16-06-2021, 07:56 PM
"কবির, তুই ঘুমিয়ে গেছিস?" স্নিগ্ধার মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে।
কবির উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়, স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ওকে ভীষন চিন্তিত দেখাচ্ছে।
"কিরে এতো রাতে তুই হঠাত?"
"ঘুম আসছিল না কিছুতেই, খুব টেনশনে আছি।"
"কিসের টেনশন? আয় বস।" কবির বলে। স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসে।
"সজল কল দিয়েছিল কিছুক্ষন আগে। কালকে ও বগুড়া আসবে। ও চায় যে আমি যেন ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।"
"আর তুই কি চাস?"
"কি চাই মানে?"
"প্রেম যখন করিসই কোন না কোনদিন তো বাবা মাকে জানাতেই হতো। তাতে প্রবলেম কোথায়?"
"অনেক প্রবলেম। প্রথমতো আমি চাই না যে এখনই আব্বু আম্মু ওর ব্যাপারে জানুক। দ্বিতীয়ত লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করি জানতে পারলে আম্মু আমাকে বকবে। তৃতীয়ত ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ও বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে, আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনা। আর তাছাড়া ওকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা সে নিয়ে কমপক্ষে হাজার বার ভেবে দেখা উচিত।"
"আমি বুঝতে পারি যে তোর আর তোর বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা চলছে, কিন্তু কি সমস্যা আমাকে তো তা কখনো খুলে বলিস নি।"
"তুই তো জানিসই যে ওর সাথে আমার রিলেশন অনেক দিনের। কিন্তু রিসেন্টলি জানতে পারি যে ও একটা চরিত্রহীন, বদমাইশ, ও নাকি অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে স্নিগ্ধা।
"জানতে পারলি কিভাবে? এটা জানার পরও তুই ওর সাথে রিলেশন রাখলি কেন?" কবির বলে।
"সোহরাব ভাই বলেছিলেন। উনি সজলকে খুব ভাল করে চিনতেন। কিন্তু সজল বলে ও শুধরে গেছে।" একটু থেমে আরো যোগ করে স্নিগ্ধা, "আমি ঠিক করেছিলাম ওর সাথে রিলেশন রাখব না, কিন্তু ও আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। বলে আমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক না রাখি ও আত্মহত্যা করবে।"
"এতোটার পরও যখন তোর ওর প্রতি দুর্বলতা কাজ করে তখন তুই নিশ্চিতভাবেই ওকে ভালবাসিস। কিন্তু ও কি তোকে এতোটা ভালবাসে যতোটা তুই ওকে ভালবাসিস?"
"জানিনা আমি। কখনো মনে হয় ও আমাকে ভালবাসে, কখনো মনে হয় ও শুধু ছলচাতুরি করে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোর অবস্থা দেখি আমারই মতো। কখনো মনে হতো তুই আমাকে ভালবাসিস, কখনো মনে হয় তুই শুধু আমাকে নিয়ে ঠাট্টাই করিস, মজা নিস। কিন্তু সেটা যাই হোক আমি তোকে ভীষন ভালবাসি।"
"কি বলছিস এসব? একদম ফাইজলামি করবি না।" অবাক হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"আমার চোখের দিকে তাকা। তোর কি মনে হচ্ছে আমি ঠাট্টা করছি?" কবির বলে।
"আমি তোকে ভালবাসি ঠিকই কিন্তু শুধু বন্ধু হিসাবে। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।" স্নিগ্ধা বলে।
"জানিরে তুই আমাকে ভালবাসিস ঠিকই, কিন্তু জীবনসাথি হিসাবে ভাবতে পারিস না। কিন্তু জানিস তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। এক তুই তো আছিস এ জীবনে, যদি তোকে আরো আপন করে চাই সে কি খুব বেশী চাওয়া হবে?"
স্নিগ্ধা কিছু বলে না, অপলক চেয়ে থাকে কবিরের দিকে।
"বন্ধুদের মাঝে কিছুই গোপন রাখতে নেই। কিন্তু এই ভাবনাগুলো গোপন রেখে বয়ে বেড়াচ্ছি অনেকদিন হল। আজ বলতে পেরে নিজেকে হালকা লাগছে অনেকটাই।" একটু থেমে বলে "যা তোর ঘরে যা, শুয়ে পড়। রাত জাগিস না, শরীর খারাপ হবে। অনেক রাত হয়েছে।"
স্নিগ্ধা উঠে চলে যায় নিজের রুমে। কবির চাদর মুড়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে এবং কয়েক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়ে।
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় যখন ততক্ষনে ঝলমলে রোদ উঠে গেছে। জানালা দিয়ে একফালি রোদ এসে পড়েছে কবিরে মুখে, সম্ভবত সে কারনেই ঘুম ভেঙে গেছে ওর। কবির উঠে দাঁত ব্রাস করে হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং স্পেসে এসে তার আংকেল আন্টিকে দেখতে পায়।
"বাবা ঠিক মতো ঘুম হল তো?" শিরিন জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ আন্টি।" কবির জবাব দেয়।
"এসো বসো কবির, নাস্তা করো।" জামান বলে।
ততোক্ষনে জামানের নাস্তা শেষ, উঠে যায় সে।
"আন্টি, স্নিগ্ধা কোথায়?"
"এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ডেকে তুলেছিলাম, আবার শুয়ে পড়ল।"
কবির স্নিগ্ধার রুমে যায়। টেডিবেয়ার কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা, নিশ্চয়ই অনেক রাত অব্দি জেগে আছে।
কবির শিয়রে বসে দেখতে থাকে স্নিগ্ধার মিষ্টি নিষ্পাপ মুখখানি। বাচ্চা মেয়ের মতো পুতুল কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কবিরের মনটা ভালবাসায় ভরে ওঠে, ইচ্ছে করে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে সুন্দর মুখখানি। স্নিগ্ধার কপালে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কবির।
ডাইনিং রুমে এসে সিদ্ধ রুটি ও সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে নেয় কবির। তারপর নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটি শাড়ি বের করে শিরিনকে দেয়।
"আন্টি, এটা আপনার জন্য" কবির বলে।
"তুমি অযথা এতো খরচ করতে গেলে কেন?" হাসি মুখে বলে শিরিন।
"আন্টি, পছন্দ হয়েছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"হুম, খুব পছন্দ হয়েছে।" শিরিন বলে। রুপালী পাড়ের গাড় নীল রংয়ের শাড়ি, শিরিনের সত্যিই খুব পছন্দ হয়।
কবির সাইড ব্যাগ থেকে শার্ট ও প্যান্ট পিসের প্যাকেট বের করে বলে "এটা আংকেলের জন্য।"
"রাতে তোমার আংকেল ফিরলে তুমি নিজ হাত দিয়ে দিও, এখন তোমার কাছেই রেখে দাও।"
"ঠিক আছে আন্টি। আমি এখন তাহলে বাড়িতে যাই।"
"বাড়িতে যাবে? ঠিক আছে যাও। আমি সুলতানাকে কল করে বলে দিয়েছি। ও বাড়িঘর পরিস্কার করবে ও বাজার করে রান্না করে রাখবে। দুপুরে ওখানেই খেও, তবে রাতে কিন্তু আমাদের সাথে খাবে।" শিরিন বলে।
"ঠিক আছে। তাহলে আসি আন্টি" বলে কবির সাইডব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে নেয় কবির, কাঁধে ব্যাগটা না থাকলে কবির হেঁটেই যেতো।
রিক্সায় উঠে বসতেই কবিরের মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে। ডক্টর শাফাকাত হোসেন কল দিয়েছে। কবির রিসিভ করে।
"হ্যালো, কবির, কেমন আছ?" শাফাকাত বলে।
"ভাল আছি। আপনি কি দেশে ফিরেছেন?"
"হ্যাঁ কবির, আমি তিন দিনের জন্য ঢাকায় এসেছি। তুমি কি ঢাকাতে আছ?"
"না আঙ্কেল, আমি তো বগুড়ায় এসেছি।"
"ও। তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে? কোন ইয়ারে এখন তুমি?"
"সেকেন্ড ইয়ারে।" কবির জবাব দেয়।
"তুমি তো জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্টে পড়, তাই না?"
"হ্যাঁ।"
"ভেরি গুড। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, আর যেকোন সমস্যায় আমাকে জানাবে। যদি আমার সাথে যোগাযোগ করতে নাও পারো রিজিওনাল হেড শরীফুদ্দিন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করবে। ওনার যে কার্ডটা দিয়েছিলাম তোমাকে সেটা আছে তো?"
"হ্যাঁ, আছে।"
"আমি তোমার কথা ওনাকে জানিয়েছি, উনি অবশ্যই তোমাকে প্রায়োরিটি দিবেন।"
"ঠিক আছে আঙ্কেল।"
"রাখি কবির, টেক কেয়ার" বলে শাফাকাত কল কেটে দেয়। ডক্টর শাফাকাত হোসেন বিগত পাঁচ বছর ধরে কোম্পানির হেড অফিস মেলবোর্নে আছেন। মাঝে মাঝে অবশ্য দেশে আসেন কয়েকদিনের ট্যুরে।
ততোক্ষনে কবিরের বাড়ি চলে এসেছে। কবির রিক্সা থেকে নেমে যায়। কবির বাড়িতে এসে গেইট খোলা পায়, নিশ্চয়ই সুলতানা খালা এসেছে।
বাড়িতে ঢুকে পাঁচ ছয় বছরের একটি ছেলেকে দেখতে পায়। কবির চিনতে পারে, সুলতানার ছেলে টুটুল। টুটুল মেঝেতে বসে তার খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছিল। কবিরকে দেখে খেলা থামিয়ে চেয়ে থাকে।
"কিরে টুটুল, তোর আম্মু কই?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
টুটুল রান্নাঘরের দিকে দেখিয়ে দেয়।
কবির রান্নাঘরের সামনে এসে দাড়ায়, সুলতানা তখন রান্না করছিল। কবিরের পায়ের আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায়।
"কবির বাবু, আইছ? আমি তো টেনশনে আছিলাম।" হাসিমুখে বলে সুলতানা।
"গতকাল রাতে এসেছি, অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই ওই বাড়িতেই ছিলাম।"
"স্নিগ্ধার আম্মা কল দিয়া বলছে অবশ্য। কিন্তু তুমি তো একেবারে শুকাইয়া গেছ, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া কর না মনে হয়?"
"কি করব খালা ওখানে তো আর তোমার হাতের রান্না পাই না। যদি মেসের খালা তোমার মতো রান্না করতে পারত তাহলে খেয়ে খেয়ে আরো মোটা হতাম।"
"কি যে বল না" হেসে বলে সুলতানা।
"কি রান্না করছো খালা? অনেকদিন তোমার হাতের রান্না খাই না।"
"হাঁসের মাংস, আর পাবদা মাছ চচ্চড়ি।"
"ওহ! আমার ফেভারিট।"
"গোসল করে আইসো, ততক্ষনে হয়ে যাবে।"
"ঠিক আছে খালা।" বলে কবির নিজের রুমের দিকে যায়। তারপর কাপড় বদলিয়ে লুঙ্গি ও গামছা নিয়ে বাথরুমের দিকে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষে কবির বিছানায় শুয়ে ছিল। মনের ভেতর চাপা টেনশন কাজ করছে ওর। গতকাল রাতে ওভাবে সরাসরি বলে দেয়া কি ঠিক হল? এরপর স্নিগ্ধার সাথে ওর সম্পর্ক কি থাকবে? বা কেমন থাকবে। হঠাত ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। স্নিগ্ধার কল এসেছে। কবির রিসিভ করে।
"কবির, আমার সাথে দেখা করতে পারবি? এক্ষুনি।" চিন্তিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তোদের বাড়িতে আসব?"
"না না, বাড়িতে নয়। ঐ যায়গায়।"
"ঠিক আছে।" বলে কেটে দেয় কবির।
কবির উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়, স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ওকে ভীষন চিন্তিত দেখাচ্ছে।
"কিরে এতো রাতে তুই হঠাত?"
"ঘুম আসছিল না কিছুতেই, খুব টেনশনে আছি।"
"কিসের টেনশন? আয় বস।" কবির বলে। স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসে।
"সজল কল দিয়েছিল কিছুক্ষন আগে। কালকে ও বগুড়া আসবে। ও চায় যে আমি যেন ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।"
"আর তুই কি চাস?"
"কি চাই মানে?"
"প্রেম যখন করিসই কোন না কোনদিন তো বাবা মাকে জানাতেই হতো। তাতে প্রবলেম কোথায়?"
"অনেক প্রবলেম। প্রথমতো আমি চাই না যে এখনই আব্বু আম্মু ওর ব্যাপারে জানুক। দ্বিতীয়ত লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করি জানতে পারলে আম্মু আমাকে বকবে। তৃতীয়ত ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ও বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে, আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনা। আর তাছাড়া ওকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা সে নিয়ে কমপক্ষে হাজার বার ভেবে দেখা উচিত।"
"আমি বুঝতে পারি যে তোর আর তোর বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা চলছে, কিন্তু কি সমস্যা আমাকে তো তা কখনো খুলে বলিস নি।"
"তুই তো জানিসই যে ওর সাথে আমার রিলেশন অনেক দিনের। কিন্তু রিসেন্টলি জানতে পারি যে ও একটা চরিত্রহীন, বদমাইশ, ও নাকি অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে স্নিগ্ধা।
"জানতে পারলি কিভাবে? এটা জানার পরও তুই ওর সাথে রিলেশন রাখলি কেন?" কবির বলে।
"সোহরাব ভাই বলেছিলেন। উনি সজলকে খুব ভাল করে চিনতেন। কিন্তু সজল বলে ও শুধরে গেছে।" একটু থেমে আরো যোগ করে স্নিগ্ধা, "আমি ঠিক করেছিলাম ওর সাথে রিলেশন রাখব না, কিন্তু ও আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। বলে আমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক না রাখি ও আত্মহত্যা করবে।"
"এতোটার পরও যখন তোর ওর প্রতি দুর্বলতা কাজ করে তখন তুই নিশ্চিতভাবেই ওকে ভালবাসিস। কিন্তু ও কি তোকে এতোটা ভালবাসে যতোটা তুই ওকে ভালবাসিস?"
"জানিনা আমি। কখনো মনে হয় ও আমাকে ভালবাসে, কখনো মনে হয় ও শুধু ছলচাতুরি করে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোর অবস্থা দেখি আমারই মতো। কখনো মনে হতো তুই আমাকে ভালবাসিস, কখনো মনে হয় তুই শুধু আমাকে নিয়ে ঠাট্টাই করিস, মজা নিস। কিন্তু সেটা যাই হোক আমি তোকে ভীষন ভালবাসি।"
"কি বলছিস এসব? একদম ফাইজলামি করবি না।" অবাক হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"আমার চোখের দিকে তাকা। তোর কি মনে হচ্ছে আমি ঠাট্টা করছি?" কবির বলে।
"আমি তোকে ভালবাসি ঠিকই কিন্তু শুধু বন্ধু হিসাবে। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।" স্নিগ্ধা বলে।
"জানিরে তুই আমাকে ভালবাসিস ঠিকই, কিন্তু জীবনসাথি হিসাবে ভাবতে পারিস না। কিন্তু জানিস তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। এক তুই তো আছিস এ জীবনে, যদি তোকে আরো আপন করে চাই সে কি খুব বেশী চাওয়া হবে?"
স্নিগ্ধা কিছু বলে না, অপলক চেয়ে থাকে কবিরের দিকে।
"বন্ধুদের মাঝে কিছুই গোপন রাখতে নেই। কিন্তু এই ভাবনাগুলো গোপন রেখে বয়ে বেড়াচ্ছি অনেকদিন হল। আজ বলতে পেরে নিজেকে হালকা লাগছে অনেকটাই।" একটু থেমে বলে "যা তোর ঘরে যা, শুয়ে পড়। রাত জাগিস না, শরীর খারাপ হবে। অনেক রাত হয়েছে।"
স্নিগ্ধা উঠে চলে যায় নিজের রুমে। কবির চাদর মুড়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে এবং কয়েক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়ে।
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় যখন ততক্ষনে ঝলমলে রোদ উঠে গেছে। জানালা দিয়ে একফালি রোদ এসে পড়েছে কবিরে মুখে, সম্ভবত সে কারনেই ঘুম ভেঙে গেছে ওর। কবির উঠে দাঁত ব্রাস করে হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং স্পেসে এসে তার আংকেল আন্টিকে দেখতে পায়।
"বাবা ঠিক মতো ঘুম হল তো?" শিরিন জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ আন্টি।" কবির জবাব দেয়।
"এসো বসো কবির, নাস্তা করো।" জামান বলে।
ততোক্ষনে জামানের নাস্তা শেষ, উঠে যায় সে।
"আন্টি, স্নিগ্ধা কোথায়?"
"এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ডেকে তুলেছিলাম, আবার শুয়ে পড়ল।"
কবির স্নিগ্ধার রুমে যায়। টেডিবেয়ার কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা, নিশ্চয়ই অনেক রাত অব্দি জেগে আছে।
কবির শিয়রে বসে দেখতে থাকে স্নিগ্ধার মিষ্টি নিষ্পাপ মুখখানি। বাচ্চা মেয়ের মতো পুতুল কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কবিরের মনটা ভালবাসায় ভরে ওঠে, ইচ্ছে করে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে সুন্দর মুখখানি। স্নিগ্ধার কপালে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কবির।
ডাইনিং রুমে এসে সিদ্ধ রুটি ও সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে নেয় কবির। তারপর নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটি শাড়ি বের করে শিরিনকে দেয়।
"আন্টি, এটা আপনার জন্য" কবির বলে।
"তুমি অযথা এতো খরচ করতে গেলে কেন?" হাসি মুখে বলে শিরিন।
"আন্টি, পছন্দ হয়েছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"হুম, খুব পছন্দ হয়েছে।" শিরিন বলে। রুপালী পাড়ের গাড় নীল রংয়ের শাড়ি, শিরিনের সত্যিই খুব পছন্দ হয়।
কবির সাইড ব্যাগ থেকে শার্ট ও প্যান্ট পিসের প্যাকেট বের করে বলে "এটা আংকেলের জন্য।"
"রাতে তোমার আংকেল ফিরলে তুমি নিজ হাত দিয়ে দিও, এখন তোমার কাছেই রেখে দাও।"
"ঠিক আছে আন্টি। আমি এখন তাহলে বাড়িতে যাই।"
"বাড়িতে যাবে? ঠিক আছে যাও। আমি সুলতানাকে কল করে বলে দিয়েছি। ও বাড়িঘর পরিস্কার করবে ও বাজার করে রান্না করে রাখবে। দুপুরে ওখানেই খেও, তবে রাতে কিন্তু আমাদের সাথে খাবে।" শিরিন বলে।
"ঠিক আছে। তাহলে আসি আন্টি" বলে কবির সাইডব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে নেয় কবির, কাঁধে ব্যাগটা না থাকলে কবির হেঁটেই যেতো।
রিক্সায় উঠে বসতেই কবিরের মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে। ডক্টর শাফাকাত হোসেন কল দিয়েছে। কবির রিসিভ করে।
"হ্যালো, কবির, কেমন আছ?" শাফাকাত বলে।
"ভাল আছি। আপনি কি দেশে ফিরেছেন?"
"হ্যাঁ কবির, আমি তিন দিনের জন্য ঢাকায় এসেছি। তুমি কি ঢাকাতে আছ?"
"না আঙ্কেল, আমি তো বগুড়ায় এসেছি।"
"ও। তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে? কোন ইয়ারে এখন তুমি?"
"সেকেন্ড ইয়ারে।" কবির জবাব দেয়।
"তুমি তো জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্টে পড়, তাই না?"
"হ্যাঁ।"
"ভেরি গুড। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, আর যেকোন সমস্যায় আমাকে জানাবে। যদি আমার সাথে যোগাযোগ করতে নাও পারো রিজিওনাল হেড শরীফুদ্দিন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করবে। ওনার যে কার্ডটা দিয়েছিলাম তোমাকে সেটা আছে তো?"
"হ্যাঁ, আছে।"
"আমি তোমার কথা ওনাকে জানিয়েছি, উনি অবশ্যই তোমাকে প্রায়োরিটি দিবেন।"
"ঠিক আছে আঙ্কেল।"
"রাখি কবির, টেক কেয়ার" বলে শাফাকাত কল কেটে দেয়। ডক্টর শাফাকাত হোসেন বিগত পাঁচ বছর ধরে কোম্পানির হেড অফিস মেলবোর্নে আছেন। মাঝে মাঝে অবশ্য দেশে আসেন কয়েকদিনের ট্যুরে।
ততোক্ষনে কবিরের বাড়ি চলে এসেছে। কবির রিক্সা থেকে নেমে যায়। কবির বাড়িতে এসে গেইট খোলা পায়, নিশ্চয়ই সুলতানা খালা এসেছে।
বাড়িতে ঢুকে পাঁচ ছয় বছরের একটি ছেলেকে দেখতে পায়। কবির চিনতে পারে, সুলতানার ছেলে টুটুল। টুটুল মেঝেতে বসে তার খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছিল। কবিরকে দেখে খেলা থামিয়ে চেয়ে থাকে।
"কিরে টুটুল, তোর আম্মু কই?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
টুটুল রান্নাঘরের দিকে দেখিয়ে দেয়।
কবির রান্নাঘরের সামনে এসে দাড়ায়, সুলতানা তখন রান্না করছিল। কবিরের পায়ের আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায়।
"কবির বাবু, আইছ? আমি তো টেনশনে আছিলাম।" হাসিমুখে বলে সুলতানা।
"গতকাল রাতে এসেছি, অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই ওই বাড়িতেই ছিলাম।"
"স্নিগ্ধার আম্মা কল দিয়া বলছে অবশ্য। কিন্তু তুমি তো একেবারে শুকাইয়া গেছ, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া কর না মনে হয়?"
"কি করব খালা ওখানে তো আর তোমার হাতের রান্না পাই না। যদি মেসের খালা তোমার মতো রান্না করতে পারত তাহলে খেয়ে খেয়ে আরো মোটা হতাম।"
"কি যে বল না" হেসে বলে সুলতানা।
"কি রান্না করছো খালা? অনেকদিন তোমার হাতের রান্না খাই না।"
"হাঁসের মাংস, আর পাবদা মাছ চচ্চড়ি।"
"ওহ! আমার ফেভারিট।"
"গোসল করে আইসো, ততক্ষনে হয়ে যাবে।"
"ঠিক আছে খালা।" বলে কবির নিজের রুমের দিকে যায়। তারপর কাপড় বদলিয়ে লুঙ্গি ও গামছা নিয়ে বাথরুমের দিকে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষে কবির বিছানায় শুয়ে ছিল। মনের ভেতর চাপা টেনশন কাজ করছে ওর। গতকাল রাতে ওভাবে সরাসরি বলে দেয়া কি ঠিক হল? এরপর স্নিগ্ধার সাথে ওর সম্পর্ক কি থাকবে? বা কেমন থাকবে। হঠাত ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। স্নিগ্ধার কল এসেছে। কবির রিসিভ করে।
"কবির, আমার সাথে দেখা করতে পারবি? এক্ষুনি।" চিন্তিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তোদের বাড়িতে আসব?"
"না না, বাড়িতে নয়। ঐ যায়গায়।"
"ঠিক আছে।" বলে কেটে দেয় কবির।