Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic সমাহার by নীললোহিত
#34
কয়েকবার নাকি ওর গায়ে হাতও তুলেছে। জামাইয়ের এভাবে বদলে যাওয়ার কারণ কি সেটা বুঝতে পারেনি। তবে নাকি মাঝে মাঝে বলত, “তোর বাবা বিয়ের সময় যদি মোটা পণ দিত, তাহলে কোনো চিন্তাই ছিল না।মেয়ে বলেছিল, “আমার বাবা তো দিতেই চেয়েছিল, তোমরাই তো বড় মুখ করে বলেছিলে যে, আমাদের যে কিছু চাই না।” “আমরা কি করে জানব যে, তোর বাবা এরকম ছোটোলোক যে নিজের মেয়েটাকে পর্যন্ত কিছু দেবেনা।” “বাজে কথা বোলো না। বাবা বিয়েতে আমাকে যথাসাধ্য দিয়েছে।” “চুপ কর্ শালী। নাহলে মেরে পুঁতে দেব।ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি তখনই জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলব ঠিক করেছিলাম। আমার হাতদুটো ধরে বলেছিল, “আমার দিব্যি, বাবা, তুমি ওর সঙ্গে কোনো কথা বলবে না। হয়ত তোমাকেও ছোটবড় কথা শোনাতে পারে। তা আমি সহ্য করতে পারব না।আমি কিছু করতে পারিনি। তবে একটা সুখবর দিয়েছিল। নাকি মা হতে যাচ্ছে। বলেছিল, “তুমি দেখো, বাবা। সন্তানের মুখ দেখে সব ভুলে আবার আগের মত হয়ে যাবে।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিলাম, “তাই যেন হয়, মা, তাই যেন হয়।সেই ওর শেষ আসা। তারপর ওকে আর আসতে দেয়নি। কত অনুরোধ, কত উপরোধ করেছি যেন কয়েকটা দিনের জন্য মেয়েটাকে আসতে দেয়। শোনেনি। তবে একবার ফোন করে ওর মাকে বলেছিল জামাইয়ের নাকি ছেলেই চাই। ওদের বংশে কখনো কারো মেয়ে হয়নি। আমরা বলেছিলাম ছেলে হোক বা মেয়ে সবই ভগবানের ইচ্ছা। বাবা-মায়ের কাছে সন্তান কখনো আলাদা হয়না। তারপর যথাসময়ে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা ওখানে থাকতে পারিনি। তবে - ফোন করে সুখবরটা দিয়েছিল। মেয়ে হয়েছে। খুব সুন্দর দেখতে। খুব আনন্দ হয়েছিল শুনে। সাথে একটু ভয়ও হয়েছিল। তবে বলেছিল জামাই নাকি কিছু বলেনি। ভেবেছিলাম হয়তো মেনে নিয়েছে। ভুল ভেবেছিলাম আমি। সাতদিন পর ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। কথা ছিল একমাস পর মেয়েকে নিয়ে এখানে আসবে। খুব খুশী ছিলাম আমি। অনেকদিন পর মেয়ের মুখ দেখব, নাতনির মুখ দেখব। খালি ওদের আসার দিন গুনতাম। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। ওদের আসার মাত্র চারদিন আগে হঠাৎ করে খবর এল যে মেয়েটাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল। কাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল। হঠাৎ কি এমন হল যে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল। আর দেরি না করে ছুটে গেলাম। হাসপাতালে পুলিশ দেখে আশঙ্কা আরো বেড়ে গেল। তারপর সব শুনে পায়ের তলা থেকে মাটিটা সরে গেল। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। বসে পড়েছিলাম। পুলিশ জানালো মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওরা ওর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতে থাকে। ওর উপর চাপ দিতে থাকে। মেয়েটাকে মেরে ফেলতে হবে। শোনেনি। তার ফলে অত্যাচারের মাত্রা আরোও বাড়তে থাকে। কিন্তু কোনো মতেই নিজের সন্তানের ক্ষতি হতে দেয়নি। ওর সঙ্গে না পেরে উঠে ওর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জানালা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে দেখে প্রতিবেশীরা ছুটে যায়। জামাই পালিয়ে যায়। কিন্তু ওর মা আর ভাইকে ধরে ফেলে সবাই। ওরাই দরজা ভেঙ্গে মেয়েটাকে উদ্ধার করে। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। পুলিশ আসে, জামাইয়ের মা আর ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। জামাইয়ের খোঁজ চলছে। আমি তখন সেসব কথ শুনতে চাইনি। আমি শুধু এটুকু শুনতে চাইছিলাম যে আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো। কিন্তু ডাক্তার কোনো আশার কথা শোনাতে পারল না। বলল অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাঁচার আশা খুব কম। আমি আর শুনতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এমন সময় একজন নার্স এসে বলল ওকে বলা হয়েছে যে আমরা এসেছি। তা শুনে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। আমি গেলাম। একটা বেডের উপর শুয়ে আছে ও। দেখে চিনতে পারলাম। যেন একদলা মাংস। বোঝা যাচ্ছে না বেঁচে আছে কিনা। খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে কেবল বুকের ওঠানামা টের পাওয়া যায়। ওটুকুই ওর বেঁচে থাকার প্রমাণ। নার্স বলল ওর কথা বলতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি যেন ওকে বেশি কথা না বলাই। আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। নার্স চলে গেল। আমি ওর বেডের পাশে গিয়ে বসলাম। গলা দিয়ে ঘড়ঘড় করে আওয়াজ বের হল, “বাবা!” আমি আর কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। বলল, “কেঁদো না বাবা। শুধু আমার মেয়েটাকে দেখো। তোমরা ছাড়া ওর যে আর কেউ নেই। তুমি যেন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না, বাবা।” “ওসব কথা বলিস না, মা। সব ঠিক হয়ে যাবে।” “তুমি আমাকে কথা দাও, বাবা, তুমি ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কথা দাও।কোনোরকমে কান্না চাপতে চাপতে বললাম, “কথা দিলাম, মা।” “খুব শান্তি পেলাম, বাবা। এবার আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারব।ব্যাস। এটাই ওর শেষ কথা। আরো কয়েকঘন্টা যন্ত্রণার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থেকে অবশেষে মারা যায় আমার মেয়ে। আমার মেয়ের মত আরোও আরোও মেয়েরা কিন্তু মরছে। আমরা মুখে যতই মেয়েদের পক্ষে কথা বলিনা কেন, আমরা কিন্তু নিজেদের হাতে তাদের মারছি। আর মেয়েরা? সীতা কেবল একবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটা মেয়ে প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহুর্ত, প্রত্যেক ক্ষণ তাদের অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে চলেছে। কখনও মায়ের গর্ভে, কখনও বাড়িতে, কখনও কলেজে, কখনও পাড়ার গলির মোড়ে, আবার কখনও শ্বশুরঘরে। সর্বত্র আমরা তাদের অগ্নিপরীক্ষা নিচ্ছি। আর ওরা মুখ বুজে সেইসব অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে চলেছে। চিন্তার জালটা ছিন্ন করে আমার স্ত্রী পাশে এসে বসল। কোলে মেয়েটা। আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। এখনও পর্যন্ত ওর মুখ আমি দেখিনি। আর দেখতেও চাইনা। যার কারণে আমার মেয়েটা এই পৃথিবী থেকে চলে গেল, তার মুখদর্শন আমি করব না। হঠাৎ আমার স্ত্রীর গলা কানে গেল, “দেখো, একদম মায়ের মত মুখ পেয়েছে মেয়েটা।বজ্রাহতের মত ঘুরে তাকালাম। তারপর মেয়েটাকে নিজের কোলে নিয়ে নিলাম। ঘুমাচ্ছে। নিশ্চিন্তের ঘুম। ভাঙ্গালাম না। প্রথমবার ভাল করে ওর মুখের দিকে তাকালাম। একদম মায়ের মত দেখতে হয়েছে। ছাব্বিশ বছর আগে ওর মাকেও এইভাবে আমার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখেছি। আর আজও দেখছি। এই প্রথমবার মনে হল, না, আমার মেয়ে মরেনি। বেঁচে আছে। এই ছোট্ট মেয়েটার মধ্যে বেঁচে আছে। প্রথমবারে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এবার ওকে আমি কোনো অগ্নিপরীক্ষা দিতে দেবো না। কোনোমতেই না।


সমাপ্ত
[+] 7 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সমাহার by নীললোহিত - by ddey333 - 23-06-2021, 05:06 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)