12-04-2019, 11:22 AM
(This post was last modified: 30-04-2022, 12:39 PM by Uttam4004. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
১৩
কবীরের সাথে ওর কলেজে সেভাবে কোনও কথাবার্তা হত না কখনই। দুজনেই সেটা কথা বলেই ঠিক করে নিয়েছিল।
কিন্তু তার বাইরে রিয়্যাল আর ভার্চুয়াল – দুই জগতেই যোগাযোগ, কথাবার্তা, আড্ডা আর ভালবাসা – সব কিছুই চলছিল ওদের দুজনের মধ্যে। সেটা যে শুধু চলছিল, তা নয়, জগিং করতে শুরু করেছিল বেশ – পুরোপুরি দৌড় না হলেও।
স্প্রীন্ট যে হচ্ছিল না, তার কারণ ব্রেকটা ছিল রীণার হাতে।
ওর ফাইনাল এগিয়ে আসছিল – এটা আর জগিং করে নয়, রীতিমতো উসেন বোল্টের মতো স্পীডে।
একদিন কথায় কথায় বলেছিল, ‘শোন আমাকে একটু এবার ছেড়ে দে সোনা। পড়াটায় একটু মন দিই। তোর পাল্লায় পড়ে তো আমার ইয়ে না মারা যায়!’
‘কী না মারা যায় গো রীণা দি?’ সব জানে কবীর কী মারা যাওয়ার কথা বলতে চেয়েছে রীণা, তাও ফাজলামি করতে ছাড়ে না ছেলেটা।
ওরা দুজনেই প্রথম আলাপের দিনের মতোই ডাকগুলো রেখেছে। রীণা ওকে তুই করে বলে, আর কবীর ওকে রীণাদি তুমি বলে।
তাতে অবশ্য কথাবার্তা মোটেই দিদি-ভাইয়ের কথোপকথোনের মতো থাকে না!
কবীরের পাল্টা প্রশ্ন শুনে রীণা ওর পিঠে গুম করে একটা কিল মেরেছিল, ‘সবসময়ে ফাজলামি করিস না’।
কপট ব্যথা পেয়ে কবীর উহ.. এত জোরে মারে কেউ বলে উঠেছিল।
‘না রে সত্যিই। আর মোটে মাসদুয়েক বাকি। এখনও কয়েকটা চ্যাপ্টারের নোটস তৈরী করা বাকি। তুই তো আর নোটস বানিয়ে দিবি না আমাকে – তোর একটা ধান্দা!’ ইয়ার্কি মেরে বলেছিল রীণা।
তবে তার ফলটা হয়েছিল, লাইব্রেরী থেকে বই আনা, রীণাদিকে ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে সঙ্গ দেওয়া, জেরক্স করা, আরও নানা সেক্রেটারিয়াল কাজে লেগে পড়েছিল কবীর – পরের মাসখানেক।
আর ওর সাজেশানেই শেষ দুটো মাস টিউশানিগুলো বাদ দিয়েছিল রীণা। একটা বাদে বাকি বাড়িগুলো মেনে নিয়েছিল – পরীক্ষার জন্য ছুটি। কিন্তু সল্টলেকের ওই টিউশনির বাড়ির ছাত্রীর মা শুনেই বলে দিয়েছিলেন, ‘তাহলে তো অন্য কাউকে খুঁজতে হবে আমাকে।‘
রীণা বুঝেছিল গেল টিউশানটা। মনে মনে হিসাব কষেছিল কতটা চাপ পড়বে বাড়ির ওপরে।
মনটা ভাল ছিল না, তাই সেদিন আর না পড়িয়েই বেরিয়ে এসেছিল ওই বাড়ি থেকে। শুধু বলে এসেছিল, ‘আন্টি, আপনার বোধহয় খেয়াল আছে, আপনার মেয়ের কী অবস্থা ছিল আমি পড়াতে আসার আগে আর এখন কত স্কোর করে ও। আমার পরীক্ষার জন্য দুমাস অফ করতে চেয়েছিলাম – এই সময়টায় আপনার মেয়ের কোনও পরীক্ষাও নেই। টাকাও দিতে হত না আমাকে, তাও অফ করে দিলেন! এনি ওয়ে! থ্যাঙ্কস।‘
আর ফিরে তাকায় নি। হাটতে হাটতেই খেয়াল করেছিল যে ও প্রায় কবীরের বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছে। বাড়ির ভেতরে কখনও যায় নি ও – শুধু একদিন টিউশনে যাওয়ার পথে কবীর নিজেদের বাড়িটা দেখিয়েছিল ওকে। তখনও কলেজ চলছিল রীণাদের।
কী যেন মনে হয়েছিল, ফোন করেছিল কবীরকে।
দু-তিনটে রিংয়ের পরেই ফোনটা ধরেছিল ও, ‘কী গো! টিউশনের মাঝে ফোন করলে?’
রীণার ভাল লেগেছিল কথাটা, ও কবে, কখন সল্টলেকে টিউশনে আসবে, সেটা ইনস্ট্যান্ট মাথায় রাখে!
ছেলেটা একটু দুষ্টুমি করতে চায় ঠিকই, কিন্তু ভীষণ ভীষণ কেয়ার করে, যাকে বলা যায়, রীতিমতো ফাইফরমাস বেশ খাটিয়ে নেওয়া যায় ওকে দিয়ে।
রীণারই মাঝে মাঝে খারাপ লাগে কবীরকে দিয়ে এটা ওটা করাতে। কিন্তু সে ছোঁড়া এতটাই ফাজিল, যে উত্তরে বলে, ‘চাপ নিয়ো না রীণাদি। এটা ফিউচারের জন্য ইনভেস্টমেন্ট।‘
‘মানে?’
‘মানে, যদি আমি ফাইফরমাশ খেটে দিলে তোমার ভাল মার্কস ওঠে, তারপর তুমি মাস্টার্স করবে.. তারপর যদি এম ফিলটা করে নাও বা নেট পরীক্ষায় বসো – আর যদি কলেজে লেকচারার হয়ে যাও – আর সেটা না করলেও যদি কলেজ সার্ভিস কমিশন দিয়ে কলেজ টীচার হতে পার .. রিটার্ন তো আমিই পাব!! বউ আয়দার কলেজে পড়ায় বা কলেজে পড়ায়!’ খিক খিক করে হেসেছিল। মনে মনে আশঙ্কা ছিলই যে পিঠে গুম করে কিল খাবে, খেয়েওছিল।
রীণা বলেছিল, ‘বড় বেড়েছিস। তোর ব্যবস্থা করব আমি! দাড়া পরীক্ষাটা যেতে দে!’
কবীর জবাবে বলেছিল, ‘আমি কোথায় বাড়লাম, আগেও যা লম্বা ছিলাম, তাই আছি। তবে, হ্যাঁ, আমার একটা জিনিষ তোমাকে দেখলেই বাড়তে থাকে।‘
‘উফফফফ, থামবি তুই!’ লজ্জা পেয়েও কপট রাগ দেখিয়েছিল রীণা। ভালই বুঝেছিল কবীর কী বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
কবীরের বাড়ির দিকে আরও কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে একটু থমকেছিল ও।
‘টিউশনটা চলে গেল রে! মন ভাল নেই। দুমাস অফ চেয়েছিলাম, টাকাও দিতে হবে না বললাম, তাও আন্টি বলল অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। আমিও কথা শুনিয়ে দিয়েছি।‘
‘তুমি কোথায়?’
‘তোর বাড়ির কাছেই তো! সল্ট লেকে আর কোথায় যাব ওই টিউশন আর তোর বাড়ি ছাড়া?’
‘একদিন দেখেই মনে করে চলে এলে? কোথায় আছ বলতো? আমি যাচ্ছি নিয়ে আসছি তোমায়।‘
‘ধুর বাবা। আসতে হবে কেন, আমি তোর বাড়ির প্রায় সামনে। একটু বেরবি আমার সাথে? ভাল লাগছে না।‘
‘আমি জাস্ট কলেজ থেকে ফিরলাম তো! এখনই বেরতে গেলে মা খ্যাচ খ্যাচ করবে। তুমি চলে এস না বাড়িতে! মাকে তো তোমার কথা বলেইছি।‘
‘বলেছিস তো কলেজের সিনিয়ার কাছে টিউশন করায়। সে হঠাৎ বাড়িতে কেন, কাকিমার মনে প্রশ্ন জাগবে না?’
‘চাপ নিও না গুরু! নর্মাল কথা বলবে মার সামনে.. কয়েকটা লম্বা নিশ্বাস নাও.. আমি ততক্ষণে একটা কিছু পড়ে নিয়ে নামছি?’
‘একটা কিছু পড়ে নিয়ে মানে?’
‘উফ তুমি দাড়াও.. আসছি। প্যান্ট পড়ে আসছি।‘
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই হন হন করে ওই বাড়িটা থেকে কবীরকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল রীণা।
কাছে এসেই কবীর বলেছিল, ‘উফ, মন খারাপ হলে দেখি আরও অ্যাট্র্যাকট্ভি লাগে গো!’
‘ঠাটিয়ে মারব না একটা!’
‘ঠাটিয়ে??? তোমার আবার কি ঠাটাবে? প্লিজ প্লিজ... মেরো না... ‘
রীণা বলেছিল, ‘তুই না বাবু.. ইনকরিজেবেল! উফফ.. বাড়ি নিয়ে চল’।
বলেই একটা কীরকম যেন অনুভূতি হয়েছিল ওর.. ‘বাড়ি নিয়ে চল!’ বলে ফেলে।
যে দোতলা বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে কবীরের সাথে, সেটাই কি কোনওদিন ওর বাড়ি হয়ে উঠবে? কে জানে !
ধুস – গাছে কাঠাল গোফে তেল, মনে মনে বলল রীণা। কবীর বকবক করছিল কিছু একটা নিয়ে – ওর কানে কথাগুলো ঠিক ঢুকল না।
‘কী বললাম, শুনলে?’
‘উঁ? না খেয়াল করি নি কী বলছিলি?’
‘কী ভাবছ বল তো? আরে একটা টিউশন গেছে তো কী হয়েছে! আরও আসবে! এখন পরীক্ষার দিকে মন দাও।‘
‘তুই বলছিস? হা হা . . তুইই তো মাথাটা খেলি আমার পরীক্ষার আগে!’
‘যাক চলো। মাকে বলে এসেছি রীণাদি আসছে।‘
বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে ঢুকল ওরা। সামনে কবীর পেছনে রীণা।
মনে মনে একটা ওয়াও না বলে পারল না রীণা। দারুণ সাজানো গোছানো বাড়ি – চারদিকে রুচির ছাপ। বেশ বড়ো হলঘর – একদিকে বসার জায়গা, অন্যদিকে খাবার টেবিল।
ঢুকেই কবীর চেচিয়ে বলল, ‘মা, দেখো কে এসেছে! রীণাদির কথা বলেছিলাম না, কলেজের ফাইনাল ইয়ার – এখানে টিউশন করায়..’
ছেলে কথা শেষ করতে না করতেই ভদ্রমহিলা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন।
‘তোমার কথা কবি খুব বলে! পড়াশোনায় খুব ভাল নাকি।‘
মনে মনে রীণা বলল কাকিমা, আপনার ছেলেই তো আমার মাথাটা খেল – তার আগে অবধি পড়াশোনা ঠিকঠাকই হচ্ছিল।
মুখে সামান্য লাজুক হাসি এনে বলল, ‘না না কাকিমা, সেরকম কিছু না। তবে পড়তে তো হবেই। মার্কস ভাল না পেলে মাস্টার্স কী করে পড়ব!’
‘সেটা তোমার এই ছোটভাইটাকে বোঝাও! সারাদিন খালি হাবিজাবি বইপত্তর আর কবিতা, গান – এসব নিয়েই আছে। পড়তে বসতে তো দেখি না!’
রীণার পেট থেকে গুড়গুড় করে হাসি উঠে আসতে থাকল – ছোটভাই!!!! ইশ!!!! এটা নিয়ে কবীরকে ক্ষ্যাপাতে হবে!
মুখে বলল, ‘ফার্স্ট ইয়ারে সবাই ওরকম একটু কমই পড়ে কাকিমা। আর কবীর তো বই, কবিতা গান এসব নিয়ে আছে – খারাপ কোনও নেশা তো করে না! চিন্তা করছেন কেন!’
‘হ্যাঁ, সেটাই নিশ্চিন্ত যে গাজা ড্রাগস এসব বোধহয় খায় না। সেটা যদি কখনও ধরে পিটিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব!’ মুচকি হাসলেন কাকিমা।
‘উফ তুমি না মা! ভুলভাল বল খালি। আমার খিদে পেয়েছে বললাম যে.. কলেজ থেকে এসে এখনও খাবার দিলে না।‘
‘খাবার রেডিই আছে। মেয়েটা এল – ওর জন্যও তো লুচি ভাজতে হবে না কি হাদা! তোকে একা দিলে হয় নাকি!’
‘আরে আবার ওসব করছেন কেন কাকিমা। ওকেই দিন বরঞ্চ। রাক্ষসের খিদে কবীরের পেটে সবসময়ে। ক্যান্টিনে দেখি তো সব বন্ধুদের টিফিন খেয়ে নেয়!’
মুখ টিপে হেসে বলল রীণা।
‘অ্যাঁ সে কি রে! তোর হাতখরচ দিই যে রোজ! সেটা দিয়ে কী করিস?’
‘বই কিনি। হয়েছে? তুমি আর বকবক না করে লুচি পরোটা যা পার দাও!’
কবীর মনে মনে বলল, প্রেম করতে খরচ হয় না বুঝি? রীণাদিকে যে ট্যাক্সি করে নিয়ে আসি, সেটা কোথা থেকে আসে শুনি?
ওর মা বললেন, ‘দিচ্ছি দশটা মিনিট দে। তোর ঘরে নিয়ে যা ওকে। গল্প কর। ডাকছি আমি।‘
‘হ্যাঁ চলো রীণাদি, আমার ঘরে চলো।‘
কবীরের ঘর! কখনও কী রীণারও ঘর হবে ওটা? উফ মনটাকে একটা শাসন না করলেই নয়। খালি উল্টোপাল্টা কথা বলছে।
দোতলায় কবীরের বাবা মায়ের শোবার ঘর একদিকে, অন্যদিকে কবীরের ঘর।
ঘরে ঢুকেই চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল রীণা। বেশ গোছানো ছেলে তো! না কি ওর মা গুছিয়ে রাখেন ঘরটা। প্রচুর বইপত্র নিয়ে গোটা তিনেক র্যােক, ওর পড়ার টেবিল চেয়ার। দেওয়ালে লাগানো সিঙ্গল বেড খাট।
আবারও ওর দুষ্টু মনটা বলল, ডবল বেড খাট এই ঘরে ঢুকবে?
চটক ভাঙ্গল পিঠে একটা হাতের ছোয়ায়।
চমকে তাকাল পিছন দিকে। কবীর একেবারে গায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
রীণা সাবধান হল, এক সামান্যতম ছাড় দেওয়া নেই আজ! কেলেঙ্কারি বাধিয়ে বসবে মালটা।
দরজার দিকে আড়চোখে দেখে নিয়েছে যে সেটা বন্ধ করে দিয়েছে কবীর।
‘কাকিমা এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসবেন। দরজাটা খুলে দে প্লিজ। দরজা বন্ধ করে আমি আর তুই ভেতরে – কী ভাববেন বল তো প্রথম দিন! আর মন ভাল নেই – এসব দুষ্টুমি করবি না আজ,’ যদিও ওর মন চাইছিল কবীরকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে, কিন্তু শাসন করল নিজেকে।
মনে মনে বলল, অনেক সময় পাবে চুমু খাওয়ার। এখন লুচি খাও, তারপরে বাড়ি যাও, পরীক্ষার দিকে মন দাও।
কবীর শুনল না কথাটা। ওর দুঁকাধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল রীণাকে – তারপরে আরও নিবিড় করে টেনে নিয়ে ঠোঁটটা মিশিয়ে দিল রীণার ঠোঁটে। সামান্য ছোঁয়াতেই রীণার ঠোঁট আলগা হয়ে গেল, আর সেই সুযোগে নিজের জিভটা রীণার মুখের ভেতরে গুঁজে দিল কবীর।
কবীর যখনই বলেছে রীণাকে বাড়িতে আসতে, তখন থেকে ঠিক এটাই চাইছিল ও মনে মনে। কিন্তু সন্দেহ ছিল কতটা সুযোগ পাওয়া যাবে চুমু খাওয়ার।
এ যে একেবারে সুবর্ণ সুযোগ!!!!
কবীরের পিঠটা খামচিয়ে ধরল রীণা – ওদের দুজনের বুক একে অন্যের শরীরে পিষ্ট হচ্ছিল – রীণা চাইছিল আরও কাছে টেনে আনা যায় কী না কবীরকে।
কবীরের সাথে ওর কলেজে সেভাবে কোনও কথাবার্তা হত না কখনই। দুজনেই সেটা কথা বলেই ঠিক করে নিয়েছিল।
কিন্তু তার বাইরে রিয়্যাল আর ভার্চুয়াল – দুই জগতেই যোগাযোগ, কথাবার্তা, আড্ডা আর ভালবাসা – সব কিছুই চলছিল ওদের দুজনের মধ্যে। সেটা যে শুধু চলছিল, তা নয়, জগিং করতে শুরু করেছিল বেশ – পুরোপুরি দৌড় না হলেও।
স্প্রীন্ট যে হচ্ছিল না, তার কারণ ব্রেকটা ছিল রীণার হাতে।
ওর ফাইনাল এগিয়ে আসছিল – এটা আর জগিং করে নয়, রীতিমতো উসেন বোল্টের মতো স্পীডে।
একদিন কথায় কথায় বলেছিল, ‘শোন আমাকে একটু এবার ছেড়ে দে সোনা। পড়াটায় একটু মন দিই। তোর পাল্লায় পড়ে তো আমার ইয়ে না মারা যায়!’
‘কী না মারা যায় গো রীণা দি?’ সব জানে কবীর কী মারা যাওয়ার কথা বলতে চেয়েছে রীণা, তাও ফাজলামি করতে ছাড়ে না ছেলেটা।
ওরা দুজনেই প্রথম আলাপের দিনের মতোই ডাকগুলো রেখেছে। রীণা ওকে তুই করে বলে, আর কবীর ওকে রীণাদি তুমি বলে।
তাতে অবশ্য কথাবার্তা মোটেই দিদি-ভাইয়ের কথোপকথোনের মতো থাকে না!
কবীরের পাল্টা প্রশ্ন শুনে রীণা ওর পিঠে গুম করে একটা কিল মেরেছিল, ‘সবসময়ে ফাজলামি করিস না’।
কপট ব্যথা পেয়ে কবীর উহ.. এত জোরে মারে কেউ বলে উঠেছিল।
‘না রে সত্যিই। আর মোটে মাসদুয়েক বাকি। এখনও কয়েকটা চ্যাপ্টারের নোটস তৈরী করা বাকি। তুই তো আর নোটস বানিয়ে দিবি না আমাকে – তোর একটা ধান্দা!’ ইয়ার্কি মেরে বলেছিল রীণা।
তবে তার ফলটা হয়েছিল, লাইব্রেরী থেকে বই আনা, রীণাদিকে ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে সঙ্গ দেওয়া, জেরক্স করা, আরও নানা সেক্রেটারিয়াল কাজে লেগে পড়েছিল কবীর – পরের মাসখানেক।
আর ওর সাজেশানেই শেষ দুটো মাস টিউশানিগুলো বাদ দিয়েছিল রীণা। একটা বাদে বাকি বাড়িগুলো মেনে নিয়েছিল – পরীক্ষার জন্য ছুটি। কিন্তু সল্টলেকের ওই টিউশনির বাড়ির ছাত্রীর মা শুনেই বলে দিয়েছিলেন, ‘তাহলে তো অন্য কাউকে খুঁজতে হবে আমাকে।‘
রীণা বুঝেছিল গেল টিউশানটা। মনে মনে হিসাব কষেছিল কতটা চাপ পড়বে বাড়ির ওপরে।
মনটা ভাল ছিল না, তাই সেদিন আর না পড়িয়েই বেরিয়ে এসেছিল ওই বাড়ি থেকে। শুধু বলে এসেছিল, ‘আন্টি, আপনার বোধহয় খেয়াল আছে, আপনার মেয়ের কী অবস্থা ছিল আমি পড়াতে আসার আগে আর এখন কত স্কোর করে ও। আমার পরীক্ষার জন্য দুমাস অফ করতে চেয়েছিলাম – এই সময়টায় আপনার মেয়ের কোনও পরীক্ষাও নেই। টাকাও দিতে হত না আমাকে, তাও অফ করে দিলেন! এনি ওয়ে! থ্যাঙ্কস।‘
আর ফিরে তাকায় নি। হাটতে হাটতেই খেয়াল করেছিল যে ও প্রায় কবীরের বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছে। বাড়ির ভেতরে কখনও যায় নি ও – শুধু একদিন টিউশনে যাওয়ার পথে কবীর নিজেদের বাড়িটা দেখিয়েছিল ওকে। তখনও কলেজ চলছিল রীণাদের।
কী যেন মনে হয়েছিল, ফোন করেছিল কবীরকে।
দু-তিনটে রিংয়ের পরেই ফোনটা ধরেছিল ও, ‘কী গো! টিউশনের মাঝে ফোন করলে?’
রীণার ভাল লেগেছিল কথাটা, ও কবে, কখন সল্টলেকে টিউশনে আসবে, সেটা ইনস্ট্যান্ট মাথায় রাখে!
ছেলেটা একটু দুষ্টুমি করতে চায় ঠিকই, কিন্তু ভীষণ ভীষণ কেয়ার করে, যাকে বলা যায়, রীতিমতো ফাইফরমাস বেশ খাটিয়ে নেওয়া যায় ওকে দিয়ে।
রীণারই মাঝে মাঝে খারাপ লাগে কবীরকে দিয়ে এটা ওটা করাতে। কিন্তু সে ছোঁড়া এতটাই ফাজিল, যে উত্তরে বলে, ‘চাপ নিয়ো না রীণাদি। এটা ফিউচারের জন্য ইনভেস্টমেন্ট।‘
‘মানে?’
‘মানে, যদি আমি ফাইফরমাশ খেটে দিলে তোমার ভাল মার্কস ওঠে, তারপর তুমি মাস্টার্স করবে.. তারপর যদি এম ফিলটা করে নাও বা নেট পরীক্ষায় বসো – আর যদি কলেজে লেকচারার হয়ে যাও – আর সেটা না করলেও যদি কলেজ সার্ভিস কমিশন দিয়ে কলেজ টীচার হতে পার .. রিটার্ন তো আমিই পাব!! বউ আয়দার কলেজে পড়ায় বা কলেজে পড়ায়!’ খিক খিক করে হেসেছিল। মনে মনে আশঙ্কা ছিলই যে পিঠে গুম করে কিল খাবে, খেয়েওছিল।
রীণা বলেছিল, ‘বড় বেড়েছিস। তোর ব্যবস্থা করব আমি! দাড়া পরীক্ষাটা যেতে দে!’
কবীর জবাবে বলেছিল, ‘আমি কোথায় বাড়লাম, আগেও যা লম্বা ছিলাম, তাই আছি। তবে, হ্যাঁ, আমার একটা জিনিষ তোমাকে দেখলেই বাড়তে থাকে।‘
‘উফফফফ, থামবি তুই!’ লজ্জা পেয়েও কপট রাগ দেখিয়েছিল রীণা। ভালই বুঝেছিল কবীর কী বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
কবীরের বাড়ির দিকে আরও কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে একটু থমকেছিল ও।
‘টিউশনটা চলে গেল রে! মন ভাল নেই। দুমাস অফ চেয়েছিলাম, টাকাও দিতে হবে না বললাম, তাও আন্টি বলল অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। আমিও কথা শুনিয়ে দিয়েছি।‘
‘তুমি কোথায়?’
‘তোর বাড়ির কাছেই তো! সল্ট লেকে আর কোথায় যাব ওই টিউশন আর তোর বাড়ি ছাড়া?’
‘একদিন দেখেই মনে করে চলে এলে? কোথায় আছ বলতো? আমি যাচ্ছি নিয়ে আসছি তোমায়।‘
‘ধুর বাবা। আসতে হবে কেন, আমি তোর বাড়ির প্রায় সামনে। একটু বেরবি আমার সাথে? ভাল লাগছে না।‘
‘আমি জাস্ট কলেজ থেকে ফিরলাম তো! এখনই বেরতে গেলে মা খ্যাচ খ্যাচ করবে। তুমি চলে এস না বাড়িতে! মাকে তো তোমার কথা বলেইছি।‘
‘বলেছিস তো কলেজের সিনিয়ার কাছে টিউশন করায়। সে হঠাৎ বাড়িতে কেন, কাকিমার মনে প্রশ্ন জাগবে না?’
‘চাপ নিও না গুরু! নর্মাল কথা বলবে মার সামনে.. কয়েকটা লম্বা নিশ্বাস নাও.. আমি ততক্ষণে একটা কিছু পড়ে নিয়ে নামছি?’
‘একটা কিছু পড়ে নিয়ে মানে?’
‘উফ তুমি দাড়াও.. আসছি। প্যান্ট পড়ে আসছি।‘
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই হন হন করে ওই বাড়িটা থেকে কবীরকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল রীণা।
কাছে এসেই কবীর বলেছিল, ‘উফ, মন খারাপ হলে দেখি আরও অ্যাট্র্যাকট্ভি লাগে গো!’
‘ঠাটিয়ে মারব না একটা!’
‘ঠাটিয়ে??? তোমার আবার কি ঠাটাবে? প্লিজ প্লিজ... মেরো না... ‘
রীণা বলেছিল, ‘তুই না বাবু.. ইনকরিজেবেল! উফফ.. বাড়ি নিয়ে চল’।
বলেই একটা কীরকম যেন অনুভূতি হয়েছিল ওর.. ‘বাড়ি নিয়ে চল!’ বলে ফেলে।
যে দোতলা বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে কবীরের সাথে, সেটাই কি কোনওদিন ওর বাড়ি হয়ে উঠবে? কে জানে !
ধুস – গাছে কাঠাল গোফে তেল, মনে মনে বলল রীণা। কবীর বকবক করছিল কিছু একটা নিয়ে – ওর কানে কথাগুলো ঠিক ঢুকল না।
‘কী বললাম, শুনলে?’
‘উঁ? না খেয়াল করি নি কী বলছিলি?’
‘কী ভাবছ বল তো? আরে একটা টিউশন গেছে তো কী হয়েছে! আরও আসবে! এখন পরীক্ষার দিকে মন দাও।‘
‘তুই বলছিস? হা হা . . তুইই তো মাথাটা খেলি আমার পরীক্ষার আগে!’
‘যাক চলো। মাকে বলে এসেছি রীণাদি আসছে।‘
বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে ঢুকল ওরা। সামনে কবীর পেছনে রীণা।
মনে মনে একটা ওয়াও না বলে পারল না রীণা। দারুণ সাজানো গোছানো বাড়ি – চারদিকে রুচির ছাপ। বেশ বড়ো হলঘর – একদিকে বসার জায়গা, অন্যদিকে খাবার টেবিল।
ঢুকেই কবীর চেচিয়ে বলল, ‘মা, দেখো কে এসেছে! রীণাদির কথা বলেছিলাম না, কলেজের ফাইনাল ইয়ার – এখানে টিউশন করায়..’
ছেলে কথা শেষ করতে না করতেই ভদ্রমহিলা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন।
‘তোমার কথা কবি খুব বলে! পড়াশোনায় খুব ভাল নাকি।‘
মনে মনে রীণা বলল কাকিমা, আপনার ছেলেই তো আমার মাথাটা খেল – তার আগে অবধি পড়াশোনা ঠিকঠাকই হচ্ছিল।
মুখে সামান্য লাজুক হাসি এনে বলল, ‘না না কাকিমা, সেরকম কিছু না। তবে পড়তে তো হবেই। মার্কস ভাল না পেলে মাস্টার্স কী করে পড়ব!’
‘সেটা তোমার এই ছোটভাইটাকে বোঝাও! সারাদিন খালি হাবিজাবি বইপত্তর আর কবিতা, গান – এসব নিয়েই আছে। পড়তে বসতে তো দেখি না!’
রীণার পেট থেকে গুড়গুড় করে হাসি উঠে আসতে থাকল – ছোটভাই!!!! ইশ!!!! এটা নিয়ে কবীরকে ক্ষ্যাপাতে হবে!
মুখে বলল, ‘ফার্স্ট ইয়ারে সবাই ওরকম একটু কমই পড়ে কাকিমা। আর কবীর তো বই, কবিতা গান এসব নিয়ে আছে – খারাপ কোনও নেশা তো করে না! চিন্তা করছেন কেন!’
‘হ্যাঁ, সেটাই নিশ্চিন্ত যে গাজা ড্রাগস এসব বোধহয় খায় না। সেটা যদি কখনও ধরে পিটিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব!’ মুচকি হাসলেন কাকিমা।
‘উফ তুমি না মা! ভুলভাল বল খালি। আমার খিদে পেয়েছে বললাম যে.. কলেজ থেকে এসে এখনও খাবার দিলে না।‘
‘খাবার রেডিই আছে। মেয়েটা এল – ওর জন্যও তো লুচি ভাজতে হবে না কি হাদা! তোকে একা দিলে হয় নাকি!’
‘আরে আবার ওসব করছেন কেন কাকিমা। ওকেই দিন বরঞ্চ। রাক্ষসের খিদে কবীরের পেটে সবসময়ে। ক্যান্টিনে দেখি তো সব বন্ধুদের টিফিন খেয়ে নেয়!’
মুখ টিপে হেসে বলল রীণা।
‘অ্যাঁ সে কি রে! তোর হাতখরচ দিই যে রোজ! সেটা দিয়ে কী করিস?’
‘বই কিনি। হয়েছে? তুমি আর বকবক না করে লুচি পরোটা যা পার দাও!’
কবীর মনে মনে বলল, প্রেম করতে খরচ হয় না বুঝি? রীণাদিকে যে ট্যাক্সি করে নিয়ে আসি, সেটা কোথা থেকে আসে শুনি?
ওর মা বললেন, ‘দিচ্ছি দশটা মিনিট দে। তোর ঘরে নিয়ে যা ওকে। গল্প কর। ডাকছি আমি।‘
‘হ্যাঁ চলো রীণাদি, আমার ঘরে চলো।‘
কবীরের ঘর! কখনও কী রীণারও ঘর হবে ওটা? উফ মনটাকে একটা শাসন না করলেই নয়। খালি উল্টোপাল্টা কথা বলছে।
দোতলায় কবীরের বাবা মায়ের শোবার ঘর একদিকে, অন্যদিকে কবীরের ঘর।
ঘরে ঢুকেই চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল রীণা। বেশ গোছানো ছেলে তো! না কি ওর মা গুছিয়ে রাখেন ঘরটা। প্রচুর বইপত্র নিয়ে গোটা তিনেক র্যােক, ওর পড়ার টেবিল চেয়ার। দেওয়ালে লাগানো সিঙ্গল বেড খাট।
আবারও ওর দুষ্টু মনটা বলল, ডবল বেড খাট এই ঘরে ঢুকবে?
চটক ভাঙ্গল পিঠে একটা হাতের ছোয়ায়।
চমকে তাকাল পিছন দিকে। কবীর একেবারে গায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
রীণা সাবধান হল, এক সামান্যতম ছাড় দেওয়া নেই আজ! কেলেঙ্কারি বাধিয়ে বসবে মালটা।
দরজার দিকে আড়চোখে দেখে নিয়েছে যে সেটা বন্ধ করে দিয়েছে কবীর।
‘কাকিমা এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসবেন। দরজাটা খুলে দে প্লিজ। দরজা বন্ধ করে আমি আর তুই ভেতরে – কী ভাববেন বল তো প্রথম দিন! আর মন ভাল নেই – এসব দুষ্টুমি করবি না আজ,’ যদিও ওর মন চাইছিল কবীরকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে, কিন্তু শাসন করল নিজেকে।
মনে মনে বলল, অনেক সময় পাবে চুমু খাওয়ার। এখন লুচি খাও, তারপরে বাড়ি যাও, পরীক্ষার দিকে মন দাও।
কবীর শুনল না কথাটা। ওর দুঁকাধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল রীণাকে – তারপরে আরও নিবিড় করে টেনে নিয়ে ঠোঁটটা মিশিয়ে দিল রীণার ঠোঁটে। সামান্য ছোঁয়াতেই রীণার ঠোঁট আলগা হয়ে গেল, আর সেই সুযোগে নিজের জিভটা রীণার মুখের ভেতরে গুঁজে দিল কবীর।
কবীর যখনই বলেছে রীণাকে বাড়িতে আসতে, তখন থেকে ঠিক এটাই চাইছিল ও মনে মনে। কিন্তু সন্দেহ ছিল কতটা সুযোগ পাওয়া যাবে চুমু খাওয়ার।
এ যে একেবারে সুবর্ণ সুযোগ!!!!
কবীরের পিঠটা খামচিয়ে ধরল রীণা – ওদের দুজনের বুক একে অন্যের শরীরে পিষ্ট হচ্ছিল – রীণা চাইছিল আরও কাছে টেনে আনা যায় কী না কবীরকে।