Thread Rating:
  • 13 Vote(s) - 3.15 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica গুহ্য দ্বারের গুপ্ত কথা by Podbilasi
#11
পর্ব – ৫

কালকে ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা! ব্যস, এই একটা পরীক্ষা মিটে গেলেই শেষ! আগের সব পরীক্ষা বাসন্তীর খুব ভাল হয়েছে, এটারও প্রস্তুতি যথেষ্ট ভাল, কাজেই টেনশন নেই তেমন! এই কদিন পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে আগের সেই উত্তেজনাটা অনেক কমেছে! কিন্তু একটা অন্য উত্তেজনা মনের মধ্যে বাসা গেরেছে, কাল পরীক্ষা হলেই মাধ্যমিকের পালা শেষ, ছুটি শুরু!! উফফ কি মজা!!

ইনভিজিলেটারগুলো বেশ কড়া ধাতের, ৭-৮ জনকে টুকতে গিয়ে ধরেছে, এবং তাদের ওই পেপার বাতিলও করেছে! বাইরের থেকে কয়েকটা ছেলেপুলে ঝামেলা পাকাতে এসেছিল এই ব্যাপারটা নিয়ে, কিন্তু করিমগঞ্জে এখনও বেয়াদপি তেমন জাঁকিয়ে বসতে পারেনি, পুলিশ আর শিক্ষকরা ছেলেগুলোর বিরুদ্ধে একশান নেবার আগেই পাড়ার লোকজনই বাইরের ছেলেগুলোকে উত্তম মধ্যম দিয়ে থানায় তুলে দিয়েছে আর মজার কথা এইসব পাড়ার লোকেদের মধ্যে যারা টুকতে গিয়ে ধরা পড়েছে তাদের বাবারাও ছিল! ওরা নিজেদের ছেলেদেরও টোকার জন্যে বেদম কেলিয়েছে!

কিন্তু বাসন্তীর দুরতম কল্পনাতেও ছিল না আজ কি হতে চলেছে, যা ছিল প্রত্যাশিত, আজকের ঘটনা সেই ধরা বাঁধা ছককে যে এমনভাবে তছনছ করে দেবে তার সম্পর্কে বাসন্তীর কোনো ধারনাই ছিল না। পরীক্ষার হলে কোয়েশচেন পেপারটা হাতে নিয়ে বাসন্তীর চক্ষু স্থির! ১০ নম্বরের একটা প্রশ্ন এসেছে, যেটায় তাপবিদ্যুতের ওপর একটা অঙ্ক কসতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটা তো সিলেবাসে নেই! ওর স্পষ্ট মনে আছে, ওকে স্যার বলেছিলেন, বাসন্তী দেখল ওই প্রশ্নটা আবশ্যিক, অর্থাৎ করতেই হবে! ও আর অপেক্ষা না করে উঠে দাড়িয়ে ইনভিজিলেটার কে ব্যাপারটা জানাতে উনি ওই স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক কে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু কি সর্বনাশ! উনি স্পষ্ট জানালেন, চার মাস আগে কিছু অধ্যায় যোগ করা হয়েছে ভৌতবিজ্ঞানের সিলেবাসে, যার মধ্যে এই অঙ্কটা যে অধ্যায় থেকে দেওয়া, সেটাও পড়ে!

এ বাবা, কি হবে!! বাসন্তীর চোখ ফেটে জল গড়িয়ে আসছিল, এমন কপাল যে আজ ওর পিছনেই তায়েব বসেছে!! খানকীর বাচ্ছাটার দিকে তাকাতে গিয়ে দ্যাখে মালটা খুকখুক করে হাসছে!! দ্যাখে সর্বাঙ্গ যেন জ্বলে গেল বাসন্তীর!! শালা ওর গাঁড় মারা যাচ্ছে আর শুয়োরের বাচ্ছাটা মজা লুটছে!! বাসন্তী চুপচাপ বসে পড়ল পরীক্ষা দিতে!!

বাসন্তীর সবকটা প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়ে গেছে, কেবলমাত্র ওই দশ নম্বরেরটা ছাড়া, এখনো ঝাড়া পয়তাল্লিশ মিনিট বাকি পরীক্ষার শেষ ঘন্টা পড়তে! বাসন্তীর কান্না পাচ্ছে। একটু মুখ তুলে তাকাতে বাসন্তী দেখল ইনভিজিলাটারটা নাক ডাকিয়ে ঘুম দিচ্ছে, আর আসে পাশে সেই সুযোগে ছেলেপুলেগুলো পাতা চালাচালি করছে!! বাসন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন শক্ত করে উঠে পড়তে যেই উদ্যোগ নিয়েছে সেই মুহূর্তে পিছনে একটা স্কেলের খোঁচা খেল, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে তায়েবের হাতে একটা স্কেল ধরা!! বাসন্তী চোখ পাকিয়ে কিছু বলতে যাবে, তায়েব ওর দিকে ওর নিজের ঠোটে আঙ্গুল রেখে ওকে চিৎকার করতে মানা করল! তারপর চাপা স্বরে ওকে বলল – বাসু একদম চেল্লাবি না, এই পাতাটা ধর আর চুপচাপ টোক!! ওতেই উত্তরটা করা আছে!

বাসন্তী (হিস হিসিয়ে) – তুই ভাবলি কি করে আমি টুকব, তাও তোর থেকে!! আমার চাই না তোর দয়া ভিক্ষা!!

তায়েব (ফিক করে) – তুই তো কি তোর বাপ নেবে!! বেশী নখরা করিস না! চুপচাপ টুকে নিয়ে পাতাটা জলদি ফেরত দে, আমায় খাতাটা বাঁধতে হবে! নইলে আমি ইনভিজিলেটরকে এমনিই বলব যে তুই আমার দদেখে টুকছিলি, ওই যে ইনভিজিলেটরটা নাক ডাকছে, ও কে জানিস?! আমার ফুপা হয়, কাজেই ও আমার কথাই বিশ্বাস করবে, বুঝলে গবেট!! নে নে টাইম নষ্ট করিস না!

বাসন্তী মনে মনে ভাবল এখন তায়েবের সাথে ও যদি কিছু করতে যায় তাহলে ওর কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে যাবে। চুপচাপ তায়েবের থেকে পেপারটা নিয়ে যা আছে তাই টুকে গেল! ২ মিনিটও লাগল না, শেষ করে ও পেপারটা তায়েবের হাতে ধরিয়ে দিল, কিন্তু সেই সাথে শেষ ঘন্টা পড়া অব্দি ও যা টুকেছে তায়েবের থেকে সেটা পাখি পড়ার মতন করে মুখস্থ করে গেল! তারপর ঘন্টা বাজতেই সোজা এক দৌড়ে হল থেকে বেরিয়ে স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরে এসে গাড়িতে উঠে পড়ল! মা আর চাঁপা কাকী বাসুর মুখ দেখে ভয় পেয়ে বলে উঠল – কি রে খারাপ হল নাকি??!!

বাসন্তী – নাঃ! ভাল হয়েছে, খালি খুব গরম ছিল হলে, ফ্যান চলছিল না লোডশেডিং এর জন্যে, তাই ঘেমে নেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি মা, উফফ চল চল জলদি বাড়ি চল, পরীক্ষা শেষ, এবার একটু জিরুতে পারব!!

সুলতা – ঠিক আছে বাসু, চল চল!! সত্যি তো কদিন খুব চাপ গেছে, গিয়ে স্নান করে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিস

এরপর কেটে গেছে বেশ কিছু দিন, এর মধ্যে বাসন্তী ওর মামার বাড়ি থেকে ১৫ দিন থেকে ঘুরে এসেছে, এইবার রেজাল্টের পালা, কাল বেরোবে!! খুব চিন্তা হচ্ছে, কি হবে!! রাত যেন কাটতেই চাইছে না। আকাশ পাতাল দুশ্চিন্তা করতে করতে হটাত মনে পড়ে গেল, তায়েবের কথা, ও সেদিন ওকে কোনো ভুল উত্তর টুকতে দেয় নি, কারন ও পুরো সমাধানটা মনে করে পরে এসে ওর প্রাইভেট টিচারকে বলেছিল!! উনি শুনে বলেছিলেন একদম ঠিক, কিন্তু আমি তো তোমায় এটা পড়াই নি, তুমি কি করে জানলে?!! বাসন্তী উত্তরে বলেছিল হল থেকে বেরিয়ে ও একজনের থেকে উত্তরটা জেনে ছিল, আসলে সত্যিটা বলার সাহস ওর ছিল না!! যে মেয়ে এই অঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে পরীক্ষায় প্রথম হয়, সে কিনা টুকেছে!! ওর পক্ষে এই কথাটা স্যারের সামনে স্বীকার করার সাহস ছিল না।

দেখতে দেখতে ভোরের আলো ফুটল, কাল বাসন্তীর সারা রাত ঘুম হয় নি, আজকে দুপুর বার টায় জানা যাবে মাধ্যমিকের ফল! বুকটা ধুকধুক করছিল, আর বাড়ির বাকি লোকেদের কথা না বলাই ভাল, বিশেষত দাদুর! যা হইচই করছে, দেখে বাসন্তীর আত্মারাম খাঁচাছাড়া!! আগের থেকেই মিষ্টির দকানে অর্ডার দিয়ে স্পেশাল মোহনভোগ আর সরপুরিয়া আনা হয়েছে, আবার একটু সকালে আস্ত একটা ৪ কিলর কাতলা মাছ কিনে এনেছে অনাদি! দেখতে দেখতে ঘড়িতে ১১ টা বাজলে বাড়ির সবাই একসাথে বেরল, বলা বাহুল্য স্করপিও গাড়িটা আগেই এসেছে, ওটাতেই সবাই মিলে রওনা দিল! স্কুলের সামনে আজ কি ভিড়, সবারই অভিভাবকরা এসেছে তাদের ছেলে বা মেয়ের সাথে! ইসস কি বিশ্রি অভিজ্ঞতা, এই বাবা-মারা অর্ধেক টেনশন বাড়িয়ে দেয় ছেলে মেয়েদের!! কাঁটায় কাঁটায় দুপুর বারো টায় সবাইকে স্কুলের মাইন গেট খুলে ভিতরে রাখা মস্ত বোর্ডের দিকে যেতে বলা হল, ওখানেই খুদে খুদে অক্ষরে নাম, রোল নম্বর, কত মার্ক্স, কটা লেটার এইসব লেখা আছে!! বাসন্তী আর সব্বার সাথে হুরমুড়িয়ে বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল!! ও প্রথম হয়েছে ওর স্কুলে, ৯৫.৭ শতাংশ নম্বর, এই স্কুল তো দূর এই জেলায় কেউ পায় নি বোধহয়, নির্ঘাত র্যা ঙ্ক করেছে! আর তারপরেই রয়েছে তায়েবের নাম!! ইসসসসসস!! একি!! ওর থেকে মাত্র ৬ নম্বর কম পেয়েছে তায়েব!! এর মানে তো একটাই! মুহুরতের মধ্যে ওর জিতে যাওয়ার পুরো আনন্দে কে যেন এক রাশ জল ঢেলে দিল!! এর মানে সেদিন ওই দশ নম্বরের উত্তরটা তায়েব ওকে না বললে আজকে ওর নামটা তায়েবের পরেই থাকত, ঠিক যেমন অনেক খাটার পর টেস্ট পরীক্ষায় ছিল!! তার মানে ও তো চিটিং করে জিতেছে, আসল বিজেতা তো তায়েব! এদিক ওদিক তাকাতে তায়েবের দিকে নজর পড়ল, কি আশ্চর্য, ওর মুখে হেরে যাওয়ার কোনও গ্লানি নেই!! বিন্দাস বন্ধুদের গলায় জড়িয়ে ধরছে, হা হা হি হি করে বেড়াচ্ছে! একজন ওকে দেখে টোন কাটল! কি রে বাসু তো তোকে টেক্কা মেরে বেরিয়ে গেল, গুরু এ তো দেখছি ওস্তাদের মার শেষ রাতে!!!

তায়েব – দূর বাল, আমি কোনকালে এসব পাত্তা দি নি, আমি ছেয়েছিলাম ৯০ পেরসেন্টের ওপর নম্বর, ওটা আমার দরকার ছিল, পেয়ে গেছি, আর আমি জানি তায়েব ওটার হকদারও! কাজেই আমি খুশ! তোরা মরগে যা রেস করে, আমি চললাম বাড়ি, রাতে আসিস, আজ কেউ নেই, দু পেটি হুইস্কি আনিয়েছি, খেয়ে জাশ, বাইরে থেকে কাবাব আনাচ্ছি, পারলে চলে আসিস!!

বাসন্তীর মনে হল আজকে ও সত্যি সত্যি হেরে গেল তায়েবের কাছে, ও এতটা আত্মাকেন্দ্রিক যে তায়েবকে সেদিনের পর থ্যাঙ্কস পর্যন্ত জানায়নি। বাসন্তী কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা তায়েবের দিকে এগিয়ে গেল।

বাসন্তী – তায়েব! কনগ্র্যাটস! সেদিন তুই হেল্প না করলে, আসলে মানে, তুইই তো ফার্স্ট হতিস! আমার তোকে অনেক আগেই থ্যাংকস বলা উচিত ছিল, পারলে ক্ষমা করিস!

তায়েব – একি রে!! শালা আজ তো তোর খুশির দিন, গলা খুলে চেল্লা, দিল খুলে হাস!! এসব সেন্টি দিস না মাইরি! একটা কথা অবশ্য বলব, তোর খারাপ লাগবে হেব্বি, তবুও বলব! তুই যদি মাইন্ড করিস তো আমার বাল ছেঁড়া গেল!! হি হি!!

অন্য সময় হলে তায়েবের এই ওপেন খিস্তি শুনে বাসন্তী ওকে হয়ত যা নয় তাই বলে দিত, কিন্ত আজ ওর এই প্রাণখোলা তায়েবকে খুব ভাল লাগছে! তাই কিচ্ছু বলল না! ওদিকে তায়েব ওর বাইকে কিক দিয়ে স্টার্ট দিয়ে গলাটা খাটো করে বাসন্তীর কানে ফিসফিসিয়ে একটা কথা বলল – ৯০ পারসেন্ট মার্ক্স ছাড়াও এই পরীক্ষায় আমার আরেকটা সাধ পূর্ণ হয়ে গেল রে, আমি শেষদিনকে প্রাণ ভরে তোর গাঁড় দেখছিলাম পিছনে বসে, মনে হচ্ছিল চেটে চুদে ফাঁক করে দি, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড, আমি দিল থেকেই কথাটা বললাম, তুই আমায় পরে প্রাণ ভরে খিস্তি দিয়ে নিস, চলি বাই, টাটা!! হি হি হি হি!!

বাসন্তী এতটাই থতমত খেয়ে গিয়েছিল তায়েবের কথা শুনে যে কি উত্তর দেবে ভেবে ওঠার আগেই তায়েবের বাইকটা ওর চোখের সামনে একরাশ ধুলো উড়িয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। কেন জানিনা বাসন্তির মনে রাগ জমা হচ্ছে না, উলটে অ নিজেই অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে ওর মনে মনে তায়েবের কথাটা ভেবে রোমাঞ্চ হচ্ছে! ইসসস ওর মনের ভিতরটা কি এতটাই বিকৃত!
কি রে সঙের মতন এখানে একলা দাঁড়িয়ে আছিস কেন রে বাসু?!! আমার যে আজ গর্বে বুকটা দশ হাত চওড়া করে দিয়েছিস রে তুই! দেবেন মাস্টার বলছিল তুই জেলায় প্রথম আর মাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থান পেয়েছিস!! উফফফ সাব্বাস বেটি, এই না হলে রেজাল্ট!! চল মা, আমরা সব্বাই বাড়ি যাই, বাড়িতে সুধু আমার চেনাজানা নয়, জানিস সেখানে পাড়ার তিন ডজন লোক ছাড়াও কলকাতা থেকে একজন সাংবাদিক এসেছে, তুই ত মেয়েদের মধ্যে এ রাজ্যে দ্বিতীয়, সেটা জানিস?!!! - অনাদি একটানে কথাগুলো বলে বাসন্তির হাত ধরে একপ্রকার হিড়হিড় করেই টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে ওঠাল ওকে! গাড়ির ভিতর ততক্ষণে বাড়ির সবাই বসে আছে, আর বাসন্তীকে দেখতে পেয়ে হাবিজাবি কি যে সব বলে চলেছে তার সব বাসন্তীর মাথায় স্পষ্ট করে ঢুকছিলও না, ও তখন একমনে তায়েবের বলা কথাগুলোকে ভেবে যাচ্ছিল!! ইসসস তায়েবটা কি অসভ্য, ওইরকম কঠিন পরীক্ষার সময়ও কেউ যে এইসব করতে পারে এটা ও ভাবতেও পারছিল না! ভাবা যায়? পরীক্ষার হল জুড়ে যে সময় কেউ লিখতে অথবা কেউ টুকতে ব্যস্ত ছিল ভৌতবিজ্ঞানের টুকিটাকি উত্তর, সেই সময় উত্তর লেখার ফাঁকে একটি ছেলে তার গাঁড়ের দিকে ইতি-উতি তাকাতে পারে, আর সেটা নিয়ে রগরগে জল্পনা কল্পনা করতে পারে এটা যে ওর মাথাতেই আসতে চাইছে না!

বাসন্তীর আনমনা ভাবটা আর কেউ লক্ষ্য করুক বা না করুক, সুলতার নজরে ঠিক এসেছে! আর সেই সাথে একটা ঝাপসা আন্দাজও করেছে সুলতা! সুলতা দেখেছিল যে বাসন্তীর খুশিতে উজ্জল ওই মুখটাতে চিন্তা-ভাবনার ধুম্রজাল এসেছিল ওই তায়েব বলে ছোড়াটার সাথে কথা বলার পর থেকে! ছেলেটা বাড়াবাড়ি রকমের স্মার্ট, আর যে রকম চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বন্ধুদের মাল খাওয়ার দাওয়াত দিচ্ছিল তাতে গান্ডুটা যে অতিরিক্ত মাত্রায় নির্লজ্জ, সেটা আর বলে দিতে লাগে না! ও ব্যাটা আবার দ্বিতীয় হয়েছে বাসুর স্কুলে, কিন্তু মানতে হবে ছোঁড়ার এত্ত ভাল রেজাল্ট করেও দেমাক নেই এক ফোঁটা! বোধহয় বাসুটা ওকে রেজাল্ট ভাল হবার জন্যে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিল, কিন্তু ওই ছোঁড়ার যেরকম কাটা কাটা কথা, হয়ত ওকে উল্টোপাল্টা কিছু বলে থাকবে! আর দেখে শুনে যাই মনে হোক, মনে মনে ওই গান্ডুটার নিশ্চয়ই গাঁড় জ্বলছে, কারন এতকাল ওই বাসুর স্কুলে প্রথম হয়ে আসছিল আর মাধ্যমিকে বাসু ওকে টপকে গিয়েছে, আর তাই ভিতর ভিতর যে জ্বালাটা ছিল বাসুর কাছে হেরে জাওয়ার জন্যে সেটাই কুৎসিত ভাষায় উগরে দিয়েছে বাসুর কাছে! আহারে আমার বাসু খুব কাচা মনের, ওর খুব মনে লেগেছে, তাই নির্ঘাত ওইরকম মনমরা হয়ে আছে বেচারি!

সবার সাথে সারাদিন কাটানোর পর বাসু যখন ক্লান্ত পায়ে নিজের দোতলার ঘরে গিয়ে ঢুকছে, তখন বাসুকে একলা পেয়ে সাতপাঁচ ভেবে সুলতা বলেই ফেলল ওর মনের কথা – বাসু মা! তুই খুব ক্লান্ত হয়ে গেছিস না? আয় খাটে এসে বস আর আমার কোলে মাথা দে, আমি তোর মাথায় নবরত্ন তেল মাখিয়ে দি, দেখবি খুব ভাল ঘুম হবে

বাসন্তী – না মা, তোমায় কিছু করতে হবে না, ধকল তো তোমার ওপর দিয়েই গেছে বেশি, এই একগাদা লোকের খাবার দাবার, তাদের সময় সময় চায়ের জোগান, উফফফ!! লোকও এসেছিল বটে, আর বিশেষ করে ওই রিপোর্টারটা!! আরেঃ, তুমি খবরের কাগজের লোক বলে কি মাথা কিনে রেখেছ নাকি, সর্বক্ষণ বকবক তার ওপর প্রত্যেক আধা ঘন্টায় চা-এর আবদার, আর দাদুও ওই লোকটাকে পেয়ে যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে, আমার খুব বাজে লাগছিল দাদুর আদেখলাপনা দেখে!

সুলতা – বাসু!! দাদুর সম্পর্কে ওরকম বলতে নেই, আজকে বাড়ির মধ্যে আমরা সব্বাই খুশি, খুব গর্বের দিন আজকে, তোর দাদুর বহিঃপ্রকাশ একটু বেশি চড়া, এই যা!! আয় মা আয়, আমি একটুও ক্লান্ত নই, আয় তো মা, তোর মাথায় তেল মালিশ করে দি!

বাসু আর কথা বাড়ায় না, চুপটি করে সুলতার কোলে মাথাটা এলিয়ে দেয়। সুলতার নরম নরম আঙ্গুলগুলো বাসন্তীর মাথার চুলে হারিয়ে যেতে থাকে, বাসন্তীর সত্যি আজ বড্ড ধকল গেছে! ওর আরামে চোখ বুজে আসছে, এমন সময় সুলতা বলে উঠল – হ্যাঁ রে বাসু, সত্যি করে বলত মা আজ কি তায়েব তোকে উল্টোসিধে কিছু বলেছিল নাকি রে? আমি দেখেছি, ওর সাথে কথা বলার পর থেকেই তুই কেমন আনমনা হয়ে গেছিস! আমি তোর মা, আমার কাছে কিছু লুকাস না, বল তো মা!

বাসুর তন্দ্রা কেটে যায় পুরোপুরি। না, যা তায়েব বলেছে, সেটা ওর মাকে কোনমতেই বলা চলে না, কিন্তু হটাৎ ওর মাথায় যে কি পোকা নড়ল ও জানে না, কিন্তু নিজেকেই অবাক করে দিয়ে ও ফসস করে বলে বসল – জান মা, তুমি ঠিক ধরেছ, ও আমায় যা বলেছিল তা তোমায় বলবনাই ভেবেছিলাম, কিন্তু তুমি জিজ্ঞেস করছ বলেই জানাচ্ছি, তারপরেই বল আমার মনমরা হওয়া ঠিক ছিল না বেঠিক! আসলে তায়েবকে কনগ্র্যাটস জানানোর পর আমায় বলে ও এখন ওর প্রভাস স্যারের থেকে প্রাইভেট টিউশন করছে ফিজিক্স আর ম্যাথসের জন্যে! তুমি তো জানই দাদুও প্রভাস স্যারকে বলেছিল, কিন্তু ওনার প্রাইভেটের একটা স্লটই খালি ছিল আর সেটা তায়েব আগেই বুক করে রেখেছিল স্যরকে বলে, তাই স্যার আমায় ওনার কোচিং ক্লাসেই আসতে বলেন। মা তোমায় জানিয়ে রাখি যে প্রভাস স্যারের স্টুডেন্টদের জয়েন্টে সাকসেস রেট সবথেকে বেশি এই তল্লাটে! কিন্তু আমি ওই ৬০জনের ব্যাচে পড়লে, ওনার সেরাটা নিতে পারব না, আর আমি সেটাই চাই! তায়েব বলছিল ওর বাড়িতে স্যারকে বলে ও আরেকজনকে, মানে আমাকে পড়াতে আল্যাউ করাতে পারে! কিন্তু সেক্ষেত্রে আমায় ওর বাড়ি গিয়ে পড়ে আসতে হবে! আমি ওকে মুখের ওপর হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারি নি! কারন আমার ইচ্ছে থাকলেও দাদু আমায় পারমিশন দেবে কিনা তাই জানিনা, তাই চিন্তা করছিলাম দাদুকে কি বলব, কখন বলাটা ঠিক হবে! এই হল কারণ। বুঝলে?!

সুলতা (একটু হাল্কা হেঁসে) – দূর পাগলী! তোর ভয় কিসের, আমি বলছি তোর দাদু রাজি হবে, তুই শুধু যা আমায় বলেছিস সেই পুরো মহাভারত না বলে সোজাসাপ্টা বলবি তুই তায়েবের ওখানে প্রভাস স্যারের কাছে পড়বি, ওনার কোচিং ক্লাসে নয়, কারন সেক্ষেত্রে তোকে ৬০ জনের সাথে বসতে হবে, তায়বের ওখানে তোরা খালি দুজনেই পড়বি, তাই আরও মন দিয়ে পড়তে পারবি! বুঝলি পাগলী?!!

বাসন্তী ওর মাকে যা বলেছিল, তা পুরোটা বানানো নয়, কিন্তু একটা বিশাল ঝুঁকি আছে ওর আজকের কথায়, আর এই ঝুঁকির একটা একদম কাছের আর আরেকটা স্বল্প দুরের! আপাতত কাছের ঝুকিটা কিভাবে এড়ানো যায় সেটার ব্যবস্থাই ওকে নিতে হবে। বাসন্তী ঘুমের ভাব করল, সুলতাও ভাবল মেয়ে বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে, সেই জন্যেই মেয়ের মাথাটা নিজের কোল থেকে আলতো করে নামিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে আলোটা বন্ধ করে নিঃশব্দে নিচে চলে গেল। বাসন্তী এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল, বালিশের নিচের থেকে ছোটমামার দেওয়া মোবাইল ফোনটা বার করে তমালিকাকে কল করল।

বাসন্তী – হ্যালো, তমালিকা! তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি!

তমালিকা – না রে এই যাব শুতে, তোর তো আজ ঘুমই আসবে না, তাই না!! যা একখান রেজাল্ট করেছিস, উফফফ!! ভাবা যায় না রে!!

বাসন্তী – আবার থ্যাঙ্কস জানালাম! কিন্তু তুই আমার একটা উপকার করবি?! প্রমিস কর কাউকে বলবি না!

তমালিকা – কি রে প্রেমে পড়েছিস নাকি কারো সাথে?!! বল বল!! কোনও চিন্তা নেই! আমি কাউকে বলব না!!

বাসন্তী – উফফফ!! তোকে নিয়ে পারা যায় না!! এটা তার চেয়েও সিরিয়াস, আমায় তায়েবকে কনভিন্স করতে হবে যাতে করে ও আমায় ওর ওখানে প্রভাস স্যারের কাছে টিউশানি পড়তে আলাউ করে!

তমালিকা – উরেব্বাস!! কি স্কিমবাজ রে তুই!! ভাই আমি স্পষ্ট বলছি, একটা শর্তেই হেল্প করতে পারি!! আমারও ভাগ চাই!! আমিও পড়ব তোদের সাথে!!

বাসন্তী – এই নে!! গাছে না উঠতেই এক কাঁদি!! আগে কথা তো বলতে দে, ও রাজি না হলে আমার বিশাল বাঁশ আছে কপালে। আরেকটা ব্যাপার, তায়েবের স্বভাব কিন্তু সুবিধের নয়, তুই পারবি তো তোর বাড়ির লোককে মানাতে?!

তমালিকা – তুই ওর ওখানে একা একা যাওয়ার সাহস দ্যাখাতে পারছিস, তো আমি কেন পারব না, আর এখত্খুরে তো তুই আর আমি দুজনেই একসাথে থাকব। খুব পারব! তুই শুধু বল আমায় কি করতে হবে!

বাসন্তী – তোর কাছে তায়েবের নম্বরটা হবে?! আমার কাছে নেই!

তমালিকা – হ্যাঁ, আছে আছে!! নে নোট কর

নম্বরটা তমালিকার কাছ থেকে টুকে নিয়ে ওকে বাই বলে বাসন্তী আর দেরি করল না, টুক করে ডায়াল করেই ফেলল। বেশ খানিক বার রিং হবার পর ফোনটা রিসিভড হল!! উফফফ!! কি তারস্বরে গান বাজছে ওখানে, ফোনের ত্থেকেই যা জোরে আওয়াজ ভেসে আসছে তাতে ওর গলা শুনতে পেলে হয়!!এদিকে বাসন্তী জোরে চেল্লাতেও সাহস করতে পারছে না, যদি বাড়ির লোক টের পায়, তাহলে ওকে কেঊ আস্ত রাখবে না আজ!

তায়েব – হ্যালো!! হ্যালো!! ধুর কে বাল কল করেছে!! হ্যালো কিছু শোনা যাচ্ছে না, কি বাইরে যাব, হ্যাঁ??? আচ্ছা আচ্ছা!! দাঁড়ান!! (বাড়ির বাইরে একটু নির্জনে এসে) হ্যাঁ বলুন!! কে বলছেন!!

বাসন্তী – এই গরধব! আমি বলছি, বাসন্তী!!

তায়েব – আরেঃ কি রে!! কি ব্যাপার এত্ত রাত্তিরে?? খিস্তিই যদি দেওয়ার ছিল তখন কালকেই দিতিস, তার জন্যে এত রাত্তিরে কেউ কল করে!!

বাসন্তী – তুই ঘুমাস নি?
[+] 1 user Likes paimon's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গুহ্য দ্বারের গুপ্ত কথা by Podbilasi - by paimon - 28-06-2021, 12:46 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)