25-06-2021, 08:44 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:31 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ক্লাস চলছে। এখন কথা বলার উপায় নেই। সুতরাং ধৈর্য ধরতেই হয় নিঝুমকে। দীর্ঘ দেড়টি ঘণ্টা পর সে সুযোগ পায় রূপার সাথে কথা বলার। ক্লাস শেষ তখন। রূপা চলে যাচ্ছিল। নিঝুম ডেকে বসায়, “রূপা একটু বসবে? কথা আছে।” পাশ থেকে নীলিমারও হাত চেপে ধরে রাখে। রূপা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে পড়ে আবার। ক্লাসটা খালি হবার সময় দেয় নিঝুম। যখন ক্লাসে তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই, তখন মুখ খোলে।কিন্তু সাথে সাথেই আবার বন্ধ করে ফেলে, এত সিরিয়াস কথা তো সে জীবনে কারো সাথে বলেনি। সারাজীবন বন্ধুদের সাথে ফাজলামি, দুষ্টুমি করে সময় কেটেছে তার। বন্ধুমহলের অন্যতম প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই নিঝুম। এখন এত গুরুত্বপূর্ণ, গম্ভীর কথা সে কীভাবে বলবে? তাও আবার নিজের না, বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাব দিতে হবে! “ইশশি বড্ড ভুল হয়েগেছে, প্র্যাকটিস করা উচিত ছিল একটু।”, ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাতে থাকে নিজের অজান্তেই।“কী হয়েছে নিঝুম? কী বলবে?”, রূপার প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় নিঝুম। অবশেষে যা থাকে কপালে ভেবে হড়বড় করে বলে ফেলে, “রূপা নিবিড় তোমাকে ভীষণ পছন্দ করে। আমি জানি তুমিও ওকে পছন্দ কর। কিন্তু কেউই কাউকে বলতে পারছনা। তাই আমিই নিবিড়ের পক্ষ থেকে তোমাকে প্রপোস করছি।” বলে যেমন আচমকা শুরু করেছিল তেমন আচমকাই চুপ হয়ে যায় নিঝুম। সারা ক্লাসরুমে কেমন একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সবকিছু বড় চুপচাপ। রূপা চেয়ে আছে নিঝুমের দিকে। তাকিয়ে থাকতে পারেনা নিঝুম রূপার চোখে। নিলীমার হাত থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত নিবিড়কে মেসেজ করে দেয়, “বললাম।” তারপর আবার তাকায় রূপার দিকে। কী উত্তর দেবে রূপা?
পরদিন। নিবিড় পাগলের মতো নিলীমাকে ফোন করে যাচ্ছে, “কোথায় গেল ও? যেভাবে হোক ওকে খুঁজে দে নিলীমা। আমি তো ওকে মানা করেছিলাম, ও শুনল না।” সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকটা মানুষ তন্ন তন্ন করে খোঁজে নিঝুমকে। বাসায় ফোন দিলে ব্যস্ত আছে বলে ফোন ধরছে না, মোবাইলও নেই যে ফোন করে পাওয়া যাবে। নিবিড়ের অবস্থা পাগলপ্রায়। কী করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছেনা। শহরে থাকলে তাও মাকে বলে কোনভাবে নিঝুমের বাসায় চলে যাওয়া যেত, কিন্তু সে তো আছে মামাবাড়ি! কেন যে এত বোকা আর জেদী মেয়েটা!!! নিজের উপরই রেগে যায় নিবিড়।গতকালের ঘটনা ভেসে আসে চোখের সামনে। কাল নিঝুম মেসেজ দেওয়ার পর সে সাথে সাথে রিপ্লাই করেছিল রূপা কী বলেছে জানতে চেয়ে।বেশ কিছুক্ষণ পর নিঝুম শুধু একটা শব্দ লিখেছে রিপ্লাইয়ে, “স্যরি।” তারপর থেকে আর কোন খোঁজ পায়নি নিবিড় নিঝুমের। নিবিড় জিগ্যেস করেছে কিসের জন্য স্যরি, কোন রিপ্লাই নেই। একঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর আর না পেরে ফোন দিয়েছে নিলীমার নাম্বারে। নিলীমা ফোন ধরে জানিয়েছে নিঝুম চলে গেছে। আর জানিয়েছে কী হয়েছে। নিঝুমের কথার পর রূপা একটা বিস্ময়ের অভিব্যক্তি নিয়ে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তারপর বলেছে, “কী বলছ তুমি নিঝুম? এটা সম্ভব না। আমার পরিবারের লোকেরা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। নিবিড় আর আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই। নিবিড় আমাকে পছন্দ করেনা। আমরা শুধুই বন্ধু।” এরপর চলে গেছে। নিঝুম বসে থেকেছে বজ্রাহতের মতো। টেরও পায়নি তার পাশে বসে থাকা নিলীমা কখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে রূপার উত্তর শুনে। কিন্তু নিঝুম? তার চোখ যে ভিজে উঠেছে জলে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপটপ করে ঝরতে থাকে নীরবে। নিলীমা কী বলে সান্ত্বনা দেবে বুঝে উঠতে পারেনা। বান্ধবীর অবস্থা দেখে আবারও ভাবতে শুরু করে, এই মেয়ে এত বোকা কেন? মুখে বলে, “কাঁদিস না নিঝুম। আমি তো তোকে আগেই মানা করেছিলাম।” নিঝুম কাঁদতে কাদতেই বলে, “কিন্তু রূপার চোখে যে আমি নিবিড়ের জন্য ভালবাসা দেখেছি রে, সেটা তো মিথ্যা নয়। ও কেন মানা করল? এখন নিবিড়ের কী হবে?” নিলীমা বলে, “রূপা কেন মানা করে দিল তা তো আমি জানিনা। কিন্তু নিবিড় শুনলে হয়তো খুশিই হবে।” অঝোর কান্নার মধ্যেও ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিঝুম, “খুশি হবে কেন?যাকে পছন্দ করে সে মানা করে দিলে কি কেউ খুশি হয়??” নিলীমা উত্তর দেয় না। নিঝুম আস্তে আস্তে বলে এরপর, “কিন্তু নিলী, আমি যে ওদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিলাম। এরপর তো রূপা আর নিবিড় কখনোই স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেনা হয়তো। ভালবাসা তো গেলই,আমার জন্য নিবিড় তার বন্ধুও হারিয়ে ফেলল।” অদ্ভুত এক অপরাধবোধে ছেয়ে যায় নিঝুমের মন। কিছুতেই কান্না থামাতে পারেনা সে। নিলীমা ওকে বলে, “নিবিড় মেসেজ দিয়েছে,রিপ্লাই কর।” নিঝুম বলে, “কী রিপ্লাই করব? আমি যে ওর কাছে অপরাধী। আমি চাইনা ওর জীবনে আর আমি থাকি। একটার পর একটা ক্ষতিই করে যাবো হয়তো এরপর। আমি আর ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখব না। ” বলে নিবিড়কে “স্যরি” লিখে পাঠিয়ে বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে, নিলীমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। সবকিছু শোনার পর নিবিড় রূপাকে নিয়ে একটা কথাও বলেনি, শুধু পাগলের মতো নিলীমাকে বারবার অনুরোধ করেছে নিঝুমের একটা খোঁজ করে দিতে। আজ দ্বিতীয় দিন, নিঝুমের এখনও কোন খোঁজ নেই। কাল থেকে নিলীমা, প্রজ্ঞা কাউকে বাদ রাখেনি নিবিড় নিঝুমকে একটা বার খুঁজে দেওয়ার কথা বলতে। কিন্তু নিঝুম কারো কোন যোগাযোগেরই সাড়া দিচ্ছেনা। মামাবাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে নিস্ফল আক্রোশে বাতাসে থাবা মারে নিবিড়। ইচ্ছে হয় এখনই নিঝুমের কাছে ছুটে যায়, এই পাগলামি আর টেনশনের জন্য অবুঝ মেয়েটাকে দু-চার ঘা লাগিয়ে বুকে টেনে নেয়, বলে, “নিঝুম…” কিন্তু কী বলবে কোনমতেই ভেবে পায়না নিবিড়। নিজের কাছেই নিজেকে বড় অসহায় মনে হতে থাকে।
পরদিন। নিবিড় পাগলের মতো নিলীমাকে ফোন করে যাচ্ছে, “কোথায় গেল ও? যেভাবে হোক ওকে খুঁজে দে নিলীমা। আমি তো ওকে মানা করেছিলাম, ও শুনল না।” সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকটা মানুষ তন্ন তন্ন করে খোঁজে নিঝুমকে। বাসায় ফোন দিলে ব্যস্ত আছে বলে ফোন ধরছে না, মোবাইলও নেই যে ফোন করে পাওয়া যাবে। নিবিড়ের অবস্থা পাগলপ্রায়। কী করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছেনা। শহরে থাকলে তাও মাকে বলে কোনভাবে নিঝুমের বাসায় চলে যাওয়া যেত, কিন্তু সে তো আছে মামাবাড়ি! কেন যে এত বোকা আর জেদী মেয়েটা!!! নিজের উপরই রেগে যায় নিবিড়।গতকালের ঘটনা ভেসে আসে চোখের সামনে। কাল নিঝুম মেসেজ দেওয়ার পর সে সাথে সাথে রিপ্লাই করেছিল রূপা কী বলেছে জানতে চেয়ে।বেশ কিছুক্ষণ পর নিঝুম শুধু একটা শব্দ লিখেছে রিপ্লাইয়ে, “স্যরি।” তারপর থেকে আর কোন খোঁজ পায়নি নিবিড় নিঝুমের। নিবিড় জিগ্যেস করেছে কিসের জন্য স্যরি, কোন রিপ্লাই নেই। একঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর আর না পেরে ফোন দিয়েছে নিলীমার নাম্বারে। নিলীমা ফোন ধরে জানিয়েছে নিঝুম চলে গেছে। আর জানিয়েছে কী হয়েছে। নিঝুমের কথার পর রূপা একটা বিস্ময়ের অভিব্যক্তি নিয়ে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তারপর বলেছে, “কী বলছ তুমি নিঝুম? এটা সম্ভব না। আমার পরিবারের লোকেরা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। নিবিড় আর আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই। নিবিড় আমাকে পছন্দ করেনা। আমরা শুধুই বন্ধু।” এরপর চলে গেছে। নিঝুম বসে থেকেছে বজ্রাহতের মতো। টেরও পায়নি তার পাশে বসে থাকা নিলীমা কখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে রূপার উত্তর শুনে। কিন্তু নিঝুম? তার চোখ যে ভিজে উঠেছে জলে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপটপ করে ঝরতে থাকে নীরবে। নিলীমা কী বলে সান্ত্বনা দেবে বুঝে উঠতে পারেনা। বান্ধবীর অবস্থা দেখে আবারও ভাবতে শুরু করে, এই মেয়ে এত বোকা কেন? মুখে বলে, “কাঁদিস না নিঝুম। আমি তো তোকে আগেই মানা করেছিলাম।” নিঝুম কাঁদতে কাদতেই বলে, “কিন্তু রূপার চোখে যে আমি নিবিড়ের জন্য ভালবাসা দেখেছি রে, সেটা তো মিথ্যা নয়। ও কেন মানা করল? এখন নিবিড়ের কী হবে?” নিলীমা বলে, “রূপা কেন মানা করে দিল তা তো আমি জানিনা। কিন্তু নিবিড় শুনলে হয়তো খুশিই হবে।” অঝোর কান্নার মধ্যেও ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিঝুম, “খুশি হবে কেন?যাকে পছন্দ করে সে মানা করে দিলে কি কেউ খুশি হয়??” নিলীমা উত্তর দেয় না। নিঝুম আস্তে আস্তে বলে এরপর, “কিন্তু নিলী, আমি যে ওদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিলাম। এরপর তো রূপা আর নিবিড় কখনোই স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেনা হয়তো। ভালবাসা তো গেলই,আমার জন্য নিবিড় তার বন্ধুও হারিয়ে ফেলল।” অদ্ভুত এক অপরাধবোধে ছেয়ে যায় নিঝুমের মন। কিছুতেই কান্না থামাতে পারেনা সে। নিলীমা ওকে বলে, “নিবিড় মেসেজ দিয়েছে,রিপ্লাই কর।” নিঝুম বলে, “কী রিপ্লাই করব? আমি যে ওর কাছে অপরাধী। আমি চাইনা ওর জীবনে আর আমি থাকি। একটার পর একটা ক্ষতিই করে যাবো হয়তো এরপর। আমি আর ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখব না। ” বলে নিবিড়কে “স্যরি” লিখে পাঠিয়ে বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে, নিলীমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। সবকিছু শোনার পর নিবিড় রূপাকে নিয়ে একটা কথাও বলেনি, শুধু পাগলের মতো নিলীমাকে বারবার অনুরোধ করেছে নিঝুমের একটা খোঁজ করে দিতে। আজ দ্বিতীয় দিন, নিঝুমের এখনও কোন খোঁজ নেই। কাল থেকে নিলীমা, প্রজ্ঞা কাউকে বাদ রাখেনি নিবিড় নিঝুমকে একটা বার খুঁজে দেওয়ার কথা বলতে। কিন্তু নিঝুম কারো কোন যোগাযোগেরই সাড়া দিচ্ছেনা। মামাবাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে নিস্ফল আক্রোশে বাতাসে থাবা মারে নিবিড়। ইচ্ছে হয় এখনই নিঝুমের কাছে ছুটে যায়, এই পাগলামি আর টেনশনের জন্য অবুঝ মেয়েটাকে দু-চার ঘা লাগিয়ে বুকে টেনে নেয়, বলে, “নিঝুম…” কিন্তু কী বলবে কোনমতেই ভেবে পায়না নিবিড়। নিজের কাছেই নিজেকে বড় অসহায় মনে হতে থাকে।