16-06-2021, 08:17 PM
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় খুব ভোরে, হয়তো পাখির কিচির মিচির শব্দে। ওর বাহুডোরে মিষ্টি এক অপ্সরী ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে, ওর মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। স্নিগ্ধার কপালে আলতো করে চুমু দেয় কবির, তারপর ওর বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, কিন্তু ছাড়িয়ে নিতে পারে না। ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ও আরো জড়িয়ে নেয় শক্ত করে। কবির এখনই স্নিগ্ধার ঘুম ভাঙাতে চায় না, তাই আর ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে না। ওর নিষ্পাপ মুখটির দিকে অপলক চেয়ে থাকে কবির। ওর দেহের নরমত্ব মনপ্রান ভরে অনুভব করতে থাকে কবির।
কতোক্ষন এভাবে ছিল জানেনা কবির, একসময় জানালা দিয়ে রোদ আসে ঘরের ভেতর। এখন আর শুয়ে থাকা যায় না, কবির স্নিগ্ধাকে ডাকে। স্নিগ্ধা একবার চোখ মেলে তাকায় তারপর ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে। কবির তখন ওর মিষ্টি মুখটি চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে। স্নিগ্ধা আবারও চোখ মেলে তাকায়, তারপর মিষ্টি করে হাসে। এতো সুন্দর জাগরন ওর কখনো হয়নি।
"এ্যাই, তুই চুমু দিচ্ছিস কেন?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার স্লিপিং বিউটির ঘুম ভাঙালাম। গল্পে শুনিস নি?" কবির বলে।
"গল্পে তো ঠোঁটে চুমু দিয়ে ঘুম ভাঙায়।" দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"ও তাই! ঠিক আছে।" বলে ঠোঁটে চুমু দেবার জন্য এগিয়ে আসে কবির।
"উহু, এভাবে নয়। একটু একটু এগিয়ে আন, চোখ বন্ধ কর।"
কবির ওর কথা মত চোখ বন্ধ করতেই স্নিগ্ধা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজে সরে যায়, কবির ওকে ধরতে এলে বিছানা থেকে উঠে খিলখিল করে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় স্নিগ্ধা, কবির ওর পিছু নেয়।
"ওয়াও, কি অপুর্ব!" বাইরের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
একটি পাহাড়ের উপর খানিকটা সমতল যায়গায় কাঠ ও বাঁশের তৈরী দুটো ঘরের একটি ছোট্ট বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকে একটি পাহাড়ি জলাশয়। বাড়িটির পেছনের দিকটায় পাহাড়ি বন। স্নিগ্ধা চারিদিক ঘুরে ফিরে দেখে।
"এটা কোন যায়গা? এই বাড়িটাই বা কার?" স্নিগ্ধা বলে।
"বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার অন্তর্গত। এখান থেকে প্রায় তিন-চার মাইল দুরে বানিয়াচং নামের একটি গ্রামে একটি ফার্নিচারের দোকানে আমি কাজ করতাম, প্রায় দেড় বছর আগে। বনে গাছ কাটতে এসে এই বাড়িটার খোঁজ পাই। তখন বাড়িটা ফাঁকা পড়ে ছিল, কার বাড়ি জানি না। তখন চাকরীটা বাদ দিয়ে এইখানে উঠে পড়ি, পাঁচ মাস ছিলাম এখানে।" কবির বলে।
"এখন যদি এই বাড়ির আসল মালিক চলে আসে, তখন?" স্নিগ্ধা বলে।
"আসবে না। এইটা অনেক পুরনো বাড়ি। আমি যখন এসেছিলাম তখন থাকার অযোগ্য ছিল, অনেক কষ্টে মেরামত করেছি।" কবির বলে।
"সবই বুঝলাম, কিন্তু ওয়াশরুম কোথায়? আমি হাতমুখ ধোব।" স্নিগ্ধা বলে।
"আয় আমার সাথে।" বলে কবির প্রথমে ঘরে ঢুকে একটা মাটির কলসি নেয় তারপর পেছনের বনের দিকে হাঁটতে থাকে। স্নিগ্ধা ওকে অনুসরণ করে। কিছুদুর গিয়ে কবির একটি নিম গাছের সামনে এসে থেমে যায়। কলসিটা স্নিগ্ধার হাতে দিয়ে, কবির গাছে উঠে যায়। গাছের একটি ডাল ভেঙে নেমে আসে।
"এই নে তোর টুথব্রাশ।" বলে ডালটির এক টুকরা স্নিগ্ধার হাতে তুলে দেয়।
"তুই তো ভালই গাছে উঠতে পারিস, আমাকে শেখাবি?" স্নিগ্ধা বলে।
"অন্য কোনদিন। এখন চল।" বলে কবির আবারও হাঁটতে থাকে। আর কিছুদুর যেয়ে ওরা একটা ঝরনা দেখতে পায়, ছোট্ট একটি ঝরনা।
"এইযে তোর ওয়াসরুম।" কবির বলে।
"আমি এরকম কিছুই ভেবেছিলাম, তবে আরো বড় ঝর্ণা আশা করেছিলাম। তবে এটাও মন্দ নয়।" বলে স্নিগ্ধা এগিয়ে গিয়ে ঝর্নার পানিতে হাতমুখ ধুয়ে নেয়।
কবির হাতমুখ ধুয়ে কলসিটা ভরে নেয়।
কলসিতে পানি ভরে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে আসে। ততোক্ষনে রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে।
"আজ কি খাবি বল? মাছ নাকি অন্য কিছু?" কবির বলে।
"এখানে আসে পাশে বাজার আছে নাকি?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"নাহ, সামনের ঐ লেক থেকে মাছ ধরব, অথবা অন্যকিছু।" কবির বলে।
"অন্য কিছু মানে?"
"পাখি ধরার চেষ্টা করতে পারি, আমার কাছে গুলতি আছে।"
"যাহ্, অতো সুন্দর পাখিগুলোকে তুই মারবি?"
"পশুপাখি, গাছপালা, মাছ সবই তো সুন্দর, তবু এখানে বেঁচে থাকতে কিছুটা নিষ্ঠুর হতেই হয়।" কবির বলে।
"তাহলেও পাখি নয়, তারচেয়ে বরং মাছ। কিন্তু কিভাবে ধরবি?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার কাছে জাল আছে। দেখাচ্ছি তোকে।" বলে কবির খাটের নিচে থেকে মাছ ধরার জাল টেনে বের করে।
"সর্বনাশ, জাল তো ইঁদুরে কেটেছে।" কবির বলে। জালটির মাঝামাঝি অনেকটাই কাটা।
"ইঁদুর ভর্তি ঘরে জাল রেখেছিস খাটের নিচে। ইঁদুর তো কাটবেই।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার কি আর ফিরে আসার প্ল্যান ছিল? সমস্যা নেই, এটা মেরামত করা যাবে। আর তাছাড়া আমার কাছে ছিপ বঁড়শিও আছে।" বলে কবির পাশের রুমে থেকে ছিপ নিয়ে আসে।
"তুই কি যাবি আমার সাথে মাছ ধরতে?"
"অবশ্যই।"
"তাহলে চুপ থাকতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে। বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরতে অনেক ধৈর্য দরকার।" বলে কবির ছিপ বঁড়শি ও মাছ রাখার খাচি নিয়ে পাহাড়ি লেকটার দিকে যায়, সাথে স্নিগ্ধা। লেকের কিনারায় এসে কবির কিছু একটা খুঁজতে থাকে।
"কি খুঁজছিস কবির?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"বঁড়শির টোপ খুঁজছি।"
কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর কবির একটি শামুক খুঁজে পায়। লেকের ধারে একটি গাছের ছায়ায় বসে কবির বঁড়শি ফেলে লেকে। স্নিগ্ধা ওর পাশে বসে উদাস দৃষ্টিতে লেকের ওপারের পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। কবির ওকে আড়চোখে দেখে, স্নিগ্ধা একটি মিষ্টি রঙের ইয়েনজি পরে আছে। ইয়েনজি অনেকটা লং কামিজের মতো পোশাক, শুধু শার্টের মতো বোতাম রয়েছে সামনে। আসার সময় একটি মারমাদের গ্রাম থেকে কিছু পোশাক কিনেছিল ওরা। যদিও পোশাকটা একটু বেশি ঢিলে হয়েছে তবুও ওকে অপুর্ব লাগছে।
"কিরে, চুপ মেরে গেলি কেন?" কবির বলে।
"তুই না বললি মাছ ধরার সময় চুপচাপ থাকতে হয়।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি মানা করলাম আর তুই চুপ হয়ে যাবি, এমন মেয়ে তো তুই নস।" কবির বলে।
"খুব টেনশন হচ্ছেরে। আম্মু, আব্বু আমার জন্য খুব টেনশন করছে হয়তো।" স্নিগ্ধা চিন্তিত কন্ঠে বলে।
"টেনশন তো করবেনই। তুই তাদের একমাত্র মেয়ে, নয়নের মনি, এভাবে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলি, টেনশন করবেন না?"
"ভুল আমি করেছি সজলকে বিয়ে করে। সে ভুলের শাস্তি আমিই পেতাম। কিন্তু এর জন্য আম্মু আব্বুর কোন ক্ষতি হোক আমি তা চাই না। আম্মুর এমনিতে হাই ব্লাড পেশার, যদি টেনশনে কিছু হয়ে যায়!"
"ফিরে যেতে চাস?" দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করার চেষ্টা করে বলে কবির।
"তুই যেতে দিবি?"
"কেন দেব না? তুই চাইলে তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।" কবির বলে।
"আবারও সেই একই জেদ।"
"জেদ নয়, একা এক মেয়েকে অচেনা যায়গায় একা ছেড়ে দেব এতোবড় বিবেকহীন আমি নই। আমার জায়গায় তুই হলে পারতি?"
"আচ্ছা, যেতে না দিলি, আব্বু আম্মুর সাথে ফোনে কথা তো বলতে দিবি।"
"আমার মোবাইল নেই, তুইও মোবাইল আনিসনি। মোবাইল থাকলেও লাভ হতো না, নেটওয়ার্ক নেই এ অঞ্চলে। তিন চার মাইল দুরে একটি গ্রাম আছে, ওখানে নেটওয়ার্কও পাবি, মোবাইলের দোকানও। যেতে হলে এখনই রওনা দিতে হবে।"
"আজ নয়, কালকে যাব।"
"ঠিক আছে।" কবির বলে।
ঠিক তখনই স্নিগ্ধা দেখে কিছু একটা বঁড়শির শোলাটাকে নিচের দিকে টেনে নিচ্ছে।
"এই, এই, মাছ উঠেছে" উচ্ছসিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
কবির ছিপটাকে টান দিয়ে তোলে, একটি মাঝারি আকৃতির সরপুঁটি উঠেছে বড়শিতে। স্নিগ্ধা উচ্ছাসে হাততালি দিয়ে ওঠে। কবির মাছটাকে বঁড়শি থেকে ছাড়িয়ে মাছ রাখার পাত্রে রাখে।
"এবার আমি মাছ ধরব।" স্নিগ্ধা আবদার করে বলে।
"ঠিক আছে, আয় বোস এখানে। তবে বঁড়শিতে মাছ ধরার কিছু কায়দা আছে।" কবির বলে।
"তাহলে শিখিয়ে দে।"
কবির ওকে বঁড়শিতে মাছ ধরার কায়দাগুলো শিখিয়ে দিতে লাগল।
কতোক্ষন এভাবে ছিল জানেনা কবির, একসময় জানালা দিয়ে রোদ আসে ঘরের ভেতর। এখন আর শুয়ে থাকা যায় না, কবির স্নিগ্ধাকে ডাকে। স্নিগ্ধা একবার চোখ মেলে তাকায় তারপর ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে। কবির তখন ওর মিষ্টি মুখটি চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে। স্নিগ্ধা আবারও চোখ মেলে তাকায়, তারপর মিষ্টি করে হাসে। এতো সুন্দর জাগরন ওর কখনো হয়নি।
"এ্যাই, তুই চুমু দিচ্ছিস কেন?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার স্লিপিং বিউটির ঘুম ভাঙালাম। গল্পে শুনিস নি?" কবির বলে।
"গল্পে তো ঠোঁটে চুমু দিয়ে ঘুম ভাঙায়।" দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"ও তাই! ঠিক আছে।" বলে ঠোঁটে চুমু দেবার জন্য এগিয়ে আসে কবির।
"উহু, এভাবে নয়। একটু একটু এগিয়ে আন, চোখ বন্ধ কর।"
কবির ওর কথা মত চোখ বন্ধ করতেই স্নিগ্ধা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজে সরে যায়, কবির ওকে ধরতে এলে বিছানা থেকে উঠে খিলখিল করে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় স্নিগ্ধা, কবির ওর পিছু নেয়।
"ওয়াও, কি অপুর্ব!" বাইরের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
একটি পাহাড়ের উপর খানিকটা সমতল যায়গায় কাঠ ও বাঁশের তৈরী দুটো ঘরের একটি ছোট্ট বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকে একটি পাহাড়ি জলাশয়। বাড়িটির পেছনের দিকটায় পাহাড়ি বন। স্নিগ্ধা চারিদিক ঘুরে ফিরে দেখে।
"এটা কোন যায়গা? এই বাড়িটাই বা কার?" স্নিগ্ধা বলে।
"বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার অন্তর্গত। এখান থেকে প্রায় তিন-চার মাইল দুরে বানিয়াচং নামের একটি গ্রামে একটি ফার্নিচারের দোকানে আমি কাজ করতাম, প্রায় দেড় বছর আগে। বনে গাছ কাটতে এসে এই বাড়িটার খোঁজ পাই। তখন বাড়িটা ফাঁকা পড়ে ছিল, কার বাড়ি জানি না। তখন চাকরীটা বাদ দিয়ে এইখানে উঠে পড়ি, পাঁচ মাস ছিলাম এখানে।" কবির বলে।
"এখন যদি এই বাড়ির আসল মালিক চলে আসে, তখন?" স্নিগ্ধা বলে।
"আসবে না। এইটা অনেক পুরনো বাড়ি। আমি যখন এসেছিলাম তখন থাকার অযোগ্য ছিল, অনেক কষ্টে মেরামত করেছি।" কবির বলে।
"সবই বুঝলাম, কিন্তু ওয়াশরুম কোথায়? আমি হাতমুখ ধোব।" স্নিগ্ধা বলে।
"আয় আমার সাথে।" বলে কবির প্রথমে ঘরে ঢুকে একটা মাটির কলসি নেয় তারপর পেছনের বনের দিকে হাঁটতে থাকে। স্নিগ্ধা ওকে অনুসরণ করে। কিছুদুর গিয়ে কবির একটি নিম গাছের সামনে এসে থেমে যায়। কলসিটা স্নিগ্ধার হাতে দিয়ে, কবির গাছে উঠে যায়। গাছের একটি ডাল ভেঙে নেমে আসে।
"এই নে তোর টুথব্রাশ।" বলে ডালটির এক টুকরা স্নিগ্ধার হাতে তুলে দেয়।
"তুই তো ভালই গাছে উঠতে পারিস, আমাকে শেখাবি?" স্নিগ্ধা বলে।
"অন্য কোনদিন। এখন চল।" বলে কবির আবারও হাঁটতে থাকে। আর কিছুদুর যেয়ে ওরা একটা ঝরনা দেখতে পায়, ছোট্ট একটি ঝরনা।
"এইযে তোর ওয়াসরুম।" কবির বলে।
"আমি এরকম কিছুই ভেবেছিলাম, তবে আরো বড় ঝর্ণা আশা করেছিলাম। তবে এটাও মন্দ নয়।" বলে স্নিগ্ধা এগিয়ে গিয়ে ঝর্নার পানিতে হাতমুখ ধুয়ে নেয়।
কবির হাতমুখ ধুয়ে কলসিটা ভরে নেয়।
কলসিতে পানি ভরে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে আসে। ততোক্ষনে রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে।
"আজ কি খাবি বল? মাছ নাকি অন্য কিছু?" কবির বলে।
"এখানে আসে পাশে বাজার আছে নাকি?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"নাহ, সামনের ঐ লেক থেকে মাছ ধরব, অথবা অন্যকিছু।" কবির বলে।
"অন্য কিছু মানে?"
"পাখি ধরার চেষ্টা করতে পারি, আমার কাছে গুলতি আছে।"
"যাহ্, অতো সুন্দর পাখিগুলোকে তুই মারবি?"
"পশুপাখি, গাছপালা, মাছ সবই তো সুন্দর, তবু এখানে বেঁচে থাকতে কিছুটা নিষ্ঠুর হতেই হয়।" কবির বলে।
"তাহলেও পাখি নয়, তারচেয়ে বরং মাছ। কিন্তু কিভাবে ধরবি?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার কাছে জাল আছে। দেখাচ্ছি তোকে।" বলে কবির খাটের নিচে থেকে মাছ ধরার জাল টেনে বের করে।
"সর্বনাশ, জাল তো ইঁদুরে কেটেছে।" কবির বলে। জালটির মাঝামাঝি অনেকটাই কাটা।
"ইঁদুর ভর্তি ঘরে জাল রেখেছিস খাটের নিচে। ইঁদুর তো কাটবেই।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমার কি আর ফিরে আসার প্ল্যান ছিল? সমস্যা নেই, এটা মেরামত করা যাবে। আর তাছাড়া আমার কাছে ছিপ বঁড়শিও আছে।" বলে কবির পাশের রুমে থেকে ছিপ নিয়ে আসে।
"তুই কি যাবি আমার সাথে মাছ ধরতে?"
"অবশ্যই।"
"তাহলে চুপ থাকতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে। বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরতে অনেক ধৈর্য দরকার।" বলে কবির ছিপ বঁড়শি ও মাছ রাখার খাচি নিয়ে পাহাড়ি লেকটার দিকে যায়, সাথে স্নিগ্ধা। লেকের কিনারায় এসে কবির কিছু একটা খুঁজতে থাকে।
"কি খুঁজছিস কবির?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"বঁড়শির টোপ খুঁজছি।"
কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর কবির একটি শামুক খুঁজে পায়। লেকের ধারে একটি গাছের ছায়ায় বসে কবির বঁড়শি ফেলে লেকে। স্নিগ্ধা ওর পাশে বসে উদাস দৃষ্টিতে লেকের ওপারের পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। কবির ওকে আড়চোখে দেখে, স্নিগ্ধা একটি মিষ্টি রঙের ইয়েনজি পরে আছে। ইয়েনজি অনেকটা লং কামিজের মতো পোশাক, শুধু শার্টের মতো বোতাম রয়েছে সামনে। আসার সময় একটি মারমাদের গ্রাম থেকে কিছু পোশাক কিনেছিল ওরা। যদিও পোশাকটা একটু বেশি ঢিলে হয়েছে তবুও ওকে অপুর্ব লাগছে।
"কিরে, চুপ মেরে গেলি কেন?" কবির বলে।
"তুই না বললি মাছ ধরার সময় চুপচাপ থাকতে হয়।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি মানা করলাম আর তুই চুপ হয়ে যাবি, এমন মেয়ে তো তুই নস।" কবির বলে।
"খুব টেনশন হচ্ছেরে। আম্মু, আব্বু আমার জন্য খুব টেনশন করছে হয়তো।" স্নিগ্ধা চিন্তিত কন্ঠে বলে।
"টেনশন তো করবেনই। তুই তাদের একমাত্র মেয়ে, নয়নের মনি, এভাবে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলি, টেনশন করবেন না?"
"ভুল আমি করেছি সজলকে বিয়ে করে। সে ভুলের শাস্তি আমিই পেতাম। কিন্তু এর জন্য আম্মু আব্বুর কোন ক্ষতি হোক আমি তা চাই না। আম্মুর এমনিতে হাই ব্লাড পেশার, যদি টেনশনে কিছু হয়ে যায়!"
"ফিরে যেতে চাস?" দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করার চেষ্টা করে বলে কবির।
"তুই যেতে দিবি?"
"কেন দেব না? তুই চাইলে তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।" কবির বলে।
"আবারও সেই একই জেদ।"
"জেদ নয়, একা এক মেয়েকে অচেনা যায়গায় একা ছেড়ে দেব এতোবড় বিবেকহীন আমি নই। আমার জায়গায় তুই হলে পারতি?"
"আচ্ছা, যেতে না দিলি, আব্বু আম্মুর সাথে ফোনে কথা তো বলতে দিবি।"
"আমার মোবাইল নেই, তুইও মোবাইল আনিসনি। মোবাইল থাকলেও লাভ হতো না, নেটওয়ার্ক নেই এ অঞ্চলে। তিন চার মাইল দুরে একটি গ্রাম আছে, ওখানে নেটওয়ার্কও পাবি, মোবাইলের দোকানও। যেতে হলে এখনই রওনা দিতে হবে।"
"আজ নয়, কালকে যাব।"
"ঠিক আছে।" কবির বলে।
ঠিক তখনই স্নিগ্ধা দেখে কিছু একটা বঁড়শির শোলাটাকে নিচের দিকে টেনে নিচ্ছে।
"এই, এই, মাছ উঠেছে" উচ্ছসিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
কবির ছিপটাকে টান দিয়ে তোলে, একটি মাঝারি আকৃতির সরপুঁটি উঠেছে বড়শিতে। স্নিগ্ধা উচ্ছাসে হাততালি দিয়ে ওঠে। কবির মাছটাকে বঁড়শি থেকে ছাড়িয়ে মাছ রাখার পাত্রে রাখে।
"এবার আমি মাছ ধরব।" স্নিগ্ধা আবদার করে বলে।
"ঠিক আছে, আয় বোস এখানে। তবে বঁড়শিতে মাছ ধরার কিছু কায়দা আছে।" কবির বলে।
"তাহলে শিখিয়ে দে।"
কবির ওকে বঁড়শিতে মাছ ধরার কায়দাগুলো শিখিয়ে দিতে লাগল।