Thread Rating:
  • 85 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller চক্রব্যূহে শ্রীতমা (সমাপ্ত)
[Image: 54092050046ad6e059865c41031c3cd9-2.jpg]

সবশেষে সোমা প্রকাশ করলো ইন্সপেক্টর খানের জীবনের শেষ রাতের কথা ..

সেই রাতে ইনিস্পেক্টর খান সোমা'কে মোবাইলে মেসেজ করে ডেকে পাঠায় এবং সে উনার বাড়ি গেলে একদম অন্যরকম খান সাহেবকে দেখতে পায়। লোকটা যেন কথাবার্তায়, আচার-ব্যবহারে এক দিনেই সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। ধূর্ত খুদে খুদে চোখগুলোতে সব সময় লোলুপ দৃষ্টি, গুরুগম্ভীর গলার স্বর, রুক্ষ মেজাজ .. এই সবকিছু উধাও। সোমাকে ডেকে তার পাশে খাটে বসতে বলেছিল খানসাহেব।

"ভয় পাস না, আজ রাতে নোংরামি করার জন্য তোকে ডাকি নি। প্রথমেই বলি অফিস ক্যান্টিনে ক্যাশ ভাঙার ওই মিথ্যে কেস থেকে থানায় বলে তোর অব্যাহতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই নে .. তার হলফনামা। তোর বৌদিমণি শ্রী'কে বলিস ওর প্রতি অনেক অবিচার করেছি আমি .. ওকে যে কাগজটা দিয়েছি সেটা যেন ও ছিঁড়ে ফেলে দেয় .. তাহলেই  'জুট পাচারের' ওই মিথ্যে কেস থেকে ওর স্বামী অরুণ নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে .. কথাটা ওর সামনে বলার আমার সাহস হয়নি .. তাই তোকে বলে দিলাম। আর তোর প্রতি তো আমার অন্যায়-অবিচারের শেষ নেই। যাক আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না .. আমার ইচ্ছা তুই এখানে আর থাকিস না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্যাক্টরিতে ক্যান্টিনের কাজ ছেড়ে দিয়ে তোদের গ্রাম কুসুমপুরে চলে যা। শুনেছি তোদের তো আগে হোটেলের ব্যবসা ছিলো, যেটা বন্ধ হয়ে গেছে বহুবছর। ওই ব্যবসাটা আবার শুরু কর .. তোদের ওখানে রমরমিয়ে চলবে বলে দিলাম। তবে অত বড় একটা ব্যবসা শুরু করতে প্রচুর মূলধন লাগে। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ দিলাম .. টাকাটা ব্যাঙ্ক একাউন্টে ডাইরেক্ট ট্রান্সফার করতে পারতাম .. কিন্তু এসব করলে পুলিশের চক্করে পড়ে যাবি, তাই নগদ দিলাম। এবার আর একটাও কথা না বাড়িয়ে এখান থেকে সোজা বাড়ি চলে যা।" সোমার হাতে সবকটি ৫০০ টাকার নোটের পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি বান্ডিল আর থানার হলফনামা গুঁজে দিয়ে বলেছিল ইন্সপেক্টর খান।

কথাগুলো শুনে প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল সোমা। ভাবছিল নিজেকে চিমটি কেটে দেখবে কি না সে কোনো স্বপ্ন দেখছে নাকি ঘোর বাস্তব! তারপর খান সাহেবের ধমক শুনে আর দ্বিরুক্তি না করে টাকার বান্ডিলটা চাদরের তলায় জড়িয়ে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। পরের দিন সকালে তাকে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে যায় উনার মৃত্যুরহস্য তদন্তের স্বার্থে। যদিও টাকার কথা কেউ জানেনা একমাত্র শ্রীতমাকেই সে বিশ্বাস করে বললো।

শ্রীতমার নরম-সরম চারিত্রিক গঠন সম্পর্কে সোমার যেরূপ ধারণা তাতে করে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলার পর সে ভাবলো এবার হয়তো তার বৌদিমণি ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেবে কিংবা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়ে বাক্যশূন্য হয়ে যাবে।

কিন্তু এরমধ্যে কোনোটাই হলো না। সোমাকে অবাক করে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে শ্রীতমা চোয়াল শক্ত করে 'ট' এর জায়গায় 'ত' উচ্চারণ করে বললো "বুঝলাম .. তবে কাগজতা আমার কাছে আর নেই .. স্বামীর মৃত্যুর কারণ হয়তো তুমি আগে জানতে না, সেদিন জানতে পেরেছো .. কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছু কাঁচা পয়সা এবং চাকরিতা বজায় রাখার জন্য ওই বিকৃতকাম দুর্বৃত্তদের দিনের পর দিন, রাতের পর রাত শয্যাসঙ্গিনী হয়েছো তুমি .. সবকিছুই কি ভয়? তা বোধহয় নয় .. নিজের শরীরের চাহিদা মেতানোর জন্য এগুলো করোনি বলতে চাও! তবে শুধু তোমাকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই .. ওই একই দোষের দোষী আমিও .. পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে হাতের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ ছিল আমার কাছেও .. কিন্তু আমি সেতা করিনি .. শুধু কি লোকলজ্জার ভয়? তা বোধহয় নয় .. তবে এ'কথা অনস্বীকার্য এতদিন ধরে ওই মহাপাতক গুলো সুতো ধরে তেনে আমাদের পুতুলনাচ নাচাচ্ছিলো .. কিন্তু এবারের খেলাতা আমি খেলবো নিজের নিয়মে .. আর তোমার তো এখনই গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া হবে না বাপু .. যতদিন না প্রয়োজন ফুরচ্ছে তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। শুধু কালকে রাতে শোনা দু'তো কথাতে খটকা লাগছে .. সেই দু'তো মিলে গেলেই .."

এতক্ষণ তার বউদিমণির পায়ের কাছে উবু হয়ে বসেছিলো সোমা। শ্রীতমার এই নতুন রূপ এবং তার মুখে এই সমস্ত কথা শুনে ভীষণ রকম ভাবে চমকে গিয়ে সে থপ করে মাটিতে বসে পড়লো।

তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে শ্রীতমাকে বললো "একটা কথা মনে পড়ে গেলো বৌদিমণি.. খান সাহেব বলছিলো একবার আমাদের বড় সাহেব অর্থাৎ জেনারেল ম্যানেজার সুধীর যাদবের সঙ্গে পারলে যদি তুমি একটু দেখা করতে, তাহলে হয়তো .." এ'টুকু বলেই থেমে গেলো সোমা।

পুনরায় একই রকম ভাবলেশহীন মুখে চোয়াল শক্ত করে শ্রীতমা উত্তর দিলো "হুমম ..‌ জানিনা উনি কেমন মানুষ .. বাচ্চা যাদবের দাদা এদের মতই নারীমাংস লোভী পাষণ্ড .. নাকি একেবারে অন্যরকম .. তবে কয়েকতা হিসেব মেলাতে ওনার সঙ্গে দেখা করাতা আমার পক্ষে অত্যন্ত জরুরী।"

[Image: Screenshot-20210619-210616-1.jpg]


ওইদিকে তখন দীনেশ আগারওয়ালের চেম্বারে ..

"রাজু ড্রাইভারের কাছ থেকে যে'টুকু খবর বের করতে পারলাম তাতে করে এটা স্পষ্ট আমার প্রয়াত বন্ধু আদিল খান নিশ্চয়ই বৌমার মাতৃদেবীর সঙ্গে কিছু হাঙ্কি-প্যাঙ্কি করেছে ওখানে আর প্যান্টিটা যে ওর এই ব্যাপারে আমি ১০০% নিশ্চিত। শুধু দরকার ফোন করে একটা কনফার্মেশনের। কিন্তু মাগীর ফোন নম্বর পাবো কোথা থেকে! বৌমার কাছ থেকে তো কোনোমতেই চাওয়া যাবে না .. তবে ভাই তোমরা কিন্তু এটা ঠিক করলে না, আমি দু'দিনের জন্য দেশের বাড়ি গেলাম আর তার মধ্যে দীনেশ জি'র বাগানবাড়িতে আমার বৌমাকে তোমরা সবাই উল্টেপাল্টে, চেটেপুটে ভোগ করলে .. আমি ফিরে আসার অপেক্ষাটুকু করলে না .. মনে মনে খুব দুঃখ পেয়েছি ভাই।" কপট রাগ দেখিয়ে আক্ষেপ করে বললো তারক দাস।

"চিন্তা করিস না .. খুব তাড়াতাড়ি আরেকদিন বসাবো আমাদের আসর .. সেদিন তুই প্রথমেই চান্স পাবি .. কথা দিলাম .. আর ওই দেবযানী ম্যাডামের নম্বর আমি অরুণের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছি এখনই .. বলবো কেসের জন্য লাগবে.. আমাকে যমের মত ভয় পায় মালটা, আমি বললেই দিয়ে দেবে .. ফেসবুকে ছবিতে যা দেখেছি তাতে করে ভালোভাবেই বোঝা যায় মাগীর শরীরে এখনো বিশাল যৌনখিদে আছে .. শুধু একটু আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় .. একদিনের মধ্যে যদি মাগীটাকে ল্যাংটো করে দীনেশ জি'র বাগানবাড়ির বিছানায় না ফেলতে পারি তাহলে আমার নাম পাল্টে দিস.." টেবিল চাপড়িয়ে উত্তর দিলো মিস্টার ঘোষ।

মা এবং মেয়ের সম্বন্ধে এই ধরনের অশ্লীল এবং আদিরসাত্মক কথাবার্তা চলার মাঝেই মিস্টার ঘোষ ফোন করে অরুণের কাছ থেকে তার শাশুড়ির ফোন নম্বরটা নিয়ে নিলো এবং আশ্বাস দিলো খুব তাড়াতাড়ি তাকে এখানে ফিরিয়ে এনে কাজে যোগদান করানো হবে।

"keep quiet .. ফোনটা তাহলে আমিই করছি" এই বলে শ্রীতমার মাতৃদেবীর মোবাইল নম্বরে ফোন করলো মিস্টার ঘোষ ..

দেবযানী - হ্যালো .. কে বলছেন?

ঘোষ বাবু - আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ইন্সপেক্টর খানের খুব কাছের বন্ধু বলছি ..

দেবযানী - কি ..কি .. কিন্তু .. আ.. আ.. আমাকে কি দরকার?

ঘোষ বাবু - (গলাটা যথাসম্ভব গম্ভীর করে) দরকার না থাকলে কি আর এমনি এমনি ফোন করেছি .. ইন্সপেক্টর খানের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন। উনি মারা যাওয়ার আগে উনার খুব কাছের বন্ধু দীনেশ আগারওয়ালকে আপনার আর ওর মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্কের কথা সবকিছু খুলে বলেছে। দীনেশ জি এখানকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, উনার কথায় পুলিশ প্রশাসন ওঠেবসে। পুলিশ সন্দেহ করছে হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনি লোক লাগিয়ে উনাকে খুন করিয়েছেন। যেকোনো দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপনার বাড়িতে পুলিশ যেতে পারে। যদিও এই কথা দীনেশ জি বিশ্বাস করেন না। তবুও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য আপনাকে একটা অ্যাপয়নমেন্ট করতে হবে মিস্টার আগারওয়ালের সঙ্গে আর তার সঙ্গে আপনাদের রতিক্রিয়ার সাক্ষী হিসাবে নিয়ে আসা আপনার অন্তর্বাসটাও ফেরত নিয়ে যাবেন, বলা তো যায় না কখন পুলিশের হাতে পরে যায় ওটা। আমরা চাই আপনি দু-একদিনের মধ্যেই আসুন .. রূপনারায়ণপুর স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেবো আপনি আসার দিন। চিন্তা করবেন না এই অ্যাপোয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে আপনার মেয়ে কিছু জানতে পারবে না। মিটিং শেষ হলে আপনি আবার ফিরে যাবেন।

অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো সম্পুর্ন অনুমানের ভিত্তিতে কথাগুলো বললো মিস্টার ঘোষ। কিন্তু ঘোষ বাবুর বাক্যবাণ যে একেবারে সঠিক জায়গায় বিদ্ধ করেছে, সেটা বোঝা গেল দেবযানী দেবীর পরবর্তী কথাতেই।

দেবযানী - বিশ্বাস করুন এই খুনের ব্যাপারে আমি বিন্দুবিসর্গ জানি না। আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনারা হয়তো ভালোই চান আমার। ঠি .. ঠিক আছে .. আ .. আমি আজ রাতের মধ্যেই জানিয়ে দেবো কবে যেতে পারবো .. একটু দেখবেন যেন মৌ কিছু না জানতে পারে।

"বাব্বা .. এ যে মেঘ না চাইতেই জল .." দীনেশ জি'র কথায় ঘরে উপস্থিত বাকি সদস্যরা হো হো করে হেসে উঠলো।
★★★★

"নমস্কার স্যার .. আসতে আজ্ঞা হোক .. আপনিই তাহলে সিআইডির তরফ থেকে আমাদের খান সাহেবের কেসের জন্য অ্যাপয়েন্টেড সিনিয়র ইন্সপেক্টর দেবাংশু সান্যাল!" করজোড়ে নমস্কার করে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর খানের মৃত্যুর পর তার জায়গায় থানার চার্জে আসা নতুন অফিসার ইনচার্জ প্রবীর ঘোষাল।

"উঁহু উঁহু .. বুঝতে কোথাও একটু ভুল হচ্ছে আপনার .. আমি দেবাংশু .. খান চাচার কেসের দায়িত্বে এসেছি .. ইনি আমার বন্ধু অরুণাভ মৈত্র .. ওরফে বুম্বা .. ওর সঙ্গে আমাদের ডিপার্টমেন্টের দূর-দূরান্তের কোনো সম্পর্ক নেই" দৃঢ় ভঙ্গিমায়, গম্ভীর গলায় দেবাংশু বলে ভুল করা অরুণাভকে পাশে সরিয়ে, পিছন দিক থেকে আসা একজন মধ্যতিরিশের দীর্ঘকায়, সৌম্যকান্তি ভদ্রলোক কথাটা বললেন।

ঘোষাল বাবু কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন আগন্তুকের দিকে। দীর্ঘকায়, গৌরবর্ণ এবং সুদর্শন চেহারার অধিকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবাংশুর মুখমন্ডলের যে জিনিসটা সব মানুষকে আকর্ষণ করে, তা হলো তার একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। কেউ একদিন তাকে বলেছিলো "you have a pair of bright eyes .. মনে হয় যেন ওই চোখ দুটো'তে আমি হারিয়ে যাই.."

যাক সে কথা, দেবাংশুর পরিচয় পাওয়ার পর তাকে সমাদর করে ওসির ঘরের পাশে অনেক দিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা একটি স্টোররুম কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন রূপে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ঘরটিতে নিয়ে যাওয়া হলো .. এবার থেকে এখানে বসেই তিনি এই তদন্তের অফিশিয়াল কাজকর্ম করবেন।

"আজ্ঞে আপনার পরিচয় তো পেলাম .. কিন্তু আপনার এই বন্ধুটি .. মানে .. হে হে .. উনি এখানে কি জন্য.." কুণ্ঠিত হয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলেন ইন্সপেক্টর ঘোষাল।

"বললাম না ও আমার বন্ধু .. আমাদের ডিপার্টমেন্ট এবং এই কেসের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই .. উনি একজন চাকুরীজীবী .. লেখালেখি করার অভ্যাস আছে .. অনেক অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছে .. তারপর যথাসময়ে যৌবনের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রেমে পড়ে একটি সুলাক্ষণা, সুন্দরী কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন বটে .. কিন্তু এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পত্নীবিয়োগের পরে বেচারা ধর্মে-কর্মে মন দিয়েছে .. আর সময় সুযোগ হলে কোনো রোমাঞ্চকর কেসে আমার লেজুড় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় লেখার খোরাক যোগানোর আশায় .. চিন্তা করবেন না ও আমাদের কেসে অযথা নাক গলিয়ে কোনো ক্ষতি করবে না বরং উপকার করলেও করতে পারে" ঘোষাল বাবুকে আশ্বস্ত করে বললো দেবাংশু।

রাতে থানা থেকে নিজের নামে বরাদ্দ হওয়া বেশ বড়সড় একটি পুলিশ বাংলোতে ফিরে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নবনিযুক্ত পুলিশের খানসামা রসিকলালের হাতে তৈরি গরম গরম রুটি, অড়হর ডাল আর অত্যন্ত সুস্বাদু দেশি মুরগির ঝোল দিয়ে রাতের আহার সমাপ্ত করে কলকাতা থেকে সুন্দরনগর ভ্রমণের ধকল, তার উপর সারাদিন এই কেস নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে করতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে যাওয়া দেবাংশু তার বন্ধুকে "শুভরাত্রি" বলে বিছানায় শুয়ে নিদ্রামগ্ন হওয়ার চেষ্টা করলো। বেচারা অরুণাভর ইচ্ছা ছিল রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার। কিন্তু কি আর করা যাবে .. যস্মিন দেশে যদাচার।

"আমাকে তো কিছুই বললে না বড় সাহেবের সঙ্গে এতক্ষণ কি কথা হলো তোমার .. যাগ্গে, বলতে হবে না .. তোমাকে তো এখন বেশী কিছু বলতেও ভয় লাগে আমার .. আমাদের নতুন বাঙালী দারোগাবাবু শুনেছি খুব ভালো .. দাদাবাবুর কেসটার ব্যাপারে কিছু সাহায্য করলেও করতে পারে .. আর তাছাড়া শুনলাম গতকাল নাকি কলকাতা থেকে এক মস্ত বড় পুলিশ অফিসার এসেছে খান সাহেবের মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য .. ভাগ্য ভালো থাকলে তার সঙ্গেও তোমার দেখা হয়ে যেতে পারে" বিকেলের দিকে সুধীর যাদবের কোয়ার্টার থেকে শ্রীতমা বেরোনোর পর নিচে বুকানকে কোলে নিয়ে অপেক্ষারতা সোমা তাকে কথাগুলো বলতে বলতে স্টাফ ক্যাম্পাসের মূল ফটকের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।

"উঁহু .. এখন বাড়ি যাবো না .. একবার থানা থেকে ঘুরে আসতে হবে .. একটা অতো (অটো) ডিজার্ভ করো" সোমার কথায় বিশেষ কর্ণপাত না করে তাকে নির্দেশ দিলো শ্রীতমা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিয়ে অটোরিকশাটি সুন্দরনগর পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে থামলো। সোমাকে কনস্টেবল রুমের পাশের বেঞ্চটিতে বুকানকে সঙ্গে নিয়ে বসতে বলে শ্রীতমা ভেতরে ঢুকে জানতে পারলো আর্জেন্ট কল আসায় কোনো একটি কাজে দারোগা বাবু বেরিয়েছেন। বিফল মনোরথ থানার মেইন দরজা দিয়ে বেরোতে যাওয়ার মুহূর্তে ভিতরে আগত একজন পুরুষের সঙ্গে বেশ জোরেই ধাক্কা খেলো শ্রীতমা।

"I'm extremely sorry madam .. তাড়াহুড়োয় ছিলাম তাই লক্ষ্য করিনি" কথাটা বলে শ্রীতমার দিকে চোখ পড়তেই কিছুক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো দেবাংশু।

ওদিকে শ্রীতমাও দেবাংশুকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো .. তারপর সামলে নিয়ে বললো "তুই মানে তুমি এখানে?"

অধঃস্তন কর্মচারীদের সামনে কোনরূপ ব্যক্তিগত আলোচনা যাতে না হয় তাই খাটো সে গলায় শ্রীতমাকে বললো "আমার চেম্বারে আয় .. ওখানেই কথা হবে" দেবাংশু নিজের চেম্বারে ঢুকে যাওয়ার পর তাকে অনুসরণ করলো শ্রীতমা।

প্রায় সাত বছর পর দেবাংশুর সঙ্গে দেখা হলো শ্রীতমার। হ্যাঁ ইনিই সেই ভদ্রলোক বিবাহের আগে যার সঙ্গে শ্রীতমার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বলা ভালো এরা পরস্পর পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে ছিলো। তাই তো বিচ্ছেদের পরেও এরা কেউই পুনরায় দেখা করে বা কোনোরকম যোগাযোগ করে পরস্পরের জীবন কণ্টকময় করে তুলতে চায় নি। বিশেষ করে দেবাংশু চেয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষটি সুখে থাকুক শান্তিতে থাকুক। আসলে ভালোবাসা তো ত্যাগের প্রতীক।

নিজের ফোন নম্বরটিও বদলে ফেলেছিলো দেবাংশু। বিবাহের পর থেকে এই ঘটনাবহুল জীবনেও প্রতিটা মুহুর্তে সে অনুভব করতো দেবাংশুর অনুপস্থিতি। অনেকবার চেষ্টা করেছে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার কিন্তু..

"কেমন আছিস .. আছো? তুমি পুলিশে আছো সেতা তো তখনই জানতাম .. কিন্তু এখানে কি ভাবে?" আস্তে আস্তে বিস্ময়ের ঘোর এবং মুগ্ধতা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো শ্রীতমা।

"হাহাহা .. তোর এখনো ট আর ত-এর দোষ কাটেনি দেখছি .. বাইরে তোর বেবিকে দেখলাম, ভীষণ কিউট .. পরে যাওয়ার সময় ওকে খুব চটকু-পটকু করবো কেমন .. আরে এতো hesitate করছিস কেনো .. you can call me তুই .. আমাদের সম্পর্কটা তো তুই-তুকারির ছিলো .. আমি এখন সিআইডির একজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর .. একটা কেসের investigation করতে এখানে এসেছি .. কিন্তু তার আগে তুই বল .. তুই এখানে কি করছিস? তোকে দেখে তো আমি চমকে গেছিলাম প্রথমে" মুচকি হেঁসে বললো দেবাংশু।

আসলে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও সম্পর্কে এরা দুজন পিসতুতো-মামাতো ভাই বোন। প্রথমে ভালো লাগা তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসা .. এর মধ্যে দিয়েই এদের দু'জনের মিষ্টি-মধুর একটি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এই সম্পর্ক দেবাংশুর বাড়ির লোকজন মেনে নিলেও শ্রীতমার দাদা, মা এবং বাবা একেবারেই মানতে চায়নি। তারই ফলস্বরূপ দুজনের বিচ্ছেদ ঘটেছিলো।

যাই হোক, পুলিশ কনস্টেবলের এনে দেওয়া কোলড্রিংস খেতে খেতে শ্রীতমা নিজের সতীত্ব হরণের ঘটনা এবং পরবর্তীকালে যৌন বিলাসে লিপ্ত হওয়ার ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করলো দেবাংশুর সামনে। তবে তার সঙ্গে এটাও যোগ করলো তার শরীরের প্রতি লোভ আছে এবং বারবার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে/করে যাচ্ছে ওই পাষণ্ডগুলো।

 সম্পূর্ণ অন্য একটি কেসের তদন্ত করতে আসার পরে শ্রীতমার কাছ থেকে এই ধরনের একটি ভিন্নধর্মী ঘটনার কথা শুনে প্রথমে কিছুটা আশঙ্কিত এবং চিন্তিত হয়ে পড়লো দেবাংশু .. কি করে সে তার এক্তিয়ার বহির্ভূত এই কেসটি তে নাক গলাবে এই ভেবে .. তারপর শ্রীতমা কে আশ্বস্ত করে বললো "চিন্তা করিস না, I'll try my best .. কথা দিচ্ছি দু'দিনের মধ্যে তোর husband কে এই সুন্দরনগরে ফিরিয়ে আনবো অপরাধীরা শাস্তি পাবে। গোড়া থেকে আবার তদন্ত শুরু করার অনুরোধ করবো নতুন দারোগাবাবু প্রবীর ঘোষালকে। এছাড়াও তাকে যতটুকু সাহায্য করার আমি অবশ্যই করবো।"

"তুই কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছিস .. আমি তো চোখ ফেরাতেই পারছি না .. এসব কি তোর বউয়ের হাতের জাদু? বিয়ে করেছিস নিশ্চয়ই .." আগের থেকে নিজের মনের ভার অনেকটা  কমে যাওয়ায় মুচকি হেসে প্রশ্ন করলো শ্রীতমা।

"তাই? হ্যান্ডসাম? কি জানি হতেও পারে হাতের জাদু" চোখগুলো ছোটো করে ইঙ্গিত পূর্ণভাবে কথাটি বললো দেবাংশু।

"ও .. তার মানে বিয়ে করেছিস .. ভালোই তো .. একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তোর বউ খুব ভালোবাসে তোকে, তাই না? আচ্ছা ও কি দেখতে আমার থেকে সুন্দর? কথাগুলো খুব বোকা বোকা শোনাচ্ছে তাই না?" নিজের কৌতুহল চাপতে না পেরে প্রশ্নগুলো এক নিঃশ্বাসে করে ফেলে কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো শ্রীতমা।

"না না বোকা বোকা হবে কেনো .. তোর সব কথা যখন বললি .. আমার কথাও জানার অধিকার আছে তোর .. একদিন তোকে সামনাসামনি দেখিয়ে দেবো আমার better half কে .. সেদিন মিলিয়ে নিস কে বেশি সুন্দরী .. তবে একটা কথা বলবো আগের থেকে অনেক বেশি beautiful এবং attractive হয়েছিস তুই" হাসি মুখে জবাব দিলো দেবাংশু।

দেবাংশুর কথায় বলা ভালো স্বামী ছাড়া এই প্রথম কোনো পরপুরুষের প্রশংসায় নিজের প্রতি গর্ব বোধ হলো শ্রীতমার এবং পরমুহূর্তেই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো তার মুখ .. কিন্তু কেনো সে নিজেও জানে না তার বুকের ভেতরে একটা অদৃশ্য দলাপাকানো কষ্ট অনুভব করলো দেবাংশুর বিবাহের কথা শুনে।

পুলিশ স্টেশনে ঢোকার আগের বৌদিমণি এবং পুলিশ স্টেশন থেকে বেরোনোর পরের বৌদিমণির স্বভাব এবং আচার-ব্যবহারের আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করলো সোমা। থানায় ঢোকার আগে গোমরা মুখো শ্রীতমা এখন গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে অটোয় উঠলো। তবে কি তার বউদিমনির মাথাটা একেবারেই গেলো!! কিন্তু ভয় কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলো না সোমা।

সোমা নিজের বাড়ি চলে যাওয়ার পরে সন্ধ্যে থেকে নিজের কোয়ার্টারে বেশ ভালো সময় কাটলো শ্রীতমার। মনটা যে আজ তার বেশ ফুরফুরে .. এর একটা বড়ো এবং অবশ্যম্ভাবী কারণ তো দেবাংশুর সঙ্গে আচম্বিতে এতদিন পর দেখা হয়ে যাওয়া .. কিন্তু আর একটা কারণও আছে .. ক্রমশ প্রকাশ্য।

[Image: FB-IMG-1620884490610.jpg]

বাড়ি যাওয়ার আগে সোমা একবার মিনমিন করে জিজ্ঞাসা করেছিল রাতের খাবার সে বানিয়ে দিয়ে যাবে না কি .. তার উত্তরে ব্যঙ্গাত্মকভাবে শ্রীতমা বলেছিল "এতদিন কোথায় ছিলে বাপু তুমি? তাছাড়া আমার প্রেমিকেরা যখন আমাকে ফ্রিতে সকাল-দুপুর-বিকেল-রাতে খাবার সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে তখন আমি কেনো সেটা পরিত্যাগ করবো শুধু শুধু!"

রাতে অফিস ক্যান্টিন থেকে আসা ফ্রী অফ কস্ট এর মহাভোজ খাওয়ার পর আজ অনেকদিন বাদে বুকানকে নিয়ে সুখনিদ্রায় গেলো শ্রীতমা।

পরের দিন ভোর হলো .. সূর্য উঠলো .. কুড়ি থেকে ফুল প্রস্ফুটিত হলো .. ফ্যাক্টরির সাইরেন বাজলো .. পুলিশ স্টেশনে গিয়ে পুনরায় দেবাংশুর সঙ্গে দেখা করার আশায় শ্রীতমার গুনগুন করে গাওয়া এই গানে "দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি" সারা ঘরময় মুখরিত হয়ে উঠলো ..

সবকিছুই ছন্দ মিলিয়ে হতে থাকলেও .. সেই সময় চার কিলোমিটার দূরে সাদার উপর কাজ করা একটি বুটিকের শাড়ি এবং সাদা স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে রুপনারায়নপুর স্টেশনে মোজাফফরপুর এক্সপ্রেস থেকে নামলো এক বিগতযৌবনা কিন্তু অসম্ভব আঁটোসাঁটো শরীরের আকর্ষণীয়া এক নারী .. দেবযানী ব্যানার্জি।

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে লাইক . রেপু . কমেন্ট করবেন .. না লাগলে নয় 

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 14 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: চক্রব্যূহে শ্রীতমা (চলছে) - by Bumba_1 - 19-06-2021, 10:04 PM



Users browsing this thread: 103 Guest(s)