25-06-2021, 10:38 PM
বলেই সুনীলের দিকে তাকালো মনীষা। সুনীলকে বলল, কি তাইতো? সুনীল ঘাড় নাড়ল। মনীষাও সাথে সাথে আত্ম বিশ্বাসের হাসি দিল।
গাড়ী খুব কাছাকাছি এসে গেছে মনীষাদের বাড়ীর সামনে। মনীষার বাবা ওদের দুজনকে বললেন, ঐ দেখ তোর মা দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে। তোদের জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তখন থেকে।
মনীষা ঘাড় নিচু করে মাকে দেখতে পেল। বলল, ও মা তাই তো। মা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেমন ছটফট করছে।
গাড়ী থেকে ওরা তিনজনেই নামল। মনীষার মা এগিয়ে এসে মনীষাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলেন। সুনীল দেখল এই সাত সকালেই মনীষার মা ভীষন সেজেছেন। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হলেও একে সুন্দরী। তার ওপর সেজেগুজে আরও ফুলটুসি লাগছে।
মনীষা এরপর মাকে বলল, মা এনাও তোমার হ্যান্ডসাম। ওকে আমি পাকড়াও করে এনেছি তোমার কাছে।
মা এবার সুনীলের হাত দুটো ধরে বললেন, ওহ্ সুনীল। আমার হ্যান্ডসাম। তোমার কথা চিন্তা করে করে সেই কাল রাত থেকে ঘুম হয় নি আমার। এবার কিন্তু মনীষার বদলে আমি প্রেম করব তোমার সঙ্গে।
মনীষা মুচকি মুচকি হাসছিল মায়ের রকম দেখে। সুনীল একটু লজ্জা পেয়েই বলল, মা আপনি খুব ছেলেমানুষি করেন। মনীষা আমাকে বলেছে মা একটু অন্যরকম।
সুনীলের কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললেন, তাই বুঝি? আর কি বলেছে আমার সন্মন্ধে? সব ফাঁস করে দিয়েছে?
একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে সুনীল বলল, না ঐ আর কি। বলছিল মা আমার খুব ভাল।
মনীষার বাবা গাড়ী থেকে নেমে অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মনীষার মা এবার বললেন, কি গো তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেন? যাও বাজারটা করে নিয়ে এসো।
-হ্যাঁ যাই। এই বলে মনীষার বাবা আবার গাড়ীতে উঠে বাজার করতে চলে গেলেন। ওদের দুজনকে দুহাত দিয়ে ধরে বাড়ীর ভেতরে নিলে এলেন মনীষার মা।
মেয়ে জামাই অভ্যর্থনা একেবারে দেখার মতন। পুরো রীতি আচার মেনে মেয়ে জামাইকে বরণ করলেন। শাঁখ বাজালেন, উলুও দিলেন। মনীষা বলল, মা তুমি সত্যি পারো। এত কিছু করছ কেন বলতো? আমরা কি নতুন?
মনীষার মা বললেন, আমার কাছে তোরা নতুনই থাকবি। আজ থেকে দশ বছর পরেও। আর বিয়ের পরে তো সেভাবে এই প্রথমই এলি। এইটুকু না করলে হয়?
মিষ্টির প্যাকেটটা শাশুড়ীর হাতে দিয়ে সুনীল বলল, মা এইটা ধরুন। বাবা আপনাদের শুভেচ্ছা সহ পাঠিয়েছে।
মনীষার মা ওটা হাতে নিলেন। খুশিও হলেন। সুনীলকে বললেন, তোমাকে বাপু একটা কথা বলার আছে আমার।
সুনীল বলল, কি বলুন।-তুমি তখন থেকে আমাকে আপনি আপনি করছ কেন বলো দেখি? তোমার মুখ থেকে তুমি কথাটা না শুনলে ভাল দেখায়? বলো সুনীল।
সুনীল হেসে বলল, আচ্ছা তাই হবে।
সুটকেশ, লাগেজপত্র রেখে মনীষা বিছানায় বসে পড়েছে। মা বললেন, এই তোমরা বসো, আমি নিজের হাতে চা করে বানিয়ে আনছি। সারারাত ট্রেন জার্নি করে এসেছ। এখন গরম গরম চা খেলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।
মা চলে গেলেন ভেতরে চা করতে। মনীষার দেখাদেখি সুনীলও বিছানায় বসে পড়ল ওর পাশে। সুনীলকে জড়িয়ে ধরে মনীষা বলল, কি কেমন লাগছে?
সুনীল সাদামাটা উত্তর দিল, ভাল।
-ভাল? শুধু ভাল? কেন খুব ভাল নয়?
সুনীল এবার মনীষাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বলল, খুব ভাল।
ওকে আর একটু জড়িয়ে ধরল মনীষা। বলল, এই সত্যি করে বলো না। আমার মন রাখার জন্য বলছ? সত্যি ভাল লাগছে শিলিগুড়িতে শ্বশুর বাড়ী এসে? না কি-
-না, বললাম তো। সত্যিই খুব ভাল লাগছে আমার।
মনীষা যেন কিছু একটা জানে, সেইভাবেই সুনীলকে বলল, এই মায়ের কথা শুনে তুমি খারাপ ভাবে নাও নি তো?
-কেন খারাপ ভাবে নেব কেন? কেন কি হয়েছে?
-তোমাকে বললাম না, মা একটু আমার ঐ রকমই। এখনও ছেলেমানুষি ভাবটা রয়ে গেছে।
-না না আমি কিছু মনে করিনি। তুমি এর আগে বলেছ তো আমাকে।
মনীষা এবার যেন একটু নিশ্চিন্ত হল। মনীষার মা এবার দুকাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। চায়ের কাপদুটো ওদের দুহাতে ধরিয়ে উনিও বিছানার একপাশে বসলেন। মনীষাকে বললেন, জানিস মনি(মনীষার ডাকনাম), তোরা যখন গোয়াতে ঘুরতে গেলি, তখন আমি তোর বাবাকে বলছিলাম, মনীষার কপালটা খুব ভাল, ওর বর দেখো কেমন ওকে গোয়াতে নিয়ে গেছে। আর তুমি কিনা সেই পুরীতে একবার নিয়ে গিয়েছিলে, তাও অনেকবার বলার পর। তোর বাবা এখনও আমায় গোয়া দেখাতে পারল না।
মনীষা চা খেতে খেতে মাকে একটু সান্তনা দেবার চেষ্টা করছিল, বলল, তুমি সেভাবে বাপিকে
বলোই নি। নইলে বাপী তোমাকে ঠিক নিয়ে যেত।
বলোই নি। নইলে বাপী তোমাকে ঠিক নিয়ে যেত।
-হ্যাঁ তোর বাপী আর আমায় নিয়েই গেছে। খালি তো ব্যাবসা আর কাজ নিয়ে পড়ে আছে। এই দেখ তোরা এলি, অমনি উনি ছুটছেন রাজস্থানে। কি না ব্যাবসার কন্ট্রাক্ট ধরতে হবে ওনাকে। এত করে বললাম, মনিরা আসছে, তুমি যেও না। শুনলোই না আমার কথা। কালই ছুটছে রাজস্থানে।
প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিয়ে সুনীল বলল, আপনি মানে তুমি গোয়াতে যাবে মা?মনীষার মা তাকালেন সুনীলের দিকে। যেন ভীষন রকম আনন্দ হয়েছে একটা। সুনীলকে বললেন, তুমি আমাকে নিয়ে যাবে সুনীল?
-কেন যাব না? এরপরের বারে আমরা সবাই যাব একসাথে। মনীষা আমি তুমি আর বাবা। আমরা চারজন একসাথে। আমি নিয়ে যাব তোমাদের।
মনীষার বাবার কথা শুনে মা একটু ফোড়ণ কেটে স্বামী সন্মন্ধে বললেন, ও যাবে কিনা জানি না। তবে আমি তো যাবই। এক পায়ে রাজী। কতদিন সমুদ্র দেখিনি।
মনীষা একটু ইয়ার্কি মেরে বলল, মা দুটোই কিন্তু সমুদ্র। একটা বঙ্গোপসাগর আর একটা আরব সাগর। তফাৎ কিছু নেই।
-তুই আমাকে আর ভূগোল চেনাস না। আমি সব জানি। বাপির সাপোর্টে কথা বলে, আমার মন গলানোর চেষ্টা করবি না কিন্তু বলে দিচ্ছি।
মায়ের রকম দেখে সুনীল মনীষা দুজনেই হাসছিল। একটু পরে মনীষা উঠে পাশের ঘরে গেল। মনীষার মা একটু সুনীলের কাছাকাছি সরে এসে ওকে বললেন, এই গোয়াতে গিয়ে তোমরা কি করলে? খুব আনন্দ করেছ না? মনীষা তোমাকে আনন্দ দিয়েছে খুব? বলো না একটু শুনি।
মহিলার মাথায় নিশ্চই ক্র্যাক আছে। নইলে জামাইকে এমন প্রশ্ন কেউ করে? সুনীল বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। রেগেমেগে বলেই দিতে যাচ্ছিল, এসব প্রশ্ন আমাকে কেন? নিজের মেয়েকেই জিঞ্জাসা করো না। তারপর আবার মনীষার কথা চিন্তা করে নিজেকে সহজ করে নিল। মনীষার মাকে বলল, মা তুমি ভীষন ইয়ার্কী মারো। খালি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছ।
একটু বিচলিত দেখাচ্ছিল সুনীলকে। শাশুড়ী বড্ড বেশি খোলামেলা প্রশ্ন করছে সুনীলকে। হাজার হলেও, এসব প্রশ্ন জামাইকে করা যায় না। ও তবু বলল, তোমার মেয়ে সবসময় আমাকে খুশিতে রাখে। মনীষার কাছ থেকে আমি আদর ভালবাসা সবসময়ই পাই।
সুনীলের হাতটা ধরে মনীষার মা বললেন, জানো তো আমারও খুব প্রেম করতে ইচ্ছে করে তোমাদের মতন।
মহিলা হাতটা এমন ভাবে চেপে ধরেছিলেন, সুনীলের যেন কারেন্ট লাগছিল। শরীরের মধ্যে দিয়ে কি যেন একটা প্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। চেষ্টা করেও মনীষার মায়ের চেপে ধরা হাতটা থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে পারছিল না। হেসে বলল, প্রেম করার বয়সটা তো এখনও ফুরিয়ে যায়নি মা। বাবার সাথে তো আপনি প্রেম করতেই পারেন। উনি তো আপনার জন্য একেবারে পাগল।
-কার কথা বলছ তুমি। মনীষার মা এবার একটু ভূরু কূঁচকে সুনীলের দিকে তাকালেন।
-কেন বাপীর কথা।
-দূর তুমি ক্ষেপেছ? ওর তো কপাল ভাল, তাই আমি বিয়ে করেছিলুম ওকে। নইলে আমার কি পাত্রের অভাব? ডজন খানেক ছেলে ছিল লাইন দিয়ে আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি কাউকেই করলাম না। শেষ পর্যন্ত মনীষার বাপীকেই করলাম।