধঅচৈতন্য পরে আছে। জলের গ্লাস থেকে জল নিয়ে দিদার মুখে ছিটিয়ে দিলাম। চোখ মেলে চাইলো দিদা। 
প্রথমটায় একটু হতভম্ব হয়ে গেছে। হঠাৎ আমায় চিনতে পেরেই চিতকার করে কেঁদে ফেললো -- দাদুভাই আমার মেয়েকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে। কত মিনতি করলাম একটা কথাও শুনলোনা ওরা।
চোখে জল চলে এসেছিলো আমার। নিজেকে শক্ত করলাম - শান্ত হও দিদা শান্ত হও। আমি ফিরিয়ে আনবো ম্যাডামকে। তার আগে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও দিদা। ওরা কি করতে এসেছিলো এসে কি বলছিলো ওরা। 
-- তোকে চাইছিলো ওরা দাদুভাই। বারবার তোর নাম নিচ্ছিলো। অনেক অনুনয় বিনয় মিনতি করলাম তবু আমার কোন কথাই শুনলোনা। 
-- আর কিছু বলছিলো ওরা। কোন কিছু কি তুমি শুনেছো। 
-- আমি আজই হসপিটাল থেকে ফিরেছি সকালে। এসে মায়ে বেটিতে বাইরের ঘরে বসে তোর কথাই আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ একটা লাল গাড়ি এসে আমাদের বাড়ীর সামনে দাঁড়ালো। চার পাঁচজন বেরিয়েই ঘরে ঢুকে আমাদের শাসাতে লাগলো। বারবার একটাই কথা রাজেন্দ্র কোথায়। আমরা কিছুই জানতাম না। বোকার মত চুপ করেই ছিলাম। তারপর আর কোন কথা হয়নি। আমার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলো। 
হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো দিদা।

মাথায় আগুন জ্বলে গেলো। এক্ষুনি ওদের পেলে ছিঁড়ে খেয়ে নেবো। উঠে পরলাম দিদাকে পাঁজাকোলা করে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম কাত করে। পিছনের সেইদিনের ছুরি মারার আঘাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। বিনা অপরাধে এদের শাস্তি পেতে হলো শুধু আমার জন্য। বাইরে বেরিয়ে এলাম এখানে লোকালয় এত কম যে পাশের বাড়ীর বিপদে সবাই মিলে যে ঝাঁপিয়ে পরবে সে সংখ্যাও কম। তবু আশা ছারলে চলবে না। দিদার বাড়ির ঠিক পাশের বাড়ির দিকে এগোলাম। দুজনের সাথে আমার একটু পরিচয় আছে এক বৃদ্ধ মহিলা অন্যজন এক ছোট্ট মেয়ে আগের বার যখন এসেছিলাম তখন খুব ছোট ছিলো। এই বাড়ির দিদার সাথে গল্প করতে খেলা করতে  যেতো। বাড়ির করিডোরের কাছে এসে জানালা দিয়ে একটা মুখ সুরুত করে সরে গেলো খেয়াল করলাম। দ্বিধা করলে চলবেনা। সোজা দরজায় গিয়ে টোকা মারলাম। দুতিনবার মারার পর দরজা খুললো একজন ভদ্রলোক। 
-- কি চাই?
-- নমস্কার, দেখুন আপনাদের পাশের বাড়ীতে যিনি থাকেন তারা আমার বিশেষ পরিচিত। আজ সকালে একটা ফোন পেয়ে আমরা আসি। জানতে পারি কারা যেন ওনার মেয়েকে অপহরণ করেছে। দয়া করে যদি কিছু জানেন দেখে থাকেন বলবেন? খুঁজে বার করার মত কোন রাস্তা যদি পাওয়া যেতো। 
-- আমি ওসব জানিনা, আমি কিছু দেখিনি। আপনি যান এখান থেকে। বিরক্ত করবেন না।

ভারি অদ্ভুত লোকতো। মুখে কিছু বললাম না। বেরিয়ে চলে আস্তে যাচ্ছি হঠাৎ সেই বৃদ্ধ মহিলার ডাকে মুখ ফেরালাম।
[+] 4 users Like HASIR RAJA 19's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রক্তমুখী নীলা - by HASIR RAJA 19 - 28-06-2021, 06:56 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)