20-06-2021, 08:58 AM
প্রিয়ন্তে..
এই মাত্তর ক'দিন হল অফিসটা খুলেছে, তাও ঘন্টা ছয়েকের জন্য...তারমধ্যে আবার টানা বৃষ্টি! রাস্তায় জল জমে একাকার কান্ড...গাড়িঘোড়াও কম। তাই চারটে বাজতেই টেবিল গুছিয়ে, ড্রয়ারে ছাবি দিয়ে বেরোবার তোড়জোড় করছিলেন বিকাশবাবু। হঠাৎ অফিসের ছোকরা পিওন অনিল এসে বলল "আপনাকে স্যার ডাকছেন"।
স্যার মানে মালিকের ছেলে। গতবছর এই অফিস যাঁর হাতে তৈরি, সেই মালিক এই বিচ্ছিরি রোগটায় মারা যাবার পর থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে ও। একদিকে সদ্য পিতৃহারা, তারমধ্যে 'মার্কেটের' অবস্থা শোচনীয়... সবমিলিয়ে জেরবার হয়ে গেছিল সবে কলেজ পাশ দেওয়া ছেলেটা তখন। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে ভালোই হাল ধরেছে ব্যবসার। তবে, সব আগের মতো হবার আগেই এই দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেল আর আবার সব পিছিয়ে গেল! কিন্তু তাও কাজ তো করতেই হবে...। তাই হয়ত স্যার ডাকছেন, কোনো কাজের জন্য। কিন্তু এখন যেতে গেলে তো দেরি হয়ে যাবে বেরোতে...এদিকে পাশের বাড়ির গৌরবকে বলেছেন সে যেন অফিস থেকে বাড়িতে যাবার সময় বাইকে করে নিয়ে যায়...। সে এসে রাস্তায় দেখতে না পেলে যদি একা একাই চলে যায়...?
"বিকাশ বাবু,,আপনি তো অনেকদিন ধরেই কোম্পানিতে আছেন...আপনার আধার কার্ডটা একটু দেবেন?" স্যারের একচিলতে ঘরে ঢুকতেই উনি জিজ্ঞেস করলেন।
"আ...আধার কার্ড? কেন স্যার?" অবাক হয়ে বললেন উনি।
"এমনি...অফিসিয়াল রিজন.." স্যার বললেন।
আধার কার্ডের একটা জেরক্স কপি রাখা ছিল ওনার কাছে। সেটা এনে দিলেন বিকাশ বাবু। তারপর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মনটা... ভাল লাগছে না একদম!
এত পুরোনো কোম্পানি, কখনও পাঁচটাকার হিসাবেও গরমিল করেননি...আর স্যার কি ভাবলেন উনি চুরিটুরি করতে পারেন? তাই আধার কার্ড নিয়ে রাখলেন? তা ভালো... যার যা মনে আছে, করুক...উনি তো নিজে জানেন উনি সৎ! ভাবতে ভাবতেই বাড়ির পথ ধরলেন উনি।
রবিবারের সকাল। আজও আকাশের মুখ ভার। এখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি ঠিক ই, কিন্তু যে কোনো সময়েই ঢালবে। আজ একটু সবজি কিনতে হবে...মাসের শেষ...এদিকে মাইনে যে কবে পাওয়া যাবে...
ঘরে পরার লুঙ্গিটা ছেড়ে পাজামা পরছেন সবে, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। পাশের বাড়ির কেউ হবে বোধহয়! তারে মেলা জামাটা নিতে যাবেন, দেখেন গিন্নি ঢুকলেন ঘরে ব্যস্ত হয়ে । "শুনছ...বাইরের ঘরে এসো...তাড়াতাড়ি। "
বাইরের ঘরে এসে দেখেন অফিসের স্যার। হাতে একটা প্যাকেট!
"স্যার...আপনি...মানে এখানে..."
"বাহ্, আজ আসব বলেই তো কাল আপনার কাছ থেকে আধার কার্ডটা নিলাম...যদিও জানতাম আপনি এই চিৎপুর অঞ্চলেই থাকেন, কিন্তু আসল লোকেশানটা না জানলে আসতাম কিভাবে..." বলেই একটু এগিয়ে এসে ওনাকে প্রণাম করলেন। তারপর বললেন "বাবা চলে যাবার পর থেকে আপনি আমাকে সবকিছুতে গাইড করেছেন। আপনি না হলে ব্যবসা লাটে তুলে দিতে হত। এদিকে লোন নেওয়া আছে...জানেন ই তো। প্রতিবছর বাবাকে ফাদার্স ডে উপলক্ষ্যে উপহার দিতাম। আজ উনি নেই, আপনি আছেন...সামান্য কিছু উপহার এনেছি আপনার জন্য, কাকু...হ্যাঁ এই নামেই ডাকব আজ থেকে আপনাকে...আপনি ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ..." বলে, গিন্নির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওঁকে প্রণাম করেন স্যার... না না... 'কাকু' বলছে যখন... উনিও 'অভিষেক' বলেই ডাকবেন...।
বাইরে বৃষ্টি নেই, তবে মেঘলা হয়ে আছে...
আর ওনার বুকে মেঘ নেই একটুও...কিন্তু চোখে যে কেন বৃষ্টি নামে এইভাবে...
আহ... এই জীবন আর এইভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকা যে কত সুন্দর...
এই মাত্তর ক'দিন হল অফিসটা খুলেছে, তাও ঘন্টা ছয়েকের জন্য...তারমধ্যে আবার টানা বৃষ্টি! রাস্তায় জল জমে একাকার কান্ড...গাড়িঘোড়াও কম। তাই চারটে বাজতেই টেবিল গুছিয়ে, ড্রয়ারে ছাবি দিয়ে বেরোবার তোড়জোড় করছিলেন বিকাশবাবু। হঠাৎ অফিসের ছোকরা পিওন অনিল এসে বলল "আপনাকে স্যার ডাকছেন"।
স্যার মানে মালিকের ছেলে। গতবছর এই অফিস যাঁর হাতে তৈরি, সেই মালিক এই বিচ্ছিরি রোগটায় মারা যাবার পর থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে ও। একদিকে সদ্য পিতৃহারা, তারমধ্যে 'মার্কেটের' অবস্থা শোচনীয়... সবমিলিয়ে জেরবার হয়ে গেছিল সবে কলেজ পাশ দেওয়া ছেলেটা তখন। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে ভালোই হাল ধরেছে ব্যবসার। তবে, সব আগের মতো হবার আগেই এই দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেল আর আবার সব পিছিয়ে গেল! কিন্তু তাও কাজ তো করতেই হবে...। তাই হয়ত স্যার ডাকছেন, কোনো কাজের জন্য। কিন্তু এখন যেতে গেলে তো দেরি হয়ে যাবে বেরোতে...এদিকে পাশের বাড়ির গৌরবকে বলেছেন সে যেন অফিস থেকে বাড়িতে যাবার সময় বাইকে করে নিয়ে যায়...। সে এসে রাস্তায় দেখতে না পেলে যদি একা একাই চলে যায়...?
"বিকাশ বাবু,,আপনি তো অনেকদিন ধরেই কোম্পানিতে আছেন...আপনার আধার কার্ডটা একটু দেবেন?" স্যারের একচিলতে ঘরে ঢুকতেই উনি জিজ্ঞেস করলেন।
"আ...আধার কার্ড? কেন স্যার?" অবাক হয়ে বললেন উনি।
"এমনি...অফিসিয়াল রিজন.." স্যার বললেন।
আধার কার্ডের একটা জেরক্স কপি রাখা ছিল ওনার কাছে। সেটা এনে দিলেন বিকাশ বাবু। তারপর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মনটা... ভাল লাগছে না একদম!
এত পুরোনো কোম্পানি, কখনও পাঁচটাকার হিসাবেও গরমিল করেননি...আর স্যার কি ভাবলেন উনি চুরিটুরি করতে পারেন? তাই আধার কার্ড নিয়ে রাখলেন? তা ভালো... যার যা মনে আছে, করুক...উনি তো নিজে জানেন উনি সৎ! ভাবতে ভাবতেই বাড়ির পথ ধরলেন উনি।
রবিবারের সকাল। আজও আকাশের মুখ ভার। এখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি ঠিক ই, কিন্তু যে কোনো সময়েই ঢালবে। আজ একটু সবজি কিনতে হবে...মাসের শেষ...এদিকে মাইনে যে কবে পাওয়া যাবে...
ঘরে পরার লুঙ্গিটা ছেড়ে পাজামা পরছেন সবে, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। পাশের বাড়ির কেউ হবে বোধহয়! তারে মেলা জামাটা নিতে যাবেন, দেখেন গিন্নি ঢুকলেন ঘরে ব্যস্ত হয়ে । "শুনছ...বাইরের ঘরে এসো...তাড়াতাড়ি। "
বাইরের ঘরে এসে দেখেন অফিসের স্যার। হাতে একটা প্যাকেট!
"স্যার...আপনি...মানে এখানে..."
"বাহ্, আজ আসব বলেই তো কাল আপনার কাছ থেকে আধার কার্ডটা নিলাম...যদিও জানতাম আপনি এই চিৎপুর অঞ্চলেই থাকেন, কিন্তু আসল লোকেশানটা না জানলে আসতাম কিভাবে..." বলেই একটু এগিয়ে এসে ওনাকে প্রণাম করলেন। তারপর বললেন "বাবা চলে যাবার পর থেকে আপনি আমাকে সবকিছুতে গাইড করেছেন। আপনি না হলে ব্যবসা লাটে তুলে দিতে হত। এদিকে লোন নেওয়া আছে...জানেন ই তো। প্রতিবছর বাবাকে ফাদার্স ডে উপলক্ষ্যে উপহার দিতাম। আজ উনি নেই, আপনি আছেন...সামান্য কিছু উপহার এনেছি আপনার জন্য, কাকু...হ্যাঁ এই নামেই ডাকব আজ থেকে আপনাকে...আপনি ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ..." বলে, গিন্নির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওঁকে প্রণাম করেন স্যার... না না... 'কাকু' বলছে যখন... উনিও 'অভিষেক' বলেই ডাকবেন...।
বাইরে বৃষ্টি নেই, তবে মেঘলা হয়ে আছে...
আর ওনার বুকে মেঘ নেই একটুও...কিন্তু চোখে যে কেন বৃষ্টি নামে এইভাবে...
আহ... এই জীবন আর এইভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকা যে কত সুন্দর...