16-06-2021, 08:07 PM
"আজকে রাতটা এখানেই থাকো, কালকে সকালে যেও।" শিরিন বলে।
"সাড়ে সাতটার বাসের টিকিট কেটেছি, এখনি যেতে হবে।" কবির বলে।
"তাহলে এই টাকাগুলো রাখো।" বলে শিরিন কবিরের হাতে হাজার টাকার দশটি নোট তুলে দেয়।
"এর দরকার নেই আন্টি। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে।" কবির বলে।
"তবুও রাখ। আর পৌঁছে কল দিও কিন্তু।"
"ঠিক আছে আন্টি, তাহলে আসি।" বলে বেরিয়ে যায় কবির।
কবির যখন তার মিরপুরের মেসটিতে পৌঁছায় তখন রাত বারোটা বাজে। কবির তার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখে রুমটা ভেতর থেকে লক করা এবং রুম থেকে উৎকট মিউজিকের আওয়াজ আসছে। কবির কয়েকবার নক করে কিন্তু খোলেনা কেউ। কবির পাশের রুমে চলে আসে। সেখানে তপু বসে বসে পিসিতে মুভি দেখছিল।
"কবির ভাই, চলে এসেছ?" তপু বলে।
"তুমি এই রুমে কেন? ঐ রুমে কে এতো জোরে গান বাজাচ্ছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"আমি ঐ রুম ছেড়ে দিয়েছি। তুমি তো চলে গেলে, আমার একা একা ভয় করতো। শুনেছি মৃত মানুষের আত্মা চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজের ঘরে ঘোরাফেরা করে।" তপু বলে।
"যত্তোসব আজে বাজে কথা। তো এখন কি সোহরাব ভাইয়ের আত্মা এসে রুমে জোরে জোর র্যাপ সঙ্গীত গাইছে? রুমে কে?" কবির বলে।
"তোমার নতুন রুমমেট। সারাদিন র্যাপ শোনে, র্যাপ করেও ভালই।"
"কানে সমস্যা আছে নাকি র্যাপারের? কতোবার নক করলাম দরজা খোলে না" কবির বলে।
"দাঁড়াও দেখছি," বলে তপু তার মোবাইল বের করে কল দেয়। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো সবুজ ভাই। দরজা খোল, তোমার রুমমেট এসেছে।" বলে তপু তারপর কবিরকে ইশারা করে।
কবির তার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তার রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকে লম্বা চওড়া ফর্সা কুলডুড টাইপের একটি ছেলেকে দেখতে পায়।
"হ্যালো বস, আমি সবুজ।" বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ছেলেটি। কবির কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে হাত মিলিয়ে বলে "আমি কবির।"
"নাইস নেম ব্রো" সবুজ বলে।
"থ্যাংকস।" বলে প্রতিউত্তর দেয় কবির। ছেলেটার উপর থেকে নিচ অব্দি একবার চোখ বুলিয়ে নেয় কবির। উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট হবে, হ্যাংলা পাতলা নয়, খুব বেশি মোটাও না, মধ্যম গড়নের। ছোটখাট দানব বললে খুব একটা ভুল হবে না। চোখ দুটো কোটরাগত, লম্বা চিপ আর ছোট করে ছাঁটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি গোঁফ।
কবির কাপড় ছেড়ে লুংগি ও গেঞ্জি পরে ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়ে।
সবুজ আবারও ইংরেজি র্যাপ গান চালিয়ে দেয় সাউন্ড বক্সে।
"ভাই, প্লিজ গান বন্ধ করেন। আমি জার্নি করে এসেছি, একটু ঘুমানো দরকার।" কবির বলে।
"ঠিক আছে বস, নো প্রবলেম। আমারো ঘুম পাচ্ছে, অনেক রাত হয়েছে। যাস্ট একটা গান।" সবুজ বলে।
সজল লিফ্টে করে হসপিটালের পাঁচতলায় উঠে আসে। গতকাল রাতে সে বগুড়া থেকে ফিরেছে। ওদিকের পরিস্থিতিটা প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু ওর মায়ের শরীরটা বেশ খারাপ। এজন্যে বেশ টেনশনে সে। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে বাঁ পাশে চুয়ান্ন নাম্বার কেবিনে ঢোকে সজল। তখন জাহিদা বিছানায় শুয়েছিল, ছেলেকে দেখে উঠতে চায়।
"উঠো না আম্মা শুয়েই থাকো।" শিওরে বসে সজল বলে।
"শুয়েই তো আছি রাত দিন, উঠতে আর পারি কই?" জাহিদা বলে।
"আগে অপারেশনটা হতে দাও তারপর দৌড়াতেও পারবে।" সজল বলে।
জাহিদা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর বলে "জানিস কাল রাতে স্বপ্নে তোর আব্বাকে দেখছিলাম। আইসা কয়, নতুন জমি কিনছে বাড়ি করবে। আমাকে সেই জমি দেখাতে নিয়া যাইতে চায়। আমি সাথে গেলাম, যাইয়া দেখি উত্তরপাড়া কবরস্থান। যেখানে তোর আব্বাকে কবর দিছিলাম। তখনই ঘুম ভাইঙা গেল।" আরেকবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "আমি মনে হয় আর বাঁচমুনারে আব্বা।"
"কিসব বল আম্মা। তুমি খুব বেশী চিন্তা কর। তাই এসব উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখতাছ।" সজল বলে।
"হ্যাঁরে তুই স্নিগ্ধাদের বাড়িতে গিয়েছিলি?" জিজ্ঞাসা করে জাহেদা।
"হ্যাঁ। ওর বাবা মার সাথে কথা হয়েছে।" সজল বলে।
"কাজ হয়েছে?" চোখমুখ উজ্জল হয়ে ওঠে জাহেদার।
"স্নিগ্ধার বাবা আসবেন কালকে, তোমার সাথে দেখা করতে।" সজল বলে।
"তাই? তাহলে সাথে স্নিগ্ধাকেও আসতে বলিস। কতোদিন মেয়েটাকে দেখি না।"
"ঠিক আছে, বলব। বুবু কোথায়?"
"বাথরুমে, গোসল করতে ঢুকেছে। ঐতো বেরিয়েছে।" জাহিদা বলে।
"ফিরলি কখন?" সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে ফাতেমা।
সজল উঠে বোনের সামনে যায়, "রাতেই ফিরেছি।"
ফিসফিস করে বলে "ইকো করিয়েছ বুবু? রিপোর্ট কেমন? ডাক্তার কি বলেছে?"
"তেমন একটা ভাল না। অপারেশন করাতেই হবে, উপায় নাই।" ফাতেমা বলে।
"বুবু তুমি আম্মার কাছে থাকো, আমি তোমাদের জন্য খাবার আনি।"
"শক্ত খাবার দিতে মানা করেছে ডাক্তার। ফ্যাটবিহীন তরল খাবার।" ফাতেমা বলে।
"ঠিক আছে বুবু।" বলে সজল বেরিয়ে যায়। একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বোন ও মায়ের জন্য খাবার কিনে আবার বেরিয়ে আসে সজল। একটি গুরুত্বপুর্ন মিটিং আছে তার।
সজল তার বাইকে করে উত্তরার একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করায়। এটি তাদের কম্পানিরই একটি প্রজেক্ট, সাতমাস হল কাজ বন্ধ আছে।
"কেউ আমার খোঁজ করতে এলে ফিফ্থ ফ্লোরে পাঠিয়ে দেবে।" গেটে দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে।
সজল সিঁড়ি দিয়ে ছয় তলায় ওঠে। সেখানে একটি টেবিল আর তিনটে চেয়ার পাতানো রয়েছে। চেয়ারে বসে গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় সজল।
এখন পর্যন্ত সজলের প্ল্যানগুলো পারফেক্টভাবে কাজে লেগেছে। তবে ফাঁক ফোকর আছে তার প্ল্যানে, সেগুলোকে নিশ্ছিদ্র করে ফেলবে সে। স্নিগ্ধাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত আনা যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু ওর মনে কবিরের প্রতি যে দুর্বলতা আছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই সজলের। এই দুর্বলতাটি ভবিষ্যতে ওদের জীবনে কাঁটা হয়ে দাড়াতে পারে। কিছু একটা তো করতেই হবে। কি করা যায় ভাবতে থাকে সজল। ঠিক তখন রিং বেজে ওঠে, পারভেজের নাম্বার।
"মাদারচোদ, কই তুই? আমি কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি জানিস?" কল রিসিভ করেই খেঁকিয়ে ওঠে সজল।
"রাগ করিস ক্যা দোস্ত, রাস্তায় জ্যাম ছিল প্রচুর। যেখানে আসতে বলেছিস, এসে গেছি।" পারভেজ বলে।
"দারোয়ানকে আমার নাম বললেই ঢুকতে দেবে। ছয়তলায় চলে আয়।" সজল বলে।
পারভেজ ও সজল বুয়েটে একই ক্লাসে পড়ত। পারভেজ একসময় বেশ ভাল ছাত্র ছিল। কিন্তু মাদকাসক্তিতে ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। বুয়েট থেকে ড্রপআউট হয়েছে। ছয়মাস মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিল। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বাবা মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ইদানিং রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে বেড়ায়।
"আয় বোস।" পারভেজের উদ্দেশ্যে বলে সজল।
"ইয়ে মানে, তুই যেটা বলেছিলি আমি ভেবে দেখেছি কিন্তু সেটা....." পারভেজ কথা শেষ করতে দেয়না সজল; "সবজি খাবি? ভাল সবজি আছে।" বলে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো গাঁজার পোঁটলা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে "নে বানা। বহুদিন টান দেই না।"
পারভেজ শুকনো পাতাগুলো হাতে নিয়ে ডলতে ডলতে বলে "মালটা তো ভালই। কই পেলি? নাকালপাড়ার মুচির কাছে?"
"না, এইটা কুষ্টিয়ার। নে সিগারেটে ভর।"
পারভেজ সিগারেটের তামাক ফেলে দিয়ে তাতে গাঁজা ভরে।
"দে, আগে আমি দুই টান দেই।" বলে সজল হাত বাড়িয়ে নেয়। তারপর লাইটার বের করে ধরিয়ে দুই টান দিয়ে পারভেজকে দেয়।
"মেসে ঢুকে গেছিস?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
পারভেজ ওরফে সবুজ গাঁজায় টান দিয়ে মাথা ঝাঁকায়।
"কোন রুমে আছিস? কবিরের রুমে?"
আবারও মাথা ঝোঁকায় সবুজ।
"ভেরি গুড। এপার্টমেন্টটা কতো তলা যেন?"
"ছয় তলা" গাঁজায় টান দিতে দিতে বলে সবুজ।
"ছয়তলার ছাদে থাকে। কম করে হলেও পঁয়ষট্টি ফুট হবে। সুযোগ বুঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবি, পারবি না?"
"বস আমার ভয় করে, ধরা পড়ে যাব। আমি পারবনা।" কাঁচুমাচু হয়ে বলে সবুজ।
সজল তার পকেট থেকে তিনটা একশ টাকার বান্ডিল বের করে টেবিলে রেখে বলে "কাজ হয়ে গেলে আরো চারটা পাবি।"
সবুজ বান্ডিলগুলো হাতে তুলে নিয়ে বলে "কিন্তু ধরা পড়ে যাব তো বস।"
"তুই ধরা পড়লে তো আমিও ধরা পড়ব। সে কি হতে পারে? আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলে ধরা পড়ার কোন চান্সই নেই।" সজল বলে।
"না দোস্ত আমি পারব না। এমনিতে রাতের বেলা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা কেড়ে নেয়া এক জিনিস, আর কাউকে সত্যি সত্যি খুন করে ফেলা সে অন্য জিনিস।"
"এমনি এমনি আমি তোকে এতোগুলো টাকা দিচ্ছি? আর তুই খুন করবি কেন? কবির নিজেই আত্মহত্যা করবে।"
"মানে?"
"তোর লিজাকে মনে আছে?"
"কোন লিজা?"
"তুই আগে টিউশনি করাতি। পরে তোর সাথে বেট ধরে আমি টিউশনিটা নিলাম। বেটটা কি ছিল মনে আছে। একমাসের মধ্যে বিছানায় তোলা। আমি কিন্তু এক হাজার টাকা জিতেছিলাম।"
"হুম, মনে পড়েছে। খুব হট ছিল নারে?" সবুজ বলে।
"সাড়ে সাতটার বাসের টিকিট কেটেছি, এখনি যেতে হবে।" কবির বলে।
"তাহলে এই টাকাগুলো রাখো।" বলে শিরিন কবিরের হাতে হাজার টাকার দশটি নোট তুলে দেয়।
"এর দরকার নেই আন্টি। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে।" কবির বলে।
"তবুও রাখ। আর পৌঁছে কল দিও কিন্তু।"
"ঠিক আছে আন্টি, তাহলে আসি।" বলে বেরিয়ে যায় কবির।
কবির যখন তার মিরপুরের মেসটিতে পৌঁছায় তখন রাত বারোটা বাজে। কবির তার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখে রুমটা ভেতর থেকে লক করা এবং রুম থেকে উৎকট মিউজিকের আওয়াজ আসছে। কবির কয়েকবার নক করে কিন্তু খোলেনা কেউ। কবির পাশের রুমে চলে আসে। সেখানে তপু বসে বসে পিসিতে মুভি দেখছিল।
"কবির ভাই, চলে এসেছ?" তপু বলে।
"তুমি এই রুমে কেন? ঐ রুমে কে এতো জোরে গান বাজাচ্ছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"আমি ঐ রুম ছেড়ে দিয়েছি। তুমি তো চলে গেলে, আমার একা একা ভয় করতো। শুনেছি মৃত মানুষের আত্মা চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজের ঘরে ঘোরাফেরা করে।" তপু বলে।
"যত্তোসব আজে বাজে কথা। তো এখন কি সোহরাব ভাইয়ের আত্মা এসে রুমে জোরে জোর র্যাপ সঙ্গীত গাইছে? রুমে কে?" কবির বলে।
"তোমার নতুন রুমমেট। সারাদিন র্যাপ শোনে, র্যাপ করেও ভালই।"
"কানে সমস্যা আছে নাকি র্যাপারের? কতোবার নক করলাম দরজা খোলে না" কবির বলে।
"দাঁড়াও দেখছি," বলে তপু তার মোবাইল বের করে কল দেয়। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো সবুজ ভাই। দরজা খোল, তোমার রুমমেট এসেছে।" বলে তপু তারপর কবিরকে ইশারা করে।
কবির তার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তার রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকে লম্বা চওড়া ফর্সা কুলডুড টাইপের একটি ছেলেকে দেখতে পায়।
"হ্যালো বস, আমি সবুজ।" বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ছেলেটি। কবির কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে হাত মিলিয়ে বলে "আমি কবির।"
"নাইস নেম ব্রো" সবুজ বলে।
"থ্যাংকস।" বলে প্রতিউত্তর দেয় কবির। ছেলেটার উপর থেকে নিচ অব্দি একবার চোখ বুলিয়ে নেয় কবির। উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট হবে, হ্যাংলা পাতলা নয়, খুব বেশি মোটাও না, মধ্যম গড়নের। ছোটখাট দানব বললে খুব একটা ভুল হবে না। চোখ দুটো কোটরাগত, লম্বা চিপ আর ছোট করে ছাঁটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি গোঁফ।
কবির কাপড় ছেড়ে লুংগি ও গেঞ্জি পরে ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়ে।
সবুজ আবারও ইংরেজি র্যাপ গান চালিয়ে দেয় সাউন্ড বক্সে।
"ভাই, প্লিজ গান বন্ধ করেন। আমি জার্নি করে এসেছি, একটু ঘুমানো দরকার।" কবির বলে।
"ঠিক আছে বস, নো প্রবলেম। আমারো ঘুম পাচ্ছে, অনেক রাত হয়েছে। যাস্ট একটা গান।" সবুজ বলে।
সজল লিফ্টে করে হসপিটালের পাঁচতলায় উঠে আসে। গতকাল রাতে সে বগুড়া থেকে ফিরেছে। ওদিকের পরিস্থিতিটা প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু ওর মায়ের শরীরটা বেশ খারাপ। এজন্যে বেশ টেনশনে সে। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে বাঁ পাশে চুয়ান্ন নাম্বার কেবিনে ঢোকে সজল। তখন জাহিদা বিছানায় শুয়েছিল, ছেলেকে দেখে উঠতে চায়।
"উঠো না আম্মা শুয়েই থাকো।" শিওরে বসে সজল বলে।
"শুয়েই তো আছি রাত দিন, উঠতে আর পারি কই?" জাহিদা বলে।
"আগে অপারেশনটা হতে দাও তারপর দৌড়াতেও পারবে।" সজল বলে।
জাহিদা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর বলে "জানিস কাল রাতে স্বপ্নে তোর আব্বাকে দেখছিলাম। আইসা কয়, নতুন জমি কিনছে বাড়ি করবে। আমাকে সেই জমি দেখাতে নিয়া যাইতে চায়। আমি সাথে গেলাম, যাইয়া দেখি উত্তরপাড়া কবরস্থান। যেখানে তোর আব্বাকে কবর দিছিলাম। তখনই ঘুম ভাইঙা গেল।" আরেকবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "আমি মনে হয় আর বাঁচমুনারে আব্বা।"
"কিসব বল আম্মা। তুমি খুব বেশী চিন্তা কর। তাই এসব উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখতাছ।" সজল বলে।
"হ্যাঁরে তুই স্নিগ্ধাদের বাড়িতে গিয়েছিলি?" জিজ্ঞাসা করে জাহেদা।
"হ্যাঁ। ওর বাবা মার সাথে কথা হয়েছে।" সজল বলে।
"কাজ হয়েছে?" চোখমুখ উজ্জল হয়ে ওঠে জাহেদার।
"স্নিগ্ধার বাবা আসবেন কালকে, তোমার সাথে দেখা করতে।" সজল বলে।
"তাই? তাহলে সাথে স্নিগ্ধাকেও আসতে বলিস। কতোদিন মেয়েটাকে দেখি না।"
"ঠিক আছে, বলব। বুবু কোথায়?"
"বাথরুমে, গোসল করতে ঢুকেছে। ঐতো বেরিয়েছে।" জাহিদা বলে।
"ফিরলি কখন?" সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে ফাতেমা।
সজল উঠে বোনের সামনে যায়, "রাতেই ফিরেছি।"
ফিসফিস করে বলে "ইকো করিয়েছ বুবু? রিপোর্ট কেমন? ডাক্তার কি বলেছে?"
"তেমন একটা ভাল না। অপারেশন করাতেই হবে, উপায় নাই।" ফাতেমা বলে।
"বুবু তুমি আম্মার কাছে থাকো, আমি তোমাদের জন্য খাবার আনি।"
"শক্ত খাবার দিতে মানা করেছে ডাক্তার। ফ্যাটবিহীন তরল খাবার।" ফাতেমা বলে।
"ঠিক আছে বুবু।" বলে সজল বেরিয়ে যায়। একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বোন ও মায়ের জন্য খাবার কিনে আবার বেরিয়ে আসে সজল। একটি গুরুত্বপুর্ন মিটিং আছে তার।
সজল তার বাইকে করে উত্তরার একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করায়। এটি তাদের কম্পানিরই একটি প্রজেক্ট, সাতমাস হল কাজ বন্ধ আছে।
"কেউ আমার খোঁজ করতে এলে ফিফ্থ ফ্লোরে পাঠিয়ে দেবে।" গেটে দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে।
সজল সিঁড়ি দিয়ে ছয় তলায় ওঠে। সেখানে একটি টেবিল আর তিনটে চেয়ার পাতানো রয়েছে। চেয়ারে বসে গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় সজল।
এখন পর্যন্ত সজলের প্ল্যানগুলো পারফেক্টভাবে কাজে লেগেছে। তবে ফাঁক ফোকর আছে তার প্ল্যানে, সেগুলোকে নিশ্ছিদ্র করে ফেলবে সে। স্নিগ্ধাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত আনা যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু ওর মনে কবিরের প্রতি যে দুর্বলতা আছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই সজলের। এই দুর্বলতাটি ভবিষ্যতে ওদের জীবনে কাঁটা হয়ে দাড়াতে পারে। কিছু একটা তো করতেই হবে। কি করা যায় ভাবতে থাকে সজল। ঠিক তখন রিং বেজে ওঠে, পারভেজের নাম্বার।
"মাদারচোদ, কই তুই? আমি কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি জানিস?" কল রিসিভ করেই খেঁকিয়ে ওঠে সজল।
"রাগ করিস ক্যা দোস্ত, রাস্তায় জ্যাম ছিল প্রচুর। যেখানে আসতে বলেছিস, এসে গেছি।" পারভেজ বলে।
"দারোয়ানকে আমার নাম বললেই ঢুকতে দেবে। ছয়তলায় চলে আয়।" সজল বলে।
পারভেজ ও সজল বুয়েটে একই ক্লাসে পড়ত। পারভেজ একসময় বেশ ভাল ছাত্র ছিল। কিন্তু মাদকাসক্তিতে ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। বুয়েট থেকে ড্রপআউট হয়েছে। ছয়মাস মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিল। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বাবা মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ইদানিং রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে বেড়ায়।
"আয় বোস।" পারভেজের উদ্দেশ্যে বলে সজল।
"ইয়ে মানে, তুই যেটা বলেছিলি আমি ভেবে দেখেছি কিন্তু সেটা....." পারভেজ কথা শেষ করতে দেয়না সজল; "সবজি খাবি? ভাল সবজি আছে।" বলে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো গাঁজার পোঁটলা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে "নে বানা। বহুদিন টান দেই না।"
পারভেজ শুকনো পাতাগুলো হাতে নিয়ে ডলতে ডলতে বলে "মালটা তো ভালই। কই পেলি? নাকালপাড়ার মুচির কাছে?"
"না, এইটা কুষ্টিয়ার। নে সিগারেটে ভর।"
পারভেজ সিগারেটের তামাক ফেলে দিয়ে তাতে গাঁজা ভরে।
"দে, আগে আমি দুই টান দেই।" বলে সজল হাত বাড়িয়ে নেয়। তারপর লাইটার বের করে ধরিয়ে দুই টান দিয়ে পারভেজকে দেয়।
"মেসে ঢুকে গেছিস?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
পারভেজ ওরফে সবুজ গাঁজায় টান দিয়ে মাথা ঝাঁকায়।
"কোন রুমে আছিস? কবিরের রুমে?"
আবারও মাথা ঝোঁকায় সবুজ।
"ভেরি গুড। এপার্টমেন্টটা কতো তলা যেন?"
"ছয় তলা" গাঁজায় টান দিতে দিতে বলে সবুজ।
"ছয়তলার ছাদে থাকে। কম করে হলেও পঁয়ষট্টি ফুট হবে। সুযোগ বুঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবি, পারবি না?"
"বস আমার ভয় করে, ধরা পড়ে যাব। আমি পারবনা।" কাঁচুমাচু হয়ে বলে সবুজ।
সজল তার পকেট থেকে তিনটা একশ টাকার বান্ডিল বের করে টেবিলে রেখে বলে "কাজ হয়ে গেলে আরো চারটা পাবি।"
সবুজ বান্ডিলগুলো হাতে তুলে নিয়ে বলে "কিন্তু ধরা পড়ে যাব তো বস।"
"তুই ধরা পড়লে তো আমিও ধরা পড়ব। সে কি হতে পারে? আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলে ধরা পড়ার কোন চান্সই নেই।" সজল বলে।
"না দোস্ত আমি পারব না। এমনিতে রাতের বেলা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা কেড়ে নেয়া এক জিনিস, আর কাউকে সত্যি সত্যি খুন করে ফেলা সে অন্য জিনিস।"
"এমনি এমনি আমি তোকে এতোগুলো টাকা দিচ্ছি? আর তুই খুন করবি কেন? কবির নিজেই আত্মহত্যা করবে।"
"মানে?"
"তোর লিজাকে মনে আছে?"
"কোন লিজা?"
"তুই আগে টিউশনি করাতি। পরে তোর সাথে বেট ধরে আমি টিউশনিটা নিলাম। বেটটা কি ছিল মনে আছে। একমাসের মধ্যে বিছানায় তোলা। আমি কিন্তু এক হাজার টাকা জিতেছিলাম।"
"হুম, মনে পড়েছে। খুব হট ছিল নারে?" সবুজ বলে।