27-06-2021, 07:00 AM
(This post was last modified: 01-02-2022, 09:50 AM by Bichitro. Edited 102 times in total. Edited 102 times in total.)
সূচিপত্র
প্রথম পর্ব ( সদ্য ফোঁটা ফুল )
U1 , U2 , U3
দ্বিতীয় পর্ব ( আসা যাওয়ার মাঝে )
U1 , U2 , U3 , U4 , U5#1 , U5#2 , U6
তৃতীয় পর্ব ( স্মৃতির পাতায় নামলিখন )
U1 , U2 , U3 , U4 , U5#1, U5#2
চতুর্থ পর্ব ( হৃদমাঝারে )
U1 , U2#1 , U2#2 , U2#3, U3#1 , U3#2 , U4#1 , U4#2
পঞ্চম পর্ব ( কি আশায় বাঁধি খেলাঘর )
U1 , U2#1 , U2#2
ষষ্ঠ পর্ব ( শুরু হোক পথ চলা )
সপ্তম পর্ব ( নতুন জীবনের স্পর্শ )
U1#1 , U1#2 , U2#1 , U2#2 , মিষ্টি চিঠি
বুম্বাদার লেখা মিষ্টি কবিতা
মিষ্টি মূহুর্ত
লেখক --- a-man & বিচিত্রবীর্য
পর্বের নামকরণ --- Mr.Baban
সাবধান / সাবধান \ সাবধান
এই গল্পে সমস্ত চরিত্র ঘটনা প্লট স্থান লেখকের মস্তিষ্ক প্রসূত । বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই। বাস্তবে কারোর সাথে মিলে গেলে সেটা নিছকই কাকতালীয়। এই গল্পে সেক্স নেই। আছে শুধু ভালোবাসা।
মিষ্টি মূহুর্ত ( ছোট গল্প গুচ্ছ) আমি নিজের জন্য লিখেছিলাম । পাঁচ জন বিশেষ ব্যাক্তির ভালোবাসায় ও উৎসাহে মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) লেখা শুরু করলাম। এই উপন্যাসের সাথে ছোট গল্পের মিল খুঁজতে যাবেন না। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। এখানে কোন সেক্সের বর্ণনা নেই। তাই যারা শুধু সেক্সের বর্ননা চেয়ে থাকেন , তাদের জন্য এই উপন্যাস নয়। এখানে আছে শুধু খুনসুটি , পাগলামি আর ভালোবাসা। উপরে উল্লেখিত পাঁচ জন ছাড়া যদি অন্য কারোর ভালো লাগে তাহলে খুব খুশি হবো।
প্রথম পর্ব :----সদ্য ফোটা ফুল
Update 1
সময়টা বসন্তকাল । কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব হয়ে গেছে। সোসাইটির ভিতরে বাচ্চাদের জন্য যে ছোট পার্ক টা আছে সেখানে বিভিন্নরকমের ফুল ফুটে আছে। গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে । আর গাছের ফুলের গন্ধ আশেপাশের সবার মনকে স্থির শান্ত বিভোর করে তুলছে। শুধু বাগানে নয় ! মানুষের মনেও বিভিন্ন ফুল ফুঁটে তাদের ভিতরটা সুবাসে ভরিয়ে তুলছে। শান্ত শীতল হাওয়া বইছে চারিদিকে ।
কলকাতা শহরের একটি অতি প্রাচীন সোসাইটির ভিতরে পাঁচটা বিল্ডিং আছে। তার মধ্যে একটা তিন তলার বিল্ডিং এর সবথেকে উপরের তলায় একটা ফ্ল্যাটে সপরিবারে কোথাও একটা যাওয়ার তোড়জোড় চলছে।
“ কই গো ! তোমার হলো ? ওদিকে ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলে যে নার্সিংহোমে ঢুকতে দেবে না তো ! „ একটা নিল সাদা ডোরাকাটা শার্ট পড়তে পড়তে তার স্ত্রীকে তাড়া দেয় সমরেশ বাবু।
“ হ্যাঁ হয়ে গেছে । চলো । তুমি সুমি কে নিয়ে নিচে নামো , আমি সুচিকে নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে নামছি। „ আয়না থেকে একটা লাল টিপ নিয়ে কপালে লাগাতে লাগাতে বললেন সুচেতা দেবী।
সমরেশ বাবু তার বড়ো মেয়েকে নিয়ে বিল্ডিং এর তিন তলা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামলেন ।
সুচেতা দেবী একটা হালকা সবুজ রঙের শাড়ী পড়ে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে ঘরে ভালো করে তালা দিলেন আর দেখে নিলেন পাশের ফ্ল্যাটটাতেও তালা দেওয়া আছে।
ওইটুকু মেয়ে সিঁড়ি ভাঙতে গেলে সময় চলে যাবে। তাই সুচিকে কোলে করে নিয়ে নিচে নামলেন। পাথরের ইট বিছানো রাস্তায় হেঁটে সোসাইটির বাইরে এসে তিনি দেখলেন তার স্বামী রহমত চাচার সাথে কথা বলছেন। সুচেতা দেবী স্বামীর কাছে যেতেই রহমত চাচার একটু হেঁসে জিজ্ঞেস করলেন “ ভালো আছো তো বৌমা ? „
“ হ্যাঁ চাচা । আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ? „ মুখে হাঁসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সুচেতা দেবী।
“ খোদার রহমতে বেশ সুস্থ আছি। „ ষাটোর্ধ্ব রহমত চাচা এই সোসাইটির দারোয়ান। দিনের বেলায় ডিউটি করেন। রাতে অন্যজন আসে। আর এই সোসাইটির ভিতরেই একটা ছোট ঘরে থাকেন।
সুচেতা দেবী স্বামীর দিকে ঘুরে বললেন । “ বলছি ! বাস না ধরে , ট্যাক্সি ধরো না ! „
“ ট্যাক্সি তো অনেক টাকা ভাড়া নিয়ে নেবে !! তবুও চলো। আজকে খুশীর দিন। „ বললেন সমরেশ বাবু।
পাশেই কিছুদূরে একটা ট্যাক্সি ছিল । সমরেশ বাবু ট্যাক্সিটার পিছনের সিটে গিয়ে উঠলেন সপরিবারে। ড্রাইভার কে বললেন নার্সিংহোম যেতে। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে ভালো একটা দোকান দেখে লেবু , আপেল , কলা , ডালিম কিনলেন সমরেশ বাবু । রাস্তায় সুচেতা দেবী তার ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন “ কিরে ! সকাল থেকে চুপচাপ আছিস। তোর ভাইকে দেখতে যাচ্ছি। মুখে হাঁসি নেই কেন তোর ?
সকালে যখন শুনলো তার কাকির ছেলে হয়েছে তখন থেকেই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে সুচি । ছোট্ট মেয়েটা কি করে বোঝায় সবাইকে ! ওর যে ভাই চাই না। ওর এক মাসতুতো ভাই আছে । সে শুধু মারে। তাই ওর ভাই চাই না।
সুচি এক লাল টুকটুকে ফ্রগ পড়ে আছে । সে মায়ের কোলে বসে রাস্তা দেখতে দেখতে যেতে লাগলো। কত লোক ! কত গাড়ি ! কত বড়ো বড়ো বাড়ি। কতো দোকান। আবার রাস্তায় ট্রেনও চলছে। ট্রেন সে চেপেছে তবে একবার। এইসব দেখতে দেখতে তারা নার্সিংহোম পৌঁছে গেলেন । নার্সিংহোমে পৌঁছে তারা একটা নার্স কে জিজ্ঞেস করে উপরে উঠে গেলেন। উপরে উঠে দেখলেন বাইরে করিডোরে দাঁড়িয়ে ছয় ফুটের শুভাশীষ বাবু একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন। তার পড়নে আছে কালো রঙের কোর্ট প্যান্ট।
“ বৌমা কেমন আছে ? আর তোমার ছেলে ? „ শুভাশিস বাবুর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সুচির বাবা।
“ হুমম । দুজনেই ভালো আছে। ভিতরে যাও । „ গম্ভীর আওয়াজে কথাটা বলে আঙুল দিয়ে পাশের একটা রূম দেখিয়ে দিলেন শুভাশিস বাবু ।
ঘরে ঢুকে সমরেশ বাবু আর সুচেতা দেবী স্নেহা দেবীর কাছে গেলেন। স্নেহা দেবী বেডে হেলান দিয়ে বসে আছেন আর পাশে একটা দোলনায় ছোট্ট পুত্র সন্তান ঘুমাচ্ছে। সুমি আর সুচি দৌড়ে দোলনায় কাছে চলে গেলো
“ এই আশার সময় হলো তোমাদের !! „ অভিমানি গলায় বললেন স্নেহা দেবী।
“ কি করবো বলো ! আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। „ ঠোঁটে একটু হাঁসি নিয়ে স্নেহা দেবীকে ফলের ব্যাগটা দিয়ে বললেন সমরেশ বাবু।
“ এসব আবার আনলে কেন ? কালকেই তো বাড়ি ফিরবো !!
“ কাল পর্যন্ত অনেক সময় , ততক্ষণ এগুলো খেও। এখন কেমন আছো ? „ জিজ্ঞেস করলেন সুচেতা দেবী।
“ আমি আর আকাশ দুজনেই ভালো। ওর নাম আকাশ রেখেছি। „ মুখে তাঁর এক আলাদা সুখ লেগে আছে। মা হওয়ার সুখ।
“ বাহ্ বেশ সুন্দর নাম। „ বলে তারা দোলনার দিকে গিয়ে ভিতরের ছয় সাত ঘন্টা বয়সের আকাশকে দেখতে লাগলো। ছোট্ট গোলগাল চেহারা। মাথায় চুল নেই। ঘুমাচ্ছে বলে চোখ বন্ধ। গাল টকটকে লাল। তারপর সুচেতা দেবী ঘুমন্ত আকাশকে কোলে তুলে নিয়ে তার দুই কন্যাকে দেখিয়ে বললেন “ তোদের ভাই হয়েছে । কেমন বল ? „
“ আমাল ভাই চাই না । „ বলেই ফেললো সুচি।
“ তাহলে !!! „
“ ভাইয়েলা বদ্দ মালে। আমাল বন্দু চাই। „ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো সুচি।
বেডে হেলান দিয়ে বসে থাকা স্নেহা দেবী মিষ্টি মাখা গলায় , আদরের সুরে বললেন “ ঠিক আছে । আজ থেকে আকাশ তাহলে তোমার বন্ধু । „
কথাটা শুনে সুচি খুব খুশি হলো। সে আবার মায়ের কোলে থাকা ঘুমন্ত আকাশ কে দেখতে লাগলো। ঘুমিয়ে আছে আকাশ। কি মিষ্টি দেখতে। আকাশের এই মিষ্টি মুখটা দেখতে বেশ ভালো লাগলো সুচির।
তখন শুভাশীষ বাবু রুমে ঢুকে স্নেহা দেবীর বেডের পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসলেন। সুচেতা দেবী আবার কোলের আকাশকে দোলনায় রেখে দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন “ কাল কখন বাড়ি ফিরছো ? „
শুভাশীষ বাবু গম্ভীর আওয়াজে বললেন “ ডাক্তার বললো কাল সকালে যেতে পারবো । „
সমরেশ বাবু মাথা দোলালেন কথাটা শুনে। তারপর আরো কিছুক্ষণ থেকে কথাবার্তা বলে তারা বাস ধরে চলে এলেন। বাসে শুধু সুচেতা দেবী বসার জায়গা পেলেন তাই তিনি দুই মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলেন। আর সমরেশ বাবু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরলেন। আজ সুচি খুব খুশি। জীবনে প্রথম বন্ধু হয়েছে তার ।