16-06-2021, 07:48 PM
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সজল তার বাইকে উঠে স্টার্ট দেয়, স্নিগ্ধা পিছে বসে।
সজল ফার্মগেট, মহাখালি হয়ে বনানীর একটি এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড় করায় বাইকটা।
"কোথায় নিয়ে এলে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"চলই না।" বলে হাত ধরে এপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে যায় সজল।
লিফ্ট করে পাঁচ তলায় নিয়ে যায়, মানি ব্যাগ থেকে চাবি বের করে ডান পাশের ফ্লাটের দরজা খোলে।
"তুমি ফ্ল্যাট কিনেছ?" স্নিগ্ধা বলে।
"না, ভাড়া নিয়েছি।"
স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে ফ্ল্যাটটা ভালভাবে দেখে। ছোট একটি ফ্ল্যাট, বড়জোর নয়শ স্কয়ার ফিট হবে। দুটো বেডরুম, একটি কিচেন ও একটি ওয়াসরুম, সামনে বারান্দা আছে। স্নিগ্ধ বারান্দাটায় যায়। বারান্দাটা পুর্বমুখি বলে রোদ নেই এখন, ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে সেখানে।
"বাহ! ফ্ল্যাটটাতো বেশ সুন্দর।" স্নিগ্ধা বলে
"ভাড়া কতো এই ফ্ল্যাটের?" আবার জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"পনের হাজার টাকা।"
"বাহ। সস্তায় পেয়েছ। কিন্তু আমাকে আগে বলনি কেন?"
"এই ফ্লাটে উঠেছিই তো এক সপ্তাহ হল। আর ভেবেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিব। চল ভেতরে যাই।" সজল বলে।
"টিভি নেই?" সোফায় বসতে বসতে বলে স্নিগ্ধা।
"না। তবে ব্রডব্র্যান্ড লাইন আছে।" বলে ল্যাপটপটা এনে দেয় স্নিগ্ধাকে।
"কি খাবে জান, চা নাকি কফি?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
"তুমি বানাতে পারবে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"অবশ্যই, আগে বল কি খাবে?"
"ওকে, কফি। চল দুজন মিলেই বানাই।" স্নিগ্ধা বলে।
"তুমি বসতো, ইউটিউব ভিডিও দেখো, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।" বলে সজল কিচেনে যায়। কিচেনে গিয়ে কফি বানাতে বানাতে ভাবতে থাকে কিভাবে কি করবে। বহুদিন নারী দেহের স্বাদ পায়নি সে, আজ যে করেই হোক সুযোগটা মিস করা যাবে না।
কিছুক্ষন পর দুই কাপ কফি এনে স্নিগ্ধার হাতে এক কাপ ও নিজে এক কাপ কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে একটি ইংরেজি মুভি ছেড়ে দেয় সজল। এটি একটি হরর মুভি যার যায়গায় যায়গায় সেক্স ও ন্যুড সিন।
"মুভিটা দেখ, দারুন মুভি। আবার ভয় পেওনা যেন।"
"যাও, হরর মুভি আমার ভাল লাগেনা।"
"আসলে তুমি ভয় পাও।" চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় স্নিগ্ধাকে।
"একেবারেই না, বরং হরর মুভি দেখলে আমার হাসি পায়।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে দেখোই না," বলে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে সজল। মুভি দেখতে থাকে দুজন। কিছুক্ষনের মাঝেই একটি সেক্স সিন চলে আসে।
"এ্যাই এসব কি?" স্নিগ্ধা বলে।
"কি আবার?"
"ভাজা মাছটাও উল্টিয়ে খেতে জানোনা মনে হচ্ছে। আমি দেখব না তোমার মুভি।"
"আরে এটা একটা ইংরেজি মুভি, এসব তো মুভিরই অংশ। বাচ্চা কাচ্চার মত করছো কেন, তুমি কি এডাল্ট হওনি?"
"আমি তোমার মতলব খুব ভাল করে বুঝতে পারছি।"
"তুমি সত্যিই কি বোঝ জান? পাঁচটা বছর হয়ে গেল আমাদের রিলেশনের, এখন পর্যন্ত একটু ছুঁতেও দাওনি" বলে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে নেয়।
"ছাড়ো বলছি, ছাড় মমমম" কথা শেষ না করতে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে সজল। ঠোঁটে চুমু দিতে দিতে বিছানায় চেপে ধরে স্নিগ্ধাকে। ঠোঁট ছেড়ে গাল, গলায় ঠোঁট ঘষতে ঘষতে বুকে নেমে আসে। কামিজের উপর দিয়েই কামড়ে ধরে অন্যটিকে টিপে ধরে।
স্নিগ্ধা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সজলকে।
"আমি এই জন্যেই তোমার সাথে কোথাও যেতে চাইনা। তোমার মনে শুধু এই আছে। তুমি ভালোবাসা কি তা জানোনা। তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।" হাঁপাতে হাঁপাতে বলে স্নিগ্ধা, ওর চোখে পানি চলে এসেছে।
"প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমিও তো মানুষ, আমারো তো কিছু চাহিদা আছে। সে কথা বললে বল বিয়ের পর। বিয়ের কথা বললে বল পড়াশোনা শেষ করার পর। আমি তো আর পারছি না জান।" অনুনয়ের সুরে বলে সজল।
"যদি আমাকে সত্যিই ভালবাস তো ধৈর্য রাখ। নয়তো আমাকে ভুলে যাও।" সজলের চোখে চোখ রেখে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা। তারপর কাপড় ঠিক করে ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে নেয়।
"আমি তোমাকে বাসায় রেখে আসি", সজল বলে।
"দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারব" বলে স্নিগ্ধা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়।
"আমার পিছু নিচ্ছ কেন?" সজলকে পিছে পিছে আসতে দেখে বলে স্নিগ্ধা।
"না মানে, তোমাকে রেখে আসি।" ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে সজল।
"বললাম না দরকার নেই।" প্রায় চেঁচিয়ে বলে স্নিগ্ধা। তারপর লিফ্ট দিয়ে নিচে নেমে যায়।
রাত আটটা বাজে, কবির ছাদে বেঞ্চের উপর বসে আছে। মেসটি ফাঁকা, সোহরাব ভাই এখনো ফেরেনি, অন্যরা নিচে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে।
আকাশে অজস্র নক্ষত্র মিটিমিটি জ্বলছে, সাথে আছে একফালি চাঁদ। কবির সেদিকেই উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তার মনটি আজ খুব খারাপ। কিন্তু কেন মন খারাপ তার? নিজেকেই সে প্রশ্ন করে। আজ ধানমন্ডিতে টিউশনি করে ফেরার সময় স্নিগ্ধাকে দেখেছিল সে সজলের বাইকে। এই কারণটি ছাড়া আর কোন কারণ খুঁজে পায়না কবির। কবির নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে স্নিগ্ধা ওর শুধুই বন্ধু, ওর বয়ফ্রেন্ডের বাইকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মাঝে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু মনকে শান্ত করতে পারছে না কিছুতেই, বুকের ভেতরে কিছু একটা বিঁধে আছে যেন। কিন্তু কেন? তবে কি সে মনে মনে প্রেমের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে স্নিগ্ধাকে। জীবনে আর কিই বা আছে? কলেজ, কলেজ, ভার্সিটি কোথাও কবিরের কোন বন্ধু নেই। এক স্নিগ্ধাই আছে ওর জীবনে, যদি তাকে আরো আপন করে চায় তবে কি সেটা খুব বেশী চাওয়া হবে? কিন্তু আরো বেশী চাইতে গিয়ে যদি সে সবই হারিয়ে ফেলে? সেই আশংকাটি মনে ভয়েরও সৃষ্টি করে কবিরের। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে হাতে নেয় কবির, স্নিগ্ধাকে কল দিবে কিনা ভাবে সে। ঠিক সেই সময় রিং বেজে ওঠে। শিরিন আন্টি কল দিয়েছে।
"হ্যালো কবির, কেমন আছ বাবা?" শিরিন বলে।
"ভাল আছি, আপনারা কেমন আছেন?"
"ভাল। তোমার আংকেলকে বলেছি ছয় হাজার টাকা পাঠাতে। এ দিয়ে তোমার চলবে তো?"
"টাকা পাঠাতে গেলেন কেন আন্টি? টিউশনি দিয়ে যা রোজগার করি তা দিয়েই আমার চলে যায়।"
"ওসব টিউশনি বাদ দিয়ে তুমি পড়াশোনার দিকে আরো মনোযোগ দাও তো। তোমার সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম কবে?"
"সামনের মাসে, ১৬ এপ্রিল থেকে।"
"তাহলে তো আর মাত্র দেড় মাস। ভাল করে পড়। এবার আরো ভাল করতে হবে।"
"জি আন্টি।"
"আর স্নিগ্ধার দিকেও খেয়াল রেখ।"
"অবশ্যই।"
"ভাল থেকো, রাখি বাবা।" বলে ফোন কেটে দেয় শিরিন।
কবির মোবাইলটা পকেটে ঢোকাতেই আবারও রিং বেজে ওঠে। এবার স্নিগ্ধা কল করেছে। কলটা রিসিভ করতে করতে স্নিগ্ধাদের ব্যালকনির দিকে তাকায়, সেখানে স্নিগ্ধাকে দেখতে পায়।
"হ্যালো কবির, কোথায় তুই।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি ছাদে, তোকে দেখতে পাচ্ছি।" বলে হাত নাড়ে কবির।
"আমার এপার্টমেন্টের নিচে চলে আয়।" স্নিগ্ধা বলে।
"কেন?"
"ফুচকা খাব, বহুদিন ফুচকা খাইনি।"
"ওকে আমি আসছি।" বলে কবির ফোন কেটে দেয়।
তারপর স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টের সামনে এসে স্নিগ্ধাকে একটা মিসকল দেয়। এক মিনিট পর স্নিগ্ধা নিচে নেমে আসে। তারপর রিক্সায় করে মিরপুর ১ এ চলে আসে। সেখানে একটি ফুচকার দোকানে বসে দুটি ফুচকার অর্ডার দেয়।
"তোর দিন কাটল কেমন? দুপুরবেলা দেখলাম ঘুরে বেড়াচ্ছিস বয়ফ্রেন্ডের সাথে।" কবির বলে।
স্নিগ্ধা কোন উত্তর দেয়না।
"কিরে চুপ মেরে গেলি কেন?" কবির বলে। আরেকটু থেমে আবার বলে "আবার ঝগড়া করেছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে?"
"ওসব কথা বাদ দে তো, আর ভাল লাগেনা। তোর কথা বল, তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?" স্নিগ্ধা বলে।
"চলছে কোনরকম।"
"প্রেম টেম করছিস নাকি?" মুখে হাসি টেনে এনে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি প্রেম করব আর তুই জানতে পারবি না তা কি হতে পারে?" কবির বলে।
"বলা তো যায়না হয়তো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?" স্নিগ্ধা বলে।
"তা তো খাচ্ছিই, এমনই জল খাচ্ছি যে আর নিশ্বাস নিতেই পারছি না।" কবির বলে।
"মানে?"
"কিছু না, কিছু না। নে ফুচকা খা" ফুচকার প্লেট স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে কবির।
"তুই কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।" একটি ফুচকা মুখে তুলে নিয়ে স্নিগ্ধা বলে।
"এসব প্রেম পিরিতি এমনকি বিয়ে সাদি করারও কোন ইচ্ছা এখন নেই। তবে হ্যাঁ কোন একটি মেয়েকে একদিন নিশ্চয়ই প্রোপোজ করব, সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব। হ্যাঁ বললে সংসারী হব, না বললে ভবঘুরে।" কবির বলে।
"কে সেই ভাগ্যবতী?" মিষ্টি করে হেসে স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"সেটা ঠিক করলে তোকে নিশ্চয়ই জানাবো।"
ততোক্ষনে দুজনেরই ফুচকার প্লেট খালি হয়ে গেছে।
"চল যাই, দশটা বেজে গেছে।" বলে কবির উঠে দাড়ায়।
সজল ফার্মগেট, মহাখালি হয়ে বনানীর একটি এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড় করায় বাইকটা।
"কোথায় নিয়ে এলে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"চলই না।" বলে হাত ধরে এপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে যায় সজল।
লিফ্ট করে পাঁচ তলায় নিয়ে যায়, মানি ব্যাগ থেকে চাবি বের করে ডান পাশের ফ্লাটের দরজা খোলে।
"তুমি ফ্ল্যাট কিনেছ?" স্নিগ্ধা বলে।
"না, ভাড়া নিয়েছি।"
স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে ফ্ল্যাটটা ভালভাবে দেখে। ছোট একটি ফ্ল্যাট, বড়জোর নয়শ স্কয়ার ফিট হবে। দুটো বেডরুম, একটি কিচেন ও একটি ওয়াসরুম, সামনে বারান্দা আছে। স্নিগ্ধ বারান্দাটায় যায়। বারান্দাটা পুর্বমুখি বলে রোদ নেই এখন, ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে সেখানে।
"বাহ! ফ্ল্যাটটাতো বেশ সুন্দর।" স্নিগ্ধা বলে
"ভাড়া কতো এই ফ্ল্যাটের?" আবার জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"পনের হাজার টাকা।"
"বাহ। সস্তায় পেয়েছ। কিন্তু আমাকে আগে বলনি কেন?"
"এই ফ্লাটে উঠেছিই তো এক সপ্তাহ হল। আর ভেবেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিব। চল ভেতরে যাই।" সজল বলে।
"টিভি নেই?" সোফায় বসতে বসতে বলে স্নিগ্ধা।
"না। তবে ব্রডব্র্যান্ড লাইন আছে।" বলে ল্যাপটপটা এনে দেয় স্নিগ্ধাকে।
"কি খাবে জান, চা নাকি কফি?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
"তুমি বানাতে পারবে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"অবশ্যই, আগে বল কি খাবে?"
"ওকে, কফি। চল দুজন মিলেই বানাই।" স্নিগ্ধা বলে।
"তুমি বসতো, ইউটিউব ভিডিও দেখো, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।" বলে সজল কিচেনে যায়। কিচেনে গিয়ে কফি বানাতে বানাতে ভাবতে থাকে কিভাবে কি করবে। বহুদিন নারী দেহের স্বাদ পায়নি সে, আজ যে করেই হোক সুযোগটা মিস করা যাবে না।
কিছুক্ষন পর দুই কাপ কফি এনে স্নিগ্ধার হাতে এক কাপ ও নিজে এক কাপ কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে একটি ইংরেজি মুভি ছেড়ে দেয় সজল। এটি একটি হরর মুভি যার যায়গায় যায়গায় সেক্স ও ন্যুড সিন।
"মুভিটা দেখ, দারুন মুভি। আবার ভয় পেওনা যেন।"
"যাও, হরর মুভি আমার ভাল লাগেনা।"
"আসলে তুমি ভয় পাও।" চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় স্নিগ্ধাকে।
"একেবারেই না, বরং হরর মুভি দেখলে আমার হাসি পায়।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে দেখোই না," বলে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে সজল। মুভি দেখতে থাকে দুজন। কিছুক্ষনের মাঝেই একটি সেক্স সিন চলে আসে।
"এ্যাই এসব কি?" স্নিগ্ধা বলে।
"কি আবার?"
"ভাজা মাছটাও উল্টিয়ে খেতে জানোনা মনে হচ্ছে। আমি দেখব না তোমার মুভি।"
"আরে এটা একটা ইংরেজি মুভি, এসব তো মুভিরই অংশ। বাচ্চা কাচ্চার মত করছো কেন, তুমি কি এডাল্ট হওনি?"
"আমি তোমার মতলব খুব ভাল করে বুঝতে পারছি।"
"তুমি সত্যিই কি বোঝ জান? পাঁচটা বছর হয়ে গেল আমাদের রিলেশনের, এখন পর্যন্ত একটু ছুঁতেও দাওনি" বলে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে নেয়।
"ছাড়ো বলছি, ছাড় মমমম" কথা শেষ না করতে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে সজল। ঠোঁটে চুমু দিতে দিতে বিছানায় চেপে ধরে স্নিগ্ধাকে। ঠোঁট ছেড়ে গাল, গলায় ঠোঁট ঘষতে ঘষতে বুকে নেমে আসে। কামিজের উপর দিয়েই কামড়ে ধরে অন্যটিকে টিপে ধরে।
স্নিগ্ধা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সজলকে।
"আমি এই জন্যেই তোমার সাথে কোথাও যেতে চাইনা। তোমার মনে শুধু এই আছে। তুমি ভালোবাসা কি তা জানোনা। তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।" হাঁপাতে হাঁপাতে বলে স্নিগ্ধা, ওর চোখে পানি চলে এসেছে।
"প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমিও তো মানুষ, আমারো তো কিছু চাহিদা আছে। সে কথা বললে বল বিয়ের পর। বিয়ের কথা বললে বল পড়াশোনা শেষ করার পর। আমি তো আর পারছি না জান।" অনুনয়ের সুরে বলে সজল।
"যদি আমাকে সত্যিই ভালবাস তো ধৈর্য রাখ। নয়তো আমাকে ভুলে যাও।" সজলের চোখে চোখ রেখে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা। তারপর কাপড় ঠিক করে ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে নেয়।
"আমি তোমাকে বাসায় রেখে আসি", সজল বলে।
"দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারব" বলে স্নিগ্ধা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়।
"আমার পিছু নিচ্ছ কেন?" সজলকে পিছে পিছে আসতে দেখে বলে স্নিগ্ধা।
"না মানে, তোমাকে রেখে আসি।" ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে সজল।
"বললাম না দরকার নেই।" প্রায় চেঁচিয়ে বলে স্নিগ্ধা। তারপর লিফ্ট দিয়ে নিচে নেমে যায়।
রাত আটটা বাজে, কবির ছাদে বেঞ্চের উপর বসে আছে। মেসটি ফাঁকা, সোহরাব ভাই এখনো ফেরেনি, অন্যরা নিচে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে।
আকাশে অজস্র নক্ষত্র মিটিমিটি জ্বলছে, সাথে আছে একফালি চাঁদ। কবির সেদিকেই উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তার মনটি আজ খুব খারাপ। কিন্তু কেন মন খারাপ তার? নিজেকেই সে প্রশ্ন করে। আজ ধানমন্ডিতে টিউশনি করে ফেরার সময় স্নিগ্ধাকে দেখেছিল সে সজলের বাইকে। এই কারণটি ছাড়া আর কোন কারণ খুঁজে পায়না কবির। কবির নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে স্নিগ্ধা ওর শুধুই বন্ধু, ওর বয়ফ্রেন্ডের বাইকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মাঝে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু মনকে শান্ত করতে পারছে না কিছুতেই, বুকের ভেতরে কিছু একটা বিঁধে আছে যেন। কিন্তু কেন? তবে কি সে মনে মনে প্রেমের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে স্নিগ্ধাকে। জীবনে আর কিই বা আছে? কলেজ, কলেজ, ভার্সিটি কোথাও কবিরের কোন বন্ধু নেই। এক স্নিগ্ধাই আছে ওর জীবনে, যদি তাকে আরো আপন করে চায় তবে কি সেটা খুব বেশী চাওয়া হবে? কিন্তু আরো বেশী চাইতে গিয়ে যদি সে সবই হারিয়ে ফেলে? সেই আশংকাটি মনে ভয়েরও সৃষ্টি করে কবিরের। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে হাতে নেয় কবির, স্নিগ্ধাকে কল দিবে কিনা ভাবে সে। ঠিক সেই সময় রিং বেজে ওঠে। শিরিন আন্টি কল দিয়েছে।
"হ্যালো কবির, কেমন আছ বাবা?" শিরিন বলে।
"ভাল আছি, আপনারা কেমন আছেন?"
"ভাল। তোমার আংকেলকে বলেছি ছয় হাজার টাকা পাঠাতে। এ দিয়ে তোমার চলবে তো?"
"টাকা পাঠাতে গেলেন কেন আন্টি? টিউশনি দিয়ে যা রোজগার করি তা দিয়েই আমার চলে যায়।"
"ওসব টিউশনি বাদ দিয়ে তুমি পড়াশোনার দিকে আরো মনোযোগ দাও তো। তোমার সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম কবে?"
"সামনের মাসে, ১৬ এপ্রিল থেকে।"
"তাহলে তো আর মাত্র দেড় মাস। ভাল করে পড়। এবার আরো ভাল করতে হবে।"
"জি আন্টি।"
"আর স্নিগ্ধার দিকেও খেয়াল রেখ।"
"অবশ্যই।"
"ভাল থেকো, রাখি বাবা।" বলে ফোন কেটে দেয় শিরিন।
কবির মোবাইলটা পকেটে ঢোকাতেই আবারও রিং বেজে ওঠে। এবার স্নিগ্ধা কল করেছে। কলটা রিসিভ করতে করতে স্নিগ্ধাদের ব্যালকনির দিকে তাকায়, সেখানে স্নিগ্ধাকে দেখতে পায়।
"হ্যালো কবির, কোথায় তুই।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি ছাদে, তোকে দেখতে পাচ্ছি।" বলে হাত নাড়ে কবির।
"আমার এপার্টমেন্টের নিচে চলে আয়।" স্নিগ্ধা বলে।
"কেন?"
"ফুচকা খাব, বহুদিন ফুচকা খাইনি।"
"ওকে আমি আসছি।" বলে কবির ফোন কেটে দেয়।
তারপর স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টের সামনে এসে স্নিগ্ধাকে একটা মিসকল দেয়। এক মিনিট পর স্নিগ্ধা নিচে নেমে আসে। তারপর রিক্সায় করে মিরপুর ১ এ চলে আসে। সেখানে একটি ফুচকার দোকানে বসে দুটি ফুচকার অর্ডার দেয়।
"তোর দিন কাটল কেমন? দুপুরবেলা দেখলাম ঘুরে বেড়াচ্ছিস বয়ফ্রেন্ডের সাথে।" কবির বলে।
স্নিগ্ধা কোন উত্তর দেয়না।
"কিরে চুপ মেরে গেলি কেন?" কবির বলে। আরেকটু থেমে আবার বলে "আবার ঝগড়া করেছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে?"
"ওসব কথা বাদ দে তো, আর ভাল লাগেনা। তোর কথা বল, তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?" স্নিগ্ধা বলে।
"চলছে কোনরকম।"
"প্রেম টেম করছিস নাকি?" মুখে হাসি টেনে এনে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি প্রেম করব আর তুই জানতে পারবি না তা কি হতে পারে?" কবির বলে।
"বলা তো যায়না হয়তো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?" স্নিগ্ধা বলে।
"তা তো খাচ্ছিই, এমনই জল খাচ্ছি যে আর নিশ্বাস নিতেই পারছি না।" কবির বলে।
"মানে?"
"কিছু না, কিছু না। নে ফুচকা খা" ফুচকার প্লেট স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে কবির।
"তুই কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।" একটি ফুচকা মুখে তুলে নিয়ে স্নিগ্ধা বলে।
"এসব প্রেম পিরিতি এমনকি বিয়ে সাদি করারও কোন ইচ্ছা এখন নেই। তবে হ্যাঁ কোন একটি মেয়েকে একদিন নিশ্চয়ই প্রোপোজ করব, সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব। হ্যাঁ বললে সংসারী হব, না বললে ভবঘুরে।" কবির বলে।
"কে সেই ভাগ্যবতী?" মিষ্টি করে হেসে স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"সেটা ঠিক করলে তোকে নিশ্চয়ই জানাবো।"
ততোক্ষনে দুজনেরই ফুচকার প্লেট খালি হয়ে গেছে।
"চল যাই, দশটা বেজে গেছে।" বলে কবির উঠে দাড়ায়।