Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic সমাহার by নীললোহিত
#2
অনাহুত

আজ আমার জন্মদিন। বছর আমি পনেরোয় পা দিলাম। বাবা কলকাতায় কাজ করে। ঘরে মা, আমি আর ঠাকুমা থাকি। কলেজে এখন গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার জন্মদিনে প্রতি বছরই ছুটি পাই আমি। প্রতি বছরের মত বছরও বাবা সবার আগে ভোরবেলায় আমাকে ঘুম থেকে তুলে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বেলার দিকে আমরা তিনজনে জলখাবার খাচ্ছি। জন্মদিনে মুড়ি খেতে নেই বলে মা আমাকে লুচি ভেজে দিয়েছে। গরম গরম বেগুনভাজা সহকারে লুচি খাচ্ছি। মা আর ঠাকুমাও আমার সঙ্গে জলখাবার খেয়ে নিচ্ছে। এমন সময় আমার দৃষ্টি পড়ল সদর দরজার দিকে। দেখতে পেলাম একটা নুব্জ্যদেহী বুড়ি আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। তার চলনটা পরিষ্কার নয় বরং কিছুটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কাঁধে একটা ঝোলাও নজরে এল। প্রথম দর্শনে তাকে ভিখারিনী বলেই মনে হল। হয়ত ভিক্ষে করতে বেরিয়েছে। কিন্তু আমার এই মনে হওয়াটাকে ভুল প্রমাণ করে সে সটান আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল। তারপর ঠাকুমাকে উদ্দেশ্য করে অদ্ভুত একটা খনখনে কর্কশ গলায় গলায় বলল, “চিনতে পারছ, মা ঠাকরুণ?” আমরা বাইরের দাওয়ায় বসেছিলাম। ঠাকুমা নিজের শরীরটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বুড়িটাকে আপাদমস্তক ভালো করে লক্ষ্য করল। তারপর কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে চেয়ে থেকে, হঠাৎ বিস্মিত গলায় বলল, “আরে হাড়িবউ যে! তুই এখনও মরিসনি?”

মরতে আর পারলুম কই, মা ঠাকরুণ।
তা কোথায় ছিলিস এতদিন? তোকে তো অনেকদিন দেখিনি। আমি তো ভেবেছিলুম হয়ত মরে হেজে গেছিস।ঠাকুমা জিজ্ঞাসা করল।
মেয়ের বাড়িতে ছিলুম মা। তা জামাই বললে, অনেকদিন তো মেয়ের অন্ন ধ্বংস করলে, এবার যাও ছেলের কাছে। তা এখানে চলে এলুম। ছেলে বললে, এমনি এমনি খেতে পাবেনে। ভিক্ষে করে চাল জোগাড় করে আনো, তবে খেতে পাবে। তাই বেরিয়েছি মা, ভিক্ষে করতে।একটানা কথা বলে বুড়ীটা হাঁফাতে লাগল। ঠাকুমা বলল, “বোস্, কিছু খেয়ে যা।তারপর মাকে বলল, “যাও তো বউমা, ওকে কিছু খেতে দাও।ততক্ষণে মায়ের খাওয়া হয়ে গেছিল। মা রান্নাঘরে চলে গেল। খাবারের কথা শুনে বুড়িটা ততক্ষণে দুয়ারের এককোণে বসে পড়েছে। ঠাকুমা হঠাৎ আমাকে দেখিয়ে বলল, “একে চিনতে পারছিস বউ?” বুড়ীটা ঘোলাটে চোখ দিয়ে খানিকক্ষণ আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “শ্বশুরখেকো না! ওমা কত্ত বড় হয়ে গেছো!” ঠাকুমা হেসে বলল, “নামটা ভুলিসনি এখনও।উত্তরে বুড়িটাও মৃদু হাসল।
কী করে ভুলব মা? আমার শ্বশুরখেকো তো একজন আছে।এমন সময় মা রান্নাঘর থেকে একটা বাটিতে কিছুটা মুড়ি এনে বুড়িটার ময়লা কাপড়ের আঁচলে আলগোছে ঢেলে দিল। এবার ঠাকুমাও রান্নাঘরে চলে গেল। মনে হয় আমার পায়েসটা রাঁধতে গেল। আমার জন্মদিনের পায়েসটা প্রতিবছর ঠাকুমাই রান্না করে। ততক্ষণে বুড়িটা মুড়ি খেতে শুরু করে দিয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে মুড়ি তুলে ফোকলা মুখে ফেলছে। আমি ওকে ভাল করে দেখতে লাগলাম। বয়সটা ঠাকুমার মত না হলেও কমপক্ষে ৭০/৭২ তো হবেই। অথচ একে যেন ঠাকুমার চেয়েও বেশী বুড়ি লাগছে। একমাথা শনের মত সাদা চুলে কতদিন যে তেল পড়েনি, তার ঠিক নেই। ফলে চুলগুলো অনেকটা জটার মত মনে হচ্ছে। তেলের অভাবে সাদা চুলগুলো লাল হয়ে গেছে। পরনের কাপড়টা অত্যন্ত ময়লা আর তেলচিটে। কাপড়ের রংটা হয়ত এককালে হলুদ ছিল, কিন্তু এখন সেটা কালক্রমে সাদা রঙে এসে ঠেকেছে। কাপড়ের আঁচলটাতেই অন্তত চার জায়গায় রিফু পড়েছে। বাকীটার কথা তো বাদই দিলাম।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সমাহার by নীললোহিত - by ddey333 - 21-06-2021, 09:44 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)