19-06-2021, 03:31 PM
পর্ব ৮।
__________________
তবে তার কপালে সুখ কোনোদিনও বড় বেশী স্থায়ী হয়না আর এবারও হলো না। অপর্ণা নিশিকান্তকে এইবার সেই অবস্থায় রেখেই ভিতরের দিকে চলে গেলো, আর নিশিকান্ত দরজার পেছন থেকে অপর্ণার সেই সুরেলা গলায় শুনলো '' আপনি একটু বসুন আমি আসছি''। নিশিকান্ত স্থানুর মত দাঁড়িয়ে ছিল আর তখনই অপর্ণা দরজার পেছ থেকেই আবার বলে উঠে '' আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার পেছনেই লাইটের সুইচ আছে, লাইট জ্বেলে সোফাতে বসুন''। নিশিকান্ত লাইট জ্বালতে জ্বালতে বাড় দুয়েক হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বাঁচলো, কোনোরকমে লাইট জ্বালতেই ঘরটা যেন ঝলমল করে উঠে। নিশিকান্ত এবার ভালো করে ঘরটা দেখার সুযোগ পেল, আর সে দেখে যে ঘরটিতে আসবাবপত্রের থেকে অনেক বেশী বইয়ে ঠাসা। নিশিকান্ত নিজেও বই পড়তে খুবই ভালোবাসতো তাই সে বই দেখে প্রথমেই সেই দিকে এগিয়ে যায়, তবে নিশিকান্ত একটু অবাকই হয় বইগুলির বিষয়বস্তু দেখে।
সাধারন গল্প উপন্যাসের বই ছিলনা তাদের মধ্য, নিশিকান্ত নেড়েচেড়ে দেখে যে তাদের মধ্য বেশির ভাগই ছিল এনাটমি আর মানুষের শরীর আর তার নানা রোগ বিষয়ী,আর বাকি যা ছিল তা মুলত জৈবরসায়নিক নিয়েই ছিল। সে এমনিতেই নানা চাপে ছিল তারপর এইসব পাহাড়ের মত শক্ত বিষয়ের বই দেখে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে পড়তে যাচ্ছিলো আর তখনই তার চোখ পড়ে আলমারির একদম নিচের দিকে একটা চটি বইতে। বইটা ব্রাউন পেপার দিয়ে যত্ন করে মলাট দেওয়া ছিল, সময় কাটাবার জন্য আর কৌতূহলে বইটা টেনে নিয়ে সে সোফাতে বসে বইটা ভালো করে দেখবে বলে। উজ্জল আলোতে নিশিকান্ত বইটা তার চোখের সামনে খুলে ধরতেই যেন একদম চমকে উঠে, বইটা একটা ইংরাজি কমিকস বই ছিল, বইটার উপরে বড়বড় হরফে লাল আর কালো কালিতে লেখা ছিল '' MICKEY MOUSE BY WALT DISNEY'' । নিশিকান্ত একজন পুলিস অফিসার আর তার ট্রেনিঙেই শেখানো হয়েছিল সমস্ত ঘটনাকেই সন্দেহের চোখে দেখতে। তাই সে বইটা হাতে নিয়েই উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতেই নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে সেটার সুইচ অন করে দেয়।
সে ফোনটা হাতে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করে , সে একবার ভাবে যে সে ফোনটা সোজা শালিনীকে লাগায়,তবে আবারও ভাবে যে একটা সামান্য বই পেয়েই যদি সে তার বস কে ফোন লাগিয়ে দেয়, তাহলে এবার সত্যি করেই হয়তো তাকে এই কেস থেকে সহায় সাহেব সরিয়ে দেবেন। এইরকম নানা ভাবনা ভাবতে ভাবতেই নিশিকান্ত একটু একা থাকার জন্যই আবারও তার ফোনটা সুইচ অফ করে দেয়। নিশিকান্ত ফোনটা রেখে এবার তার হাতের বইটা ভালো করে দেখতে থাকে, গোটা বইটার প্রায় সব পাতাতেই কোনও বাচ্চা ছেলের কাঁচা হাতের লেখাতে ভর্তি ছিল, যার মধ্য পুচু বলে একটা নাম বারবারই দেখতে পাচ্ছিলো নিশিকান্ত, তবে সেই নামটা যেই লিখুক তার হাতের লেখা আর বানান দুই অত্যান্ত খারাপ।
যেন কোনোরকমে লিখেছে, একে বইটার অর্ধেক ওপর বেশী পাতা ছিল না। যে কটা পাতা ছিল তাঁর বেশীরভাগই এবড়ো খেবড়ো করে কাটা, তার ওপর বইটার পাতায় পাতায় নানা রকম বিদঘুটে ছবি আর লেখাতে ভর্তি, নিশিকান্ত ভাবে যে একমাত্র রাখাল দাস বাবু এলে হয়তো সেই হরাপ্পার মত এটারও মানে উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তার পুলিসি নাকে একটা কিছুর গন্ধ সে পাচ্ছিলো, তার মনে কোথায় একটা যেন কিছু খিঁচ লেগে গেছিলো,সে বইটা হাতে নিয়ে এবার চোখ বন্ধ করে একটা কঠিন অঙ্ক মেলাবার চেষ্টা করতে থাকে, তবে সে কিছুতেই অপর্ণার সঙ্গে ওই চারটে খুনকে মেলাতে পারছিলো না।
তবে তার মনে একটা বিশ্বাস জন্মেছিল যে কিছু না কিছু সুত্র তো নিশ্চয় আছেই অপর্ণার আর সেই চারটে মৃত্যুর সঙ্গে, আচমকায় নিশিকান্তর হাতের বইটাতে একটা হ্যাঁচকা টান পড়ে আর নিশিকান্তর চোখ খুলে যায়।
নিশিকান্ত দেখে তার সামনে একদম রুদ্রমূর্তি ধারন করে অপর্ণা দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখ মুখ একদম টকটকে লাল হয়েছিল, আর তার মুখ থেকে একটা জান্তব শব্দ বের হছিল। নিশিকান্ত জীবনে অনেক কিছুই দেখেছে তার চাকরীর সুবাদে তবে একটা শান্ত, সুন্দরী ভদ্রমহিলার এই রকম রূপান্তর এত তারাতারির মধ্য সে জীবনেও দেখেনি।
নিশিকান্ত কিছু বলতে যাওয়ার আগেই অপর্ণা গর্জন করে বলে উঠে '' কোন সাহসে আপনি আমার পুচুর বইয়ে হাত দিয়েছেন ? জানেন না সে এই বই ছাড়া থাকতে পারে না ? আপনার এত বড় সাহস যে ওর বইয়ে হাত দেন? যান এখুনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যান, যান বেরোন ! '' বলে অপর্ণা একটা বিকট চিৎকার করে উঠে।
নিশিকান্ত অপর্ণার এই রূপ দেখে আর কিছু বলতে যাওয়ার সাহস পায়না, অপর্ণা বইটা হাতে পেয়ে যেন তখন তার সামনে দাঁড়ানো নিশিকান্তর অস্তিত্বও ভুলে গেছিল। মাতৃস্নেহে অপর্ণা তখন বইটার উপর পরম মমতায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো আর নিজের মনেই বিড়বিড় করে দ্রুত কত কথা বলে যাচ্ছিলো, নিশিকান্ত এবার বুঝতে পারে যে অপর্ণার মানসিক সুস্থতা সম্বন্ধে যে কথা সে শুনেছিলো তা একদমই সত্যি। তবে সে এবার তার একটু সাহস সঞ্চয় করে অপর্ণার দিকে একটু এগিয়ে যেতেই যে এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি, নিশিকান্ত একটু এগিয়ে গিয়ে তার হাতটা অপর্ণার কাঁধে রেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতেই অপর্ণা একদম ছিটকে সরে গিয়ে একটা হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে '' নোংরা, দুশ্চরিত্র লোক আমার গায়ে হাত, একলা মেয়ে মানুষ দেখলেই নোলা একদম লকলক করে উঠে না? বেরো আমার ঘর থেকে এখনি বের হও'' । নিশিকান্তর কান একদম গরম হয়ে যায়, এতটা অপমানিত সে তার জ্ঞ্যান অবস্থায় হয়নি,
তার মাথা একদম ভ্যাবলা হয়ে পড়ে সে বুঝে পায় না তার কি করণীয় । ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে একটি বৃদ্ধা বেরিয়ে আসেন, উনি একবার অপর্ণার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে নিশিকান্তর দিকে এগিয়ে যেয়ে মৃদু স্বরে বলে '' মেয়েটার কথাই কিছু মনে না করে তুমি এখন না হয় চলে যাও বাবা, ওর অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছ না হয় পরে আসবে ''। নিশিকান্ত আর কথা না বাড়িয়ে দরজার দিকে এগোতেই অপর্ণা তার একটা ফাঁকা গ্লাস টেবিল থেকে তুলে নিশিকান্তর দিকে ছুড়ে মারে, আর বিকট গলাতে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠে '' খবরদার আর যদি আমার কাছে আসারও চেষ্টা করিস তাহলে আমি তোর নোংরামি একদমই ঘুচিয়ে দেবো, জানোয়ার কোথাকার ''। নিশিকান্ত পিঠে গ্লাসের আঘাত নিয়ে যখন ঘরের বাইরে রাখা তার গাড়ীতে চাপে তখন রাগে, অপমানে, অভিমানে তার কান মাথা একদম ঝাঁঝাঁ করছিলো।
জীবনে যেটা নিশিকান্ত কক্ষনো করেনা আজ সেটাই যেন তার এই অপমানের মলম ছিল, সে তার সমস্ত রাগ অপমানের বদলা নেবার জন্য যেন গাড়ির এক্সিলিটারটাকেই বেছে নিয়েছিলো । নিশিকান্ত যখন তার অপমান ভোলার জন্য তার গাড়ীটা পাগলের মত চালাছিলো ,তখন যারা দেখছিলো তাদের মনে হচ্ছিলো যে একটা ষাঁড় পাগল হয়ে দৌড়ে যাচ্ছে আর সামনে যাকেই পাবে তাকে হয়তো ধ্বংসই করে ফেলবে!
গনগনে রাগ নিয়ে যখন নিশিকান্ত তার বাড়ীতে পৌঁছায় তখন সে দেখে তার সামনের ঘর খোলা আর তাতে লাইটের উজ্জল আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে কেউ তার চেয়ারে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে যাচ্ছে । নিশিকান্ত খাট্টা মেজাজ নিয়েই ঘরে ঢোকে আর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে, যে তারই চেয়ারে বসে তার বাবা-মার ছবির সামনে পায়ের উপর পা তুলে শালিনী বিরক্ত মুখে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে আর লালু তার সামনে বংশবদের মত দাঁড়িয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখেই নিশিকান্তর মাথায় রক্ত উঠে যায়, তবে সে নিজেকে একটু সামলায় আর ঘরে ঢুকে সোজা লালুকে হুকুম করে '' তুই এখানে বাঁদরের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? যা আমার জন্য ঠাণ্ডা জল নিয়ে আয় ''।
তবে নিশিকান্ত অবাক হয়ে দেখে যে লালু তার কথাতে ভয়ে পেচ্ছাব করে দিতো সে নিশিকান্তর কথা শুনেও জল না আনতে গিয়ে শালিনীর সামনে স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে ছিল, নিশিকান্ত এবার রেগে একদম আগুন হয়ে গেলেও নিজেকে কোনমতে কন্ট্রোল করে তেতো গলায় বলে উঠে '' কিরে লালু কানে কি কালা হয়ে গেছিস নাকি? কি বললাম শুনতে পেলি না?''। এবার লালু কিছু জবাব দেবার আগেই শালিনী চেয়ারে বসে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে '' ওর সঙ্গে কি কথা বলছেন? আমাকে জিগ্যেস করুন যা জিগ্যেস করবার কারন আমি যখন আপনার বস তখন আপনার চাকরেরও আমিই বস, সেটা আপনার মোটা মাথাতে না ঢুকলেও আপনার চাকরের মাথাতে ভালো করেই ঢুকে গেছে। ও তো একটা পুরনো কেসের আসামী, তবুও সে কি করে কেস থেকে রেহাই পেল ঘোষ বাবু ? বাদ দিন সে জবাব আমি ঠিক সময় মত নিয়ে নেব, আর তাঁর আগে ওকে অর্ডার না দিয়ে আগে আমাকে জবাব দেন যে বিকেল থেকে এই রাত নটা অব্দি কোন ভাগাড়ে গিয়ে মারানো হছিলো?''।
শালিনী বরাবরই তার অধস্তন কর্মচারীদের সঙ্গে এইভাবেই কথা বলতে অভ্যাস্ত হলেও, নিশিকান্ত সব সময় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সম্মানকেই জীবনের মুল পাওনা মেনে চলতেই ভালোবাসতো । লালুর সামনে তাকে এই ধরনের কথা নিশিকান্তকে আরও তাতিয়ে দিলেও সে তখনো নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো,কারন নিশিকান্ত নিজেকে ভালো করেই চিনতো । সে এটা বেশ জানতো যে যদি একবার সে নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে তাহলে তার পড়ে আর যা হবে তার ভালো মন্দ বিচার করার মত অবস্থায় হয়তো সে নিজে কেন কেউই থাকবে না, তাই নিশিকান্ত শালিনীর কথার জবাবে শান্ত ভাবেই বলে '' ম্যাডাম আপনি আমার বস হতে পারেন কিন্তু সেটা অফিসে, আমার ঘরে ঢুকে এই রাত্রি বেলায় আপনার আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলার কিন্তু কোনও অধিকার নেই ''।
শালিনী নিজেও একজন দাপুটে অফিসার আর তারও কারুর চোখ রাঙ্গানি সহ্য করার অভ্যাস ছিল না, তাই নিশিকান্তর মুখের কথা শেষ হতেই না হতেই শালিনী একেবারে প্রায় লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বলে উঠে '' টু হেল উইথ ইয়োর অধিকার, আমাকে একদম বেশী আইন মারাবেন না। আমার আণ্ডারে কাজ করতে হলে আমার মত চলতে হবে নাহলে কাল সকালে আমার অফিসে নিজের ইস্তিফা পাঠিয়ে দেবেন '' ।
বলেই শালিনী তার এতক্ষণের পুষে রাখা রাগের চোটে বলেই ফেলে '' আপনার মতন নষ্ট চরিত্রের মানুষদের পুলিসে না রাখায় ভালো, একটা আধপাগল মহিলাকেও নিজের কামলালসার হাত থেকে যে ছাড়েনা সে রকম বিকৃত মানসিকতার লোককে আমি আমার টীমে দেখতে চাইনা। কাল সকালেই যেন আমি আমার টেবিলে আপনার ইস্তফা দেখতে পায়, না হলে আমাকে বাধ্য হয়েই প্রেস আর সহায় সাহেবকে সব জানাতে হবে'' । কথাটা শেষ হতেই শালিনী এক লাথি মেরে সামনের টেবিলে ঘর থেকে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো লালুর স্তম্ভিত চোখের সামনে দিয়েই।
নিশিকান্ত ছোট থেকেই একটু অন্যধরনের ছিল, সে নিজের ছোট্ট বৃত্তে থাকতে পছন্দ করতো শান্ত ভাবে, কিন্তু যদি কেউ তাঁর মানসিক শান্তি কে নষ্ট করার চেষ্টা করতো, তাঁর স্মমানে আঘাত দিত তাহলেই মানুষ নিশিকান্তের খোলসের ভেতরে যে একটা হিংস্র , জান্তব পশু লুকিয়ে থাকতো স্বযত্নে । নিশিকান্ত সেই পশুটার খাঁচা খুলে তাঁকে বাইরে আসার অনুমতি দিয়ে দিত ।
শালিনীর গাড়ীর আওয়াজ মিলিয়ে যাবার পরেও ঘরে নিশিকান্ত আর লালু দুজনেই নিসচুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মালিকের থমথমে চোখমুখ দেখে লালু ভয়ে আর আজানা এক আগত ঝড়ের আশঙ্কায় যেন কাঁটা হয়ে যায়, লালু তার মনিবের এই ধরনের চোখমুখ ভালো করেই চেনে। লালু জানতো তার মালিক এখন আহত সাপের মতই ভয়ঙ্কর, সে পারেনা এখন হেন কোন কাজ নেই।
তবে লালুর মাথায় যখন এতসব চিন্তা, ভাবনা খেলছে তখন নিশিকান্ত কিন্তু পাথরের মত শক্ত মুখে স্থির, শান্ত মুখে সেই চেয়ারেই বসে আছে যেখানে বসে কিছুক্ষণ আগেই শালিনী তাকে লালুর সামনে অপমান করে গেছিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পড়ে লালু আর না পেরে কাতর স্বরে বলে '' বাবু আপনি চলুন ভিতরে স্নান খাওয়া সেরে নেবেন ''। নিশিকান্ত লালুর কথা যেন কোনও স্বপ্নের গভীর থেকে শুনলো এমন ভাবে তার দিকে তাকালো আর ক্লান্ত স্বরে কেটে কেটে বলে '' আমি ভালো হয়েই থাকতে চাই রে লালু, কিন্তু কেউ আমায় বেশীদিন ভালো হতে দেয়না ''।
সামান্য এই সামান্য কথাতেও লালুর মেরুদণ্ড দিয়ে যেন একটা ঠাণ্ডা হিমের স্রোত নেমে যায়,কারন নিশিকান্ত যতই ক্লান্ত আর করুন স্বরেই এই কথাটা বলুক এর ফল আর পরিণাম যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটার ধারণা লালুর এত বছর তার মালিকের সঙ্গে থেকে ভালো করেই আছে। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা যখন রাত এগারোটার কাছা কাছি তখন নিশিকান্ত একটা আড়মোড়া ভেঙ্গে তার চেয়ার থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে যায়, লালু একটু খুশিই হয় যে যাক তাহলে আজ রাতের মতন ফাঁড়াটা কেটেছে।
তবে লালুর ধারণা ভুল প্রমান করে দিয়ে দশমিনিটের মধ্যই নিশিকান্ত মিসকালো জামাকাপড়ে সুসজ্জিত হয়ে কাঁধে একটা ছোট্ট চামড়ার ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । লালু কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নিশিকান্ত তাকে শুধু হাত তুলে নিরস্ত করে দেয়, তার মালিকের চোখের দৃষ্টিতেই লালু যেন একদম চুপ মেরে যায়। আজ তার মালিকের চোখে সেই খুনে দৃষ্টিটাই ছিল যেটা তার মালিকের নামটা কুখ্যাত করে তুলেছিল। নিশিকান্ত যখন তার বুলেট ফটফটিয়ে রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে বেড়িয়ে গেলো লালু তখনো এক অজানা বিপদের আসার আশঙ্কায় দাঁড়িয়ে কাঁপছিল।
ধৃতরাষ্ট্র - দা বস !