21-06-2021, 05:46 PM
অসতী
আজ সারাদিনটা ভয়ে ভয়েই কেটে গেল মালতির। এখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হব হব। ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, ভয়টা ততই জমাট পাথরের মত চেপে বসছে বুকের মধ্যে। কাজে বারবার ভুল হচ্ছে। নমিতা বৌদি এইমাত্র তাড়া দিয়ে গেল কাচের প্লেটগুলোর জন্য। একঘর লোক বসে আছে, অথচ তাদেরকে খাবার দেওয়া যাচ্ছেনা। আজকে নমিতা বৌদির বড়মেয়ে মৌমিতাদির দেখাশোনা। অনেকে মিলে দেখতে এসেছে মৌদিকে। আজ মৌদি সেজেছেও দারুণ। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। মৌদিকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর লাগে। একথা আগেও ওকে বলেছে মালতি। শোনেনি। বরং হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে সে কথা। আজকালকার মেয়েরা ঠিক করে শাড়ি পরতেই জানে না। কি সব জামাকাপড় পরে। কোনোটা বগল কাটা। কোনোটা বুক কাটা বা পিঠ কাটা। সেদিন মৌদি একটা প্যান্ট পরে বেরোল, তার সর্বাঙ্গ ছেঁড়া। মালতি বলল, “ও দিদি, ঐ ছেঁড়া প্যান্টটা পরে কোথায় যাচ্ছো? লোকে দেখলে কি ভাববে?” ওর কথা শুনে মৌদি তো হেসে কুটোকুটি। বলল, “উফ্ মালতি, তোকে নিয়ে আর পারা যায়না। এ প্যান্টটা ছেঁড়া না। এইকরমই। এটাই এখন ফ্যাশান। আমার এরকম অনেক প্যান্ট আছে। তোকে একটা দেবো, পরে কাজ করতে আসবি।” শুনে নাক সিঁটকে মালতি বলেছিল, “ইস্ মাগো, ঐ জিনিস আমি পরতে পারবনি। সর্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে! ছিঃ!” শুনে মৌদির কি হাসি। আজকে শাড়ি পরে মৌদিকে একদম অন্যরকম লাগছে। চেনাই যাচ্ছেনা। আজকে মৌদির দেখাশোনার কারণে ওর নিজের বিয়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। সে আজ থেকে চার-পাঁচবছর আগের কথা। মালতি গ্রামের মেয়ে। হুগলী জেলার কামারপুকুরে ওর বাড়ি। ক্লাস ফোর পর্যন্ত বিদ্যে। তারপরেই পড়াশোনায় ইতি। তবে নিজের নামটা লিখতে পারে, ছোটখাট হিসাব করতে পারে। তবে ওর বর রতন মোটেও ইকলেজের ধার মাড়ায়নি। বারো-তেরো বছর বয়স থেকেই মালতি পরের বাড়িতে কাজ করছে। তখন থেকেই ওর সাথে রতনের প্রেম। চিন্তার মাঝেই রান্নাঘরে ঢুকল নমিতা বৌদি। প্লেট হাতে মালতিকে তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে চাপাগলায় বলল, “অ্যাই মালতি কি তখন থেকে ঐ চারটে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি কর্। ওদিকে যে ওনাদেরকে কখন থেকে বসিয়ে রেখেছি। নয়তো সর্, আমিই বাকীগুলো ধুয়ে নিই।” বৌদির কথায় লজ্জা পেয়ে ও বলল, “না, না, তোমাকে ধুতে হবেনে। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।” বলে বাকী প্লেটগুলো তাড়াতাড়ি করে ধুয়ে বৌদির হাতে দিয়ে দিল। বৌদি প্লেটগুলোতে নানারকম খাবার সাজিয়ে প্লেটগুলো একটা ট্রেতে তুলে নিল। তারপর ট্রেটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলল, “আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি। তুই জলের গ্লাসগুলো ঐ ট্রেটায় তুলে নিয়ে আয়। আবার দেখিস ফেলে গ্লাসগুলোকে ভাঙ্গিস না যেন। অনেক দাম। সাবধানে নিয়ে আসিস।” ঘাড় নেড়ে বৌদিকে আশ্বস্ত করল ও। বৌদি খাবারের ট্রেটা নিয়ে চলে গেল। মালতি কাপড়ের আঁচলটাকে ভাল করে গাছ কোমর করে বেঁধে নিয়ে, গ্লাসভর্তি ট্রেটা তুলে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। বসার ঘর থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মালতি ট্রেটা নিয়ে ঢুকল। তবু কেউ ওর দিকে তাকাল না। বাড়ির ঝির দিকে কেই বা কবে ভাল করে দেখেছে। বৌদি একটা ছোট্ট টেবিলের উপর খাবারের প্লেটগুলো নামিয়ে রাখছিল। একজন মোটা করে মহিলা তা দেখে বলল, “একি করেছেন দিদি! এই অসময়ে কে এত খাবে! আমরা এতকিছু খেতে পারব না।” তাই শুনে বৌদি হেসে বলল, “খুব পারবেন, দিদি। ঐতো সামান্য ক’টা মিষ্টি।” মালতিও বৌদির দেখাদেখি জলের গ্লাসগুলো সাবধানে টেবিলে নামিয়ে রাখল। বৌদি চোখের ইশারায় ওকে চলে যেতে বলল। যাওয়ার আগে ছেলেটিকে দেখে নিল মালতি। কেমন যেন নাড়ু গোপাল ধরনের। তবে দেখতে সুন্দর। রঙটা মৌদির মত না হলেও ফর্সাই বলা চলে। ও আবার রান্নাঘরে চলে এল। ছেলেটাকে দেখে পাঁচবছর আগের রতনের কথা মনে পড়ে গেল ওর। রতনের বাবা রিক্শা চালাত। একদিন বড় রাস্তায় রিক্শা চালাতে গিয়ে লরীর চাকায় পিষে গেল রতনের বাবা। সেই খবর পেয়ে রতনের মা কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেল। নিজের মনে বকত। কখনো হাসত, কখনও বা গলা ছেড়ে কাঁদত। রতন ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো ভাই বা বোন ছিলনা। বাবা যখন মারা যায় তখন রতনের চোদ্দ কি পনেরো। তখন থেকেই বাবার রিক্শাটা চালাতে শুরু করল ও। বাড়িতে পাগলী মা আর রতন। তারপর একদিন হঠাৎ মা কোথায় যেন চলে গেল। কেউ বলল পালিয়ে গেছে, কেউ বলল মারা গেছে। আরো কত কি। তখন থেকেই ওর সাথে মালতির প্রেম। রতন ওর গ্রামের ছেলে হলেও, আলাদা পাড়ায় বাড়ি। তবে রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখা হত দুজনের। সওয়ারী নিয়ে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি ছুঁড়ে দিয়ে যেত রতন। রঙটা কালো হলেও হাসিটা চিরকালই খুব মিষ্টি রতনের। অন্তত মালতির তো তাই মনে হয়। প্রথম প্রথম রাগ হত মালতির। তারপর আস্তে আস্তে ভাল লেগে গেল ছেলেটাকে। একদিন সন্ধ্যেবেলা সামনা সামনি দেখা হয়ে গেল দুজনের। তখন রতনের রিক্শাতে কোন সওয়ারী নেই। রিক্শাতে চড়ে বসল মালতি। বলল, “চল্।” “কোথায়?” “বড়মাঠে।” গ্রামের একদম শেষপ্রান্তে একটি মাঠ আছে। সবাই বলে বড়মাঠ। রথের মেলা বসে। ফুটবল টুর্ণামেন্ট বসে। শীতকালে যাত্রাপালা হয়। তবে সন্ধ্যের পর ওখানে বড় কেউ একটা যায়না। মালতিকে গন্তব্যে পৌঁছে দিল রতন। রিক্শা থেকে নেমে রতনকে বলল, “আয়।” বিনা বাক্যব্যয়ে ওর সাথে যেতে লাগল রতন। মাঠের একধারে পাশাপাশি বসল দু’জনে। কিছুক্ষণ কারোর মুখেই কোন কথা নেই। প্রথম কথা বলল মালতি। “অ্যাই, তুই আমাকে দেখে হাসিস কেন রে?” “এমনি।” “এমনি? মামাবাড়ি পেয়েছিস নাকি? জানিস আমি কে?” মালতির কথা শুনে মুচকি হেসে রতন বলল, “এমন ভাবে বলছিস, যেন লাটসাহেবের নাতনি! খুব জানি। ও পাড়ার পঞ্চা দুলের মেজমেয়ে মালতি। তোর বাপ প্রতিদিন ভরসন্ধ্যেয় বাংলা খেয়ে হাটতলায় বাওয়াল করে।” রতনের মুখে নিজের বাপের অপমান শুনে মালতিও চুপ থাকেনা। সেও বলে, “আর তোর কি? বাপটা মরল লরীর চাকায়, আর মাটা যে কোন চুলোয় তা ভগবানও জানেনা।” রতন বলল, “তুই কি ঝগড়া করবি বলে আমাকে এখানে নিয়ে এলি?” মালতি বলল, “তুইই তো শুরু করলি।”
আজ সারাদিনটা ভয়ে ভয়েই কেটে গেল মালতির। এখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হব হব। ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, ভয়টা ততই জমাট পাথরের মত চেপে বসছে বুকের মধ্যে। কাজে বারবার ভুল হচ্ছে। নমিতা বৌদি এইমাত্র তাড়া দিয়ে গেল কাচের প্লেটগুলোর জন্য। একঘর লোক বসে আছে, অথচ তাদেরকে খাবার দেওয়া যাচ্ছেনা। আজকে নমিতা বৌদির বড়মেয়ে মৌমিতাদির দেখাশোনা। অনেকে মিলে দেখতে এসেছে মৌদিকে। আজ মৌদি সেজেছেও দারুণ। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। মৌদিকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর লাগে। একথা আগেও ওকে বলেছে মালতি। শোনেনি। বরং হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে সে কথা। আজকালকার মেয়েরা ঠিক করে শাড়ি পরতেই জানে না। কি সব জামাকাপড় পরে। কোনোটা বগল কাটা। কোনোটা বুক কাটা বা পিঠ কাটা। সেদিন মৌদি একটা প্যান্ট পরে বেরোল, তার সর্বাঙ্গ ছেঁড়া। মালতি বলল, “ও দিদি, ঐ ছেঁড়া প্যান্টটা পরে কোথায় যাচ্ছো? লোকে দেখলে কি ভাববে?” ওর কথা শুনে মৌদি তো হেসে কুটোকুটি। বলল, “উফ্ মালতি, তোকে নিয়ে আর পারা যায়না। এ প্যান্টটা ছেঁড়া না। এইকরমই। এটাই এখন ফ্যাশান। আমার এরকম অনেক প্যান্ট আছে। তোকে একটা দেবো, পরে কাজ করতে আসবি।” শুনে নাক সিঁটকে মালতি বলেছিল, “ইস্ মাগো, ঐ জিনিস আমি পরতে পারবনি। সর্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে! ছিঃ!” শুনে মৌদির কি হাসি। আজকে শাড়ি পরে মৌদিকে একদম অন্যরকম লাগছে। চেনাই যাচ্ছেনা। আজকে মৌদির দেখাশোনার কারণে ওর নিজের বিয়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। সে আজ থেকে চার-পাঁচবছর আগের কথা। মালতি গ্রামের মেয়ে। হুগলী জেলার কামারপুকুরে ওর বাড়ি। ক্লাস ফোর পর্যন্ত বিদ্যে। তারপরেই পড়াশোনায় ইতি। তবে নিজের নামটা লিখতে পারে, ছোটখাট হিসাব করতে পারে। তবে ওর বর রতন মোটেও ইকলেজের ধার মাড়ায়নি। বারো-তেরো বছর বয়স থেকেই মালতি পরের বাড়িতে কাজ করছে। তখন থেকেই ওর সাথে রতনের প্রেম। চিন্তার মাঝেই রান্নাঘরে ঢুকল নমিতা বৌদি। প্লেট হাতে মালতিকে তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে চাপাগলায় বলল, “অ্যাই মালতি কি তখন থেকে ঐ চারটে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি কর্। ওদিকে যে ওনাদেরকে কখন থেকে বসিয়ে রেখেছি। নয়তো সর্, আমিই বাকীগুলো ধুয়ে নিই।” বৌদির কথায় লজ্জা পেয়ে ও বলল, “না, না, তোমাকে ধুতে হবেনে। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।” বলে বাকী প্লেটগুলো তাড়াতাড়ি করে ধুয়ে বৌদির হাতে দিয়ে দিল। বৌদি প্লেটগুলোতে নানারকম খাবার সাজিয়ে প্লেটগুলো একটা ট্রেতে তুলে নিল। তারপর ট্রেটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলল, “আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি। তুই জলের গ্লাসগুলো ঐ ট্রেটায় তুলে নিয়ে আয়। আবার দেখিস ফেলে গ্লাসগুলোকে ভাঙ্গিস না যেন। অনেক দাম। সাবধানে নিয়ে আসিস।” ঘাড় নেড়ে বৌদিকে আশ্বস্ত করল ও। বৌদি খাবারের ট্রেটা নিয়ে চলে গেল। মালতি কাপড়ের আঁচলটাকে ভাল করে গাছ কোমর করে বেঁধে নিয়ে, গ্লাসভর্তি ট্রেটা তুলে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। বসার ঘর থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মালতি ট্রেটা নিয়ে ঢুকল। তবু কেউ ওর দিকে তাকাল না। বাড়ির ঝির দিকে কেই বা কবে ভাল করে দেখেছে। বৌদি একটা ছোট্ট টেবিলের উপর খাবারের প্লেটগুলো নামিয়ে রাখছিল। একজন মোটা করে মহিলা তা দেখে বলল, “একি করেছেন দিদি! এই অসময়ে কে এত খাবে! আমরা এতকিছু খেতে পারব না।” তাই শুনে বৌদি হেসে বলল, “খুব পারবেন, দিদি। ঐতো সামান্য ক’টা মিষ্টি।” মালতিও বৌদির দেখাদেখি জলের গ্লাসগুলো সাবধানে টেবিলে নামিয়ে রাখল। বৌদি চোখের ইশারায় ওকে চলে যেতে বলল। যাওয়ার আগে ছেলেটিকে দেখে নিল মালতি। কেমন যেন নাড়ু গোপাল ধরনের। তবে দেখতে সুন্দর। রঙটা মৌদির মত না হলেও ফর্সাই বলা চলে। ও আবার রান্নাঘরে চলে এল। ছেলেটাকে দেখে পাঁচবছর আগের রতনের কথা মনে পড়ে গেল ওর। রতনের বাবা রিক্শা চালাত। একদিন বড় রাস্তায় রিক্শা চালাতে গিয়ে লরীর চাকায় পিষে গেল রতনের বাবা। সেই খবর পেয়ে রতনের মা কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেল। নিজের মনে বকত। কখনো হাসত, কখনও বা গলা ছেড়ে কাঁদত। রতন ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো ভাই বা বোন ছিলনা। বাবা যখন মারা যায় তখন রতনের চোদ্দ কি পনেরো। তখন থেকেই বাবার রিক্শাটা চালাতে শুরু করল ও। বাড়িতে পাগলী মা আর রতন। তারপর একদিন হঠাৎ মা কোথায় যেন চলে গেল। কেউ বলল পালিয়ে গেছে, কেউ বলল মারা গেছে। আরো কত কি। তখন থেকেই ওর সাথে মালতির প্রেম। রতন ওর গ্রামের ছেলে হলেও, আলাদা পাড়ায় বাড়ি। তবে রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখা হত দুজনের। সওয়ারী নিয়ে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি ছুঁড়ে দিয়ে যেত রতন। রঙটা কালো হলেও হাসিটা চিরকালই খুব মিষ্টি রতনের। অন্তত মালতির তো তাই মনে হয়। প্রথম প্রথম রাগ হত মালতির। তারপর আস্তে আস্তে ভাল লেগে গেল ছেলেটাকে। একদিন সন্ধ্যেবেলা সামনা সামনি দেখা হয়ে গেল দুজনের। তখন রতনের রিক্শাতে কোন সওয়ারী নেই। রিক্শাতে চড়ে বসল মালতি। বলল, “চল্।” “কোথায়?” “বড়মাঠে।” গ্রামের একদম শেষপ্রান্তে একটি মাঠ আছে। সবাই বলে বড়মাঠ। রথের মেলা বসে। ফুটবল টুর্ণামেন্ট বসে। শীতকালে যাত্রাপালা হয়। তবে সন্ধ্যের পর ওখানে বড় কেউ একটা যায়না। মালতিকে গন্তব্যে পৌঁছে দিল রতন। রিক্শা থেকে নেমে রতনকে বলল, “আয়।” বিনা বাক্যব্যয়ে ওর সাথে যেতে লাগল রতন। মাঠের একধারে পাশাপাশি বসল দু’জনে। কিছুক্ষণ কারোর মুখেই কোন কথা নেই। প্রথম কথা বলল মালতি। “অ্যাই, তুই আমাকে দেখে হাসিস কেন রে?” “এমনি।” “এমনি? মামাবাড়ি পেয়েছিস নাকি? জানিস আমি কে?” মালতির কথা শুনে মুচকি হেসে রতন বলল, “এমন ভাবে বলছিস, যেন লাটসাহেবের নাতনি! খুব জানি। ও পাড়ার পঞ্চা দুলের মেজমেয়ে মালতি। তোর বাপ প্রতিদিন ভরসন্ধ্যেয় বাংলা খেয়ে হাটতলায় বাওয়াল করে।” রতনের মুখে নিজের বাপের অপমান শুনে মালতিও চুপ থাকেনা। সেও বলে, “আর তোর কি? বাপটা মরল লরীর চাকায়, আর মাটা যে কোন চুলোয় তা ভগবানও জানেনা।” রতন বলল, “তুই কি ঝগড়া করবি বলে আমাকে এখানে নিয়ে এলি?” মালতি বলল, “তুইই তো শুরু করলি।”