Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic সমাহার by নীললোহিত
#31
অগ্নিপরীক্ষা

রাত প্রায় দেড়টা বাজে। কিছুক্ষণ আগেই দাহকার্য শেষ করে বাড়ি ফিরেছি। মনটা খুবই খারাপ। আজ আমার জলজ্যান্ত মেয়েটা মারা গেল। বয়স বেশী নয়, মাত্র ছাব্বিশ। আগুনে পুড়ে সমস্ত শরীরটা ঝলসে গিয়েছিল। কেবলমাত্র একটা মাংসের দলা। যে মেয়েটাকে ভয়ে আমি রান্নাঘরে পাঠাতাম না, সেই মেয়েটাই যখন দাউদাউ করে আগুনে জ্বলছিল, তখন কি করে সহ্য করেছিল ও। কি চিৎকার করছিল নাকি মুখ বুজে নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়েছিল? তা আমি জানি না। রামায়ণে পড়েছিলাম নিজের সতীত্ব প্রমাণ করার জন্য সীতাকেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলছি, একবারের জন্যও ভাবিনি যে আমার মেয়েটাকেও এইভাবে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। আমার ফুলের মত মেয়েটা একটু একটু করে পুড়ে মরছিল, আমার জানোয়ার জামাই আর তার ভাই আর মা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা লুটছিল। চিন্তার জালটা ছিঁড়ে গেল। আবার শুরু হল কান্না। না, আমার নয়। আমার মেয়ের মেয়ে। মানে আমার নাতনি। যত নষ্টের কারণ ও। - আমার মেয়েটাকে খেয়েছে। যদি আমার মেয়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে না আসত, তাহলে আজ আমার মেয়েটাকে এইভাবে দগ্ধে দগ্ধে মরতে হত না। কিছুটা দূরেই দোলনাতে শুয়ে আছে ও। যে দোলনাতে একদিন আমার মেয়ে শুয়ে থাকত, খেলা করত। ঘুম ভেঙ্গে এই মাঝরাতে আবার কান্না জুড়েছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছিল। এইমধ্যেই আবার খিদে পেয়ে গেল? এই রাক্ষসী খিদে নিয়েই তো পৃথিবীতে এসে প্রথমে মাকে খেল। তাতেও খিদে মেটেনি ওর? দোলনার দিকে না তাকিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম, “অ্যাই কে আছিস, চুপ করা না মেয়েটাকে।কেই একজন এসে মেয়েটাকে দোলনা থেকে তুলে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেল। আমি একা বসে আছি। আশেপাশে কেউ কোত্থাও নেই। জানলার গরাদ ঠেলে একচিলতে চাঁদের আলো এসে পড়েছে আমার পায়ের কাছে। চোখদুটো হু হু করে উঠল। আমি আজ কাঁদছে চাইছি। আজ আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়েটা নেই, এটা ভাবতেই পারছি না। একবার মনে হচ্ছে সব মিথ্যে। সব। আমি যা দেখছি, আমি যা শুনছি, আমি যা ভাবছি, সব মিথ্যে। আমার মেয়ে আছে। সে বেঁচে আছে। কাল সকালেই ফোন করবে। বলবে, “বাবা নিয়ম করে প্রেশারের ট্যাবলেটটা খাচ্ছো তো? মনে করে খাবে কিন্তু, ভুলে যেও না যেন। আর বিকেলবেলায় প্রতিদিন হাঁটতে বেরোচ্ছ তো? ওটা আবার বন্ধ করে দিওনা যেন। মনে আছে তো, ডাক্তার তোমাকে তিন কিলোমিটার করে হাঁটতে বলেছে?”
আর আমি বলব, “আমার কথা ছাড়্, তুই কবে আসবি বল্? তোকে অনেকদিন দেখিনি মা, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
এই তো বাবা, পরের সপ্তাহেই যাব। তোমার জামাই আমাকে ট্রেনে তুলে দেবে।
একা একা আসতে পারবি তো? তার চেয়ে জামাইকেই বল্ না, একদিনের জন্য হলেও তোকে যেন দিয়ে যায়।
ওরে বাবা! তার খুব কাজের চাপ। ছুটি পাবেনা। আর বাবা, তুমি না সারাজীবন সেই এক রয়ে গেলে। কতবার আমি একা একা যাতায়াত করেছি বলোতো? তোমার ভয় আর গেল না।
আমি তোর বাবা, চিন্তা তো একটু হবেই, মা। নিজে তো এখন মা হয়েছিস, এবার বুঝতে পারবি সন্তানের জন্য চিন্তা কাকে বলে।

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সমাহার by নীললোহিত - by ddey333 - 23-06-2021, 05:03 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)