Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
নতুন মা


ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে করতে মাঝে মাঝে পিঠটা ব্যথা করে ওঠে সায়ন্তনের। তাই একটু স্ট্রেচিং করার জন্য চেয়ার থেকে উঠল ও। আজ এগারোটা থেকে টানা মিটিং চলেছে ওর। তাই ক্লান্তু লাগছে খুব। একটু চা খেলে হতো। ভাবতে ভাবতেই ঘর থেকে বেরোল ও।
ছোট্ট ফ্ল্যাট ওদের। দুটো বেডরুম, ড্রয়িংরুম,রান্নাঘর, বাথরুম আর এক চিলতে একটা ছোট্ট ঘর, একটা ক্যাম্প খাট আর একটা চেয়ার রাখার পরেই যেখানে আর নড়াচড়ার জায়গা নেই। আর দুটো বেডরুমের একটায় বাবা থাকেন, অপেক্ষাকৃত বড় ঘরটায় ও আর সোনালী থাকে। আগে ওটা মা বাবার ঘর ছিল, কিন্তু মা চলে যাবার পর, বাবা ওকে একদিন ডেকে বলেছিলেন 'বুবুন, তুই এই ঘরে চলে আয়, আমি ওই ঘরটায় চলে যাব'। প্রথমে ওর ইচ্ছে ছিল না একেবারেই, কিন্তু বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু হবার পর থেকে বাধ্য হয়েই সায় দিয়েছিল। আর ওর বিয়েও তো হয়ে গেল জানুয়ারিতে। দেখাশোনার বিয়ে, এখনো পর্যন্ত কেন জানি না ওরা তেমনি বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি, সোনালী একটু বেশিই চুপচাপ, শান্ত। তবে মোটের ওপর সুখীই আছে ওরা।
রান্নাঘরে যাবে বলে বেরিয়েছে, দেখে একটা কেমন যেন গন্ধ..একটু নাকটা কুঁচকে বুঝতে পারে ফিনাইলের গন্ধ। বাথরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা বেরিয়ে আসছেন, হাতে একটা ভিজে আন্ডারওয়্যার। আর, সোনালী উবু হয়ে বসে ঘর মুছছে। দেখেই বুঝতে পারল, বাবার হয়ত বাথরুমে যেতে যেতেই টয়লেট হয়ে গেছিল, তাই এখন সোনালীকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। সত্যি, সারাদিন রান্নাবান্না, ঘরের সব কাজ করার পর যদি এভাবে টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়, ওর তো খারাপ লাগবেই। বাবার আগে এমন ছিল না, এই কিছুদিন হলো টয়লেট চেপে রাখতে পারছেন না। যেতে যেতেই হয়ে যাচ্ছে।।
মাথা নিচু করে ঘরে এলো সায়ন্তন। সোনালী কি ভাবছে কে জানে...বাবা ও তো অসহায়!
ভাবতে ভাবতেই ঘরে এলো সোনালী। ওকে এইসময়ে এই ঘরে দেখে যেন একটু অবাক হয়েছে মেয়েটা। বলল 'কি গো, তোমার মিটিং শেষ? চা খাবে?'
এক নজর তাকালো বৌয়ের দিকে সায়ন্তন। তারপর বলল 'সোনালী স্যরি..'
'ওমা!কেন?'
'আসলে বাবা কিন্তু ইচ্ছে করে কিছু করেন না, জাস্ট হয়ে যায়। আমি কালই নেট খুঁজে কোনো একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলব.. আর বাবার সাথেও কথা বলব'
ওর কথা শুনে একটু চুপ করে থাকে সোনালী। তারপর, খুব আস্তে, প্রায় শোনা যায় না, এমন গলায় বলল 'আমার দাদুর রেনাল ফেলিওর হয়েছিল। দাদু ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বড় হবার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। কিন্তু...সেই দাদু...জানো, সারা শরীর ফুলে গেছিল দাদুর, টয়লেট না হওয়ায়। তোমার বাবা, এত শান্ত একজন মানুষ...ওনার জন্য নিশ্চয়ই ডাক্তার কনসাল্ট করবে, কিন্তু, প্লিজ বাবাকে বকাবকি করো না...আসলে উনি কেমন অপরাধীর মতো তাকান আমার দিকে বাথরুম হয়ে গেলে। আমার খুব খুব কষ্ট হয় দেখে...মনে হয়, হাতটা ধরে বলি, "ইটস ওকে বাবা...কিচ্ছু হয়নি..."
সোনালীর কথা শুনতে শুনতে চোখটা কেমন ঝাপসা লাগে সায়ন্তনের। এত ভাল ওর বৌ টা! এত গভীর!
কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিল না সায়ন্তন, নইলে দেখতে পেত বাবা ওদের ঘরের দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন...হয়ত কিছু বলতে আসছিলেন...হয়ত দুঃখপ্রকাশ করতে আসছিলেন...কিন্তু এখন তাঁরও চোখে জল...আর বুক ভরা আনন্দ...বাড়িতে 'বৌমা' নয়, 'মা' এসেছেন যে...।।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 26-06-2021, 11:29 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)