25-06-2021, 08:17 PM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:34 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বেশ কিছুদিন পর। নিঝুমের বাবার অপারেশন হয়ে গেছে। বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে। এখন দেড় মাসের বিশ্রাম শুধু। অনেকেই আসছে দেখতে। নিবিড় আর তার মাও আসেন এক বিকেলে। এসে আঙ্কেলের সাথে দেখা করে নিঝুমের সাথে ওর রুমে চলে আসে নিবিড়। এই কথা সেই কথার পর অনন্যার কথায় আসে। ওর কথা শুনে নিঝুমের মনে হয় অনন্যাকে ভাল লাগতে শুরু করেছে তার। তাই খুনসুটি করে আবার। অনন্যাকে নিবিড়ের “বউ” বলে ডাকা শুরু করে। নিবিড়ের দিক থেকেও তেমন আপত্তি দেখা যায় না। তার কাছে এটা শুধুই নিঝুমের দুষ্টুমি। তাই সে-ও সাড়া দেয় এই দুষ্টুমিতে। কথায় কথায় নিবিড়কে আবারও স্যরি বলে নিঝুম রূপার ব্যাপারটা নিয়ে। সেই ঘটনার পর আজই তাদের প্রথম দেখা। তাই সামনাসামনি ক্ষমা চেয়ে নেয় নিঝুম। কিন্তু নিবিড় তাকে একটা অদ্ভুত কথা বলে, “তুই কখনও স্যরি বলবিনা নিঝু। তোর মুখে স্যরি মানায় না। তুই স্যরি বললে তোকে বড় দুর্বল লাগে।” এক মুহূর্ত নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে নিঝুম। তারপর চোখ সরিয়ে কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে নিবদ্ধ করে আবার, নিবিড়ের মোবাইল থেকে কম্পিউটারে গান নিচ্ছে সে। বুঝতে পারে নিবিড় এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে। কান লাল হয়ে উঠতে থাকে। নিবিড় তা পরিস্কারভাবেই দেখতে পাচ্ছে। তাও চোখ সরায় না। কিছুক্ষণ কোন কথা বলে না দুজনের কেউই। অস্বস্তি চেপে ধরতে থাকে নিঝুমকে। মরিয়া হয়ে কথা খুঁজতে থাকে সে। আকাশের কথা তোলে। এবং ভুলটা করে। নিবিড় আবার খেপে যায়। নিঝুমের হাতটা মাউসে ধরে ছিল সে। এক ঝটকায় মাউসটা ঠেলে সরিয়ে দেয়। তবে নিজের হাতের নিচ থেকে নিঝুমের হাতটা সরায় না। আলতো করে চাপ দিয়েই রাখে। বলে, “দ্যাখ নিঝুম, এই ছেলেকে আমার ভাল লাগেনা। তুই কেন ওকে মেসেজ দিস আর আমাকে একটা খোঁজও দিস না?” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই নিঝুম “কাজ আছে” বলে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ফিরে এসে দেখে কম্পিউটার টেবিলের সামনের চেয়ারে নিবিড় বসে আছে। বিছানা কম্পিউটার থেকে অনেক দূরে। ওখানে বসলে কথা বলে আরাম পাওয়া যাবেনা। ঘরে একটাই মাত্র চেয়ার। চেয়ারের পাশে ছোট্ট একটা টুল। না বসে টুলের এপাশের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় নিঝুম চুপচাপ। ওর সাড়া পেয়ে নিবিড় মুখ তোলে। জিগ্যেস করে, “আমার প্রশ্নের উত্তর দিলি না তুই?” খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে নিঝুম, কোন প্রশ্নের কথা বলা হচ্ছে। কোন ভণিতায় যায় না সে। সরাসরি বলে, “তোর সাথে আমার সম্পর্কটা কী নিবিড়? যে রোজ খোঁজ দিতে হবে? আমি আমার সব বন্ধুকেই, যাদের মোবাইল আছে, তাদের মিসডকল দিই প্রায়ই। বৃষ্টির সাথে তো তোর এখন যোগাযোগ হয় না। ওর আর আমার মধ্যে তো রীতিমত কম্পিটিশন হয় মিসডকল দেওয়ার। তবে ও তো কখনও এভাবে খেপে যায় না একদিন মিসডকল না দিলে। মন খারাপ করে অবশ্য, পরদিন ক্লাসে গেলে বলে যে আগের দিন ওর মিসডকলের রিপ্লাই দিইনি কেন?। সেটা অন্য জিনিস। তুই তো আমাকে একদম বকা দিস। আর আকাশকে নিয়েই বা তোর এত লাগে কেন? তুই খুব ভালমতই জানিস আকাশ একজনকে পছন্দ করে। ওর আর আমার মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু ছিল না, নেইও। আগেও বলেছি এটা, এখনও বলছি, সারাজীবন বলব। আর তুই সেদিন বললি তুই নাকি আকাশকে নিয়ে জেলাস। কিসের জেলাসি তোর? ও তোর বেস্টফ্রেন্ডকে কেড়ে নেবে ভাবছিস? ভেবে থাকলে আর ভাবিস না। আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু তুই ছিলি, তুইই থাকবি আজীবন। আর এটা তুই খুব ভালভাবেই জানিস। তাও কিসের জেলাসি তোর ওকে নিয়ে? এমন যদি হত যে আমি তোর গার্লফ্রেন্ড জাতীয় কিছু তাও নাহয় এক কথা ছিল। কিন্তু তুই তো অনন্যার প্রতি দুর্বল, তাহলে আমাকে নিয়ে তোর কেন এত হিংসা করতে হয় আকাশকে? আজ আমার উত্তর চাই নিবিড় সব প্রশ্নের।” একসাথে এতগুলো কথা বলে একটু ক্লান্ত হয়ে পরে নিঝুম। চুপ করে যায়। নিবিড় উঠে দাঁড়ায়। ভীষণ রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে। ইচ্ছে করে নিঝুমকে দেওয়ালটার সাথে চেপে ধরে কঠোর শাস্তি দেয়। কিন্তু কিছুই করেনা সে। ওর আর নিঝুমের মাঝে টুলটা আছে। পা দিয়ে ওটাকে সরিয়ে দিয়ে নিঝুমের কাছে আসে। ফরসা মুখটা ঈষৎ রক্তিম হয়ে আছে। নিঝুমের মতে সে সুন্দরী না হলেও তার বন্ধুবান্ধবদের মতে সে অন্য অনেকের চেয়ে অনেক সুন্দরী, কিউট যাকে বলে। কপালের উপর একগোছা অবাধ্য চুল এসে পড়েছে, রাগের কারণে নাকের পাটা একটু ফুলে আছে আর ছোট্ট গোলাপি ওষ্ঠাধর। চেহারা থেকে শিশুসুলভ নিষ্পাপ ভাবটা এখনও যায়নি। এই কমনীয়তা তার সৌন্দর্যে আলাদা একটা মাত্রা এনে দিয়েছে। সাঁঝের আলো-আঁধারিতে নিরাভরণ, কোনরূপ প্রসাধনহীন হওয়া সত্ত্বেও নিঝুমের সহজ, সাধারণ, স্বচ্ছ রূপ যেন নির্মল এক আলো ছড়াচ্ছে। কিছু একটা বলতে যেয়েও এই মুখের দিকে তাকিয়ে বলা হয় না নিবিড়ের। অপলক চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। কয়েক মুহূর্ত আগেই যাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করেছে নির্মম কঠোরতায়, এই মুহূর্তে তাকেই ভীষণ ভীষণ আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে। নিঝুমও চোখ তুলে সরাসরি নিবিড়ের চোখে তাকায়। তবে সে দৃষ্টিতে রয়েছে কাঠিন্য, রয়েছে একরাশ প্রশ্ন। দীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্ত চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে দুজন। নিবিড়ের গভীর দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনা নিঝুম। চোখ নামিয়ে নেয়। আবার নীরবতা নেমে আসে ওদের মাঝে। কিন্তু এই নির্বাক মুহূর্তগুলো দুই কিশোরকিশোরীর মনের গহীনেই ছাপ ফেলে যেতে থাকে।