16-06-2021, 08:13 PM
বদরুলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধা একটি সিএনজি নিয়ে নেয়। প্রথমে ভেবেছিল ওদের বনানির ফ্ল্যাট ফিরে গিয়ে ওর জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। কিন্তু ওখানে ফিরে যেতে স্নিগ্ধার মন টানলো না। স্নিগ্ধা মহাখালি বাস টার্মিনালে নেমে যায়। সেখান থেকে বগুড়ার একটি বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়ে সে। স্নিগ্ধা জানালার পাশে একটি সিট নিয়ে নেয়। পনেরো মিনিট পর বাস ছেড়ে দেয়।
উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। হয়তো আজকের দিনটি স্নিগ্ধা হয়তো জীবনে কখনো ভুলতে পারবে না। ঘন্টা খানেক আগেও সে তার স্বামীর বিপদে উদ্বিগ্ন ছিল, স্বামীকে বাঁচাতে নিজের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিতেও পিছপা হয়নি। আর এখন ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে সজলের প্রতি, ওর আবেগ নিয়ে এমন নোংরা খেলা সে খেলতে পারলো? এরকম একটি লোভী, মিথ্যুক, দুশ্চরিত্র মানুষকে সে কখনো ভালোবাসতো ভাবতে নিজের প্রতিও ঘৃণা হচ্ছে। স্নিগ্ধার মনে আরেকটি প্রশ্নও জাগছে, ইরফান স্যারের মৃত্যুর পেছনে বদরুলের হাত থাকার যে গল্পটা সজল বলেছিল তার পুরোটাই কি বানানো? এমনিতে ইরফান স্যার আর সোহরাব ভাইয়ের মৃত্যুর সাদৃশ্য দেখে অবাক স্নিগ্ধা। সজল লোভী, দুশ্চরিত্র হতে পারে, কিন্তু তাই বলে খুনি! আর এমনিতে ইরফান স্যারের মৃত্যুতে সজলের কিই বা লাভ থাকতে পারে? সজল বদরুলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমান সহ ফাইলটি দিয়েছিল স্নিগ্ধার সামনেই।
স্নিগ্ধা মাথা থেকে চিন্তাগুলো সরিয়ে ফেলে। ওসব নিয়ে ভেবে আর কাজ নেই। বিবাহবিচ্ছেদটা ভালোয় ভালোয় সেরে ফেলে সে পড়াশোনায় মন দিতে চায়। অনার্স ফোর্থ ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে সে, তবে ফলাফল প্রকাশ হয়নি। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে তাকে।
স্নিগ্ধা তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইলটি বের করে দেখে তাতে দশটি মিসকল সজলের। মোবাইলটি হাতে নিতেই আবারও কল আসে সজলের। স্নিগ্ধা কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে দেয়। ভেবেছিল বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেবে, তা আর হলনা।
সজল ভেবেছিল স্নিগ্ধা হয়তো বাসায় ফিরবে। কিন্তু বাসায় ফিরে সে স্নিগ্ধাকে পায়না, ফ্ল্যাটটি সাজানো গোছানো যেমনটা আগে ছিল। ব্যালকনিতে পাতা চেয়ারে বসে একটি সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকে সজল। এমন কিছু যে ঘটতে পারে তা আগেই অনুমান করেছিল সজল, এর জন্য বি প্ল্যান আগেই ভেবে রেখেছিল সে। সেই বি প্ল্যান ফেইল হওয়ার কি কি সম্ভাবনা আছে, আর সেক্ষেত্রে কি করনীয় তা ভাবছে সজল। এমনিতে সজলের সকল প্ল্যানের পেছনে বি, সি, ডি পর্যন্ত প্ল্যান থাকে। সজলের প্ল্যান ছিল জেনারেল ম্যানেজার ইরফান আহমেদের কাছে বদরুলের কীর্তি ফাঁস করে দিয়ে বদরুলকে হটানো ও সততার পুরষ্কার হিসাবে নিজের প্রমোশনের পথ সুগম করা। কিন্তু ইরফান আহমেদ সজলের দেয়া ডকুমেন্টের ভরসায় না থেকে নিজে তদন্তে নেমে যায়। এতে স্ক্যামের সাথে যে সজল নিজেও জড়িত তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই সজলকে বাধ্য হয়ে বি প্ল্যানের দিকে যেতে হয়। তা হল বদরুলের সাথে হাত মিলিয়ে ইরফানকে সরিয়ে দেয়া এবং বদরুলকে সাফল্যের সিঁড়ি হিসাবে ব্যাবহার করা। সজল জানতো যে মাতাল হয়ে বড় বড় বুলি ঝাড়তে পারলেও বদরুলের মতো ভীতু মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় তেমন কিছু করা, যা করার তাকেই করতে হবে। সজল নিজেই জিএমকে হত্যার প্ল্যান ও ডিল করে, তবে টাকাটা ছিল বদরুলের।
সিগারেটটা শেষ হতেই সজল তার মোবাইলটা বের করে ফোন করে লিটুকে। লিটু্কে দিয়েই কাজটা করাতে চায় সে।
স্নিগ্ধা যখন বাস থেকে নামে তখন রাত দশটা বাজে। বাস স্টপেজে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে একটি রিক্সা নিয়ে নেয়, বাসায় পৌঁছাতে ওর আরো বিশ মিনিট লেগে যায়। কলিংবেল টিপতে প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। দরজার ও পাশে শিরিন দাড়িয়ে, মেয়েকে দেখে তার যেন কিছুটা আশাভঙ্গই হল, মুখে হাসি টেনে এনে বলে "স্নিগ্ধা! তুই হঠাত কিছু না জানিয়ে একা এভাবে চলে এলি যে?"
স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে বলে "পরে বলছি আগে কিছু খেতে দাও তো, খুব খিদে পেয়েছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"সেকি, হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিংরুমে গিয়ে বোস, আমি খাবার দিচ্ছি।" বলে শিরিন রান্নাঘরের দিকে যায়।
স্নিগ্ধা ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি। স্নিগ্ধা খেতে বসে।
"আব্বুকে দেখছি না? ঘুমিয়েছে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"তোর আব্বু এখনো বাড়ি ফেরেনি।" শিরিন বলে, তাকে খুব উদ্বিগ্ন মনে হয়।
"এখনো ফেরেনি! রাত এগারোটা বাজে। অফিসে কি খুব কাজের চাপ?" চিন্তিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"অফিসে কল দিয়েছিলাম, ও সন্ধা সাতটায় অফিস থেকে বেরিয়েছে। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। তবে চিন্তা করিস না মা, ও হয়তো ওর কোন বন্ধুর বাসায় গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, আর মোবাইলে চার্জও শেষ।"
"আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আম্মু, তুমি আব্বুর বন্ধুদের ফোন দাওনা!" স্নিগ্ধা বলে।
"ওর কয়েকজন কলিগ আর বন্ধুকে কল দিয়ে শুনেছি। ওরাও কিছু বলতে পারেনি। আমারও খুব চিন্তা হচ্ছেরে মা।" শিরিন বলে।
স্নিগ্ধা আর খেতে পারেনা উঠে হাত ধুয়ে নেয়।
"মাত্র এটুকু খেলি?" শিরিন বলে।
"আর খেতে ইচ্ছা করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে শুতে যা, জার্নি করে এসেছিস, খুব ক্লান্ত। চিন্তা করিস না মা, তোর আব্বু ঠিক চলে আসবে।" শিরিন বলে।
স্নিগ্ধা তার রুমে যায়, তবে শুয়ে পড়ে না। ব্যালকনিতে পাতা চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে, ওর বাবার ফেরার অপেক্ষায়। হঠাত ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা তার রুমে ফিরে কল রিসিভ করে, অচেনা নাম্বার।
"হ্যালো, কে বলছেন?"
"কেমন আছো খুকি?" বিদ্রুপের স্বরে শুনতে পায়।
"কে? সজল?" স্নিগ্ধা অনিশ্চিত ভাবে বলে।
যদিও মোবাইল সফ্টওয়ার ব্যাবহার করে সজল কন্ঠ চেঞ্জ করেছে, তবু কন্ঠ চিনতে সমস্যা হয়না স্নিগ্ধার।
"আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না তো। আমার মনে হয় তুমি ভাল নেই। আব্বু বাসায় ফেরেনি বুঝি?"
"তুমি কিভাবে জানলে? তার মানে তুমি!"
"শেষবার বাবাকে কবে দেখেছ মনে আছে? ভালো করে মনে করে নাও, কারন আর দেখতে পাবে না।" সজল বলে।
"প্লীজ আব্বুকে কিছু কোরো না প্লীজ!" অনুরোধ করে স্নিগ্ধা।
"তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ, আমাকে অপমান করেছ! আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব ভেবেছো? তুমি আমাকে চেননি স্নিগ্ধা। কেউ আমার পথে কাঁটা হয়েছে আর আমি তাকে উপড়ে ফেলিনি এমনটা কখনো হয়নি। আমি তিন তিনটা খুন করেছি, আর দু-একটা করতে হাত কাঁপবে না। তোমার বাবাকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।" সজল বলে।
"তোমায় অপমান আমি করেছি। আমায় খুন কর, কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দাও, কিন্তু আমার বাবাকে ছেড়ে দাও। প্লীজ!"
"আমি তোকে এতো সহজে মরতে দেব ভেবেছিস? তুই আমার পোষা বেশ্যা হবি। কি হবি বল?"
"বেশ্যা!" কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"হ্যাঁ, বেশ্যা। আর আমি তোর মালিক। যদি আমার বসের নিচে শুতে বলি তাই শুবি, যদি চাকর বাকরের নিচে শুতে বলি তাই শুবি। মনে থাকবে?"
"তুমি যা বলবে তাই করব। কিন্তু প্লিজ আমার বাবাকে তুমি মেরো না।" কাতর কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তাহলে শোন, কাল সকালে তোর বাবাকে পাবি, আর বিকালের বাসে সোজা ঢাকা চলে আসবি। খবরদার কাউকে কিচ্ছু বলবি না। মনে রাখবি সাতরাস্তার মতো জনবহুল এলাকা থেকে তোর বাবাকে কিডন্যাপ করেছে আমার লোকেরা। তোদের বাড়িতে ঢুকে তোর মা বাবাকে জবাই করে আসা আমার লোকদের কাছে কোন ব্যাপার না।" বলেই কেটে দেয় সজল।
স্নিগ্ধা সাথে সাথে কলব্যাক করে, কিন্তু নাম্বার বন্ধ পায়। সজলের নাম্বারে কল দেয়, সেটিও বন্ধ। স্নিগ্ধা বিধ্বস্তের মতো বসে পড়ে বিছানায়। ও ভেবে পায়না এই মানবরুপী দানবের কাছে থেকে কি করে নিস্তার পাবে সে, নিস্তার কি সম্ভব!
উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। হয়তো আজকের দিনটি স্নিগ্ধা হয়তো জীবনে কখনো ভুলতে পারবে না। ঘন্টা খানেক আগেও সে তার স্বামীর বিপদে উদ্বিগ্ন ছিল, স্বামীকে বাঁচাতে নিজের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিতেও পিছপা হয়নি। আর এখন ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে সজলের প্রতি, ওর আবেগ নিয়ে এমন নোংরা খেলা সে খেলতে পারলো? এরকম একটি লোভী, মিথ্যুক, দুশ্চরিত্র মানুষকে সে কখনো ভালোবাসতো ভাবতে নিজের প্রতিও ঘৃণা হচ্ছে। স্নিগ্ধার মনে আরেকটি প্রশ্নও জাগছে, ইরফান স্যারের মৃত্যুর পেছনে বদরুলের হাত থাকার যে গল্পটা সজল বলেছিল তার পুরোটাই কি বানানো? এমনিতে ইরফান স্যার আর সোহরাব ভাইয়ের মৃত্যুর সাদৃশ্য দেখে অবাক স্নিগ্ধা। সজল লোভী, দুশ্চরিত্র হতে পারে, কিন্তু তাই বলে খুনি! আর এমনিতে ইরফান স্যারের মৃত্যুতে সজলের কিই বা লাভ থাকতে পারে? সজল বদরুলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমান সহ ফাইলটি দিয়েছিল স্নিগ্ধার সামনেই।
স্নিগ্ধা মাথা থেকে চিন্তাগুলো সরিয়ে ফেলে। ওসব নিয়ে ভেবে আর কাজ নেই। বিবাহবিচ্ছেদটা ভালোয় ভালোয় সেরে ফেলে সে পড়াশোনায় মন দিতে চায়। অনার্স ফোর্থ ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে সে, তবে ফলাফল প্রকাশ হয়নি। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে তাকে।
স্নিগ্ধা তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইলটি বের করে দেখে তাতে দশটি মিসকল সজলের। মোবাইলটি হাতে নিতেই আবারও কল আসে সজলের। স্নিগ্ধা কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে দেয়। ভেবেছিল বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেবে, তা আর হলনা।
সজল ভেবেছিল স্নিগ্ধা হয়তো বাসায় ফিরবে। কিন্তু বাসায় ফিরে সে স্নিগ্ধাকে পায়না, ফ্ল্যাটটি সাজানো গোছানো যেমনটা আগে ছিল। ব্যালকনিতে পাতা চেয়ারে বসে একটি সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকে সজল। এমন কিছু যে ঘটতে পারে তা আগেই অনুমান করেছিল সজল, এর জন্য বি প্ল্যান আগেই ভেবে রেখেছিল সে। সেই বি প্ল্যান ফেইল হওয়ার কি কি সম্ভাবনা আছে, আর সেক্ষেত্রে কি করনীয় তা ভাবছে সজল। এমনিতে সজলের সকল প্ল্যানের পেছনে বি, সি, ডি পর্যন্ত প্ল্যান থাকে। সজলের প্ল্যান ছিল জেনারেল ম্যানেজার ইরফান আহমেদের কাছে বদরুলের কীর্তি ফাঁস করে দিয়ে বদরুলকে হটানো ও সততার পুরষ্কার হিসাবে নিজের প্রমোশনের পথ সুগম করা। কিন্তু ইরফান আহমেদ সজলের দেয়া ডকুমেন্টের ভরসায় না থেকে নিজে তদন্তে নেমে যায়। এতে স্ক্যামের সাথে যে সজল নিজেও জড়িত তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই সজলকে বাধ্য হয়ে বি প্ল্যানের দিকে যেতে হয়। তা হল বদরুলের সাথে হাত মিলিয়ে ইরফানকে সরিয়ে দেয়া এবং বদরুলকে সাফল্যের সিঁড়ি হিসাবে ব্যাবহার করা। সজল জানতো যে মাতাল হয়ে বড় বড় বুলি ঝাড়তে পারলেও বদরুলের মতো ভীতু মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় তেমন কিছু করা, যা করার তাকেই করতে হবে। সজল নিজেই জিএমকে হত্যার প্ল্যান ও ডিল করে, তবে টাকাটা ছিল বদরুলের।
সিগারেটটা শেষ হতেই সজল তার মোবাইলটা বের করে ফোন করে লিটুকে। লিটু্কে দিয়েই কাজটা করাতে চায় সে।
স্নিগ্ধা যখন বাস থেকে নামে তখন রাত দশটা বাজে। বাস স্টপেজে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে একটি রিক্সা নিয়ে নেয়, বাসায় পৌঁছাতে ওর আরো বিশ মিনিট লেগে যায়। কলিংবেল টিপতে প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। দরজার ও পাশে শিরিন দাড়িয়ে, মেয়েকে দেখে তার যেন কিছুটা আশাভঙ্গই হল, মুখে হাসি টেনে এনে বলে "স্নিগ্ধা! তুই হঠাত কিছু না জানিয়ে একা এভাবে চলে এলি যে?"
স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে বলে "পরে বলছি আগে কিছু খেতে দাও তো, খুব খিদে পেয়েছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"সেকি, হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিংরুমে গিয়ে বোস, আমি খাবার দিচ্ছি।" বলে শিরিন রান্নাঘরের দিকে যায়।
স্নিগ্ধা ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি। স্নিগ্ধা খেতে বসে।
"আব্বুকে দেখছি না? ঘুমিয়েছে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"তোর আব্বু এখনো বাড়ি ফেরেনি।" শিরিন বলে, তাকে খুব উদ্বিগ্ন মনে হয়।
"এখনো ফেরেনি! রাত এগারোটা বাজে। অফিসে কি খুব কাজের চাপ?" চিন্তিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"অফিসে কল দিয়েছিলাম, ও সন্ধা সাতটায় অফিস থেকে বেরিয়েছে। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। তবে চিন্তা করিস না মা, ও হয়তো ওর কোন বন্ধুর বাসায় গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, আর মোবাইলে চার্জও শেষ।"
"আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আম্মু, তুমি আব্বুর বন্ধুদের ফোন দাওনা!" স্নিগ্ধা বলে।
"ওর কয়েকজন কলিগ আর বন্ধুকে কল দিয়ে শুনেছি। ওরাও কিছু বলতে পারেনি। আমারও খুব চিন্তা হচ্ছেরে মা।" শিরিন বলে।
স্নিগ্ধা আর খেতে পারেনা উঠে হাত ধুয়ে নেয়।
"মাত্র এটুকু খেলি?" শিরিন বলে।
"আর খেতে ইচ্ছা করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে শুতে যা, জার্নি করে এসেছিস, খুব ক্লান্ত। চিন্তা করিস না মা, তোর আব্বু ঠিক চলে আসবে।" শিরিন বলে।
স্নিগ্ধা তার রুমে যায়, তবে শুয়ে পড়ে না। ব্যালকনিতে পাতা চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে, ওর বাবার ফেরার অপেক্ষায়। হঠাত ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা তার রুমে ফিরে কল রিসিভ করে, অচেনা নাম্বার।
"হ্যালো, কে বলছেন?"
"কেমন আছো খুকি?" বিদ্রুপের স্বরে শুনতে পায়।
"কে? সজল?" স্নিগ্ধা অনিশ্চিত ভাবে বলে।
যদিও মোবাইল সফ্টওয়ার ব্যাবহার করে সজল কন্ঠ চেঞ্জ করেছে, তবু কন্ঠ চিনতে সমস্যা হয়না স্নিগ্ধার।
"আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না তো। আমার মনে হয় তুমি ভাল নেই। আব্বু বাসায় ফেরেনি বুঝি?"
"তুমি কিভাবে জানলে? তার মানে তুমি!"
"শেষবার বাবাকে কবে দেখেছ মনে আছে? ভালো করে মনে করে নাও, কারন আর দেখতে পাবে না।" সজল বলে।
"প্লীজ আব্বুকে কিছু কোরো না প্লীজ!" অনুরোধ করে স্নিগ্ধা।
"তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ, আমাকে অপমান করেছ! আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব ভেবেছো? তুমি আমাকে চেননি স্নিগ্ধা। কেউ আমার পথে কাঁটা হয়েছে আর আমি তাকে উপড়ে ফেলিনি এমনটা কখনো হয়নি। আমি তিন তিনটা খুন করেছি, আর দু-একটা করতে হাত কাঁপবে না। তোমার বাবাকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।" সজল বলে।
"তোমায় অপমান আমি করেছি। আমায় খুন কর, কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দাও, কিন্তু আমার বাবাকে ছেড়ে দাও। প্লীজ!"
"আমি তোকে এতো সহজে মরতে দেব ভেবেছিস? তুই আমার পোষা বেশ্যা হবি। কি হবি বল?"
"বেশ্যা!" কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"হ্যাঁ, বেশ্যা। আর আমি তোর মালিক। যদি আমার বসের নিচে শুতে বলি তাই শুবি, যদি চাকর বাকরের নিচে শুতে বলি তাই শুবি। মনে থাকবে?"
"তুমি যা বলবে তাই করব। কিন্তু প্লিজ আমার বাবাকে তুমি মেরো না।" কাতর কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তাহলে শোন, কাল সকালে তোর বাবাকে পাবি, আর বিকালের বাসে সোজা ঢাকা চলে আসবি। খবরদার কাউকে কিচ্ছু বলবি না। মনে রাখবি সাতরাস্তার মতো জনবহুল এলাকা থেকে তোর বাবাকে কিডন্যাপ করেছে আমার লোকেরা। তোদের বাড়িতে ঢুকে তোর মা বাবাকে জবাই করে আসা আমার লোকদের কাছে কোন ব্যাপার না।" বলেই কেটে দেয় সজল।
স্নিগ্ধা সাথে সাথে কলব্যাক করে, কিন্তু নাম্বার বন্ধ পায়। সজলের নাম্বারে কল দেয়, সেটিও বন্ধ। স্নিগ্ধা বিধ্বস্তের মতো বসে পড়ে বিছানায়। ও ভেবে পায়না এই মানবরুপী দানবের কাছে থেকে কি করে নিস্তার পাবে সে, নিস্তার কি সম্ভব!