20-06-2021, 11:27 PM
(This post was last modified: 21-06-2021, 08:35 AM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কুমারী
কাহিনী - লেখক (মাধুরী সেন)
এই গল্পটি আমার মাধুরী সেন এই ছদ্মনামে লিখিত। খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আপনাদের জন্য এখানে পোষ্ট করলাম।
এখানে অনিমেষের মা থাকে। সঙ্গে একজন কিশোরী। সেই সব সাহায্য করে। অনেক মাস পর অনিমেষ এসে হাজির। আনন্দে অনিমেষের মা অস্থির। এই বয়সে বাতে কাবু অনিমেষের মা..ছেলেকে কাছে পেয়ে আনন্দে ডগমগ। মা শুধায় অনিমেষ কে, ‘বউ মা আসবে না?’ অকারণে মিথ্যা বলা অনিমেষের না পছন্দ। তাই বলে, ‘মনীকা খুব ব্যস্ত। সময় পায় না। শহুরে মনীকার গ্রাম সম্পর্কে সততই অ্যালার্জি। এই বাড়ী একসময় কত গমগম করত। চারদিকে কত লোক। এখন আমরা তিন ভাই তিনদিকে। একজন বিদেশে। অন্যজন দক্ষিণ ভারতে। আমি শুধু কলকাতায়। এবার সত্যিই কাজের চাপ ছিল। এই এতমাস পরে, এখানে আসা। নাহ্ এবার মাসখানেক অন্তর আসতে হবে। কথাটা মাকে বলে।
মা খুব খুশি। অনিমেষের মা ভারী সরল। বারান্দার পাশে ঘর। কিশোরী সামনে এসে দাঁড়ায়। খুব নরম স্বরে অনিমেষকে বলে, ‘বাবু, আপনি একটু অপেক্ষা করুন। ঘরটা পরিষ্কার করে দিই।’
সে বন্ধ দরজা খুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আলো জ্বালিয়ে দেয়। এবার সুইচ বন্ধ করে বাইরে আসে। অনিমেষকে বলে, ‘আপনি জামাকাপড় বদলে নিন।’
অনিমেষ ঘরের মধ্যে কাপড় বদলে বাইরে আসে। এর মধ্যেই এক বালতি জল সে এনে রেখে দিয়েছে। অনিমেষ ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে নেয়। এক ঘন্টার মধ্যে রাতের আহার শেষ। তারপর পান সুপারি চিবোতে চিবোতে ও মাকে নিয়ে বারান্দায় চাটাতেই বসে। অনিমেষ মায়ের সাথে বসে গল্প করছে। একটু দূরে সেই কিশোরী। চুপচাপ।
এবার যে যার ঘরে। শুতে যাবার আগে অনিমেষের সিগারেটের নেশায় আনচান। দরজা খোলে। দেখে, ঘরের সামনে বারান্দার থামে হেলান দিয়ে সেই কিশোরী। বাইরে অনিমেষ দাঁড়াতেই ও জিজ্ঞাসা করে, ‘কিছু দরকার?’
ওর সরল হাসি আর গায়ের স্বাভাবিক বিনয় দেখে অনিমেষের ভারী ভাল লাগে। বলে, ‘না, তেমন কিছু না।’
সিগারেট দরকার। দোকান খোলা আছে?’
কিশোরী বলে, ‘আপনি কেন কষ্ট করবেন? আমাকে দিন,নিয়ে আসি।’
ওর কথা শুনে ওর সঙ্গে আরও দু’একটি কথা বলার ইচ্ছা জাগে অনিমেষের। শুধোয়, ‘তোমার কষ্ট হবে না তো?’
‘আরে বাবু, কষ্টের কি আছে। আপনি তো বড়।’
‘তাহলে তোমার কষ্ট হবে না বলছ?’
‘না বাবু, আমায় পয়সা দিন। এই বলে কিশোরী হাত বাড়ায়।
অনিমেষ ওর হাতে কুড়ি টাকা দেয়। - ‘তোমার নাম কি?’
লজ্জা পায় কিশোরী। চোখ নামায়, ‘আমার নাম লক্ষ্মী।’ বলেই ছুটে চলে যায়।
নামটা ভারী সুন্দর। লক্ষ্মী নামটা উচ্চারণের মধ্যেই একটা নরম আদরের ছোঁয়া আছে। ওর সলজ্জ ভাব, প্রতিমার মত মুখ আর সোজা সরল কথা… সত্যিই চমৎকার। ওর চেহারার মধ্যে গাঁয়ের এক সলজ্জ সতেজ লালিত্য। পরের দিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর অনিমেষ শুয়ে পড়ে। একটু ঘুম আসে। যখন ঘুম ভাঙে তখন বিকেল পাঁচটা। হাতমুখ ধোয়ার জন্য ও বাইরে আসে। দেখে লক্ষ্মী একই জায়গায় একই রকম ভাবে বসে। অনিমেষকে দেখে ওর ছড়ানো পা দুটো গুটিয়ে নেয় লক্ষ্মী। আর অন্যমনস্ক ভাবে শাড়ীর খুঁট থেকে সূতো টানতে থাকে। অনিমেষের জল দরকার, তাই ঘনিষ্ঠতার সঙ্গে বলে, ‘লক্ষ্নী, মুখ ধোয়ার জল দরকার।’
‘আনছি।’ খুশি মনে লক্ষ্নী ভেতরে চলে যায়। অনিমেষের মনে হয়, জন্ম নেবার সময় থেকেই তার মুখ থেকে হাসিটি আর মোছেনি। সরলতম হাসি। শহুরে মেয়েদের ভয়ঙ্কর অট্টহাসিও অনিমেষ দেখেছে। আর লক্ষ্নী তো ফুলের মত হাসে।
অনিমেষ হাত মুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই চা নিয়ে আসে লক্ষ্মী। অনিমেষের ইচ্ছা হয়, চা পান শেষে এবার একটু হাঁটা যাক। ছোট ক্যামেরা নিয়ে অনিমেষ বাইরে আসে। দেখে, ঠিক ওইখানে একই রকম ভাবে বসে লক্ষ্নী। বাইরে এসে অনিমেষ ধন্দে পড়ে যায়। কোথায় যাবে? না আজ শুধু একাই। কাল থেকে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা পর্ব। আজ শুধু ও জঙ্গলে যাবে। এই পাকদন্ডি পথ, সব্জির খেত পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেছে। অনিমেষ কয়েক পা মাত্র হেঁটেছে। দমকা হাওয়ায় ওর পাঞ্জাবির প্রান্তভাগ ঝোপ গাছে আটকে যায়। পিছন ফিরে পাঞ্জাবিটা খুলতে দেখে, ঠিক ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে লক্ষ্মী। আরো কিছু হাঁটার পর জঙ্গল। আদিম নয়। এখন অনেক পরিষ্কার। চারিদিকে কতরকমের গাছ। অন্যান্য ফুল ফলের গাছও আছে। কতরকমের পাখি আর তার শব্দ। বিকেলের শেষ রোদে জঙ্গলের সৌন্দর্য অনেক খানি বেড়ে গেছে। একটা ফাঁকা জায়গায় আধশোয়া গাছের একটা ডালে অনিমেষ বসে। গ্যাঁট হয়ে। নীরব নিস্তব্ধ সুগন্ধী জঙ্গলে ডুবু ডুবু সূর্য। মন কেমন করা ঠান্ডা বাতাস। মধুরতম আনন্দে অনিমেষ যেন পাখির সঙ্গে পাখি, গাছের সঙ্গে গাছ আর ফুলের সঙ্গে ফুল হয়ে যাচ্ছে। গভীর আত্মমগ্ন। হঠাৎ একটা শব্দ। পর পর শব্দ। অনিমেষ মুখ ফেরায়। দেখে লক্ষ্নী। ঠিক সেই মূহূর্তে সেও মাথা তুলে অনিমেষের দিকে তাকিয়ে। অনিমেষ লজ্জা পেয়ে যায়। দেখে শুকনো ডাল এক জায়গায় জড়ো করেছে লক্ষ্নী। অনিমেষের হাসি পায়। উঠে দাঁড়ায়। কোমরে হাত রেখে মুখ তুলে ওকে দেখে। দেখতেই থাকে। ওর চুড়ীর শব্দ শোনা যাচ্ছে। এবারে সত্যিই লজ্জা। তবুও ঘাড় ফিরিয়ে অনিমেষ দেখতে থাকে। লক্ষ্নীও নিশ্চই ওকে দেখে হেসেছিল। সম্ভবত সেটাই তখন ওর সারা মুখে ছড়িয়ে আছে। অনিমেষ আরো লজ্জা পায়। ওর মনে হয়, লক্ষ্নী যেন কিছু বলল ওকে। কিন্তু এতটাই ঘাবড়ে গেছে যে ঠিক শুনতে পায় নি। ওর দিকে ফিরে শুধোয়, ‘কিছু বলছ?’
‘আপনি উঠে দাঁড়ালেন কেন?’
এমন প্রশ্ন শুনে অনিমেষের মনে প্রচন্ড অপমানের ঝাঁঝ। কী উত্তর দেওয়া উচিৎ, বুঝে উঠতে পারছে না।
আবার প্রশ্ন, ‘বাড়ী ফিরবেন?’
ওর কথায় পরিহাস থাকলেও অনিমেষ রাগতে পারছে না। কেন? কিন্তু ক্রোধ তো হওয়া উচিৎ। অনিমেষেরই বোকামি। দায়ী ওর অস্থির মানসিকতা। অনিমেষ ভাবে, যাকগে। এখন এই স্থান পরিত্যাজ্য। ও ফেরার জন্য তৈরী। পিছন ফিরতেই আবার ডাক, ‘বাবু। অনিমেষ আবার ফিরে তাকায়। দেখে লক্ষ্নীর পায়ের কাছে শুকনো ডাল একসঙ্গে বাঁধা।
হঠাৎ সঙ্কোচের সঙ্গে বলে, ‘মাথায় তুলে দেবেন?’
অনিমেষ তুলে দেয়। এই সাহায্য ওর খুব ভাল লাগে। একটা খুশির ভাব সারা মুখে, মাথায় শুকনো ডাল। শেষ রোদে ও যেন মায়াময়। ওর এই ভঙ্গী দেখে অনিমেষ ক্যামেরা সেট করে, ওকে লক্ষ্নী বলে ডাকে।
লক্ষ্নী ঘাড় ফিরে তাকায়, ‘আমায় বললেন?’
অনিমেষ হ্যাঁ বলে ওর কাছে যায়। তারপর বলে, ‘তুমি ঠিক এইভাবে দাঁড়াও।
লক্ষ্নী খুব অবাক। মুখে সেই ছবি। অনিমেষের দিকে তাকায়, হালকা রোদ্দুর ওর গালে যেন চুমু খাচ্ছে। ওর মুখে সেই মজুত হাসি আর আলো। অবিশ্বাস্য ভাবে মিশে যাচ্ছে। ফটো তোলা শেষ হতেই ও অনিমেষকে শুধায়, ‘কি করলেন? কি করবেন? ওর সরল কৌতূহল।
অনিমেষ বুঝতে পারছে না। সত্যিই তো। কি বলা উচিৎ। শুধু বলে, পরে বলব।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর চুপচাপ বসে আছে অনিমেষ। ঘুম কিছুতেই আসছে না। মায়ের মুখে শুনেছে, জঙ্গলে নাকি মাস পাঁচেক আছে এই মেয়েটি। ওর বাবা মা নেই। কোন আত্মীয় দায়িত্ব নিতে রাজী নয়। শেষে এই বাড়ীতেই আশ্রয়। মারও সুবিধে। এই বয়সে একটা অবলম্বন দরকার।
এই প্রাকৃতিক পরিবেশের নির্জনতায় কখন কে যে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। অনিমেষ নিজের কাছেই অবাক। অন্যতর লোভ বাসা বাঁধছে। সামনে ওর অমোঘ আকর্ষণের চোরাবালি।
ক্রমশঃ
‘আপনি উঠে দাঁড়ালেন কেন?’
এমন প্রশ্ন শুনে অনিমেষের মনে প্রচন্ড অপমানের ঝাঁঝ। কী উত্তর দেওয়া উচিৎ, বুঝে উঠতে পারছে না।
আবার প্রশ্ন, ‘বাড়ী ফিরবেন?’
ওর কথায় পরিহাস থাকলেও অনিমেষ রাগতে পারছে না। কেন? কিন্তু ক্রোধ তো হওয়া উচিৎ। অনিমেষেরই বোকামি। দায়ী ওর অস্থির মানসিকতা। অনিমেষ ভাবে, যাকগে। এখন এই স্থান পরিত্যাজ্য। ও ফেরার জন্য তৈরী। পিছন ফিরতেই আবার ডাক, ‘বাবু। অনিমেষ আবার ফিরে তাকায়। দেখে লক্ষ্নীর পায়ের কাছে শুকনো ডাল একসঙ্গে বাঁধা।
হঠাৎ সঙ্কোচের সঙ্গে বলে, ‘মাথায় তুলে দেবেন?’
অনিমেষ তুলে দেয়। এই সাহায্য ওর খুব ভাল লাগে। একটা খুশির ভাব সারা মুখে, মাথায় শুকনো ডাল। শেষ রোদে ও যেন মায়াময়। ওর এই ভঙ্গী দেখে অনিমেষ ক্যামেরা সেট করে, ওকে লক্ষ্নী বলে ডাকে।
লক্ষ্নী ঘাড় ফিরে তাকায়, ‘আমায় বললেন?’
অনিমেষ হ্যাঁ বলে ওর কাছে যায়। তারপর বলে, ‘তুমি ঠিক এইভাবে দাঁড়াও।
লক্ষ্নী খুব অবাক। মুখে সেই ছবি। অনিমেষের দিকে তাকায়, হালকা রোদ্দুর ওর গালে যেন চুমু খাচ্ছে। ওর মুখে সেই মজুত হাসি আর আলো। অবিশ্বাস্য ভাবে মিশে যাচ্ছে। ফটো তোলা শেষ হতেই ও অনিমেষকে শুধায়, ‘কি করলেন? কি করবেন? ওর সরল কৌতূহল।
অনিমেষ বুঝতে পারছে না। সত্যিই তো। কি বলা উচিৎ। শুধু বলে, পরে বলব।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর চুপচাপ বসে আছে অনিমেষ। ঘুম কিছুতেই আসছে না। মায়ের মুখে শুনেছে, জঙ্গলে নাকি মাস পাঁচেক আছে এই মেয়েটি। ওর বাবা মা নেই। কোন আত্মীয় দায়িত্ব নিতে রাজী নয়। শেষে এই বাড়ীতেই আশ্রয়। মারও সুবিধে। এই বয়সে একটা অবলম্বন দরকার।
এই প্রাকৃতিক পরিবেশের নির্জনতায় কখন কে যে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। অনিমেষ নিজের কাছেই অবাক। অন্যতর লোভ বাসা বাঁধছে। সামনে ওর অমোঘ আকর্ষণের চোরাবালি।
ক্রমশঃ