25-06-2021, 08:42 AM
(This post was last modified: 05-07-2021, 11:30 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নিবিড় এখনও মামাবাড়ি আছে। আজ সকালে মামাত ভাইয়ের সাথে বেড়াতে বের হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আছে, এমন সময় ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে বের করে দেখে নিলীমার নাম্বার। ভ্রু কুঁচকিয়ে ফেলে। নিলীমার তো তাকে ফোন করার কথা না। কোনদিন কথা বলেনি নিলীমার সাথে ফোনে। নিঝুম পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তারপর টুকটাক কথা হয়েছে মেসেজে। তাহলে ফোন কেন দিল? আজ সকাল থেকে আবার নিঝুমেরও কোন খবর নেই, মিসডকল দেয়নি। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে যায়। কলব্যাক করে নিবিড়। প্রথম রিং হতেই ওপাশ থেকে একটা উচ্ছল গলা ধমকে ওঠে, “এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে!?” এক ঝলক দমকা হাওয়া বয়ে গেল যেন নিবিড়ের চারপাশে। এই কণ্ঠ, এই ধমকের সুর,এ যে তার ভীষণ ভাললাগার! “নিঝুম! তুই?”, কয়েক সেকেন্ড পরে কোনরকমে বলতে পারে। নিঝুম বলে, “হ্যাঁরে আমি! এত অবাক হবার কী আছে শুনি?” “না মানে আমার সাথে তো ফোনে কথা বলিসনা,সবসময়েই মেসেজেই কথা হয়েছে। আজই প্রথম ফোন করলি, তাও আবার নিলীমার নাম্বার থেকে তাই একটু অবাক হলাম।”, বলে নিবিড়। এতক্ষণে কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। নিঝুমেরও মনে পরে যে হ্যাঁ, আজই তো সে নিবিড়কে প্রথম ফোন করছে পারসনালি যোগাযোগ শুরু হবার পর থেকে। বলে, “হু জানিসই তো আমার ফোন নেই। আর বিনা দরকারে ফোন করে বিরক্তই বা করব কেন তোকে বল?” নিবিড়ের দিক থেকে এই প্রশ্নের কোন উত্তর আসেনা। কী বলবে সে এই মেয়েকে? দরকারের বাইরেও যে কী দরকার থাকতে পারে তা একে কে বোঝাবে? নিঝুম কিছুক্ষণ উত্তরের আশায় থেকে বলে, “কেমন আছিস?মামাবাড়ি কেমন ঘুরছিস?” নিবিড় বলে, “ভালো। তুই কেমন আছিস?” ঝর্ণার বহমান পানির মতো কলকল করে ওঠে এবার নিঝুমের কণ্ঠ, “আমি তো আজ থেকে অনেক ভালো থাকব! আজ যে আমার বন্ধুকে তার প্রিয়তমার সাথে মিলিয়ে দেবো!”, বলে হাসতে থাকে নিঃশব্দে। নিবিড় হাসির শব্দ না শুনতে পেলেও কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারে যে নিঝুমের ঠোঁটে এখন একটুকরো হাসিঝলমল করছে। কিন্তু কথাটা শুনে যে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। কীসের কথা বলছে নিঝুম তা সে খুব ভালমতই বুঝতে পারছে। আর এটাও বুঝতে পারছে যে আজ আর আর ছাড়াছাড়ি নেই, বলেই ছাড়বে নিঝুম।তবুও শেষ চেষ্টা করে দেখে, না বুঝার ভান করে, “কী বলছিস? কার কি প্রিয়তমা না ছাতা??” নিঝুম রাগেনা। নিবিড়ের চালাকি তার কাছে ধরা পড়ে গেছে। ইচ্ছে করেই না বুঝার ভান করছে নিবিড়। এবার একটু শব্দ করেই হেসে ওঠে সে, “আহা বাছাধন বোঝনা কিছু তাই না?আচ্ছা ভালমত বুঝিয়ে দিচ্ছি, শোন, আজ আমি রূপাকে বলে দেবো যে তুই ওকে পছন্দ করিস।এবার বুঝেছিস তো? দ্বিতীয়বার যাতে আবার না বুঝান লাগে।” “নিঝু পাগলামি করিস না!আমি ওকে পছন্দ করিনা।”, বেশ একটু রাগত কণ্ঠে বলে ওঠে নিবিড়। নিঝুম শুনতে চায়না,বলে, “পছন্দ করিস না তো ওকে মিসডকল দিতি কেন রোজ?” উত্তর দেয়না নিবিড়। নিঝুম বলে, “কী? উত্তর দিতে পারলিনা তো? কীভাবে দিবি? ওকে পছন্দ করিস যে! আর ও ও তোকে পছন্দ করে রে। আমি গেলাম বলতে।” এবার সাংঘাতিক রেগে যায় নিবিড়, “দুত্তোর! কিচ্ছু বুঝতে চায়না কিছুনা! ঠিক আছে যা বল গে যেয়ে!”, বলে ফোন রেখে দেয়। নিঝুম এহেন রাগে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। আবার ফোন করতে যায় নিবিড়কে, কিন্তু সেই সময়ে রূপাকে আসতে দেখে আর ফোন করেনা, ক্লাসে চলে যায়। যেয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। নিলীমার পাশে যেয়ে ফোনটা ওর হাতে গুঁজে দিতে দিতে ফিসফিস করে বলে, “বলতে বলেছে, কিন্তু খুব রেগে গেছে কেন জানি।” বান্ধবীর বেচারা মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসি চাপতে পারেনা নিলীমা, বলে, “বেশ হয়েছে! তোমার উপর রাগাই উচিত!” নিলীমা জিগ্যেস করতে যাবে “কেন?”, এই সময় রূপা এসে ওদের সামনের সীটে বসে। এখন আর রূপা আর নিবিড়কে নিয়ে কথা বলা যাবেনা বুঝে নিঝুম চুপ হয়ে যায়, শুধু মুচকি হেসে একটা ইশারা করে নিলীমাকে যে এসে গেছে, আর দেরি নেই।নিলীমা আবার নিঝুমের আনন্দ দেখে আনমনা হয়ে পড়তে থাকে।