16-06-2021, 08:07 PM
"হট ছিল, সেক্সি ছিল। বেশ ভালই চলছিল টিউশনি। কিন্তু প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল। আমি বলেছিলাম এবর্শন করার কথা, কিন্তু ও করবে না। বিয়ে করতে বলতো। প্রথমে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে লাগল, তারপর ভয় দেখাতে শুরু করল। আমি তখন পাল্টি খেলাম। তখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল আমার। বললাম পরীক্ষার পর ওকে বিয়ে করব। ওদিকে আমি ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করছিলাম। একদিন পড়াতে এসে প্রথমে আয়েশ করে চুদলাম। তারপর চা বানানোর কথা বলে চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিলাম। যখন ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা তখন ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিলাম। সাথে একটি সুইসাইড নোট রেখে এসেছি। এর জন্য আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। একদিন ভরা প্র্যাকটিস করেছি লিজার হাতের লেখা কপি করার জন্য। এমন ঘুমের ওষুধ খুঁজে বের করতে হয়েছে দুই ঘন্টা পর যার আর কোন নাম নিশান খুঁজে পাওয়া যায় না দেহে।" সজল বলে।
"তু তু তুই লিজাকে খুন করেছিস?" তোতলাতে তোতলাতে বলে সবুজ।
"না, একেবারেই না। কোন প্রমান আছে?" হাসতে হাসতে বলে সজল।
"অমন সুইট মেয়েটাকে তুই এভাবে খুন করতে পারলি? তুই কি মানুষ নাকি পশু নাকি ইবলিশ?" সবুজ বলে।
"ইবলিশেরও আব্বা আমি। এসব আমার কাছে নতুন কিছু না। এইতো মাস খানেক আগে একজনকে টপকে দিয়েছি। আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে আমার বিরুদ্ধে চোগলখোরি করে। কোম্পানির এক ট্রাক ড্রাইভারকে কন্টাক্ট করে ট্রাকচাপা দিয়েছি।"
"কিন্তু ঐ ছেলেটার কেসটা বুঝলাম না।"
"ঐটা তোর না বুঝলেও চলবে। বল আর কত হলে কাজ করবি?"
"লাখ মিল করে দিও, বস।" সবুজ বলে।
সজল মিটিমিটি হেসে পকেট থেকে আরো একটা একশোর নোটের বান্ডিল বের করে দেয়। "বাকিটা কাজের পর পাবি। এখন তাহলে প্ল্যানটা শোন। আগামী দশ তারিখ মিরপুর সন্ধ্যা সিনেমা হলে 'প্রেম পরশ' সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। যেমন হইচই হচ্ছে তাতে ওটা হিট হবেই। আমি আগেই টিকিট যোগাড় করে রাখব। তুই নিজের জন্মদিনের সেলিব্রেট করার নামে মেসের সবাইকে সাথে নিয়ে সিনেমা হলে আসবি, কবির আসতে চাইবে না, একা মেসে থেকে যাবে।"
"কিন্ত কেন?" সবুজ জিজ্ঞাসা করে।
"কারন ঐদিন ওর প্রেমিকার বিয়ে, এরকম সময় কেউ প্রেমের সিনেমা দেখতে চাইবে না। তারপর শোন, বাকি সবার সিট হবে পাশাপাশি, তোর সিট হবে আলাদা। সিনেমা শুরুর দশ মিনিট পর তুই হল থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি নিয়ে মেসে ফিরে আসবি। কোল্ড ড্রিংক, চা কিংবা পানিতে এই ওষুধটা মিশিয়ে খাওয়াবি।" বলে এক পাতা ট্যাবলেট বের করে দেয় সজল।
"এরপর দুটো প্ল্যান। প্ল্যান সি আর প্ল্যান এল। সি ফর কংক্রিট। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় কবিরকে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবি। অথবা প্ল্যান এল, এল ফর লিজা। বিছানার চাদর দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিবি ছেলেটাকে। বল কোনটা তোর সুবিধা হয়?" সজল বলে।
"ছাদ থেকে ফেলে দিতে গেলে আশেপাশে বিল্ডিং থেকে কেউ দেখে ফেলতে পারে।"
"ভাল পয়েন্ট ধরেছিস। তাহলে এল। আর সাথে একটা সুইসাইড নোট দিতে হবে। তুই কবির কোন খাতা বা লেখা আমাকে দিস আমি সুইসাইড নোট লিখে দিব। সুইসাইড নোট টেবিলে রেখে আর ঘরটাকে এমনভাবে সাজাবি যেন সুইসাইড বলে মনে হয়। সিনেমা শেষ হওয়ার আগে ফিরে আসবি সিনেমা হলে।"
"আগে যদি জানতাম
তবে মন ফিরে চাইতাম,
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না..."
এয়ারফোনে গানটা শুনতে শুনতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল স্নিগ্ধা। চলন্ত বাসের জানালার ফাঁক দিয়ে হুহু করে বাতাস এসে স্নিগ্ধার কপালের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে বার বার, স্বাধীন চুলগুলো ওর সুন্দর মুখটিকে ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওর অবাধ্য চুলগুলোর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই স্নিগ্ধার, গান শুনতে শুনতে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে রৌদ্রোজ্জল চৈতালি দিন, কিন্তু স্নিগ্ধার মনের আকাশটি শ্রাবনের মেঘে আচ্ছন্ন, কখনো কখনো বৃষ্টি ঝরে, কখনো বা কালবৈশাখী ঝড় বহে।
"আম্মু, এতো কি চিন্তা করো?" জামান বলে।
কিন্তু স্নিগ্ধা ওর বাবার কথা শুনতে পায়না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই থাকে। জামান মেয়ের কাঁধে হাত রাখে, তখন ঘুরে তাকায় স্নিগ্ধা।
"আব্বু, কিছু বলো?" ইয়ারফোন খুলতে খুলতে জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"এতো কি চিন্তা কর, আম্মু?" জামান বলে।
কই, নাতো। ইয়ারফোনে গান শুনছি তো।" স্নিগ্ধা বলে।
"কিছু দিন হল দেখছি কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকো, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছো না।"
"কই, নাতো।" মুখে হাসি টেনে এনে বলে স্নিগ্ধা। কিন্তু হাসিটাও মলিন দেখায়।
"আমি জানি, টেনশন করছো তুমি। টেনশনের কিছু নেই, ছেলেটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। নম্র, ভদ্র, স্মার্ট, মেধাবি ছাত্র, বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার, ভাল চাকরি করে, আর বেশ হ্যান্ডসামও।" জামান মুখে হাসি টেনে এনে বলে "দশ বছর আগে আমিও ওরকম হ্যান্ডসাম ছিলাম।"
"তুমি এখনো ওর চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম আছো।" বাবার ডান হাতটা জড়িয়ে নিয়ে হাসিমুখে বলে স্নিগ্ধা।
"তোমার আম্মু তো বলে দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি।"
"নাহ, ঠিকই আছো। আমার বান্ধবীরা কি বলে জানো? বলে তোর আব্বুকে একদম সালমান খানের মতো লাগে।"
"তোমার বান্ধবীরা আবার কবে দেখল আমাকে?"
"ছবিতে দেখেছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও তাই বলো।"
"আচ্ছা আব্বু। আম্মুর পছন্দ হয়নি ওকে, তাই না?"
"তোমার আম্মু কি বোঝে, কে জানে? তোমার আম্মুকে আমি ম্যানেজ করে নেব। চিন্তা কোরো না।"
স্নিগ্ধা তার দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করে, ওর বাবা খুবই সহজ সরল মানুষ, প্রেমের এতো জটিল সমীকরণ উনি বুঝবেন না। তবে ওর মা হয়তো কিছুটা বোঝে কিংবা হয়তো ওকে অনেকটাই বোঝে।
"কোনদিন তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু করিনি, আজও করব না। কিন্তু সত্যিই কি তুই যা করছিস তা মন থেকে করছিস?" চুলে তেল মালিশ করে দিতে দিতে বলা ওর আম্মুর কথাটা হঠাত মনে পড়ে গেল স্নিগ্ধার।
হঠাত স্নিগ্ধার সেলফোনে রিংটোন বেজে ওঠে, সজলের ফোন এসেছে।
"হ্যালো স্নিগ্ধা, তোমরা কতদুর?"
"এইতো সবে সিরাজগঞ্জ..."
"ও, সাবধানে এসো।" বলে কেটে দেয় সজল।
স্নিগ্ধা ওর ফোনটা থেকে কবিরকে কল দেয়। চার পাঁচবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ করেনা। কবির চলে যাওয়ার পর থেকে আর স্নিগ্ধার কল রিসিভ করেনি। মনটা কষ্টে ভরে ওঠে স্নিগ্ধার। শৈশব, কৈশোরের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছে যার সাথে তাকে কি এতো সহজে ভোলা যায়। কতো স্মৃতি ওকে নিয়ে, এতো সহজে কি ভোলা যায়?
ততোক্ষণে বাসটি একটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে থেমেছে। ওরা বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ওয়াসরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে।
"কিছু খাবে, আম্মু?"
"না আব্বু, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে অন্তত চা কিংবা কফি?"
"না আব্বু। তুমি খাও। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে? আমার ব্যালেন্স শেষ।" স্নিগ্ধা বলে।
জামান ওর মোবাইলটা স্নিগ্ধার হাতে দেয়। মোবাইলটা নিয়ে স্নিগ্ধা একটু আড়ালে যায়। তারপর কবিরকে কল করে। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো আঙ্কেল ভাল আছেন?" কবিরের কন্ঠে ভেসে আসে।
"আমি স্নিগ্ধা।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও স্নিগ্ধা। কিরে কেমন আছিস?" কবির বলে।
"আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি একটিবার খোঁজ নিয়েছিস? এখন জিজ্ঞাসা করছিস কেমন আছি?" ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"কালকে রাতেই তো খবর নিলাম আন্টির কাছে।" কবির বলে।
"আমার কল ধরছিস না কেন?''
"মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। ছাত্রকে পড়াচ্ছিলাম তো তাই। টিউশনি করে কেবলই ফিরছি।"
"মিথ্যা কথা বলবি না। বিগত তিন দিন ধরে তোকে কল করছি কিন্তু তুই ধরছিস না।" অভিমানের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি না বললাম, আমার সাথে আর তোর যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না?"
"সে বিয়ের পর যোগাযোগ নাই বা রাখলি এখন ফোন ধরছিস না কেন? আমি ঢাকায় আসছি। দেখা করবি না?" স্নিগ্ধা বলে।
"সে হয়না স্নিগ্ধা। আর মায়া বাড়াস না, শেষে আমার বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে।" কবির বলে।
"যা আর তোকে কষ্ট দিব না। আর তোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করব না। একবার অন্তত দেখা কর।"
"সে হয়না। প্লিজ তুই রাগ করিস না। যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি চিরদিন চাইব তুই সুখে থাক, শান্তিতে থাক।" বলে কবির ফোনটা কেটে দেয় তারপর সুইচ অফ করে রাখে। ধানমন্ডি বাস স্টপেজে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল কবির তখন স্নিগ্ধার কল এসেছিল। কবিরের মনটা বিষন্নতায় ভরে রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশের চেষ্টা করছে কবির। একটি টিউশনি শেষ করে দ্বিতীয়টির উদ্দেশ্যে যেতে হবে কবিরকে। কবির বাসের আশায় না থেকে হেঁটেই রওনা দিয়ে দেয়। ভীড়ের শহরে নিঃসঙ্গ পথচারী সে, একেবারেই নিঃসঙ্গ।
"তু তু তুই লিজাকে খুন করেছিস?" তোতলাতে তোতলাতে বলে সবুজ।
"না, একেবারেই না। কোন প্রমান আছে?" হাসতে হাসতে বলে সজল।
"অমন সুইট মেয়েটাকে তুই এভাবে খুন করতে পারলি? তুই কি মানুষ নাকি পশু নাকি ইবলিশ?" সবুজ বলে।
"ইবলিশেরও আব্বা আমি। এসব আমার কাছে নতুন কিছু না। এইতো মাস খানেক আগে একজনকে টপকে দিয়েছি। আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে আমার বিরুদ্ধে চোগলখোরি করে। কোম্পানির এক ট্রাক ড্রাইভারকে কন্টাক্ট করে ট্রাকচাপা দিয়েছি।"
"কিন্তু ঐ ছেলেটার কেসটা বুঝলাম না।"
"ঐটা তোর না বুঝলেও চলবে। বল আর কত হলে কাজ করবি?"
"লাখ মিল করে দিও, বস।" সবুজ বলে।
সজল মিটিমিটি হেসে পকেট থেকে আরো একটা একশোর নোটের বান্ডিল বের করে দেয়। "বাকিটা কাজের পর পাবি। এখন তাহলে প্ল্যানটা শোন। আগামী দশ তারিখ মিরপুর সন্ধ্যা সিনেমা হলে 'প্রেম পরশ' সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। যেমন হইচই হচ্ছে তাতে ওটা হিট হবেই। আমি আগেই টিকিট যোগাড় করে রাখব। তুই নিজের জন্মদিনের সেলিব্রেট করার নামে মেসের সবাইকে সাথে নিয়ে সিনেমা হলে আসবি, কবির আসতে চাইবে না, একা মেসে থেকে যাবে।"
"কিন্ত কেন?" সবুজ জিজ্ঞাসা করে।
"কারন ঐদিন ওর প্রেমিকার বিয়ে, এরকম সময় কেউ প্রেমের সিনেমা দেখতে চাইবে না। তারপর শোন, বাকি সবার সিট হবে পাশাপাশি, তোর সিট হবে আলাদা। সিনেমা শুরুর দশ মিনিট পর তুই হল থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি নিয়ে মেসে ফিরে আসবি। কোল্ড ড্রিংক, চা কিংবা পানিতে এই ওষুধটা মিশিয়ে খাওয়াবি।" বলে এক পাতা ট্যাবলেট বের করে দেয় সজল।
"এরপর দুটো প্ল্যান। প্ল্যান সি আর প্ল্যান এল। সি ফর কংক্রিট। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় কবিরকে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবি। অথবা প্ল্যান এল, এল ফর লিজা। বিছানার চাদর দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিবি ছেলেটাকে। বল কোনটা তোর সুবিধা হয়?" সজল বলে।
"ছাদ থেকে ফেলে দিতে গেলে আশেপাশে বিল্ডিং থেকে কেউ দেখে ফেলতে পারে।"
"ভাল পয়েন্ট ধরেছিস। তাহলে এল। আর সাথে একটা সুইসাইড নোট দিতে হবে। তুই কবির কোন খাতা বা লেখা আমাকে দিস আমি সুইসাইড নোট লিখে দিব। সুইসাইড নোট টেবিলে রেখে আর ঘরটাকে এমনভাবে সাজাবি যেন সুইসাইড বলে মনে হয়। সিনেমা শেষ হওয়ার আগে ফিরে আসবি সিনেমা হলে।"
"আগে যদি জানতাম
তবে মন ফিরে চাইতাম,
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না..."
এয়ারফোনে গানটা শুনতে শুনতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল স্নিগ্ধা। চলন্ত বাসের জানালার ফাঁক দিয়ে হুহু করে বাতাস এসে স্নিগ্ধার কপালের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে বার বার, স্বাধীন চুলগুলো ওর সুন্দর মুখটিকে ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওর অবাধ্য চুলগুলোর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই স্নিগ্ধার, গান শুনতে শুনতে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে রৌদ্রোজ্জল চৈতালি দিন, কিন্তু স্নিগ্ধার মনের আকাশটি শ্রাবনের মেঘে আচ্ছন্ন, কখনো কখনো বৃষ্টি ঝরে, কখনো বা কালবৈশাখী ঝড় বহে।
"আম্মু, এতো কি চিন্তা করো?" জামান বলে।
কিন্তু স্নিগ্ধা ওর বাবার কথা শুনতে পায়না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই থাকে। জামান মেয়ের কাঁধে হাত রাখে, তখন ঘুরে তাকায় স্নিগ্ধা।
"আব্বু, কিছু বলো?" ইয়ারফোন খুলতে খুলতে জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"এতো কি চিন্তা কর, আম্মু?" জামান বলে।
কই, নাতো। ইয়ারফোনে গান শুনছি তো।" স্নিগ্ধা বলে।
"কিছু দিন হল দেখছি কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকো, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছো না।"
"কই, নাতো।" মুখে হাসি টেনে এনে বলে স্নিগ্ধা। কিন্তু হাসিটাও মলিন দেখায়।
"আমি জানি, টেনশন করছো তুমি। টেনশনের কিছু নেই, ছেলেটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। নম্র, ভদ্র, স্মার্ট, মেধাবি ছাত্র, বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার, ভাল চাকরি করে, আর বেশ হ্যান্ডসামও।" জামান মুখে হাসি টেনে এনে বলে "দশ বছর আগে আমিও ওরকম হ্যান্ডসাম ছিলাম।"
"তুমি এখনো ওর চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম আছো।" বাবার ডান হাতটা জড়িয়ে নিয়ে হাসিমুখে বলে স্নিগ্ধা।
"তোমার আম্মু তো বলে দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি।"
"নাহ, ঠিকই আছো। আমার বান্ধবীরা কি বলে জানো? বলে তোর আব্বুকে একদম সালমান খানের মতো লাগে।"
"তোমার বান্ধবীরা আবার কবে দেখল আমাকে?"
"ছবিতে দেখেছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও তাই বলো।"
"আচ্ছা আব্বু। আম্মুর পছন্দ হয়নি ওকে, তাই না?"
"তোমার আম্মু কি বোঝে, কে জানে? তোমার আম্মুকে আমি ম্যানেজ করে নেব। চিন্তা কোরো না।"
স্নিগ্ধা তার দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করে, ওর বাবা খুবই সহজ সরল মানুষ, প্রেমের এতো জটিল সমীকরণ উনি বুঝবেন না। তবে ওর মা হয়তো কিছুটা বোঝে কিংবা হয়তো ওকে অনেকটাই বোঝে।
"কোনদিন তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু করিনি, আজও করব না। কিন্তু সত্যিই কি তুই যা করছিস তা মন থেকে করছিস?" চুলে তেল মালিশ করে দিতে দিতে বলা ওর আম্মুর কথাটা হঠাত মনে পড়ে গেল স্নিগ্ধার।
হঠাত স্নিগ্ধার সেলফোনে রিংটোন বেজে ওঠে, সজলের ফোন এসেছে।
"হ্যালো স্নিগ্ধা, তোমরা কতদুর?"
"এইতো সবে সিরাজগঞ্জ..."
"ও, সাবধানে এসো।" বলে কেটে দেয় সজল।
স্নিগ্ধা ওর ফোনটা থেকে কবিরকে কল দেয়। চার পাঁচবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ করেনা। কবির চলে যাওয়ার পর থেকে আর স্নিগ্ধার কল রিসিভ করেনি। মনটা কষ্টে ভরে ওঠে স্নিগ্ধার। শৈশব, কৈশোরের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছে যার সাথে তাকে কি এতো সহজে ভোলা যায়। কতো স্মৃতি ওকে নিয়ে, এতো সহজে কি ভোলা যায়?
ততোক্ষণে বাসটি একটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে থেমেছে। ওরা বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ওয়াসরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে।
"কিছু খাবে, আম্মু?"
"না আব্বু, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে অন্তত চা কিংবা কফি?"
"না আব্বু। তুমি খাও। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে? আমার ব্যালেন্স শেষ।" স্নিগ্ধা বলে।
জামান ওর মোবাইলটা স্নিগ্ধার হাতে দেয়। মোবাইলটা নিয়ে স্নিগ্ধা একটু আড়ালে যায়। তারপর কবিরকে কল করে। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো আঙ্কেল ভাল আছেন?" কবিরের কন্ঠে ভেসে আসে।
"আমি স্নিগ্ধা।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও স্নিগ্ধা। কিরে কেমন আছিস?" কবির বলে।
"আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি একটিবার খোঁজ নিয়েছিস? এখন জিজ্ঞাসা করছিস কেমন আছি?" ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"কালকে রাতেই তো খবর নিলাম আন্টির কাছে।" কবির বলে।
"আমার কল ধরছিস না কেন?''
"মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। ছাত্রকে পড়াচ্ছিলাম তো তাই। টিউশনি করে কেবলই ফিরছি।"
"মিথ্যা কথা বলবি না। বিগত তিন দিন ধরে তোকে কল করছি কিন্তু তুই ধরছিস না।" অভিমানের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি না বললাম, আমার সাথে আর তোর যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না?"
"সে বিয়ের পর যোগাযোগ নাই বা রাখলি এখন ফোন ধরছিস না কেন? আমি ঢাকায় আসছি। দেখা করবি না?" স্নিগ্ধা বলে।
"সে হয়না স্নিগ্ধা। আর মায়া বাড়াস না, শেষে আমার বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে।" কবির বলে।
"যা আর তোকে কষ্ট দিব না। আর তোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করব না। একবার অন্তত দেখা কর।"
"সে হয়না। প্লিজ তুই রাগ করিস না। যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি চিরদিন চাইব তুই সুখে থাক, শান্তিতে থাক।" বলে কবির ফোনটা কেটে দেয় তারপর সুইচ অফ করে রাখে। ধানমন্ডি বাস স্টপেজে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল কবির তখন স্নিগ্ধার কল এসেছিল। কবিরের মনটা বিষন্নতায় ভরে রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশের চেষ্টা করছে কবির। একটি টিউশনি শেষ করে দ্বিতীয়টির উদ্দেশ্যে যেতে হবে কবিরকে। কবির বাসের আশায় না থেকে হেঁটেই রওনা দিয়ে দেয়। ভীড়ের শহরে নিঃসঙ্গ পথচারী সে, একেবারেই নিঃসঙ্গ।