16-06-2021, 07:45 PM
এরপর থেকে প্রত্যেকদিনই স্নিগ্ধা কবিরের কাছে সাঁতার শিখতে যায়। এক সপ্তাহের ভেতরই স্নিগ্ধা সাঁতার অনেকটাই শিখে ফেলে, শুধু ভয় জড়তা কাটিয়ে ফেলাটাই বাকি। এর মাঝে স্নিগ্ধা ও সজলের সম্পর্কটাও স্বাভাবিক হয়ে আসে। দিন দিন কবির স্নিগ্ধাদের পরিবারের একজন হয়ে ওঠে।
একদিন সন্ধাবেলা কবির স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে ফিরছিল। বাইপাস রোড দিয়ে না এসে কবির গ্রামের ভেতর দিয়ে হেঁটে ফিরছিল বাড়ি। কবিরের বাড়ির কাছাকাছি বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তায় কবির কয়েকজন ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। কবির তাদের পাশ কেটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু একজন ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয় কবিরকে।
"কি বে, দেখে চলতে পারিস না? কানা নাকি?" উপহাসের সুরে বলে ছেলেটা।
"আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন?" কবির উঠে পিঠ মুছতে মুছতে বলে।
"কি বললি, আমি ধাক্কা দিয়েছি?" বলে ছেলেটা এক হাত দিয়ে কবিরের কলার চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে পেটে ঘুসি বসিয়ে দেয়। চারটে ছেলে কবিরকে ঘিরে নিয়েছে, কবির বুঝতে পারে এদের সাথে পেরে উঠবে না, তাই পাল্টা আক্রমনের কোন চেষ্টা করে না।
"আরে আরে বেচারা মাসুম ছেলেকে এভাবে মারছিস কেন? তোরা জানিস ও কত ভাল সাঁতারু? সাঁতরিয়ে ও অলিম্পিকে সোনা জিতবে! তাই না কবির?" উপহাসের সুরে বলে লিটু, তারপর একহাত দিয়ে কবিরের গলা টিপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে "সাঁতার কাটবি কাট, যতো খুশি সাঁতার কাট। কিন্তু কাউকে শেখাতে আসবি না।"
এটাই ছিল সজলের মেসেজ। সাঁতারের কথা শুনে কবির কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর লিটুর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে "তোদের যে পাঠিয়েছে তাকে গিয়ে বলিস যেন আমার সামনে এসে কথাটা বলে।"
কবিরের কথা শুনে এবার লিটু ও তার দলবলের স্তব্ধ হয়ে যাবার পালা।
"কি বললি শুয়োরের বাচ্চা" বলে কবিরের কলার এক হাত দিয়ে মুচড়ে ধরে দুটো ঘুষি বসিয়ে দেয় লিটু কবিরের মুখে। তৃতীয় ঘুসি মারতে গিয়ে থেমে যায় লিটু।
"কি হচ্ছে এখানে?"
লিটু পেছনে ফিরে দেখে একজন লম্বা পাতলা মধ্যবয়স্ক লোক পেছনে দাড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে লিটু পাত্তা দিতনা, কিন্তু এমপি সাহেব বলে দিয়েছে যেন নির্বাচনের আগে কোন রকম গ্যাঞ্জাম না বাধায়।
"কিছু না আংকেল, আমরা বন্ধুরা একটু ইয়ার্কি করছিলাম।" লিটু কবিরের কলার ছেড়ে দিয়ে কাঁধে হাত রেখে মুখে হাসি টেনে এনে বলে।
"এখন আসি সন্ধা হয়ে যাচ্ছে, আবার দেখা হবে।" বলে লিটু তার দলবল নিয়ে চলে যায়।
কবির মধ্যবয়স্ক লোকটাকে চিনতে পারে, তিনি শহিদুল আংকেল। কবিরের বাবার অফিসের একাউন্ট্যান্ট হিসাবে চাকরি করেন।
"তুমি ঠিক আছ তো কবির?" শহীদ সাহেব জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ ঠিক আছি।"
"ওদেরকে চেন?" কবিরকে জিজ্ঞাসা করে।
"না আংকেল" কবির জবাব দেয়।
"ওরা তোমাকে মারছিল কেন?"
"জানিনা" কবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে।
"তোমার ঠোঁট দিয়ে তো রক্ত ঝরছে!"
"এ কিছু না, এমনি ঠিক হয়ে যাবে। আমি যাই" বলে কবির বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
পরের দিন কবিরের ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে। খুব আজব ধরনের একটি স্বপ্ন সে দেখেছে।
সেই ছেলেগুলোকেই সে দেখেছে স্বপ্নে। তাকে একইভাবেই ধাক্কা দিয়েছে, কিন্তু সে পড়ে যাচ্ছিল একটি খাদের ভেতর। যেন অনন্তকাল ধরে সে পড়ে যাচ্ছিল, এর যেন কোন শেষ নেই। হাত বাড়িয়ে কিছু একটা ধরতেই স্বপ্নটা ভেঙে যায়।
কবির উঠে হাতমুখ ধুয়ে আয়নার সামনে দাড়ায়। ঠোঁটের কোনাটা বিশ্রিভাবে ফুলে আছে, গালেও জখম হয়ে আছে। এই অবস্থায় পরিচিত কারো সামনেই পড়তে চায়না কবির। কিন্তু স্নিগ্ধাকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যাবার কথা ছিল, কি বলে না করে দেয়া যায় সেটা ভাবতে থাকে সে।
ঠিক নয়টার দিকে স্নিগ্ধার কল আসে।
"কবির, কোথায় তুই?" স্নিগ্ধা বলে।
"বাড়িতেই, কেন?" কবির জবাব দেয়।
"বাসায় চলে আয়।"
"আজ আর যাব না, অনেক কাজ আছে। কাপড় সব ময়লা হয়ে আছে, ধুতে হবে।"
"সুলতানা খালাকে বললেই তো ধুয়ে দেবে।"
"কাপড় সবসময় আমি নিজেই ধুই। কালকে যাব, রাখি।" বলে কবির কেটে দেয়।
যদিও স্নিগ্ধাকে টলানোর জন্য বলেছিল, কিন্তু সত্যিই কাপড় ময়লা। কবির কাপড় ধুতে লেগে গেল।
আধা ঘন্টা পর কলিংবেল বেজে ওঠে। কবির তখন কাপড় ধুচ্ছিল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে স্নিগ্ধা এসেছে।
"তোর চেহারার এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে?" স্নিগ্ধা চিন্তিত কন্ঠে বলে।
"ও কিছু না। ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখ, আমি কাপড় ধুয়ে আসছি।" বলে কবির বাথরুমে গিয়ে কাপড় ধুতে লেগে যায়।
"কিছু না মানে কি? দেখে মনে হচ্ছে মারামারি করেছিস, না হয় কেউ তোকে মেরেছে!"
"কালকে তোদের বাসা থেকে আসার পথে, ছিনতাইকারিদের খপ্পরে পড়েছিলাম। মোবাইল আর মানিব্যাগ কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আমি দিতে না চাওয়ায় ওরা আমাকে মেরেছে। শহিদুল আংকেল এসে পড়াতে রক্ষা।" কবির ব্যাখ্যা করে।
"কি সর্বনাশ! আমাকে বলিস নি কেন রাতে?" স্নিগ্ধা আঁৎকে উঠে বলে।
"তুই অযথা টেনশন করতি।"
"অতো হিরোগিরি দেখানোর কি প্রয়োজন ছিল, দিয়েই দিতি যা চায় ওরা।"
ঠিক তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে সুট বুট পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক দাড়িয়ে।
"এটা কবিরদের বাড়ি না?" লোকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
স্নিগ্ধা হ্যাঁ বোধকভাবে মাথা নাড়ে তারপর কবিরকে ডাকে।
"আংকেল, আপনি, ভেতরে আসুন প্লিজ" কবির মুখে হাসি টেনে বলে।
শাফাকাত সাহেব ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে। কবির স্নিগ্ধার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
"কবির, এক্ষুনি রেডি হয়ে এস, আমরা বেরোব।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"কিন্তু কোথায়?"
"পরে বলছি, আগে রেডি হয়ে এস।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
কবির স্যানডো গেঞ্জি আর থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরে ছিল, নিজের রুমে এসে নীল রংয়ের একটি শার্ট আর জিন্স পরে আসে।
শাফাকাত সাহেব, পিছে পিছে কবির ও স্নিগ্ধা বের হয়ে আসে। বাড়ির সামনে টয়োটা সিলিকা গাড়ীটা পার্ক করা ছিল।
"ওয়াও কি সুন্দর গাড়ী!" মুখ ফসকে বলে ফেলে স্নিগ্ধা।
"তুমিও চল, ইয়াং লেডি" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"না আংকেল, আমি বাসায় যাই।" লজ্জায় লাল হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"তুইও চল না, এখন বাসায় গিয়ে কি করবি।" কবির বলে।
স্নিগ্ধা আর আপত্তি করেনা। গাড়িতে উঠে শাফাকাত সাহেব ড্রাইভারকে সদর থানায় যেতে বলেন।
"থানায় কেন আংকেল?" কবির প্রশ্ন করে।
"শহীদুলের কাছে শুনলাম গতকাল কিছু গুন্ডা তোমাকে মেরেছে। তোমার মুখের আঘাতগুলোও সেটাই প্রমান করে।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"ওটা আসলে তেমন কিছু না।" কবির আমতা আমতা করে বলে।
"তুমি একা থাকো কবির, এরকম কোন ঘটনাই তোমার কাছে ছোট ব্যাপার নয়।" বলে শাফাকাত সাহেব মোবাইল বের করে কল করে।
"শহিদুল সাহেব, আপনি কোথায়?"
"পুলিশ স্টেশনে আছি স্যার, আপনি যেমনটা বলেছেন।"
"আপনি অপেক্ষা করুন, আমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।" বলে কলটা কেটে দেন।
পুলিশ স্টেশনে এসে সাফাকাত সাহেব জিডি করান। একজন অফিসার কবির ও শহিদুল সাহেবকে ঘটনাটা সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেন। সেনসিটিভ অংশটা ব্যাতিত বাকিটা কবির হুবহু বলে। কবির লিটুকে আগেও দেখেছে, তাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র সে। শুধু নামটা মনে করতে পারেনি কবির।
একদিন সন্ধাবেলা কবির স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে ফিরছিল। বাইপাস রোড দিয়ে না এসে কবির গ্রামের ভেতর দিয়ে হেঁটে ফিরছিল বাড়ি। কবিরের বাড়ির কাছাকাছি বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তায় কবির কয়েকজন ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। কবির তাদের পাশ কেটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু একজন ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয় কবিরকে।
"কি বে, দেখে চলতে পারিস না? কানা নাকি?" উপহাসের সুরে বলে ছেলেটা।
"আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন?" কবির উঠে পিঠ মুছতে মুছতে বলে।
"কি বললি, আমি ধাক্কা দিয়েছি?" বলে ছেলেটা এক হাত দিয়ে কবিরের কলার চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে পেটে ঘুসি বসিয়ে দেয়। চারটে ছেলে কবিরকে ঘিরে নিয়েছে, কবির বুঝতে পারে এদের সাথে পেরে উঠবে না, তাই পাল্টা আক্রমনের কোন চেষ্টা করে না।
"আরে আরে বেচারা মাসুম ছেলেকে এভাবে মারছিস কেন? তোরা জানিস ও কত ভাল সাঁতারু? সাঁতরিয়ে ও অলিম্পিকে সোনা জিতবে! তাই না কবির?" উপহাসের সুরে বলে লিটু, তারপর একহাত দিয়ে কবিরের গলা টিপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে "সাঁতার কাটবি কাট, যতো খুশি সাঁতার কাট। কিন্তু কাউকে শেখাতে আসবি না।"
এটাই ছিল সজলের মেসেজ। সাঁতারের কথা শুনে কবির কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর লিটুর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে "তোদের যে পাঠিয়েছে তাকে গিয়ে বলিস যেন আমার সামনে এসে কথাটা বলে।"
কবিরের কথা শুনে এবার লিটু ও তার দলবলের স্তব্ধ হয়ে যাবার পালা।
"কি বললি শুয়োরের বাচ্চা" বলে কবিরের কলার এক হাত দিয়ে মুচড়ে ধরে দুটো ঘুষি বসিয়ে দেয় লিটু কবিরের মুখে। তৃতীয় ঘুসি মারতে গিয়ে থেমে যায় লিটু।
"কি হচ্ছে এখানে?"
লিটু পেছনে ফিরে দেখে একজন লম্বা পাতলা মধ্যবয়স্ক লোক পেছনে দাড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে লিটু পাত্তা দিতনা, কিন্তু এমপি সাহেব বলে দিয়েছে যেন নির্বাচনের আগে কোন রকম গ্যাঞ্জাম না বাধায়।
"কিছু না আংকেল, আমরা বন্ধুরা একটু ইয়ার্কি করছিলাম।" লিটু কবিরের কলার ছেড়ে দিয়ে কাঁধে হাত রেখে মুখে হাসি টেনে এনে বলে।
"এখন আসি সন্ধা হয়ে যাচ্ছে, আবার দেখা হবে।" বলে লিটু তার দলবল নিয়ে চলে যায়।
কবির মধ্যবয়স্ক লোকটাকে চিনতে পারে, তিনি শহিদুল আংকেল। কবিরের বাবার অফিসের একাউন্ট্যান্ট হিসাবে চাকরি করেন।
"তুমি ঠিক আছ তো কবির?" শহীদ সাহেব জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ ঠিক আছি।"
"ওদেরকে চেন?" কবিরকে জিজ্ঞাসা করে।
"না আংকেল" কবির জবাব দেয়।
"ওরা তোমাকে মারছিল কেন?"
"জানিনা" কবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে।
"তোমার ঠোঁট দিয়ে তো রক্ত ঝরছে!"
"এ কিছু না, এমনি ঠিক হয়ে যাবে। আমি যাই" বলে কবির বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
পরের দিন কবিরের ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে। খুব আজব ধরনের একটি স্বপ্ন সে দেখেছে।
সেই ছেলেগুলোকেই সে দেখেছে স্বপ্নে। তাকে একইভাবেই ধাক্কা দিয়েছে, কিন্তু সে পড়ে যাচ্ছিল একটি খাদের ভেতর। যেন অনন্তকাল ধরে সে পড়ে যাচ্ছিল, এর যেন কোন শেষ নেই। হাত বাড়িয়ে কিছু একটা ধরতেই স্বপ্নটা ভেঙে যায়।
কবির উঠে হাতমুখ ধুয়ে আয়নার সামনে দাড়ায়। ঠোঁটের কোনাটা বিশ্রিভাবে ফুলে আছে, গালেও জখম হয়ে আছে। এই অবস্থায় পরিচিত কারো সামনেই পড়তে চায়না কবির। কিন্তু স্নিগ্ধাকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যাবার কথা ছিল, কি বলে না করে দেয়া যায় সেটা ভাবতে থাকে সে।
ঠিক নয়টার দিকে স্নিগ্ধার কল আসে।
"কবির, কোথায় তুই?" স্নিগ্ধা বলে।
"বাড়িতেই, কেন?" কবির জবাব দেয়।
"বাসায় চলে আয়।"
"আজ আর যাব না, অনেক কাজ আছে। কাপড় সব ময়লা হয়ে আছে, ধুতে হবে।"
"সুলতানা খালাকে বললেই তো ধুয়ে দেবে।"
"কাপড় সবসময় আমি নিজেই ধুই। কালকে যাব, রাখি।" বলে কবির কেটে দেয়।
যদিও স্নিগ্ধাকে টলানোর জন্য বলেছিল, কিন্তু সত্যিই কাপড় ময়লা। কবির কাপড় ধুতে লেগে গেল।
আধা ঘন্টা পর কলিংবেল বেজে ওঠে। কবির তখন কাপড় ধুচ্ছিল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে স্নিগ্ধা এসেছে।
"তোর চেহারার এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে?" স্নিগ্ধা চিন্তিত কন্ঠে বলে।
"ও কিছু না। ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখ, আমি কাপড় ধুয়ে আসছি।" বলে কবির বাথরুমে গিয়ে কাপড় ধুতে লেগে যায়।
"কিছু না মানে কি? দেখে মনে হচ্ছে মারামারি করেছিস, না হয় কেউ তোকে মেরেছে!"
"কালকে তোদের বাসা থেকে আসার পথে, ছিনতাইকারিদের খপ্পরে পড়েছিলাম। মোবাইল আর মানিব্যাগ কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আমি দিতে না চাওয়ায় ওরা আমাকে মেরেছে। শহিদুল আংকেল এসে পড়াতে রক্ষা।" কবির ব্যাখ্যা করে।
"কি সর্বনাশ! আমাকে বলিস নি কেন রাতে?" স্নিগ্ধা আঁৎকে উঠে বলে।
"তুই অযথা টেনশন করতি।"
"অতো হিরোগিরি দেখানোর কি প্রয়োজন ছিল, দিয়েই দিতি যা চায় ওরা।"
ঠিক তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে সুট বুট পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক দাড়িয়ে।
"এটা কবিরদের বাড়ি না?" লোকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
স্নিগ্ধা হ্যাঁ বোধকভাবে মাথা নাড়ে তারপর কবিরকে ডাকে।
"আংকেল, আপনি, ভেতরে আসুন প্লিজ" কবির মুখে হাসি টেনে বলে।
শাফাকাত সাহেব ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে। কবির স্নিগ্ধার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
"কবির, এক্ষুনি রেডি হয়ে এস, আমরা বেরোব।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"কিন্তু কোথায়?"
"পরে বলছি, আগে রেডি হয়ে এস।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
কবির স্যানডো গেঞ্জি আর থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরে ছিল, নিজের রুমে এসে নীল রংয়ের একটি শার্ট আর জিন্স পরে আসে।
শাফাকাত সাহেব, পিছে পিছে কবির ও স্নিগ্ধা বের হয়ে আসে। বাড়ির সামনে টয়োটা সিলিকা গাড়ীটা পার্ক করা ছিল।
"ওয়াও কি সুন্দর গাড়ী!" মুখ ফসকে বলে ফেলে স্নিগ্ধা।
"তুমিও চল, ইয়াং লেডি" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"না আংকেল, আমি বাসায় যাই।" লজ্জায় লাল হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"তুইও চল না, এখন বাসায় গিয়ে কি করবি।" কবির বলে।
স্নিগ্ধা আর আপত্তি করেনা। গাড়িতে উঠে শাফাকাত সাহেব ড্রাইভারকে সদর থানায় যেতে বলেন।
"থানায় কেন আংকেল?" কবির প্রশ্ন করে।
"শহীদুলের কাছে শুনলাম গতকাল কিছু গুন্ডা তোমাকে মেরেছে। তোমার মুখের আঘাতগুলোও সেটাই প্রমান করে।" শাফাকাত সাহেব বলেন।
"ওটা আসলে তেমন কিছু না।" কবির আমতা আমতা করে বলে।
"তুমি একা থাকো কবির, এরকম কোন ঘটনাই তোমার কাছে ছোট ব্যাপার নয়।" বলে শাফাকাত সাহেব মোবাইল বের করে কল করে।
"শহিদুল সাহেব, আপনি কোথায়?"
"পুলিশ স্টেশনে আছি স্যার, আপনি যেমনটা বলেছেন।"
"আপনি অপেক্ষা করুন, আমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।" বলে কলটা কেটে দেন।
পুলিশ স্টেশনে এসে সাফাকাত সাহেব জিডি করান। একজন অফিসার কবির ও শহিদুল সাহেবকে ঘটনাটা সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেন। সেনসিটিভ অংশটা ব্যাতিত বাকিটা কবির হুবহু বলে। কবির লিটুকে আগেও দেখেছে, তাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র সে। শুধু নামটা মনে করতে পারেনি কবির।