16-06-2021, 07:47 PM
দ্বিতীয় পর্ব : প্রেমের নীলপদ্ম
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় খুব সকালে। খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছে। কি স্বপ্ন তা ঠিক মনে নেই কিন্তু খুব খারাপ কিছু দেখেছে সেটা সে নিশ্চিত। এমনটা মাঝে মাঝেই হয়, স্বপ্ন দেখে মনে রাখতে পারেনা। কখনো কখনো নাকি ঘুমের ঘোরে সে আবোল তাবোল বকে। পাশ ফিরে দেখে সোহরাব এখনো ঘুমাচ্ছে। এর মানে এখনো সাতটা বাজেনি। সোহরাব একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে জব করেন, প্রতিদিন ভোরে অফিসে ছুটতে হয় তাকে। সোহরাব ভাই ছাড়াও এই ছোট রুমটায় তপু থাকে। তপু একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। কবিরের বিপরীত পাশে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে। গায়ের চাদরটা ভালভাবে মুড়ে নেয় কবির। এত সকাল সকাল ওঠার কোন মানে হয়না। যখন প্রায় ঘুম চলে এসেছে ঠিক তখনই এলার্ম বেজে ওঠে, সোহরাব ভাইয়ের মোবাইলে এলার্ম দেয়া থাকে সকাল সাতটার। কবির গায়ের চাদরটা সরিয়ে ফেলে উঠে পড়ে। ব্রাশে টুথপেস্ট ভরিয়ে নিয়ে দাঁতে ঘষতে ঘষতে বেরিয়ে যায় কবির। একটি ছ' তলা এপার্টমেন্টের ছাদে একসারিতে তিনটা ঘর। সেখানেই নয়জন থাকে তারা। প্রায় একবছর হয়ে গেল এই মেসে। বেশ সস্তায় পেয়েছে, প্রত্যেকটা রুমের ভাড়া চার হাজার টাকা। ঢাকা মিরপুরের মতো যায়গায় নিশ্চয়ই তা খুবই সস্তা। কবির ছাদের সামনের দিকে এসে দাড়ায়, বেশ নরম মিষ্টি রোদ পড়েছে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে নিচের দিকে তাকায় কবির। রাস্তাঘাট এখনো বেশ ফাঁকা, দু' একজন মধ্যবয়স্ক লোক জগিং করতে করতে যাচ্ছে। স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টটাও দেখা যায় ছাদ থেকেই, চারটে এপার্টমেন্টের পর চকচকে নতুন এপার্টমেন্টটার চারতলায় ফিমেল মেস। কবির ঘরে ছাদের ট্যাপে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ফিরে আসে। ততক্ষনে সোহরাব অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেছেন।
"কি খবর কবির। এতো সকাল সকাল উঠলে যে, ক্লাস আছে নাকি?"
"আরে না ভাই, আপনার এলার্মেই তো ঘুম ভেঙে গেল।" হাই তুলতে তুলতে বলে কবির।
"কি করব বল? সারাদিন ছোটাছুটি করে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা এগারোটা বাজে, আবার ভোরে অফিসে ছুটতে হয়। এলার্ম না দিলে তো উঠতে পারিনা।" বলে অফিসের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
"দাড়ান সোহরাব ভাই, আমিও আসছি" বলে শার্ট ও প্যান্ট পরে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। মেসের কাছাকাছি একটা সস্তা রেস্টুরেন্টে দুজন নাস্তা সেরে নেয়। তারপর সোহরাব তার অফিসের দিকে রওনা দেয়। কবির স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে স্নিগ্ধাকে কল করে। দুই বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো, কবির, কি ব্যাপার, এতো সকালে?" ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তোর না ক্লাস আছে?"
"সে তো সাড়ে দশটায়।"
"ঘড়ি দেখ, আটটা বাজে। আজকাল যা জ্যাম হয়, তাড়াতাড়ি না বের হলে ক্লাস মিস করবি। তোদের এপার্টমেন্টের সামনে চায়ের দোকানটায় চলে আয়, আমি অপেক্ষা করছি।"
"ঠিক আছে আমি আসছি" বলে কেটে দেয় স্নিগ্ধা।
মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে পত্রিকা পড়তে থাকে। স্নিগ্ধা আসে প্রায় বিশ মিনিট পর।
"চাচা, দুইটা রং চা, আদা আর লং দিয়েন" স্নিগ্ধাকে আসতে দেখে কবির চায়ের অর্ডার দেয়।
"কিরে, তোরও ক্লাস আছে নাকি?" স্নিগ্ধা পাশে বসতে বসতে বলে।
"হুম, পরিসংখ্যান আর ব্যাস্টিক অর্থনীতি।" কবির জবাব দেয়।
"আজ বিকেলে কি তুই ফ্রি আছিস?" চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"কেন? কোথাও যাবি।"
"আগে বল তুই ফ্রি আছিস কিনা।"
"নারে ফ্রি নেই। চারটা থেকে টিউশনি আছে। ফিরতে ফিরতে ছয়টা বেজে যাবে।"
"তোর টিউশনিটা কোথায়?"
"আজিমপুরে।" কবির উত্তর দেয়।
"ও আচ্ছা।" নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে স্নিগ্ধা।
"কি কাজ বলবি তো। জরুরি কিছু হলে নাহয় না করে দেই?"
"তেমন কিছু না। চল যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে।" বলে উঠে দাড়ায় স্নিগ্ধা। কবিরও রওনা দেয় স্নিগ্ধার সাথে।
দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচটি বছর কেটে গেছে। কলেজ, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কবির ও স্নিগ্ধা দুজনই জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। যদিও স্নিগ্ধা ঢাকা ভার্সিটিতেও চান্স পেয়েছিল, কিন্তু তার প্রিয় সাবজেক্ট ফিজিক্স পায়নি, কেমিস্ট্রি পেয়েছিল। প্রিয় সাবজেক্টের জন্য নাকি প্রিয় বন্ধুর টানে ঢাকা ভার্সিটি ছেড়ে জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে তা বলা অবশ্য মুশকিল। স্নিগ্ধা ও কবির অবশ্য একই ব্যাচে নয়। কবির ম্যানেজমেন্টে পড়ে আর স্নিগ্ধা ফিজিক্সে।
কবির ক্লাস থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধাকে কল দেয়। কিন্তু মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ।
"ধ্যাত" বিরক্তির শব্দ করে মোবাইলটা পকেটে রেখে দেয়। ভার্সিটি থেকে বেরনোর পথে স্নিগ্ধাকে দেখতে পায় কবির, মাঠে একটি গাছের ছায়ায় বসে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। স্নিগ্ধা কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে বান্ধবীদের সাথে। হাসলে ওকে আরো সুন্দর লাগে, ওর মুখ থেকে যেন রুপোলী আভা ছড়াতে থাকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে কবির, তারপর সেদিকে এগিয়ে যায়।
কবিরকে আসতে দেখে তৃষা ও স্নেহা হাত নেড়ে হাই বলে কবিরকে। কবিরও মৃদু হেসে হাত নেড়ে জবাব দেয়। ওরা স্নিগ্ধার ক্লাসমেট।
"কবির, তোর ক্লাস শেষ? আয় বোস" স্নিগ্ধা বলে।
"শেষ, তোদের শেষ হয়নি?" সবুজ ঘাসে বসতে বসতে বলে কবির।
"না রে, আরেকটা ক্লাস আছে আড়াইটা থেকে।"
"তাহলে আমি যাই। দুইটা থেকে টিউশনি আছে। তুই একলা যেতে পারবি তো?"
"পারবনা কেন? তুই যা তাহলে।"
"সাবধানে আসিস, আমি যাই।" বলে কবির উঠে চলে যায়।
কবির ভার্সিটি থেকে প্রথমে তার মেসে যায়। গোসল ও লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে যায় মেস থেকে। পরপর দুইটা টিউশনি আজ তার। প্রথমে ধানমন্ডিতে নাইনের এক ছাত্রকে একাউন্টিং পড়াতে হয়। এই টিউশনিটার জন্য কবিরকে খাটতে হয় প্রচুর, কারন কবিরের এসএসসিতে কমার্স ছিলনা। এর জন্য একাউন্টিং বই কিনে সে নিজে আগে চর্চা করে। প্রথম প্রথম কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আয়ত্তে চলে এসেছে। এরপর চারটা থেকে টিউশনি আজিমপুরে। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে চারটা এবং বের হতে হতে ছয়টা বেজে যায়।
কবির যখন ছাত্রের বাড়ি থেকে কেবলই বের হয়েছে তখনই স্নিগ্ধার ফোন আসে।
"হ্যালো কবির, তুই কই?"
"এই তো টিউশনি করে বের হলাম।"
"তুই কি আজিমপুরে?"
"হ্যাঁ, কেন?"
"আজিমপুর মোড়ে চলে আয়।"
"তুই এসেছিস?"
"হ্যাঁ, চলে আয়।"
"আসছি।"
কবির একটা রিক্সা নিয়ে আজিমপুর মোড়ে চলে আসে। রিক্সাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধাকে কল দেয় "আমি আজিমপুর মোড়ে, তুই কই?"
"নিউ মার্কেটের দিকে আয়।"
কবির রাস্তা পার হয়ে দেখতে পায় স্নিগ্ধাকে।
"কি ব্যাপার, তুই এখানে।" কবির বলে।
"চল, শপিং করব।"
"শপিং করবি তো কর। তোর কোন বান্ধবীকে সাথে আনলেই পারিস। আমার শপিং টপিং একেবারে ভাল লাগেনা।"
"তুই খুব বেশি কথা বলিস। চুপচাপ চল না" বলে স্নিগ্ধা হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় কবিরকে।
প্রথমে ওরা নিউ মার্কেটে যায়। জেন্টস কর্নারে যেতে দেখে কবির বলে "ও তাহলে বয়ফ্রেন্ডের জন্য গিফট কিনবি, এই জন্যেই আমাকে নিয়ে এলি?" কয়েক মাস আগে কবিরকে এভাবে সাথে নিয়ে সজলের জন্য কাপড় কিনেছিল স্নিগ্ধা।
"তুই খুব বেশি বুঝিস। এখন চুপ থাক।" বলে একটি কালো রংয়ের শার্ট কবিরের হাতে তুলে দেয়, "এটা পরতো দেখি।"
কবির শার্টটা হাতে নিয়ে বলে "পরতে হবে না, এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে তোর বয়ফ্রেন্ডের একেবারে ফিট হবে।"
"তুই এতই পেঁচাল পাড়িস! পরতে বলেছি পরে দেখা না।"
কবির আর কথা না বাড়িয়ে নিজের টি শার্টটা খুলে গেঞ্জির উপর দিয়ে শার্টটা পরে নেয়।
"নাহ মানাচ্ছেনা।"
"আমিও কালো, শার্টটাও কালো, মানাবে কিভাবে? তোর বয়ফ্রেন্ড ফর্সা আছে। শার্টটা ভাল মানাবে।"
"কে বলেছে তুই কালো? বরং উজ্জল শ্যামা। ছেলেরা শ্যামাই ভাল লাগে।" বলতে বলতে হাত ধরে অন্য দোকানে নিয়ে যায় কবিরকে।
ঘন্টা খানেক ধরে নিউমার্কেটে ঘোরাঘুরি করে তারা। কিন্তু স্নিগ্ধার কিছুই পছন্দ হয়না। তারপর তারা এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমগুলোতে যায়, সেখান থেকে দুটি শার্ট, ও দুটি জিন্স কেনে। স্নিগ্ধা নিজের জন্য ইমিটিশন এয়ার রিং আর ওয়াচ কেনে। শপিং করতে করতে রাত দশটা বেজে যায়, ওরা এলিফ্যান্ট রোডেই একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে নেয়। তারপর বাসে করে রওনা দেয়।
মিরপুর ৬ এ বাস স্টপেজে নেমে যায় কবির ও স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার মেস এখান থেকে আধ কিলোমিটার দুরে। ওরা সেদিকেই হাঁটতে থাকে।
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় খুব সকালে। খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছে। কি স্বপ্ন তা ঠিক মনে নেই কিন্তু খুব খারাপ কিছু দেখেছে সেটা সে নিশ্চিত। এমনটা মাঝে মাঝেই হয়, স্বপ্ন দেখে মনে রাখতে পারেনা। কখনো কখনো নাকি ঘুমের ঘোরে সে আবোল তাবোল বকে। পাশ ফিরে দেখে সোহরাব এখনো ঘুমাচ্ছে। এর মানে এখনো সাতটা বাজেনি। সোহরাব একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে জব করেন, প্রতিদিন ভোরে অফিসে ছুটতে হয় তাকে। সোহরাব ভাই ছাড়াও এই ছোট রুমটায় তপু থাকে। তপু একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। কবিরের বিপরীত পাশে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে। গায়ের চাদরটা ভালভাবে মুড়ে নেয় কবির। এত সকাল সকাল ওঠার কোন মানে হয়না। যখন প্রায় ঘুম চলে এসেছে ঠিক তখনই এলার্ম বেজে ওঠে, সোহরাব ভাইয়ের মোবাইলে এলার্ম দেয়া থাকে সকাল সাতটার। কবির গায়ের চাদরটা সরিয়ে ফেলে উঠে পড়ে। ব্রাশে টুথপেস্ট ভরিয়ে নিয়ে দাঁতে ঘষতে ঘষতে বেরিয়ে যায় কবির। একটি ছ' তলা এপার্টমেন্টের ছাদে একসারিতে তিনটা ঘর। সেখানেই নয়জন থাকে তারা। প্রায় একবছর হয়ে গেল এই মেসে। বেশ সস্তায় পেয়েছে, প্রত্যেকটা রুমের ভাড়া চার হাজার টাকা। ঢাকা মিরপুরের মতো যায়গায় নিশ্চয়ই তা খুবই সস্তা। কবির ছাদের সামনের দিকে এসে দাড়ায়, বেশ নরম মিষ্টি রোদ পড়েছে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে নিচের দিকে তাকায় কবির। রাস্তাঘাট এখনো বেশ ফাঁকা, দু' একজন মধ্যবয়স্ক লোক জগিং করতে করতে যাচ্ছে। স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টটাও দেখা যায় ছাদ থেকেই, চারটে এপার্টমেন্টের পর চকচকে নতুন এপার্টমেন্টটার চারতলায় ফিমেল মেস। কবির ঘরে ছাদের ট্যাপে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ফিরে আসে। ততক্ষনে সোহরাব অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেছেন।
"কি খবর কবির। এতো সকাল সকাল উঠলে যে, ক্লাস আছে নাকি?"
"আরে না ভাই, আপনার এলার্মেই তো ঘুম ভেঙে গেল।" হাই তুলতে তুলতে বলে কবির।
"কি করব বল? সারাদিন ছোটাছুটি করে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা এগারোটা বাজে, আবার ভোরে অফিসে ছুটতে হয়। এলার্ম না দিলে তো উঠতে পারিনা।" বলে অফিসের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
"দাড়ান সোহরাব ভাই, আমিও আসছি" বলে শার্ট ও প্যান্ট পরে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। মেসের কাছাকাছি একটা সস্তা রেস্টুরেন্টে দুজন নাস্তা সেরে নেয়। তারপর সোহরাব তার অফিসের দিকে রওনা দেয়। কবির স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে স্নিগ্ধাকে কল করে। দুই বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো, কবির, কি ব্যাপার, এতো সকালে?" ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তোর না ক্লাস আছে?"
"সে তো সাড়ে দশটায়।"
"ঘড়ি দেখ, আটটা বাজে। আজকাল যা জ্যাম হয়, তাড়াতাড়ি না বের হলে ক্লাস মিস করবি। তোদের এপার্টমেন্টের সামনে চায়ের দোকানটায় চলে আয়, আমি অপেক্ষা করছি।"
"ঠিক আছে আমি আসছি" বলে কেটে দেয় স্নিগ্ধা।
মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে পত্রিকা পড়তে থাকে। স্নিগ্ধা আসে প্রায় বিশ মিনিট পর।
"চাচা, দুইটা রং চা, আদা আর লং দিয়েন" স্নিগ্ধাকে আসতে দেখে কবির চায়ের অর্ডার দেয়।
"কিরে, তোরও ক্লাস আছে নাকি?" স্নিগ্ধা পাশে বসতে বসতে বলে।
"হুম, পরিসংখ্যান আর ব্যাস্টিক অর্থনীতি।" কবির জবাব দেয়।
"আজ বিকেলে কি তুই ফ্রি আছিস?" চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"কেন? কোথাও যাবি।"
"আগে বল তুই ফ্রি আছিস কিনা।"
"নারে ফ্রি নেই। চারটা থেকে টিউশনি আছে। ফিরতে ফিরতে ছয়টা বেজে যাবে।"
"তোর টিউশনিটা কোথায়?"
"আজিমপুরে।" কবির উত্তর দেয়।
"ও আচ্ছা।" নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে স্নিগ্ধা।
"কি কাজ বলবি তো। জরুরি কিছু হলে নাহয় না করে দেই?"
"তেমন কিছু না। চল যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে।" বলে উঠে দাড়ায় স্নিগ্ধা। কবিরও রওনা দেয় স্নিগ্ধার সাথে।
দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচটি বছর কেটে গেছে। কলেজ, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কবির ও স্নিগ্ধা দুজনই জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। যদিও স্নিগ্ধা ঢাকা ভার্সিটিতেও চান্স পেয়েছিল, কিন্তু তার প্রিয় সাবজেক্ট ফিজিক্স পায়নি, কেমিস্ট্রি পেয়েছিল। প্রিয় সাবজেক্টের জন্য নাকি প্রিয় বন্ধুর টানে ঢাকা ভার্সিটি ছেড়ে জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে তা বলা অবশ্য মুশকিল। স্নিগ্ধা ও কবির অবশ্য একই ব্যাচে নয়। কবির ম্যানেজমেন্টে পড়ে আর স্নিগ্ধা ফিজিক্সে।
কবির ক্লাস থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধাকে কল দেয়। কিন্তু মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ।
"ধ্যাত" বিরক্তির শব্দ করে মোবাইলটা পকেটে রেখে দেয়। ভার্সিটি থেকে বেরনোর পথে স্নিগ্ধাকে দেখতে পায় কবির, মাঠে একটি গাছের ছায়ায় বসে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। স্নিগ্ধা কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে বান্ধবীদের সাথে। হাসলে ওকে আরো সুন্দর লাগে, ওর মুখ থেকে যেন রুপোলী আভা ছড়াতে থাকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে কবির, তারপর সেদিকে এগিয়ে যায়।
কবিরকে আসতে দেখে তৃষা ও স্নেহা হাত নেড়ে হাই বলে কবিরকে। কবিরও মৃদু হেসে হাত নেড়ে জবাব দেয়। ওরা স্নিগ্ধার ক্লাসমেট।
"কবির, তোর ক্লাস শেষ? আয় বোস" স্নিগ্ধা বলে।
"শেষ, তোদের শেষ হয়নি?" সবুজ ঘাসে বসতে বসতে বলে কবির।
"না রে, আরেকটা ক্লাস আছে আড়াইটা থেকে।"
"তাহলে আমি যাই। দুইটা থেকে টিউশনি আছে। তুই একলা যেতে পারবি তো?"
"পারবনা কেন? তুই যা তাহলে।"
"সাবধানে আসিস, আমি যাই।" বলে কবির উঠে চলে যায়।
কবির ভার্সিটি থেকে প্রথমে তার মেসে যায়। গোসল ও লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে যায় মেস থেকে। পরপর দুইটা টিউশনি আজ তার। প্রথমে ধানমন্ডিতে নাইনের এক ছাত্রকে একাউন্টিং পড়াতে হয়। এই টিউশনিটার জন্য কবিরকে খাটতে হয় প্রচুর, কারন কবিরের এসএসসিতে কমার্স ছিলনা। এর জন্য একাউন্টিং বই কিনে সে নিজে আগে চর্চা করে। প্রথম প্রথম কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আয়ত্তে চলে এসেছে। এরপর চারটা থেকে টিউশনি আজিমপুরে। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে চারটা এবং বের হতে হতে ছয়টা বেজে যায়।
কবির যখন ছাত্রের বাড়ি থেকে কেবলই বের হয়েছে তখনই স্নিগ্ধার ফোন আসে।
"হ্যালো কবির, তুই কই?"
"এই তো টিউশনি করে বের হলাম।"
"তুই কি আজিমপুরে?"
"হ্যাঁ, কেন?"
"আজিমপুর মোড়ে চলে আয়।"
"তুই এসেছিস?"
"হ্যাঁ, চলে আয়।"
"আসছি।"
কবির একটা রিক্সা নিয়ে আজিমপুর মোড়ে চলে আসে। রিক্সাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধাকে কল দেয় "আমি আজিমপুর মোড়ে, তুই কই?"
"নিউ মার্কেটের দিকে আয়।"
কবির রাস্তা পার হয়ে দেখতে পায় স্নিগ্ধাকে।
"কি ব্যাপার, তুই এখানে।" কবির বলে।
"চল, শপিং করব।"
"শপিং করবি তো কর। তোর কোন বান্ধবীকে সাথে আনলেই পারিস। আমার শপিং টপিং একেবারে ভাল লাগেনা।"
"তুই খুব বেশি কথা বলিস। চুপচাপ চল না" বলে স্নিগ্ধা হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় কবিরকে।
প্রথমে ওরা নিউ মার্কেটে যায়। জেন্টস কর্নারে যেতে দেখে কবির বলে "ও তাহলে বয়ফ্রেন্ডের জন্য গিফট কিনবি, এই জন্যেই আমাকে নিয়ে এলি?" কয়েক মাস আগে কবিরকে এভাবে সাথে নিয়ে সজলের জন্য কাপড় কিনেছিল স্নিগ্ধা।
"তুই খুব বেশি বুঝিস। এখন চুপ থাক।" বলে একটি কালো রংয়ের শার্ট কবিরের হাতে তুলে দেয়, "এটা পরতো দেখি।"
কবির শার্টটা হাতে নিয়ে বলে "পরতে হবে না, এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে তোর বয়ফ্রেন্ডের একেবারে ফিট হবে।"
"তুই এতই পেঁচাল পাড়িস! পরতে বলেছি পরে দেখা না।"
কবির আর কথা না বাড়িয়ে নিজের টি শার্টটা খুলে গেঞ্জির উপর দিয়ে শার্টটা পরে নেয়।
"নাহ মানাচ্ছেনা।"
"আমিও কালো, শার্টটাও কালো, মানাবে কিভাবে? তোর বয়ফ্রেন্ড ফর্সা আছে। শার্টটা ভাল মানাবে।"
"কে বলেছে তুই কালো? বরং উজ্জল শ্যামা। ছেলেরা শ্যামাই ভাল লাগে।" বলতে বলতে হাত ধরে অন্য দোকানে নিয়ে যায় কবিরকে।
ঘন্টা খানেক ধরে নিউমার্কেটে ঘোরাঘুরি করে তারা। কিন্তু স্নিগ্ধার কিছুই পছন্দ হয়না। তারপর তারা এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমগুলোতে যায়, সেখান থেকে দুটি শার্ট, ও দুটি জিন্স কেনে। স্নিগ্ধা নিজের জন্য ইমিটিশন এয়ার রিং আর ওয়াচ কেনে। শপিং করতে করতে রাত দশটা বেজে যায়, ওরা এলিফ্যান্ট রোডেই একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে নেয়। তারপর বাসে করে রওনা দেয়।
মিরপুর ৬ এ বাস স্টপেজে নেমে যায় কবির ও স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার মেস এখান থেকে আধ কিলোমিটার দুরে। ওরা সেদিকেই হাঁটতে থাকে।