26-06-2021, 10:44 AM
একটু পরে মনীষার বাবা এলেন বাজার করে, দুই হাতে বাজার ভর্তি থলে নিয়ে। গিন্নীকে বললেন, নাও পুরো বাজারটাই তুলে নিয়ে এসেছি তোমার জন্য। সুনীলকে আজ ভাল করে তোমার হাতের রান্না খাওয়াও।
থলে দুটো হাত থেকে নিয়ে মনীষার মা ওনাকে বললেন, যাও এবার জামাই এর সাথে একটু কথা বলো গিয়ে, আমি ততক্ষণ ওদিকটা একটু সামলাই।
খুব ভাল রান্না করে মনীষার মা। সুনীলকে নিজের মায়ের রান্নার গুনের কথা আগেই বলেছে মনীষা। একবার খেলে নাকি তারপরেও মুখে স্বাদ লেগে থাকে।
মনীষার বাবা এবার ওরা যে ঘরটায় দুজন বসেছিল, সেই ঘরটায় ঢুকলেন। সুনীল মনীষা দুজনেই তখন প্লেট থেকে লুচি তুলে খাচ্ছে। শ্বশুর মশাইকে দেখে সুনীল উঠে দাঁড়াতেই মনীষার বাবা বললেন, আরে বসো বসো। উঠতে হবে না। আমি এলাম জানতে, তোমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো সুনীল?
সুনীল বলল, না না ঠিকই তো আছে। কোন অসুবিধে নেই তো। এই তো এবার জলখাবারটা খেয়েই আমি চানে ঢুকবো। মনীষা তখন থেকে বলছে। বলেই মনীষার দিকে একবার তাকাল সুনীল।
হাতের ঘড়ি দেখলেন মনীষার বাবা। সুনীলকে বললেন, আমি আবার কাজে বেরুবো। বেশিক্ষণ বসতে পারব না সুনীল। তুমি বরং চানটান করে একটু রিল্যাক্স করো। তারপর খেয়ে দেয়ে একটা টানা ঘুম। তোমার মা আছেন, কোন অসুবিধে হবে না। আর আমার ফিরতে ফিরতে সেই রাত্রির।
-আপনি কি এখন দোকানে যাবেন?
-হ্যাঁ। এখন তো আবার দুদুটো দোকান। আগে একটা ছিল, এখন আর একটা বেড়ে চাপ আরও বেড়েছে। ব্যাবসা বড় হয়ে গেছে। কি করব বলো? এই জন্যই তো তোমার মা একটু চটে যান মাঝে মাঝে। বউকে সময় দিতে পারি না। হাজার হোক ওরও তো সখ আল্লাদ আছে। ব্যাবসা ব্যাবসা করে আমি যেন কেমন হয়ে গেছি।
-আপনাকে এবার থেকে একটু মাকে সময় দিতে হবে বাবা। মার জন্য এটুকু আপনাকে করতেই হবে।
সুনীলের দিকে একটু বাধ্য শ্বশুড়ের মতন তাকিয়ে মনীষার বাবা বললেন, বলছ? তা তুমি যখন বলছ, তখন এবার থেকে তাই হবে।
মনীষা লুচি খেতে খেতে চুপচাপ বাবা আর স্বামীর কথা শুনছিল। সুনীলের শ্বশুর মশাই এবার মনীষার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই খুব ভাল স্বামী পেয়েছিস রে মনি। দেখ এখানে এসেই কেমন তোর মায়ের কথা ও চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে।
মনীষা একটু অল্প হাসল। সুনীল বলল, বাবা আপনি থাকবেন না, আপনাকে আমরা কিন্তু খুব মিস করব।
মনীষার বাবা বললেন, সাতদিন সুনীল সাতদিন। তারপরেই আমি এসে যাচ্ছি এখানে। আর নড়ছি না শিলিগুড়ি থেকে।
দোকানে যাবার তাড়া দেখিয়ে মনীষার বাবা বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। যাবার আগে সুনীলকে বললেন, তবে যাই বলো, তোমার শ্বাশুড়ি মা কিন্তু খুব ভাল। চটে গেলেও সেভাবে কিন্তু কখনও রাগ দেখায় না আমার ওপর। এই জন্যই তো আমার গিন্নিটি এত ভাল। তবে আমাকে তোমার মা বলে রেখেছে, সুনীলকে একবার এখানে আসতে দাও, তারপর ওকে নিয়েই আমি সবসময় পড়ে থাকব। তুমি দোকান থেকে যতই রাত বিরেতে ফেরো, আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।লুচি খেতে বিষম লেগে যাচ্ছিল সুনীলের। মনীষা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, কি গো কষ্ট হচ্ছে? জল এনে দেব। সুনীল বলল, হ্যাঁ জল দাও, গলায় লুচি আটকে গেছে।
সুনীলের কাশি শুনে মনীষার মাও দৌড়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। মনীষার মত উনিও হাত বোলাতে লাগলেন সুনীলের মাথাতে। মুখে বললেন, আহা ব্যাচারা। দেখোতো কত কষ্ট পাচ্ছে। এইভাবে খেতে খেতে কেউ কথা বলে? বিষম লেগে গেছে। জল খাও সুনীল।
মনীষার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে নিজেই হাতে ধরে ঢকঢক করে জল খাওয়াতে লাগলেন সুনীলকে। সুনীল দেখল শ্বাশুড়ি মা জল খাওয়াচ্ছেন, আর অন্যমনস্কতায় ওনার বুকের আঁচল সরে গিয়ে ব্লাউজের মধ্যে থেকে বুকের খাঁজ বেশ খানিকটা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।
ঢকঢক করে পুরো জলটা খেয়ে এবার একটু নিঃশ্বাস ফেলল সুনীল। মনীষার মা ওর গালে একটা হাত রেখে বললেন, কষ্ট হচ্ছে না তো সুনীল? খুব জোড়ে বিষম খেয়েছ।
শাড়ীর আঁচলটা তখনও বুক থেকে সরে রয়েছে। মনীষা মাকে ইশারা করে বলল, মা আঁচলটা ঠিক করে নাও। মনীষার মা সঙ্গে সঙ্গে আঁচলটা ঠিক করে নিলেন। সুনীল এমন ভাব করল, যেন ও কিছুই দেখেনি।
শ্বশুর মশাই এবার চলে গেলেন। মনীষা ওর মাকে বলল, মা ওরা কখন আসবে বলেছে?
-কে টুনটুনি, বুলবুল?
-হ্যাঁ।
-ওরা তো দুপুরেই আসবে। কিন্তু তুই সুনীলকে নিয়ে যাবি কি করে? ওর দেখছিস না চোখদুটো কেমন লাল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ওর মনে হয় না যাওয়াটা উচিৎ হবে। তুই বরং একাই ঘুরে আয় ওদের সাথে।
সুনীল বেশ অবাক হয়ে বলল, টুনটুনি, বুলবুল কে?
মনীষার মা বললেন, ও বাব্বা। ওরা তো মনীষার আদরের বন্ধু। রিমঝিম, মনীষা, টুনটুনি আর বুলবুল, এই চারজন সেই ছোটবেলাকার বন্ধু। রিমঝিম মনীষা এখন কলকাতায়, আর এরা দুজন এখন শিলিগুড়িতে রয়ে গেছে। মনীষা আসছে শুনে, আগে থেকেই বলে রেখেছে, মাসীমা আজকের দিনটা কিন্তু ছেড়ে দিতে হবে মনীষাকে। সাথে জামাইবাবুকেও চাই। ওরা একসাথে সিনেমা দেখতে যাবে। টিকিট কেটে রেখেছে। না গেলে হূলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দেবে। তাই বলছিলাম তোমার শরীর খারাপ, মনীষা বরং ওদের সঙ্গে যাক। তুমি বরং আমার সাথেই-
সুনীল কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। বউ যাবে সিনেমা দেখতে, আর ওকে শ্বাশুড়ির সাথে সময় কাটাতে হবে? আর এরাও আসার আর দিন পেল না? সিনেমা না দেখে এখানে সবাই মিলে গল্প করলেই তো ভাল হত। কি জ্বালায় পড়তে হল এখন, বলো দেখি।
মনীষা বলল, সেই ভাল। তোমার বরং কষ্ট করে গিয়ে লাভ নেই। মা ঠিকই বলেছে, তুমি এখানেই থাকো।মনীষার মুখের দিকে খুব করুন মুখে তাকাল সুনীল। মনে মনে বলল, কলকাতা থেকে আসার সময় এই প্রোগ্রামটার কথা তো তুমি আগে থেকে বলনি মনীষা। এখন মায়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য তুমি টুনটনি আর বুলবুলকে এনে হাজির করালে? একটু বেশ বিরক্তও হল ও। মুখে কিছু বলতে পারছে না, পাশে মনীষার মা অন্যরকম ভাবে। একটু পরে মনীষার মা উঠে চলে যেতেই ও মনীষাকে বলল, যাই না আমিও। এখানে একা থেকে আমি কি করব? যেন মায়ের সাথে এ বাড়ীতে থাকতে ওর অসুবিধে আছে।
মনীষা বলল, থাকো না তুমি। অসুবিধের কি আছে? মা তোমার জন্য এত কষ্ট করে অনেক পদ রান্না করছে। একটু নয় মায়ের সাথে বসে গল্প করলে। তারপর আমি তো রাত্রি বেলা চলেই আসছি।
সুনীলের যেন মন সায় দিচ্ছিল না কিছুতেই। মনীষাকে ও বলল, সিনেমা কি না গেলেই নয়?
ওর রকম দেখে মনীষাও এবার হাসতে লাগল। বলল, তুমি না সত্যি একেবারে কচি খোকার মতন হয়ে গেছ এখানে এসে। আমাকে ছাড়া একদন্ড থাকতে পারবে না তুমি? আমি মাকে কি বলব? তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু শুধু মাকেই বা একা ফেলে যাব কেন? তুমি মায়ের সাথে গল্প করবে, দেখবে তিন চার ঘন্ঢা তোমার দেখতে দেখতে কেটে যাবে। মা হয়তো তোমাকে বলবে তারপর ঘুমিয়ে পড়তে। আর আমি তো ফিরেই আসছি রাত্রিবেলাতে। ইভিনিং শো শেষ হতে হতে নটা। বাপীর গাড়ী করে টুক করে চলে আসব।
সুনীলের মন ঠিক করার জন্য এবার ওর গালে চুমু খেল মনীষা। সুনীলকে বলল, নাও এবার চানটা সেরে নাও।
জলখাবার খেয়ে সুনীল বাথরুমে ঢুকলো চান সারতে। ওদিকে মনীষার মাও তখন রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। মনীষা রান্নাঘরে গিয়ে মাকে সাহায্য করা শুরু করতেই মনীষার মা বললেন, মনি তোর আসতে আসতে কটা হবে রে?
মনীষা বলল, তা নটা হবে মা। ওর মা বললেন, সিনেমার শো যখন শেষ হবে, আমাকে একটা ফোন করে দিস তোর মোবাইল থেকে। মনীষা বলল, ঠিক আছে করে দেব।
চান করে নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে সুনীল ঘরে এসে আবার বসেছে। মনীষাও সুনীলকে সঙ্গ দেবার জন্য আবার ঘরে এসে ঢুকলো। সুনীলের মনের ভেতরে তখনও উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। শ্বাশুড়ী মায়ের কি মতলব বোঝা যাচ্ছে না। মনীষা না থাকলে এই বাড়ীতে ওর মায়ের সাথে একা একা থাকতে হবে। বিষমটা না খেলে সিনেমায় যাওয়াটা দিব্যি হত। সব গন্ডোগোল পাকিয়ে দিয়েছে ঐ বিষম খাওয়াটা। কি উদ্দেশ্য নিয়ে যে সুনীলকে আটকে দিলেন সেটাই পরিষ্কার হচ্ছে না। নিশ্চই কোন প্ল্যান রয়েছে এর মধ্যে। এমন মেয়ে জামাইতে মজে রয়েছেন এখানে আসার পর থেকে, যেন মেয়ের জায়গাটা উনিই নিয়ে নেবেন। কপালে যে কি খাঁড়া ঝুলছে কে জানে?
মনীষা ঘরে ঢুকে বলল, তুমি না ভীষন আনরোমান্টিক হয়ে পড়েছ এই কদিনে।