23-06-2021, 05:04 PM
কথায় বলে মেয়েরা বাপ-ন্যাওটা বেশী হয়। আমার মেয়েটাও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটবেলা থেকেই বাবা বলতে অজ্ঞান ও। রাত্রিবেলা আমার কাছে ছাড়া ঘুমাতে চাইত না। প্রতিদিন রাত্রিবেলা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম, তবে ঘুমাত। জন্মের সময় ওর ছোট্ট এক পুঁচকি, ফর্সা তুলোর মত নরম শরীরটাকে হাতে নিয়েও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমিও বাবা হয়েছি। ওর ঐ ছোট্ট শরীর, ধুকপুক করতে থাকা একটুকরো হৃৎপিণ্ড আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল আমার দুহিতার সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা আমার খুব শান্ত আর চাপা স্বভাবের। দুষ্টুমি খুব একটা করত না। তবুও যদি কখনও মায়ের কাছে বকা বা মার খেত, কাঁদত না। বরং সারাদিন গুম হয়ে থাকত। সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরলে আমার কাছে চুপচাপ নালিশ জানাত। ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম আমি। আমার কাছেই ওর যত গল্প। আন্টিদের কথা, স্যারেদের গল্প, বন্ধুদের সাথে করা দুষ্টুমির কথা, সব বলত আমায়। একদমে বকবক করে যেত ও, আর আমি একাগ্রচিত্তে ওর সেই বকবকানি শুনে যেতাম। আমার মতন এমন বাধ্য শ্রোতা ও আর কখনও পায়নি। পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল ও। প্রতিবারে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে রেজাল্ট থাকত ওর। বাড়ি এসে ওর মাকে কখনও রেজাল্ট দেখাত না। বাড়ি এসে আমিই প্রথম রেজাল্ট দেখতাম। পড়াশোনা বাদে একটা বিষয়ে ওর ভয়ানক ন্যাক ছিল। না, নাচ বা গান নয়। খুব সুন্দর আঁকতে পারত ও। কিন্তু কোনদিন কারোর কাছেই আঁকা শেখেনি। যতটুকু আঁকত নিজের চেষ্টায়। তা সত্ত্বেও কি অবলীলায় এঁকে ফেলত সুন্দর সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু কোনদিন ওকে কোনও প্রতিযোগীতায় নাম দেওয়াতে পারিনি। এতটাই লাজুক ছিল ও। নিজের মনে আঁকতেই ভালবাসত ও। সময় নিজের ছন্দে বয়ে চলছিল। আর ছোট কন্যাটি কখন যে ছোট থেকে বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। কলেজ শেষ করে কলেজে ঢুকল। একা একা কলেজে যাতায়াত করতে শুরু করল। আমারও দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। দু’একবার বলেছিলাম যে আমিই ওকে কলেজে ছেড়ে আসব। শুনে বলেছিল, “উফ্ বাবা, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। কলেজে আবার কেউ ছাড়তে যায় নাকি? আমি একাই যাতায়াত করতে পারব।”